|
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম |
সিলেট থেকে: শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জনসভা ঘিরে নীরব প্রস্তুতিতে এগুচ্ছে ১৮ দলীয় জোটের শরিক জামায়াত-শিবির।
জনসভার আগে পোস্টার-মিছিলের বাড়াবাড়ি নয়, জনসভার ভেন্যু আলিয়া মাঠে বড় ধরনের শোডাউন দিয়ে তারা বোঝাতে চায় 'ওস্তাদের মাইর শেষ রাইতে'। শিবিরের 'ক্যান্টনমেন্ট' খ্যাত এই মাঠেই শনিবার বক্তব্য রাখতে চলেছেন খালেদা।
আলিয়া মাঠ ও আশপাশের এলাকা বরাবরই জামায়াত শিবির অধ্যুষিত হিসেবে পরিচিত। সরকার পরিবর্তন হলেও সিলেটে শিবিরের তৎপরতা আলিয়া মাদ্রাসাকেন্দ্রিক। আগে থেকেই তাই 'শিবিরের ক্যান্টনমেন্ট' বলা হয় এই আলিয়াকে।
সে হিসেবে সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে আবারও বড় ধরনের শোডাইন আর সরকারবিরোধী তৎপরতা দেখানোর সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে জামায়াত-শিবির। সিলেটের নেতাদের গ্রেপ্তারের পর থেকে এবারের মতো শোডাউনের সুযোগ পায়নি শিবির। তাই এ সুযোগ ষোলো আনা উসুল করতে চায় শিবির।
তবে সিলেটে প্রস্তুতি কিছুটা ভিন্ন ধরনের। সম্প্রতি খুলনা, রংপুর ও নরসিংদীতে খালেদা জিয়ার সমাবেশ উপলক্ষে জামাত-শিবিরের যে ধরনের প্রচারণা দেখা গিয়েছিল, সিলেটে তেমনটি নেই। কোথাও পোস্টার বা যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি চেয়ে প্রচারণা চোখে পড়েনি।
তবে মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অত্যন্ত গোপনে শতাধিক প্রস্তুতি সভা-বৈঠক করেই সমাবেশে যোগ দিচ্ছে জামায়াত-শিবির। সিলেটে তাদের শক্ত অবস্থান থাকলেও তা আগেই জানান দিতে চাইছে না।
জেলা শিবিরের সভাপতি শাহ মো. মনোয়ার হোসেন ফোনে আলাপকালে বাংলানিউজকে বলেন, 'উস্তাদের মাইর শেষ রাইতে'।
জনসভা নিয়ে জোটের শরিক হিসেবে তাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, জেলার প্রতিটি উপজেলা থেকে জামায়াত শিবির জনসভায় যোগ দেবে। এজন্য তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন। এখন জনসভামুখী হওয়া বাকি।
তবে জামায়াত-শিবিরের জনসভায় যোগ দেওয়ার কোন কৌশল খোলাসা করতে নারাজ দলটি। মূলত ফজরের পরই নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ দখল করে নেবে তারা। আর বিকেল পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন প্রবেশ রোড দিয়ে তাদের একের পর এক মিছিল আসতে থাকবে।
তবে জনসভায় লোক জড়ো করতে তাদের নগরীর বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনশক্তিই সবচেয়ে বেশি অগ্রগামী বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। জনসভার আগে কোন নেতাকর্মী যাতে পুলিশি হয়রানিতে না পড়ে সেজন্য আড়ালেই থাকছেন তারা।
সূত্র জানায়, আড়াল থেকে ৫ অক্টোবর দলে দলে সভায় যোগ দেবে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাদের মুখে মুখে শ্লোগান থাকবে যুদ্ধাপরাধী নেতাদের মুক্তির দাবি। যুদ্ধাপরাধের অপরাধে দণ্ডিত নেতাদের ছবি, ফেস্টুন নিয়ে আসবেন তারা।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল ও সিলেটের সাবেক আমির ডা. শফিকুর রহমান, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির এ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সেলিম উদ্দিনের মুক্তি দাবি করতেই জামায়াত-শিবির এ ধরনের একটি বড় জনসমাগমের অপেক্ষা করছিলো দীর্ঘদিন থেকে। এ সুযোগ কোনভাবেই হারাতে চায় না তারা।
এদিকে গত মঙ্গলবার সিলেটে ১৮ দলীয় জোটের সভায়, জনসভায় শুধু বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়ার ছবি থাকবে বলে সিদ্ধান্ত জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এ তিনজন ছাড়া আর কারো ছবি না আনার আহ্বানও জানান তিনি।
এমন ঘোষণায় সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে ওঠে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। সেই সভা ত্যাগ করে চলে যায় তারা। পরে তাদের ডেকে এনে সমঝোতায় পৌঁছান নেতারা। সেই হিসেবে নিজামী-মোজাহিদ-সাঈদীর বড় ধরনের ছবি নিয়ে শোডাউন আর মুক্তির দাবি করে মিছিল স্লোগান দেওযার অপেক্ষায় রয়েছে দলটি।
সিলেটে খালেদার জনসভায় জামাত শিবিরের প্রস্তুতির ব্যাপারে ১৮ দলীয় জোট সিলেট মহানগরীর সদস্য সচিব ও জামায়াত নেতা হাফেজ আব্দুল হাই হারুন বলেন, পোস্টার লাগিয়ে প্রচারণা নয়, মাঠে জনসমাগমই প্রমাণ করবে এই সরকারের প্রহসনে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় মানেনি। জুলুম নির্যাতনে বিদায় ঘণ্টা দিতে লক্ষাধিক জামায়াত শিবির নেতাকর্মী জনসভায় আসবে বলে জানান তিনি।
তবে অগ্রিম প্রচারণা নেই কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা পোস্টার লাগাবো আর সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবো পুলিশ সেগুলো খুলে নিয়েছে। আর ডাকাত, সন্ত্রাসী বা মাস্তানদের না ধরে আমাদের যেসব কর্মী পোস্টার লাগাবে তাদের গ্রেফতারে বের হবে পুলিশ। তাই পোস্টার লাগানো হয়নি।
দলটির নেতারা জানান, সমাবেশে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেবেন শামসুল ইসলাম, হাম্মদ তাহের, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল ইসলাম।
এছাড়া সিলেট জামায়াত নেতারাও বক্তব্য রাখবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৩
এমএন/এমইএস/এসকেএস/এসএ/এমজেএফ/আরকে
http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=5a1875afbb4dc13a58420d7338806e27&nttl=04102013229284