বাংলাদেশের মানুষকে জঙ্গি হিসেবে পরিচিতি দেয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টা
অ লি উ ল্লা হ নো মা ন |
বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ সরল-সহজ স্বভাবের মানুষকে জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করার নিরন্তর অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। আওয়ামী-বাম জোট সরকারের তোষামোদকারী তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরাও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। পিছিয়ে নেই আওয়ামী-বাম মিডিয়াগুলো। এ নিয়ে রীতিমত প্রতিযোগিতা চলছে। অতি সম্প্রতি অধিকার সম্পাদক সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদিলুর রহমান খানকে গ্রেফতারের পর বিষয়টি আরও স্পষ্ট। এক সময় বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদ ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন আদিলুর রহমান খান। এর পর থেকে তিনি কোনো দুর্গতিশীল (বামরা নিজেদের সব সময় প্রগতিশীল বলে দাবি করেন) সংগঠনের সঙ্গে যোগ দেননি। তিনি নিজের স্বাতন্ত্রিক অবস্থান গড়ে তুলেছেন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে। অথচ গ্রেফতারের পর হাসানুল হক ইনুসহ সরকারের তোষামোদকারী মিডিয়া পর্যন্ত আদিলুর রহমান খানকে জামায়াতী-হেফাজতী হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হন। ওই যে, কোনো কারণে তাদের সঙ্গে মতের অমিল হলেই জামায়াতপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করা। হালে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে হেফাজত। কোনো কিছু হলেই আওয়ামী-বাম জোট সরকার ও তাদের তোষামোদকারী মিডিয়া খাঁটি মুক্তিযোদ্ধাকেও রাজাকার-হেফাজতী বানিয়ে ছাড়েন। যার সর্বশেষ উদাহরণ হলেন আদিলুর রহমান খান। তবে আদিলুর রহমানের ক্ষেত্রে সরকার ও তাদের তোষামোদকারী মিডিয়াগুলোর এই অপপ্রচারের পালে এবার হাওয়া লাগেনি। আদিলুর রহমান খানের পক্ষে জাতিসংঘ, আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সব পশ্চিমা দেশ অবস্থান নিয়েছে। তার গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়েছে এসব দেশ এবং অবিলম্বে মুক্তির দাবিও জানানো হয়েছে। এই দেশসমূহের বাংলাদেশে অবস্থানরত কূটনীতিকরাও একসঙ্গে অধিকারের কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন। এতে প্রমাণিত জামায়াত-হেফাজতের সঙ্গে আদিলুর রহমানকে যুক্ত করে সরকারি ও আওয়ামী মিডিয়ার প্রচারণা এবার জমেনি। অথবা জাতিসংঘ, আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপী ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সকল পশ্চিমা দেশের সরকার জামায়াত-হেফাজত হয়ে গেছে। আর বহু আগেই আমেরিকার বিখ্যাত মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ জামায়াত হেফাজতের সহযোগী হিসেবে খেতাব দেয়া হয়। কারণ তাদের বিভিন্ন বিবৃতি ও প্রকাশিত প্রতিবেদনে সরকারের পক্ষে সাফাই গাওয়া হয়নি। এ কারণে হিউম্যান রাইটস্্ ওয়াচ বহু আগেই আখ্যায়িত হয় জামায়াত-হেফাজতের সহযোগী হিসেবে।
গত শুক্রবার বিকালে মানব জমিনের অনলাইন সংস্করণে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের 'শেখ হাসিনার শত্রুর প্রয়োজন নেই' শিরোনামে একটি লেখা পড়ছিলাম। কুখ্যাত ১/১১-এর জরুরি আইনের সরকারের একান্ত সহযোগী ওই সম্পাদক ইনিয়ে-বিনিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন আদিলুর রহমান খানকে শায়েস্তা করার আরও পদ্ধতি ছিল। সরাসরি তাকে হেনস্থা করার কারণে সবার চোখে পড়েছে। সবার চোখে পড়ায় বিষয়টি তিনি পছন্দ করছেন না। তিনি এটাও বোঝাতে চেয়েছেন অধিকারের প্রকাশিত প্রতিবেদনে হেফাজতের সমাবেশে সরকারি অভিযানে