শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩, ২৯ অগ্রহায়ন ১৪২০
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ প্রমাণিত
বিকাশ দত্ত ॥ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের মার্চ মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু করে। ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনালে নয়টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। একটি মামলার রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে। জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল ও উচ্চ আদালতে সব আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রায় বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনপক্ষ যত অভিযোগ এনেছে বিচারের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হয়েছে। দীর্ঘ তিন বছর পর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার সব বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। প্রসিকিউশন বিভাগ তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ষড়যন্ত্র, উস্কানিসহ মোট ছয়টি অভিযোগ আনে। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৬টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করা হয়। এর পর আপীল বিভাগে ৬টি অভিযোগই প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়।
সর্বশেষ কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। আর এর মধ্য দিয়ে কাদের মোল্লাকে সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া প্রাণদ- কার্যকরের আইনী বাধাও কাটল। 'রিভিউ' আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা ও মূল আবেদনের ওপর দুই দিন শুনানির পর প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের আপীল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। আপীল বিভাগে অন্য বিচারপতিদের মধ্যে ছিলেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা), বিচারপতি মোঃ আব্দুল ওয়াহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দালাল আইনে ২২ জনের মৃত্যুদ- প্রদান করা হলেও এর মধ্যে কারও মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়নি। এবার মানবতাবিরোধী অপরাধের ৯টি মামলার রায়ে ১০ জনের দ- প্রদান করা হয়। এর মধ্যে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে আরও ৬টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। ২টি মামলার আসামি পলাতক থাকায় তাদের ট্রাইব্যুনালের সাজা মৃত্যুদ-ই বহাল রয়েছে। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মামলা ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়েছে। ৮টি মামলার বিচারকাজ চলছে। বাকি ১২টি মামলার বিভিন্ন পর্যায়ে তদন্তাধীন রয়েছে।
এর মধ্যে উচ্চ আদালতে সব আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হতে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে চেয়েছিলেন। প্রথম পর্যায়ে দালাল আইনে এদের বিচার হয়। তখন ১১ হাজার দালাল আটক করা হয়েছিল। এর মধ্যে বিচারে ২২ জনের মৃত্যুদ-, ৬৮ জনের যাবজ্জীবন ও প্রায় ৭০০ জনকে বিভিন্ন দ-ে দ-িত করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর দালালদের বিচার বন্ধ হয়ে যায়।
উল্লেখ্য 'কুষ্টিয়ার দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্ত রাজাকার চিকন আলীকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির আদেশ দেয়। আসামি চিকন আলীকে ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ দালাল আদেশের ১১(ক) ধারার সঙ্গে গঠিত ফৌজদারি আইনের ৩০২ ধারা মতে দ- দান করা হয়। মামলার বিবরণে প্রকাশ, মিরপুর গ্রামের অধিবাসী আসামি চিকন আলী বাংলাদেশ দখলদার আমলে রাজাকারে ভর্তি হয় এবং হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ ও মহিলাদের শ্লীলতাহানি কাজে অংশগ্রহণ করে।
প্রসিকিউশন বিভাগ জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ষড়যন্ত্র, উস্কানিসহ মোট ছয়টি অভিযোগ আনে। তার মধ্যে প্রথম অভিযোগ হলো, আলবদর বাহিনীর নেতা আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা ও তার সহযোগী অবাঙালী বিহারীদের নিয়ে বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে জোরপূর্বক ধরে এনে মিরপুর ১২ নম্বর থেকে ১ নম্বর এবং ১নং শাহ আলী মাজার থেকে হাতে দড়ি বেঁধে টেনে-হেঁচড়ে পুনরায় মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে ঈদগাহ মাঠে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। পল্লবকে দু'দিন ঝুলিয়ে রেখে তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর সদস্য ও অবাঙালী বিহারী দ্বারা পল্লবের আঙ্গুলগুলো কেটে ফেলে এবং ৫ এপ্রিল তার নির্দেশে ও উপস্থিতিতে তার প্রধান সহযোগী আলবদর আক্তার গুন্ডা পল্লবের বুকে পর পর ৫টি গুলি করে হত্যা করে। দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আলবদর বাহিনী নেতা আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা তার সহযোগী আলবদর সদস্য ও অবাঙালী বিহারীদের নিয়ে মিরপুরের মহিলা কবি মেহেরুন্নেছাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
