Banner Advertiser

Friday, November 22, 2013

[mukto-mona] ‘থুতু’ই যার একমাত্র প্রাপ্য



'থুতু'ই যার একমাত্র প্রাপ্য

ম হি উ দ্দি ন খা ন মো হ ন
বাংলাদেশের বিশাল রাজনৈতিক অঙ্গনে আমার অবস্থান একেবারেই নগণ্য। বলা যায়, সমুদ্রে গোষ্পদ মাত্র। দেশের বৃহত্ রাজনৈতিক দলটির একজন সক্রিয় কর্মী ছিলাম। 'ছিলাম' বলছি এজন্য যে, এখন আর দলটির কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশ নিতে পারছি না। সে সুযোগ থেকে আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তারপরও সমর্থন অব্যাহত আছে। দলটির সরাসরি পক্ষে কিংবা পরোক্ষভাবে পক্ষে যায়—এমনভাবেই পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছি। ২০০৭-০৮ এর ভয়ঙ্কর দুঃসময়ে দলটির জন্য কিছু ভূমিকা পালন করেছিলাম। তারপর ওই দলের কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছি বছর খানেক। তার পরের ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। সে ঘটনা এখানে উল্লেখ প্রাসঙ্গিক মনে করছি না।
নিজের সম্পর্কে ওপরে যা বললাম, তার একটা কারণ নিশ্চয়ই আছে। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি অতীব ক্ষুদ্র হলেও এদেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি অনুধাবন ও বিশ্লেষণের একটা ক্ষমতা আমার আছে। এটা অবশ্যই আল্লাহ প্রদত্ত। রাজনৈতিক ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ করে আমি বলে দিতে পারি তারপর কী ঘটবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমার অনুমান সত্য হয় এবং বন্ধু-বান্ধবরা চমত্কৃত হন; প্রশংসা করেন আমার 'মেধা'র। বিস্মিত আমি নিজেও কম হই না। কীভাবে যেন আমার মন্তব্যগুলো সঠিক প্রমাণিত হয়ে যায়। আমার মধ্যে কী কোনো ঐশ্বরিক ক্ষমতা আছে? প্রশ্ন করেছি নিজেকেই। উত্তর পেয়েছি আপন মন থেকেই। ওই সবের কোনো বালাই আমার মধ্যে নেই। তবে, রাজনৈতিক ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ এবং অতীত-বর্তমানের পর্যালোচনাটা সঠিকভাবে করতে পারি বলেই অনেক সময় আমার আগাম মন্তব্য সঠিক হয়ে যায়।
এ মুহূর্তে খুব ভালো লাগছে আমার আরও একটি আগাম মন্তব্য সঠিক হতে দেখে। মন্তব্যটি ছিল এরশাদকে নিয়ে। যখন থেকে এরশাদ বলে আসছিলেন যে, তিনি ও তার দল মহাজোটে থাকবেন না, তখন অনেকেই এটা ভেবে আশান্বিত হয়েছিলেন যে, এরশাদ মহাজোট থেকে বেরিয়ে এলে আওয়ামী লীগ বেকায়দায় পড়ে যাবে, সরকারের পতন হবে। পরিচিত মহলে তখন আমি বলেছিলাম—'এরশাদ মহাজোট ছাড়বে তখন, যখন সে শিওর হবে যে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। পাতানো নির্বাচনে অংশ নিয়ে সে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা হবে।' আমার মন্তব্য অনেকেরই পছন্দ হয়নি। কেউ কেউ যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন, এরশাদ অনেক খেলা খেলেছেন, এবার আর ভানুমতির খেলা খেলবেন না। কথা রাখবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল তিনি কথা না রেখে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকেই অক্ষুণ্ন রাখলেন।