নিহত ৬১ জনের পরিসংখ্যান সঠিক নয়। এই সংখ্যাটি তিনি সমর্থন করেন না। এজন্য তার দৃষ্টিতে অধিকারকে শায়েস্তা করার বিকল্প কতগুলো পদ্ধতিও বর্ণনা করেছেন। আদিলুর রহমান খানকে সরাসরি হেনস্থা না করে বিকল্প পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করলে তিনি সমর্থন করতেন। তার লেখায় এটাও স্পষ্ট যে, জাতিসংঘ, আমেরিকা থেকে শুরু করে দুনিয়ার শক্তিধর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আদিলুর রহমান খানের গ্রেফতারে নিন্দা প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়াটা তাকে বিস্মিত করেছে। তাতে কিছুটা শর্মিন্দা হয়েছেন তিনি।
শুধু মাহফুজ আনামই নন, অধিকার সেক্রেটারিকে নিয়ে লিখেছেন ইসলাম বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত জাফর ইকবাল। একটি অনলাইনের বরাত দিয়ে ফেসবুকে লেখাটি পোস্ট করা হয়। তিনিও অধিকার এবং আদিলুর রহমান খানকে জামায়াত-হেফাজতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছেন। 'মিথ্যা বলার অধিকার' শিরোনামে তার এ লেখায় দৈনিক আমার দেশ ও পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার নির্যাতনকে তিনি সমর্থন জানিয়েছেন। তার লেখায় বোঝা যায়, দৈনিক আমার দেশ ইসলাম বিদ্বেষীদের ব্লগে মহানবী (সা.) ও ইসলাম ধর্মকে নিয়ে কটূক্তিগুলো প্রকাশ করে মহাপাপ করেছে! এজন্য তিনি দৈনিক আমার দেশ ও পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আখ্যায়িত করেন ধর্মান্ধ হিসেবে। তিনি শেখ হাসিনার ভাষায় ৫ মে হেফাজতের কর্মসূচির দিনে গুলিস্তান ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় কোরআন শরিফ পোড়ানোর বিষয়ে দায়ী করেছেন হেফাজতকে। সেদিন গুলিস্তান ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় কারা তাণ্ডব চালিয়েছে সেই ভিডিও ফুটেজগুলো সাক্ষী। কিন্তু তাদের নেত্রী বলেছেন, এজন্য তারা এই তাণ্ডবের জন্য হেফাজতকে দায়ী করে জঙ্গি বানানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত।
জাফর ইকবাল সাহেবকে বলতে চাই তিনি নিজেও তার চিন্তা-চেতনায় অন্ধ। তিনিও এক চোখ বন্ধ করে আরেক চোখে শুধু তার চিন্তা-চেতনা দেখছেন। দৈনিক আমার দেশ সব সময়ই চ্যালেঞ্জ দিয়ে আসছে, কখনো কোনো অসত্য বা মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করেনি। জাফর ইকবাল সাহেবরা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ না করে আমার দেশ ও পত্রিকাটির সম্পাদকের বিরুদ্ধে অপ-প্রচারে লিপ্ত। যুক্তির ভাষা না থাকায় শক্তি প্রয়োগ করা হয় আমার দেশ ও পত্রিকাটির সম্পাদকের বিরুদ্ধে। তাদের গায়ে জ্বালা আমার দেশ পত্রিকা তাদের ইসলাম বিদ্বেষী অন্ধ চিন্তা-চেতনার কথা মানুষকে জানিয়ে দিচ্ছে। অন্য কেউ তাদের চিন্তা প্রসূত ইসলাম বিদ্বেষী ভাবধারাগুলো প্রকাশ করলেও আবার গায়ে জ্বালা ধরে।
৫ মে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যা নিয়ে অধিকারের প্রকাশিত রিপোর্টে ৬১ জনের বিষয়ে তিনিও আপত্তি করেছেন। তার মতে অধিকার হেফাজতের পক্ষে মিথ্যাচার করেছে। তিনি এটাও বলতে চেয়েছেন, প্রকাশ্যে মিডিয়ার উপস্থিতিতে সেই রাতের অভিযান পরিচালিত হয়েছিল। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকেই এখানে বিদ্যুতের আলো নিভিয়ে দেয়া, মিডিয়াকে সরিয়ে দেয়া তিনি দিব্যি অস্বীকার করলেন। এটাকেই বলে সুচিন্তিত মিথ্যাচার। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে তারা ধর্মান্ধ বলে গালি দেন। জঙ্গি বলে আখ্যায়িত করেন তাদের লেখনি ও বক্তৃতা বিবৃতিতে। এর জবাব কেউ দিলেই তাদের আঁতে ঘা লাগে। মাহফুজ আনাম, জাফর ইকবালের মতো ইসলাম বিদ্বেষীদের মতে যারা নামাজ-রোজা পালন করেন, মাথায় টুপি দেন, মুখে দাড়ি রাখেন, পর্দা করেন সবাই হলেন ধর্মান্ধ, রাজাকার বা জঙ্গি।