তিন নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৯ মার্চ সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব ঢাকার আরামবাগ হতে তাঁর নিজ বাড়ির অবস্থা দেখার জন্য আসেন। বাসার সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যাওযায় তিনি পুনরায় আরামবাগের উদ্দেশে রওনা দেয়ার জন্য মিরপুর ১০নং বাসস্ট্যান্ডে গেলে স্থানীয় আলবদর বাহিনীর নেতা আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর সদস্য ও অবাঙালী বিহারীদের নিয়ে বাসে ওঠার আগেই খন্দকার আবু তালেবকে ধরে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এর পর তাঁকে মিরপুর জল্লাদখানা পাম্প হাউসে নিয়ে আসে। এর পর আসামি আব্দুর কাদের মোল্লার নির্দেশে ও উপস্থিতিতে তাঁকে জবাই করে হত্যা করে।
অভিযোগ ৪-এ বলা হয়েছে, আব্দুল কাদের মোল্লা তার সহযোগী বাহিনী আলবদর সদস্য ও পাকি সৈন্যদের নিয়ে হত্যাকা- ঘটিয়েছেন। একাত্তরের ২৫ নবেম্বর ভাওয়াল খানবাড়ি ও ঘাটারচর (শহীদনগর) এবং পার্শ্ববর্তী দুটি গ্রামে কাদের মোল্লা তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর সদস্যসহ পাকিস্তানী বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে নিরস্ত্র মানুষে ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ১১ জনকে হত্যা করে। হত্যাকা-ের পর স্থানীয় বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। অভিযোগ-৫-এ বলা হয়েছে, মোল্লার নেতৃত্বে একাত্তরের ২৪ এপ্রিল তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর প্রায় ৫০ জন সদস্য নিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহায়তায় আলুব্দী গ্রামে নির্বিচারে গুলি করে ৩৪৪ জনকে হত্যা করা হয়। অভিযোগ-৬-এ বলা হয়েছে, আব্দুল কাদের মোল্লা মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর বাহিনী নিয়ে শহীদ হযরত আলী লস্করের বাড়িতে ঢুকে মধ্যযুগীয় তা-ব চালান। ঢাকার মিরপুরের ১২নং সেকশনের কালাপানির ৫নং লাইনের ২১ নম্বর বাড়িতে এই তা-ব চালানো হয়। সেখানে আব্দুল কাদের মোল্লার নির্দেশে হযরত আলী লস্করকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাঁর স্ত্রী আমেনা ও দুই শিশু মেয়ে খোদেজা ও তাছলিমাকে জবাই করে হত্যা করা হয়। ছোট ছেলে বাবুু যার বয়স মাত্র ২ বছর, তাকে মাটিতে আছড়ে হত্যা করা হয়। দ্বিতীয় মেয়ে আমেনাকে (১১) পালাক্রমে ১২ জন মিলে ধর্ষণ করে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এর পর ২০০৮ সালে তার বিরুদ্ধে পল্লবী থানাতেও মামলা দায়ের করা হয়। ২০১০ সালের ১৩ জুলাই তাকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্ত সংস্থা তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। ২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ২-এ স্থানান্তর করা হয়। মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে ২০১৩ সালের ১৭ জানুয়ারি রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়। প্রসিকিউশন লিস্টের মোট ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে এ মামলার দুই তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১২ জন ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত ১৫ নবেম্বর কাদের মোল্লার পক্ষে তার নিজের সাক্ষের মধ্য দিয়ে মোট ৯৬৫ সাক্ষীর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের বেধে দেয়া ৬ সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। কাদের মোল্লার সাজা বাড়াতে গত ৩ মার্চ আপীল করে রাষ্ট্রপক্ষ। পরের দিন ৪ মার্চ বেকসুর খালাস চেয়ে আপীল করে আসামিপক্ষ। গত ২৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আপীল আবেদনের ওপর শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছিল আপীল বিভাগ। চূড়ান্ত শুনানি শেষ হওয়ার এক মাস ২৪ দিন পর ১৭ সেপ্টেম্বর জনাকীর্ণ আদালতে রায় ঘোষণা করে সর্বোচ্চ আদালত। রায়ে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়। ৫ ডিসেম্বর আপীল বিভাগ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রদান করা করে। ৮ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে। এর পর ১০ ডিসেম্বর কারা কর্তৃপক্ষ রায় কার্যকর করার উদ্যোগ নিলে আসামিপক্ষ রাতে চেম্বার জজের কাছ থেকে স্থগিতাদেশ আনেন। এর পর বুধ ও বৃহস্পতি দু'দিন রিভিউ করার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে শুনানি শেষে ওই আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়। এর ফলে রায় বাস্তবায়নে আর কোন বাধা নেই।
৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের ৬টি অভিযোগে মধ্যে ৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করা হয়। চার্জ ৫ ও ৬ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছে। ৪নং অভিযোগটি প্রমাণিত না হওয়ায় এটি থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। অপরদিকে চার্জ ১, ২ ও ৩ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কাদের মোল্লাকে ১৫ বছরের কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। এই সাজাগুলো একসঙ্গে চলবে। অর্থাৎ তাকে ৩০ বছর সাজা ভোগ করতে হবে। রায় ঘোষণার দিন থেকে এই সাজা কার্যকর হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, ছাত্র ও আইনজীবীসহ আরও অনেককে হত্যার মোট ৬টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল। ৫টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এ রায় দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ৬টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়। আপীল বিভাগ আসামি কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ৬ নম্বর অভিযোগে সপরিবারে হযরত আলী লস্করকে হত্যার দায়ে ফাঁসির রায় প্রদান করে আপীল বিভাগ। এ ছাড়া ৪ নম্বর অভিযোগে ঘাটারচর গণহত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনাল খালাস দিলেও আপীল বিভাগ যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ প্রদান করে। ১, ২, ৩ ও ৫ নম্বর অভিযোগগুলোতে ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখেছে আপীল বিভাগ। এর মধ্যে মিরপুরের আলোকদী (আলুব্দী) গ্রামে গণহত্যার দায়ে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়। এ ছাড়া ১ম অভিযোগ, মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেয়া, দ্বিতীয় অভিযোগ কবি মেহেরুন্নেসা, তার মা ও দুই ভাইকে হত্যা এবং তৃতীয় অভিযোগে সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে হত্যার দায়ে প্রতিটিতে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ১৫ বছর করে কারাদ-াদেশ দেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২-এ দেয়া আরও ৬টি মামলার রায় আপীল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এগুলো হলো জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আব্দুল আলীম। পলাতক থাকার কারণে বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবদুল কালাম আজাদ ও আলবদর বাহিনীর অপারেশন ইনচার্জ চৌধুরী মাঈনুদ্দীন এবং চীফ এক্সিকিউটর মোঃ আশরাফুজ্জামান খানকে মুত্যুদ-। এ রায়ের বিরুদ্ধে কোন আপীল করা হয়নি।
এ ছাড়া জামায়াতের বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামীর মামলার রায় ট্রাইব্যুনালে অপেক্ষমাণ রয়েছে। যে কোন সময় তার রায় ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি দুটি ট্রাইব্যুনালে আরও ৮টি মামলার বিচারকাজ চলছে। সেগুলো হলো জামায়াতের নেতা মীর কাশেম আলী, সিনিয়র নায়েবে আমির একেএম ইউসুফ, এটিএম আজাহারুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুস সোবহান, বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন খোকন, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা হাজী মোঃ মোবারক হোসেন, জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মোঃ কায়সার। আর যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে তারা হলেন, বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, জাতীয় পার্টির ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বর, রাজাকার সিরাজুল ইসলাম মাস্টার, রুস্তম আলী, আমজাদ মিনা, যশোরের মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন, রাজাকার সেয়দ মোঃ হোসেন ওরফে হাছেন আলী, মোঃ নাসির, আতাউর রহমান।
সর্বশেষ কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। আর এর মধ্য দিয়ে কাদের মোল্লাকে সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া প্রাণদ- কার্যকরের আইনী বাধাও কাটল। 'রিভিউ' আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা ও মূল আবেদনের ওপর দুই দিন শুনানির পর প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের আপীল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। আপীল বিভাগে অন্য বিচারপতিদের মধ্যে ছিলেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা), বিচারপতি মোঃ আব্দুল ওয়াহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দালাল আইনে ২২ জনের মৃত্যুদ- প্রদান করা হলেও এর মধ্যে কারও মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়নি। এবার মানবতাবিরোধী অপরাধের ৯টি মামলার রায়ে ১০ জনের দ- প্রদান করা হয়। এর মধ্যে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে আরও ৬টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। ২টি মামলার আসামি পলাতক থাকায় তাদের ট্রাইব্যুনালের সাজা মৃত্যুদ-ই বহাল রয়েছে। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মামলা ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়েছে। ৮টি মামলার বিচারকাজ চলছে। বাকি ১২টি মামলার বিভিন্ন পর্যায়ে তদন্তাধীন রয়েছে।