গত কয়েক মাস ধরে এরশাদ যে 'বিপ্লবী' ভূমিকায় নেমেছিলেন তাতে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। তার কথাবার্তা এমন উচ্চমার্গে উঠেছিল যে, অনেকেই মনে করেছিলেন, এবার বোধ হয় তিনি সত্যিকার অর্থেই আওয়ামী লীগের সঙ্গ ত্যাগ করে রাজপথে নামবেন! যারা এমনটি ধারণা করেছিলেন তারা যে এরশাদের শিকড় সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাকে বিশ্লেষণ করতে গেলে একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে, আওয়ামী লীগ ও এরশাদ একই সুতোর টানে নাচে। এদের মধ্যে 'মৈত্রী ও বন্ধুত্বের সেতুবন্ধ'ও বেশ পুরনো এবং অত্যন্ত গাঢ়। বিপদে-আপদে একজন আরেকজনকে তাই অকৃত্রিম বন্ধুত্বের হাত দিয়ে সহযোগিতা করে।
এই বন্ধুত্বের গোড়া পত্তন ১৯৮২ সালে। ওই বছর ২৪ মার্চ যখন সেনাপাতি এরশাদ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে বন্দুকের নলের মুখে অপসারণ করে রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনিয়ে নেন, শেখ হাসিনা তখন বলেছিলেন 'আই অ্যাম নট আনহ্যাপি, অর্থাত্ একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে একজন সামরিক স্বৈরাচারী রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলেও শেখ হাসিনার তা ভালো লেগেছিল। হাসিনা-এরশাদ সম্পর্কের শুরু সেখান থেকেই। তবে, সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তিরা বলে থাকেন যে, সামরিক শাসন জারি করার আগেই এরশাদ গোপনে শেখ হাসিনার সমর্থন আদায় করেছিলেন। যে কারণে 'গণতান্ত্রিক' একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হওয়া সত্ত্বেও প্রকাশ্যেই অগণতান্ত্রিক ও সামরিক শাসনকে হাসিনা সমর্থন জানিয়েছিলেন।
বিএনপিবিরোধী এ দু'শক্তির সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের প্রমাণ এদেশের মানুষ পরেও দেখেছে। ১৯৮৬ সাল। এরশাদ ঘোষিত নির্বাচন বর্জন করেছে সব রাজনৈতিক দল। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছল যে, পদত্যাগ ছাড়া এরশাদের সামনে কোনো পথ খোলা নেই। ওই সময় শেখ হাসিনা ঘোষণা করলেন যে, যারা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাবে তারা হবে 'জাতীয় বেঈমান'। তার দু'দিন পরেই গভীর রাতে গোপন লেনদেনে সমঝোতা হয়ে গেল এরশাদ-হাসিনার। এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিলেন শেখ হাসিনা। নিজের ঘোষিত 'জাতীয় বেঈমান' খেতাব কার কপালে লাগল সেটাও তিনি খেয়াল করার ফুরসত পেলেন না।
গণঅভ্যুত্থানে ১৯৯০ সালে পতন হলো এরশাদের। পতিত এ স্বৈরাচারকে প্রত্যাখ্যান করল গোটা জাতি। '৯১-এর নির্বাচনে এরশাদকে অযোগ্য ঘোষণার দাবি উঠল। জাতীয় পার্টির তখন বিড়ালের ভয়ে গর্তে লুকানো ইঁদুরের অবস্থা। জাতীয় পার্টির কর্মী পরিচয় দিয়ে রাস্তায় বেরুতেও কেউ সাহস পায় না। সে সময়ে এরশাদ ঘোষণা করলেন তার দল নির্বাচনে অংশ নেবে। এর নেপথ্যে কাজ করেছিল চাচা-ভাতিজীর গোপন সমঝোতা। সাবজেলে বন্দি এরশাদের পক্ষে চাচা মিজানুর রহমান চৌধুরী ভাতিজী শেখ হাসিনাকে কনভিন্স করেন। শেখ হাসিনা বললেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয় পার্টির নির্বাচনে অংশ নেয়ার অধিকার আছে। ব্যস, জাতীয় পার্টির কলিজায় পানি এলো।