নিহত ৬১ জনের পরিসংখ্যানের বিষয়ে মাহফুজ আনাম ও জাফর ইকবালের আপত্তির বিষয়টি পাঠ করার একটু পরেই দেখা গেল অধিকারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি এসেছে। পত্রিকায় ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, অধিকার ৬১ জনের নাম-ঠিকানার তালিকা জাতিসংঘ, আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ, এশিয়ান হিউম্যান রাইট কমিশন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেছে। অধিকার একটি দায়িত্বশীল সংগঠন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অধিকার কখনো দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করেনি। আমারও দৃঢ় বিশ্বাস ছিল অধিকার নাম-ঠিকানা সংগ্রহের পর যাছাই-বাছাই না করে মিডিয়ায় প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। ৬১ সংখ্যাটি নিয়ে যারা সন্দেহ পোষণ করেছিলেন নাম-ঠিকানা আন্তর্জাতিক মহলের কাছে হস্তান্তরের পর তাদের গালে চপেটাঘাত-ই বলা যায়। এখন তারা কী বলবেন! অধিকার ও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদককে এখন তারা কোন পদ্ধতিতে শাস্তি দেয়ার পরামর্শ দেবেন!
আওয়ামী-বাম জোট ও তাদের সহযোগী তোষামোদকারী মিডিয়াগুলো শুধু আদিলুর রহমান খান এবং মাহমুদুর রহমান নন, বর্তমান সরকার বিরোধী সব মানুষকে জঙ্গি, নতুবা রাজাকার বানানোর নিরন্তর অপচেষ্টায় লিপ্ত। কথায় কথায় তারা জঙ্গিবাদের প্রচারণায় লিপ্ত হন। টুপি-দাড়িওয়ালা মাদরাসা শিক্ষিত ইসলামি পণ্ডিতদের ধরে মিডিয়ায় প্রচার করা হয় জঙ্গি গ্রেফতার। কোরআন, হাদিসের কথা লেখা বইকে বলা হয় জিহাদি বই উদ্ধার। জিহাদি বইয়ের সংজ্ঞা কী! আজ পর্যন্ত বইগুলোর নাম, লেখকের নাম কোনো মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয় না। শুধু ঢালাও বলা হয় জিহাদি বই উদ্ধার। আর এই প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি গ্রুপ। তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করা। মাদরাসায় পড়ুয়া আলেমদের ধর্মান্ধ বা জঙ্গি হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের বিদেশি প্রভুদের খুশি রাখা।
ছোট একটি উদাহরণ উল্লেখ করছি। এতে পাঠক সহজেই বুঝতে পারবেন, ইসলাম ধর্মীয় কৃষ্টি-কালচারে বিশ্বাসী মানুষদের জঙ্গি হিসেবে আখ্যায়িত করতে তারা কতটা মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ১৭ জুলাই ব্রিটিশ লর্ড সভার উদ্যোগে বাংলাদেশবিষয়ক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন শীর্ষক এই সেমিনারে সরকারি ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এর বাইরে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ আব্বাস ফয়েজ বক্তব্য রাখেন। 'কালো বিড়াল' নামে খ্যাত উজিরে খামোকা এবং বিশ্বব্যাংকের তালিকায় দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মশিউর রহমান বাংলাদেশের সুশাসন নিয়ে এই সেমিনারে বক্তব্য রেখেছেন। এর বাইরে সরকারি দলের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, সাবেক মন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু এবং সাবেক উপমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক উপমন্ত্রী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সংসদ সদস্য তারানা হালিম যোগ দিয়েছিলেন।
