06 Sep, 2013দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং জঙ্গি ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়তে আগামী নির্বাচনে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজশাহীর বাগমারায় গতকাল বৃহস্পতিবার এক জনসভায় উপস্থিত লোকজনকে তিনি নৌকায় ভোট দেওয়ার ওয়াদা করান। বাগমারা উপজেলার দেউলার এনা পার্ক মেলা মাঠে গতকাল বিকেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন বাগমারা ছিল সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের জায়গা। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাদের মেরে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হতো। নেতা-কর্মীদের হত্যা করে টুকরো টুকরো করে লাশ মাটিতে পুঁতে ফেলা হতো। বিগত সরকারের আমলে কেউ আরামে ঘুমাতে পারত না। বাগমারা ছিল রক্তাক্ত জনপদ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাগমারা আর সন্ত্রাসের জনপদ নেই।দলীয় জনসভা হলেও এটি নির্বাচনী জনসভায় পরিণত হয়। জনসভার সব বক্তাই আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট চান। সকাল থেকে বাগমারা ছাড়াও আশপাশের উপজেলার লোকজন জনসভাস্থলে আসতে থাকে। বর্তমান সরকারকে কৃষিবান্ধব সরকার অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত সরকারের সময়ে সারের জন্য ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সারের দাম বাড়ানো হয়েছে। আর বর্তমান সরকারের আমলে দফায় দফায় সারের দাম কমানো হয়েছে। মাত্র ১০ টাকায় কৃষকেরা কৃষি কার্ড ও ব্যাংক হিসাব খুলতে পারছেন। এ সময়ে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে।
বিরোধী দলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা যখন ক্ষমতায় থাকে, দেশ তখন পিছিয়ে যায়। তারা আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করে, বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে বিদ্যুৎকেন্দ্র পোড়ায়।
বিএনপি, জামায়াত-শিবির ও হেফাজতকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'তারা ধর্মের নামে রাজনীতি করে, মানুষকে ধোঁকা দেয়। তারা বায়তুল মোকাররমে ঢুকে মসজিদের জায়নামাজ পুড়িয়ে ফেলে। ইমাম, মোয়াজ্জিনকে নামাজ পড়তে বাধা দেয়। কোরআন শরিফ পোড়ায় ও মানুষ হত্যা করে। তারা কীভাবে ইসলামকে হেফাজত করে।' শাপলা চত্বরে নিহতের ঘটনা নিয়েও তারা মিথ্যাচার করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন।
শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে বলেন, 'তাঁর ছেলেরা জনগণের টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে, তা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তাঁর ছেলেদের অর্থ পাচারের কথা আমেরিকা দেশে এসে বলে গেছে। তিনি ১৫ আগস্ট শোক দিবসে নিজের নকল জন্মদিন বানিয়ে ওই দিন কেক কাটেন।' ৩৫ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের সমালোচনা ছাড়াও দেশ ও বাগমারার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য দিলেও এলাকার উন্নয়ন ও জনগণের দাবির বিষয়ে কিছু বলেননি। কোনো আশ্বাসও দেননি।
স্থানীয় সাংসদ ও বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হকের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় জনসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ, শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, সাংসদ ইস্রাফিল আলম, জুনায়েদ আহমেদ, আবদুল ওয়াদুদ, ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, লায়েব উদ্দিন প্রমুখ।
৩৮ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন: প্রধানমন্ত্রী জনসভার শুরুতে বর্তমান সরকারের আমলে রাজশাহীর ৩৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের একসঙ্গে উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর মধ্যে রয়েছে বাগমারা উপজেলারই ১৯টি এবং জেলা সদর ও অন্য উপজেলার ১৯টি প্রকল্প। উদ্বোধন করা উল্লেখযোগ্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ছয়তলা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর কমপ্লেক্স, বাগমারা, নাসিরগঞ্জ ও সালেহা-ইমারত কলেজকে ডিগ্রি কলেজে উন্নীতকরণ, ৩৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, রাজশাহী বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট সেন্টার, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবন।
বিআইআর ব্যাটালিয়নকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান: বাসস জানায়, এর আগে প্রধানমন্ত্রী গতকাল রাজশাহী সেনানিবাসে বাংলাদেশ ইনফান্ট্রি রেজিমেন্ট সেন্টারে (বিআইআরসি) বাংলাদেশ ইনফান্ট্রি রেজিমেন্টের (বিআইআর) তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ ব্যাটালিয়নকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড হস্তান্তর করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিআইআরের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, তাদের কর্মকাণ্ড দেশে ও বিদেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও জাতির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।
উৎসঃ প্রথম আলো