মনে পড়ে ১৯৯৯ সালের কথা। বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐকজোট মিলে চারদলীয় জোট গঠন করেছিল। জোটের প্রথম ইশতেহারে জাতীয় পার্টির পক্ষে স্বাক্ষর করেছিলেন এরশাদ। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই এরশাদ জোট ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। ২০০৬ সালে এরশাদকে জোটে টানার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিল বিএনপি। এরশাদও বিএনপির জোটে যোগ দিচ্ছেন এমনটি অনেকের ধারণা হয়েছিল। সে সময় এরশাদের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সহচর আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বাজি ধরে একজন সাংবাদিককে বলেছিলেন—'এরশাদ যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে থাকে তাহলে তোমাকে আমি এক কোটি টাকা দেব।' আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে সে টাকা দিতে হয়নি। কেননা, কয়েকদিন লুকিয়ে থেকে বিএনপিকে হতবাক করে দিয়ে এরশাদ পল্টন ময়দানে আওয়ামী লীগের সভায় উপস্থিত হয়ে ঘোষণা করেছিলেন—'আমি আর শেখ হাসিনা ভাই-বোন, এক আত্মা!' সে এক আত্মার ভাই-বোন আলাদা হবে বা ভাই তার অতিপ্রিয় বোনকে বিপদে ফেলে অন্যত্র যাবে, যারা এটা কল্পনায় আনেন, তারা যে নিতান্তই বোকার স্বর্গে বাস করছেন সেটা বলাটা বোধ করি অত্যুক্তি নয়।
গত কিছুদিন থেকেই এরশাদ বেশ বিপ্লবী কথাবার্তা বলছিলেন। সরকারের সমালোচনা প্রায় সময় করলেও গত দু'তিন মাস ধরে তা তীব্র রূপ ধারণ করেছিল। একই সঙ্গে 'মহাজোট' ত্যাগ করে এককভাবে নির্বাচন করার দৃঢ় সংকল্পও ব্যক্ত করছিলেন তিনি। কেউ কেউ তাতে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। এমনকি এরশাদের বিপ্লবী কথাবার্তায় বিভ্রান্ত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সিলেটের মহাসমাবেশের বক্তৃতায় বলেছিলেন—'এরশাদ সাহেব, আপনি ভয় পান কেন, আপনার কোনো ভয় নেই।' বলাটা সঙ্গত যে, এরশাদ ভয় পাননি। ভয় পাওয়ার অভিনয় করেছিলেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক মঞ্চে এরশাদ একজন সফল অভিনেতা। যদিও তা খল চরিত্রের।
এরশাদ কখন কী বলবেন বা করবেন তা ধারণা করা খুবই মুশকিল—এটা জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরাও বলে থাকেন। সকালে এক কথা, দুপুরে আরেক কথা, সন্ধ্যায় যেটা বলবেন, রাতে সেটা উল্টে দেবেন—এভাবেই চলে আসছে বহু বছর ধরে। মহাজোটের অংশীদার হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন তিনি। আগে-পরে অনেক কথা বললেও যেদিন (১১ নভেম্বর) তিনি বললেন, 'সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে গেলে মানুষ আমাকে থুতু দেবে না? এর চেয়ে জেলেই মরে যাওয়া ভালো'—সেদিন অনেকেরই মনে বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল যে, এবার হয়তো এরশাদ তার 'কথা' রাখবেন।
কিন্তু এক সপ্তাহ পার না হতেই এরশাদ তার অবস্থান ও বক্তব্য একেবারেই উল্টো দিকে নিয়ে গেলেন। গত ১৮ নভেম্বর তথাকথিত সর্বদলীয় সরকারের কেবিনেটে তার দলের ছয়জনকে ঢুকিয়ে দিয়ে তিনি বললেন—'এই সরকারকে সরাতে হলে নির্বাচন দরকার। নির্বাচনে না গেলে মানুষ আমাকে থুতু দেবে। শুধু আমাকেই নয়, সব রাজনীতিককেই জনগণ থুতু দেবে।' এরশাদের এ বক্তব্য নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনার কোনো মানে আছে বলে মনে হয় না। আমাদের বিক্রমপুর অঞ্চলে একটি প্রবাদ বাক্য আছে—'জবান লাড়া, লজ্জা ছাড়া'। এর মর্মার্থ হলো—যাদের জবান অর্থাত্ মুখের কথার ঠিক নেই, তাদের লাজ-শরমও নেই। আরও ব্যাখ্যা করে বলা যায়, যাদের কোনো হায়া-লজ্জা নেই, বেহায়া বেশরম, তারাই মুখের কথার নড়চড় করে। কথা দিয়ে কথা রাখে না।'