তাদের সবার বক্তব্যের স্পিরিট ছিল বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করা। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলাম হচ্ছে জঙ্গি সংগঠন। আর এই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে রয়েছে বিএনপি। বর্তমান বিরোধী দলীয় জোট আগামীতে ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ একটি জঙ্গি রাষ্ট্রে রূপান্তর হবে সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে তাদের সবার বক্তব্যে। তারা হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবস্থান কর্মসূচির দিনে (৫ মে ২০১৩) গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকায় অগ্নিসংযোগে ও তাণ্ডব সৃষ্টির ঘটনাগুলোর ভিডিও চিত্র দেখিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন এসব হচ্ছে হেফাজতে ইসলামের কাজ। হেফাজতে ইসলাম তালেবানের স্টাইলে রাষ্ট্র পরিচালনা চায় বলে দাবি করা হয়েছে সরকারের প্রতিনিধিদের বক্তব্যে। ৫ মে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা দখল করতে এসেছিল বলেও দাবি করেন তারা। অথচ সেদিন নিরস্ত্র, নিরীহ হেফাজত কর্মীদের উপর অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী। সঙ্গে অস্ত্র হাতে সহযোগিতা করেছে সরকারের পুলিশ। আওয়ামী ক্যাডার-পুলিশের সম্মিলিত আক্রমণে রাজপথে ১১ জন হেফাজত কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। রাজপথে পিটিয়ে হত্যার দৃশ্য রয়েছে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে। অগ্নিসংযোগও করেছে আওয়ামী-বাম জোটের গুণ্ডা-পাণ্ডারা। হেফাজত যদি এতটাই জঙ্গি সংগঠন হয়ে থাকত তাহলে সেদিন তাদের এত কর্মী নিহত হলো কেন! বিপরীতে একজনও নিহত বা আহত হলেন না কেন! এর থেকেই তো বোঝা যায় কাদের তাণ্ডবে কারা নিহত হয়েছেন। কোনো আওয়ামী-বাম কর্মী সেদিন আহত বা নিহত হননি। জঙ্গিবাদের উত্থান হিসেবে এই ঘটনাকে চিত্রায়িত করার অপচেষ্টা ছিল সেমিনারে উপস্থিত আওয়ামী ডেলিগেটদের। যুক্তরাজ্য প্রশাসনকে আগাম বোঝানোর চেষ্টা করা হলো জামায়াতে ইসলামী ও হেফজাতে ইসলামী হচ্ছে জঙ্গি সংগঠন। আর তাদের সমর্থন নিয়ে বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ একটি তালেবানি জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
রেলওয়ের নিয়োগ নিয়ে ঘুষ কেলেঙ্কারি হাতে-নাতে ধরা পড়ে পদত্যাগ করেছিলেন কালো বিড়ালখ্যাত সুরঞ্জিত বাবু। পদ্মা সেতুর দুর্নীতির দায়ে বিশ্বব্যাংকের তালিকায় অভিযুক্ত ড. মশিউর রহমানেরও পদ গেছে। সেমিনারে এই দু'জনের কণ্ঠেও শুনতে হয়েছে সুশাসন ও জঙ্গিবাদের কথা!
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সরকারি দলের সবাই জঙ্গিবাদের ধুয়া তোলেন বক্তৃতা-বিবৃতিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হরহামেশাই বলেন, বর্তমান বিরোধী দল ক্ষমতায় এলে জঙ্গিবাদের উত্থান হবে বাংলাদেশে। তিনিও বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে জঙ্গি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাদের প্রচারণার ভাষার শব্দ চয়ন ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখলে মনে হয় আওয়ামী-বাম ছাড়া বাকি সবাই হয় জঙ্গি, নতুবা জঙ্গিদের সহযোগী! আওয়ামী-বাম তোষামোদকারী মিডিয়াগুলোরও একই সুর। আওয়ামী-বাম কথিত বুদ্ধিজীবীরাও একই প্রপাগাণ্ডায় লিপ্ত। বিদেশি প্রভুদের সমর্থন আদায়ের একমাত্র অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এই জঙ্গিবাদ ইস্যু। বাংলাদেশের সরল-সহজ ধর্মপ্রাণ মানুষকে আখ্যায়িত করা হচ্ছে জঙ্গি হিসেবে।
এখানে একটি কথা বলে রাখা দরকার। চার দলীয় জোট সরকারের আমলে জামায়াতুল মোজাহেদীন নামে একটি সংগঠন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। হরকাতুল জিহাদ নামের একটি সংগঠন মাথাচাড়া দিয়েছিল আগের আওয়ামী জামানায়। কিন্তু চারদলীয় জোট সরকারই জামায়াতুল মোজাহেদীন বা সংক্ষেপে জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ বা সংক্ষেপে হুজির তত্পরতা থামিয়ে দিয়েছিল। কঠিন ও কঠোরভাবে দমন করেছিল তাদের। জেএমবি'র আমির থেকে শুরু করে প্রথম সারির সব নেতাকে গ্রেফতার করেছিল চার দলীয় জোট সরকার। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তখন। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হয় চার দলীয় জোট সরকারের আমলে। জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ জেএমবির প্রথম সারির নেতাদের ফাঁসির দণ্ড হয় চার দলীয় জোট সরকারের আমলে। তাদের দণ্ড কার্যকর হয় জরুরি আইনের সরকারের সময়। এই বিচার নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাননি। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেছিল চারদলীয় জোট সরকার। শুধু তাই নয়, আগের আওয়ামী জামানায় জেগে ওঠা হুজিকেও দমন করেছে চারদলীয় জোট সরকার। আত্মগোপনে থাকা হুজি নেতা মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করা হয় চার দলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে। প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমান বিরোধী জোট তাহলে কেমন করে জঙ্গিবাদের পক্ষে? অথচ আওয়ামী মিডিয়াগুলো এতটাই নিরপেক্ষ যে তারা জঙ্গি দমনে চার দলীয় জোট সরকারের আমলের এই সাফল্যগুলো বর্ণনা করতে নারাজ। তারা এখন দেখছে 'নিরপেক্ষ' নির্বাচন হলে বর্তমান বিরোধী জোট ক্ষমতায় আসবে। এজন্য আগে থেকেই বিরোধী জোটের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ উত্থাপন করে রাখছে তারা। প্রচার প্রপাগাণ্ডাই প্রমাণ করে, আওয়ামী-বাম জোট, তাদের পোষ্য কথিত বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়াগুলোর সম্মিলিত এজেন্ডা হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষকে জঙ্গি হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করা।
লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি,
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত
nomanoliullah@yahoo.com
গত শুক্রবার বিকালে মানব জমিনের অনলাইন সংস্করণে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের 'শেখ হাসিনার শত্রুর প্রয়োজন নেই' শিরোনামে একটি লেখা পড়ছিলাম। কুখ্যাত ১/১১-এর জরুরি আইনের সরকারের একান্ত সহযোগী ওই সম্পাদক ইনিয়ে-বিনিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন আদিলুর রহমান খানকে শায়েস্তা করার আরও পদ্ধতি ছিল। সরাসরি তাকে হেনস্থা করার কারণে সবার চোখে পড়েছে। সবার চোখে পড়ায় বিষয়টি তিনি পছন্দ করছেন না। তিনি এটাও বোঝাতে চেয়েছেন অধিকারের প্রকাশিত প্রতিবেদনে হেফাজতের সমাবেশে সরকারি অভিযানে নিহত ৬১ জনের পরিসংখ্যান সঠিক নয়। এই সংখ্যাটি তিনি সমর্থন করেন না। এজন্য তার দৃষ্টিতে অধিকারকে শায়েস্তা করার বিকল্প কতগুলো পদ্ধতিও বর্ণনা করেছেন। আদিলুর রহমান খানকে সরাসরি হেনস্থা না করে বিকল্প পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করলে তিনি সমর্থন করতেন। তার লেখায় এটাও স্পষ্ট যে, জাতিসংঘ, আমেরিকা থেকে শুরু করে দুনিয়ার শক্তিধর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আদিলুর রহমান খানের গ্রেফতারে নিন্দা প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়াটা তাকে বিস্মিত করেছে। তাতে কিছুটা শর্মিন্দা হয়েছেন তিনি।