কথা দিয়ে কথা না রাখা মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি। এ প্রবৃত্তির কবলে অনেকেই পড়ে থাকেন। তবে, সমাজে কিছু মানুষ আছেন কিংবা সব সময়ই থাকেন, যারা মুখের জবানকে অত্যন্ত মূল্য দেন। তারা একবার কাউকে কোনো বিষয়ে কথা দিলে জীবন থাকা পর্যন্ত কিংবা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হলেও তা রক্ষা করার চেষ্টা করেন। আবার কিছু লোক আছেন, যারা কথা দিয়ে উছিলা খোঁজেন কথা না রাখার। বলাই বাহুল্য, পতিত স্বৈরাচারী এরশাদ দ্বিতীয় শ্রেণীভুক্ত। তিনি কথা দেনই শুধু কথা না রাখার জন্য।
যদি বলা হয় বর্তমান পৃথিবীর একজন 'সর্বশ্রেষ্ঠ সুবিধাবাদী'র নাম বলো, তাতে যদি কেউ এরশাদের নামটি বলে তাহলে কোনো ভুল হবে না। কারণ, এরশাদ নিজের সুবিধাটুকুই শুধু দেখেন। 'যেখানে সুবিধা, সেখানে আমরা'—বোধ করি এটাই এখন এরশাদের মূল নীতি।
এরশাদের সাম্প্রতিক কথাবার্তায় যারা আশান্বিত হয়েছিলেন, তারা যে এখন হতাশায় নিমজ্জিত, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে, এরশাদ কিন্তু তার একটি কথা রেখেছেন। তিনি মহাজোট 'ত্যাগ' করেছেন। কিন্তু কেন এবং কোন প্রেক্ষাপটে তিনি এটা করলেন সেটা ভেবে দেখা দরকার। বিষয়টি নিয়ে এর আগে আমার দেশ-এ একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম আমি।
গত ৯ জুলাই-২০১৩ তারিখে 'জাতীয় পার্টি : ট্রাম্পকার্ড না জোকার' শীর্ষক ওই নিবন্ধটির শেষাংশে আমি লিখেছিলাম- "অবশ্য কেউ কেউ বলছেন, এবার এরশাদ সত্যি সত্যিই নৌকা থেকে নেমে পড়বেন। কেননা, তিনি এটা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন যে, আগামীতে নৌকার হালে পানি পাবে না। সরকারের ব্যর্থতা-দুঃশাসন জনমনে যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে, আগামী নির্বাচনে তা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাতের মতো ঘটনা ঘটাবে। ক্ষুব্ধ জনগণের ভোটের তপ্ত লাভা আওয়ামী লীগের নীল-নকশাকে ভস্ম করে দেবে। ফলে সে চরম বিপর্যয়কর অবস্থার ভাগীদার হতে চাচ্ছেন না এরশাদ। বরং বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়ে এককভাবে নির্বাচন করেও যদি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা যায় সেটাই ভালো। আর সেজন্যই মহাজোট ত্যাগ এবং এককভাবে নির্বাচন করার কথা বলছেন এরশাদ।
অন্যদিকে রাজনীতি সচেতন মহল মনে করেন, এরশাদের মহাজোট ত্যাগের আগাম ঘোষণা, এককভাবে নির্বাচন করার প্রত্যয়, সবই আওয়ামী লীগের সঙ্গে 'আপসে ঝগড়া'র অংশ। দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর আওয়ামী লীগ বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নীল-নকশা আঁটছে। সে নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে থাকবে। আর এরশাদ হবেন বিরোধীদলীয় নেতা। শোনা যায়, ওই নীল-নকশার নির্বাচনে অংশ নিতে ১৮ দলীয় জোটের কোনো কোনো শরিক দলকেও টানার চেষ্টা করছে মহাজোট সরকার।
এ অনুমানটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য মনে হয় এজন্য যে, এরশাদ বলেছেন—তিনি 'যথাসময়ে মহাজোট ত্যাগের ঘোষণা দেবেন।' এই 'যথাসময়ে' শব্দটিই সন্দেহ-সংশয়ের মূল কারণ। ওই 'যথাসময়'টি কখন এবং তখন এরশাদ কী করবেন তা বলা মুশকিল। যদি সরকার শেষ পর্যন্ত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নেয় এবং সে নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে, তাহলে এরশাদের জাতীয় পার্টি যে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর যদি বিএনপিকে বাদ দিয়ে আওয়ামী নীল-নকশার নির্বাচন হয়, তাহলে সে নীল-নকশার অংশীদার হিসেবে এরশাদের জাতীয় পার্টি গৃহপালিত বিরোধী দল হওয়ার লক্ষ্যে সে নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেবে। আর এজন্যই এরশাদ বলেছেন 'যথাসময়ে' তিনি মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দেবেন।