শুধু মাহফুজ আনামই নন, অধিকার সেক্রেটারিকে নিয়ে লিখেছেন ইসলাম বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত জাফর ইকবাল। একটি অনলাইনের বরাত দিয়ে ফেসবুকে লেখাটি পোস্ট করা হয়। তিনিও অধিকার এবং আদিলুর রহমান খানকে জামায়াত-হেফাজতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছেন। 'মিথ্যা বলার অধিকার' শিরোনামে তার এ লেখায় দৈনিক আমার দেশ ও পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার নির্যাতনকে তিনি সমর্থন জানিয়েছেন। তার লেখায় বোঝা যায়, দৈনিক আমার দেশ ইসলাম বিদ্বেষীদের ব্লগে মহানবী (সা.) ও ইসলাম ধর্মকে নিয়ে কটূক্তিগুলো প্রকাশ করে মহাপাপ করেছে! এজন্য তিনি দৈনিক আমার দেশ ও পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আখ্যায়িত করেন ধর্মান্ধ হিসেবে। তিনি শেখ হাসিনার ভাষায় ৫ মে হেফাজতের কর্মসূচির দিনে গুলিস্তান ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় কোরআন শরিফ পোড়ানোর বিষয়ে দায়ী করেছেন হেফাজতকে। সেদিন গুলিস্তান ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় কারা তাণ্ডব চালিয়েছে সেই ভিডিও ফুটেজগুলো সাক্ষী। কিন্তু তাদের নেত্রী বলেছেন, এজন্য তারা এই তাণ্ডবের জন্য হেফাজতকে দায়ী করে জঙ্গি বানানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত।
জাফর ইকবাল সাহেবকে বলতে চাই তিনি নিজেও তার চিন্তা-চেতনায় অন্ধ। তিনিও এক চোখ বন্ধ করে আরেক চোখে শুধু তার চিন্তা-চেতনা দেখছেন। দৈনিক আমার দেশ সব সময়ই চ্যালেঞ্জ দিয়ে আসছে, কখনো কোনো অসত্য বা মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করেনি। জাফর ইকবাল সাহেবরা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ না করে আমার দেশ ও পত্রিকাটির সম্পাদকের বিরুদ্ধে অপ-প্রচারে লিপ্ত। যুক্তির ভাষা না থাকায় শক্তি প্রয়োগ করা হয় আমার দেশ ও পত্রিকাটির সম্পাদকের বিরুদ্ধে। তাদের গায়ে জ্বালা আমার দেশ পত্রিকা তাদের ইসলাম বিদ্বেষী অন্ধ চিন্তা-চেতনার কথা মানুষকে জানিয়ে দিচ্ছে। অন্য কেউ তাদের চিন্তা প্রসূত ইসলাম বিদ্বেষী ভাবধারাগুলো প্রকাশ করলেও আবার গায়ে জ্বালা ধরে।
৫ মে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যা নিয়ে অধিকারের প্রকাশিত রিপোর্টে ৬১ জনের বিষয়ে তিনিও আপত্তি করেছেন। তার মতে অধিকার হেফাজতের পক্ষে মিথ্যাচার করেছে। তিনি এটাও বলতে চেয়েছেন, প্রকাশ্যে মিডিয়ার উপস্থিতিতে সেই রাতের অভিযান পরিচালিত হয়েছিল। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকেই এখানে বিদ্যুতের আলো নিভিয়ে দেয়া, মিডিয়াকে সরিয়ে দেয়া তিনি দিব্যি অস্বীকার করলেন। এটাকেই বলে সুচিন্তিত মিথ্যাচার। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে তারা ধর্মান্ধ বলে গালি দেন। জঙ্গি বলে আখ্যায়িত করেন তাদের লেখনি ও বক্তৃতা বিবৃতিতে। এর জবাব কেউ দিলেই তাদের আঁতে ঘা লাগে। মাহফুজ আনাম, জাফর ইকবালের মতো ইসলাম বিদ্বেষীদের মতে যারা নামাজ-রোজা পালন করেন, মাথায় টুপি দেন, মুখে দাড়ি রাখেন, পর্দা করেন সবাই হলেন ধর্মান্ধ, রাজাকার বা জঙ্গি।
নিহত ৬১ জনের পরিসংখ্যানের বিষয়ে মাহফুজ আনাম ও জাফর ইকবালের আপত্তির বিষয়টি পাঠ করার একটু পরেই দেখা গেল অধিকারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি এসেছে। পত্রিকায় ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, অধিকার ৬১ জনের নাম-ঠিকানার তালিকা জাতিসংঘ, আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ, এশিয়ান হিউম্যান রাইট কমিশন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেছে। অধিকার একটি দায়িত্বশীল সংগঠন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অধিকার কখনো দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করেনি। আমারও দৃঢ় বিশ্বাস ছিল অধিকার নাম-ঠিকানা সংগ্রহের পর যাছাই-বাছাই না করে মিডিয়ায় প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। ৬১ সংখ্যাটি নিয়ে যারা সন্দেহ পোষণ করেছিলেন নাম-ঠিকানা আন্তর্জাতিক মহলের কাছে হস্তান্তরের পর তাদের গালে চপেটাঘাত-ই বলা যায়। এখন তারা কী বলবেন! অধিকার ও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদককে এখন তারা কোন পদ্ধতিতে শাস্তি দেয়ার পরামর্শ দেবেন!
আওয়ামী-বাম জোট ও তাদের সহযোগী তোষামোদকারী মিডিয়াগুলো শুধু আদিলুর রহমান খান এবং মাহমুদুর রহমান নন, বর্তমান সরকার বিরোধী সব মানুষকে জঙ্গি, নতুবা রাজাকার বানানোর নিরন্তর অপচেষ্টায় লিপ্ত। কথায় কথায় তারা জঙ্গিবাদের প্রচারণায় লিপ্ত হন। টুপি-দাড়িওয়ালা মাদরাসা শিক্ষিত ইসলামি পণ্ডিতদের ধরে মিডিয়ায় প্রচার করা হয় জঙ্গি গ্রেফতার। কোরআন, হাদিসের কথা লেখা বইকে বলা হয় জিহাদি বই উদ্ধার। জিহাদি বইয়ের সংজ্ঞা কী! আজ পর্যন্ত বইগুলোর নাম, লেখকের নাম কোনো মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয় না। শুধু ঢালাও বলা হয় জিহাদি বই উদ্ধার। আর এই প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি গ্রুপ। তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করা। মাদরাসায় পড়ুয়া আলেমদের ধর্মান্ধ বা জঙ্গি হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের বিদেশি প্রভুদের খুশি রাখা।
ছোট একটি উদাহরণ উল্লেখ করছি। এতে পাঠক সহজেই বুঝতে পারবেন, ইসলাম ধর্মীয় কৃষ্টি-কালচারে বিশ্বাসী মানুষদের জঙ্গি হিসেবে আখ্যায়িত করতে তারা কতটা মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ১৭ জুলাই ব্রিটিশ লর্ড সভার উদ্যোগে বাংলাদেশবিষয়ক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন শীর্ষক এই সেমিনারে সরকারি ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এর বাইরে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ আব্বাস ফয়েজ বক্তব্য রাখেন। 'কালো বিড়াল' নামে খ্যাত উজিরে খামোকা এবং বিশ্বব্যাংকের তালিকায় দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মশিউর রহমান বাংলাদেশের সুশাসন নিয়ে এই সেমিনারে বক্তব্য রেখেছেন। এর বাইরে সরকারি দলের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, সাবেক মন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু এবং সাবেক উপমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক উপমন্ত্রী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সংসদ সদস্য তারানা হালিম যোগ দিয়েছিলেন।
তাদের সবার বক্তব্যের স্পিরিট ছিল বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করা। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলাম হচ্ছে জঙ্গি সংগঠন। আর এই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে রয়েছে বিএনপি। বর্তমান বিরোধী দলীয় জোট আগামীতে ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ একটি জঙ্গি রাষ্ট্রে রূপান্তর হবে সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে তাদের সবার বক্তব্যে। তারা হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবস্থান কর্মসূচির দিনে (৫ মে ২০১৩) গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকায় অগ্নিসংযোগে ও তাণ্ডব সৃষ্টির ঘটনাগুলোর ভিডিও চিত্র দেখিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন এসব হচ্ছে হেফাজতে ইসলামের কাজ। হেফাজতে ইসলাম তালেবানের স্টাইলে রাষ্ট্র পরিচালনা চায় বলে দাবি করা হয়েছে সরকারের প্রতিনিধিদের বক্তব্যে। ৫ মে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা দখল করতে এসেছিল বলেও দাবি করেন তারা। অথচ সেদিন নিরস্ত্র, নিরীহ হেফাজত কর্মীদের উপর অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী। সঙ্গে অস্ত্র হাতে সহযোগিতা করেছে সরকারের পুলিশ। আওয়ামী ক্যাডার-পুলিশের সম্মিলিত আক্রমণে রাজপথে ১১ জন হেফাজত কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। রাজপথে পিটিয়ে হত্যার দৃশ্য রয়েছে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে। অগ্নিসংযোগও করেছে আওয়ামী-বাম জোটের গুণ্ডা-পাণ্ডারা। হেফাজত যদি এতটাই জঙ্গি সংগঠন হয়ে থাকত তাহলে সেদিন তাদের এত কর্মী নিহত হলো কেন! বিপরীতে একজনও নিহত বা আহত হলেন না কেন! এর থেকেই তো বোঝা যায় কাদের তাণ্ডবে কারা নিহত হয়েছেন। কোনো আওয়ামী-বাম কর্মী সেদিন আহত বা নিহত হননি। জঙ্গিবাদের উত্থান হিসেবে এই ঘটনাকে চিত্রায়িত করার অপচেষ্টা ছিল সেমিনারে উপস্থিত আওয়ামী ডেলিগেটদের। যুক্তরাজ্য প্রশাসনকে আগাম বোঝানোর চেষ্টা করা হলো জামায়াতে ইসলামী ও হেফজাতে ইসলামী হচ্ছে জঙ্গি সংগঠন। আর তাদের সমর্থন নিয়ে বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ একটি তালেবানি জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
রেলওয়ের নিয়োগ নিয়ে ঘুষ কেলেঙ্কারি হাতে-নাতে ধরা পড়ে পদত্যাগ করেছিলেন কালো বিড়ালখ্যাত সুরঞ্জিত বাবু। পদ্মা সেতুর দুর্নীতির দায়ে বিশ্বব্যাংকের তালিকায় অভিযুক্ত ড. মশিউর রহমানেরও পদ গেছে। সেমিনারে এই দু'জনের কণ্ঠেও শুনতে হয়েছে সুশাসন ও জঙ্গিবাদের কথা!