সুতরাং, অতীত পর্যালোচনা আর বর্তমানের বিশ্লেষণ এটাই বলে যে, এরশাদের অবস্থান সুস্পষ্ট হতে আরও অনেক সময় লাগবে। হাওয়া বুঝে পাল খাটানোতে অভিজ্ঞ এরশাদ মহাজোটের শেষ পরিণতি না দেখেই সেখান থেকে পাততাড়ি গোটাবেন এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। ঘটনাপ্রবাহ একেবারে শেষ প্রান্তে না পৌঁছা পর্যন্ত এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে, আগামী নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি ট্রাম্পকার্ড হবে, নাকি জোকার হিসেবেই ব্যবহৃত হবে।"
সম্মানিত পাঠক, মাত্র চার মাসের মাথায় আমার অনুমান সত্য হতে দেখে আমি নিজেও কম বিস্মিত হইনি। এরশাদকে কেউ কেউ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের সবচেয়ে 'আনপ্রেডিক্টেবল' চরিত্র বলেন। কথাটা শতভাগ খাঁটি। এরশাদকে নিয়ে অনেকেই অনেক মন্তব্য করেন। কেউ কেউ বলেন 'ইবলিশকে বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু এরশাদকে নয়।' কারণ, ইবলিশ মানুষকে প্ররোচনা বা কুমন্ত্রণা দিতে মসজিদের অজুখানা পর্যন্ত যেতে পারে, ভেতরে ঢুকতে পারে না। কিন্তু এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে মসজিদে দাঁড়িয়েও মিথ্যে কথা বলে মানুষকে প্রতারিত করেছেন। সাত দিন আগে প্রোগ্রাম করেও এসে বলেছেন, 'আজ ফজরের নামাজ পড়ে স্বপ্নে দেখলাম, আপনাদের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করছি।' পবিত্র মসজিদে দাঁড়িয়ে যে লোক এমন নির্জলা মিথ্যে বলতে পারেন, তাকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ থাকতে পারে কি?
শিল্পী কামরুল হাসান ১৯৮৮ সালে এরশাদকে 'বিশ্ব বেহায়া' খেতাবে ভূষিত করেছিলেন। শিল্পীর খেতাব যে শতভাগ সঠিক ছিল এখন তা সবাই স্বীকার করেন।
এরশাদ বলেছেন জনগণ তার গায়ে 'থুতু' দেবে। একবার বলেছেন শেখ হাসিনার অধীনে সব দল নির্বাচন না করলে তিনি ও তার দল নির্বাচনে গেলে জনগণ তাকে 'থুতু' দেবে। পরে বলেছেন নির্বাচনে না গেলে জনগণ 'থুতু' দেবে। এরশাদের অনেক কথা ফালতু হলেও এ কথাটা 'খাঁটি সোনার চেয়েও খাঁটি'। এদেশের জনগণ তাকে এখন থুতুই দেবে। সামনা-সামনি তার গায়ে থুতু নিক্ষেপ হয়তো সম্ভব হবে না কারও পক্ষে। তবে তার ছবিতে, তার নামের ওপর 'গণথুতু' নিক্ষেপ হতেই থাকবে। কারণ, থুতুই যে তার একমাত্র প্রাপ্য। উল্লেখ্য, গত ১৯ নভেম্বর সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ নারী-পুরুষ এরশাদের ছবিতে থুতু দিয়েছে, জুতা মেরেছে। টিভি চ্যানেলগুলোতে সে দৃশ্য দেখে অনেকেই মন্তব্য করেছেন—এটাই হলো বিশ্ব বেহায়ার উপযুক্ত পুরস্কার। সবশেষে বলা দরকার, পলাশী যুদ্ধের পর এ উপমহাদেশের কোনো পিতা-মাতা তার পুত্রের নাম 'মীর জাফর' রাখেনি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জার্মানিতে কেউ সন্তানের নাম হিটলার রাখে না। এরপর বাংলাদেশের কোনো মানুষ তার পুত্রের নাম 'এরশাদ' রাখবে কিনা সন্দেহ আছে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক
mohon91@yahoo.com


__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___