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সরকারি দলের সবাই জঙ্গিবাদের ধুয়া তোলেন বক্তৃতা-বিবৃতিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হরহামেশাই বলেন, বর্তমান বিরোধী দল ক্ষমতায় এলে জঙ্গিবাদের উত্থান হবে বাংলাদেশে। তিনিও বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে জঙ্গি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাদের প্রচারণার ভাষার শব্দ চয়ন ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখলে মনে হয় আওয়ামী-বাম ছাড়া বাকি সবাই হয় জঙ্গি, নতুবা জঙ্গিদের সহযোগী! আওয়ামী-বাম তোষামোদকারী মিডিয়াগুলোরও একই সুর। আওয়ামী-বাম কথিত বুদ্ধিজীবীরাও একই প্রপাগাণ্ডায় লিপ্ত। বিদেশি প্রভুদের সমর্থন আদায়ের একমাত্র অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এই জঙ্গিবাদ ইস্যু। বাংলাদেশের সরল-সহজ ধর্মপ্রাণ মানুষকে আখ্যায়িত করা হচ্ছে জঙ্গি হিসেবে।
এখানে একটি কথা বলে রাখা দরকার। চার দলীয় জোট সরকারের আমলে জামায়াতুল মোজাহেদীন নামে একটি সংগঠন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। হরকাতুল জিহাদ নামের একটি সংগঠন মাথাচাড়া দিয়েছিল আগের আওয়ামী জামানায়। কিন্তু চারদলীয় জোট সরকারই জামায়াতুল মোজাহেদীন বা সংক্ষেপে জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ বা সংক্ষেপে হুজির তত্পরতা থামিয়ে দিয়েছিল। কঠিন ও কঠোরভাবে দমন করেছিল তাদের। জেএমবি'র আমির থেকে শুরু করে প্রথম সারির সব নেতাকে গ্রেফতার করেছিল চার দলীয় জোট সরকার। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তখন। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হয় চার দলীয় জোট সরকারের আমলে। জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ জেএমবির প্রথম সারির নেতাদের ফাঁসির দণ্ড হয় চার দলীয় জোট সরকারের আমলে। তাদের দণ্ড কার্যকর হয় জরুরি আইনের সরকারের সময়। এই বিচার নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাননি। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেছিল চারদলীয় জোট সরকার। শুধু তাই নয়, আগের আওয়ামী জামানায় জেগে ওঠা হুজিকেও দমন করেছে চারদলীয় জোট সরকার। আত্মগোপনে থাকা হুজি নেতা মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করা হয় চার দলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে। প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমান বিরোধী জোট তাহলে কেমন করে জঙ্গিবাদের পক্ষে? অথচ আওয়ামী মিডিয়াগুলো এতটাই নিরপেক্ষ যে তারা জঙ্গি দমনে চার দলীয় জোট সরকারের আমলের এই সাফল্যগুলো বর্ণনা করতে নারাজ। তারা এখন দেখছে 'নিরপেক্ষ' নির্বাচন হলে বর্তমান বিরোধী জোট ক্ষমতায় আসবে। এজন্য আগে থেকেই বিরোধী জোটের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ উত্থাপন করে রাখছে তারা। প্রচার প্রপাগাণ্ডাই প্রমাণ করে, আওয়ামী-বাম জোট, তাদের পোষ্য কথিত বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়াগুলোর সম্মিলিত এজেন্ডা হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষকে জঙ্গি হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করা।
লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি,
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত
nomanoliullah@yahoo.com
__._,_.___