এর মধ্যে উচ্চ আদালতে সব আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হতে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে চেয়েছিলেন। প্রথম পর্যায়ে দালাল আইনে এদের বিচার হয়। তখন ১১ হাজার দালাল আটক করা হয়েছিল। এর মধ্যে বিচারে ২২ জনের মৃত্যুদ-, ৬৮ জনের যাবজ্জীবন ও প্রায় ৭০০ জনকে বিভিন্ন দ-ে দ-িত করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর দালালদের বিচার বন্ধ হয়ে যায়।
উল্লেখ্য 'কুষ্টিয়ার দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্ত রাজাকার চিকন আলীকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির আদেশ দেয়। আসামি চিকন আলীকে ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ দালাল আদেশের ১১(ক) ধারার সঙ্গে গঠিত ফৌজদারি আইনের ৩০২ ধারা মতে দ- দান করা হয়। মামলার বিবরণে প্রকাশ, মিরপুর গ্রামের অধিবাসী আসামি চিকন আলী বাংলাদেশ দখলদার আমলে রাজাকারে ভর্তি হয় এবং হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ ও মহিলাদের শ্লীলতাহানি কাজে অংশগ্রহণ করে।
প্রসিকিউশন বিভাগ জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ষড়যন্ত্র, উস্কানিসহ মোট ছয়টি অভিযোগ আনে। তার মধ্যে প্রথম অভিযোগ হলো, আলবদর বাহিনীর নেতা আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা ও তার সহযোগী অবাঙালী বিহারীদের নিয়ে বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে জোরপূর্বক ধরে এনে মিরপুর ১২ নম্বর থেকে ১ নম্বর এবং ১নং শাহ আলী মাজার থেকে হাতে দড়ি বেঁধে টেনে-হেঁচড়ে পুনরায় মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে ঈদগাহ মাঠে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। পল্লবকে দু'দিন ঝুলিয়ে রেখে তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর সদস্য ও অবাঙালী বিহারী দ্বারা পল্লবের আঙ্গুলগুলো কেটে ফেলে এবং ৫ এপ্রিল তার নির্দেশে ও উপস্থিতিতে তার প্রধান সহযোগী আলবদর আক্তার গুন্ডা পল্লবের বুকে পর পর ৫টি গুলি করে হত্যা করে। দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আলবদর বাহিনী নেতা আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা তার সহযোগী আলবদর সদস্য ও অবাঙালী বিহারীদের নিয়ে মিরপুরের মহিলা কবি মেহেরুন্নেছাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
তিন নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৯ মার্চ সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব ঢাকার আরামবাগ হতে তাঁর নিজ বাড়ির অবস্থা দেখার জন্য আসেন। বাসার সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যাওযায় তিনি পুনরায় আরামবাগের উদ্দেশে রওনা দেয়ার জন্য মিরপুর ১০নং বাসস্ট্যান্ডে গেলে স্থানীয় আলবদর বাহিনীর নেতা আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর সদস্য ও অবাঙালী বিহারীদের নিয়ে বাসে ওঠার আগেই খন্দকার আবু তালেবকে ধরে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এর পর তাঁকে মিরপুর জল্লাদখানা পাম্প হাউসে নিয়ে আসে। এর পর আসামি আব্দুর কাদের মোল্লার নির্দেশে ও উপস্থিতিতে তাঁকে জবাই করে হত্যা করে।
অভিযোগ ৪-এ বলা হয়েছে, আব্দুল কাদের মোল্লা তার সহযোগী বাহিনী আলবদর সদস্য ও পাকি সৈন্যদের নিয়ে হত্যাকা- ঘটিয়েছেন। একাত্তরের ২৫ নবেম্বর ভাওয়াল খানবাড়ি ও ঘাটারচর (শহীদনগর) এবং পার্শ্ববর্তী দুটি গ্রামে কাদের মোল্লা তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর সদস্যসহ পাকিস্তানী বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে নিরস্ত্র মানুষে ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ১১ জনকে হত্যা করে। হত্যাকা-ের পর স্থানীয় বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। অভিযোগ-৫-এ বলা হয়েছে, মোল্লার নেতৃত্বে একাত্তরের ২৪ এপ্রিল তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর প্রায় ৫০ জন সদস্য নিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহায়তায় আলুব্দী গ্রামে নির্বিচারে গুলি করে ৩৪৪ জনকে হত্যা করা হয়। অভিযোগ-৬-এ বলা হয়েছে, আব্দুল কাদের মোল্লা মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর বাহিনী নিয়ে শহীদ হযরত আলী লস্করের বাড়িতে ঢুকে মধ্যযুগীয় তা-ব চালান। ঢাকার মিরপুরের ১২নং সেকশনের কালাপানির ৫নং লাইনের ২১ নম্বর বাড়িতে এই তা-ব চালানো হয়। সেখানে আব্দুল কাদের মোল্লার নির্দেশে হযরত আলী লস্করকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাঁর স্ত্রী আমেনা ও দুই শিশু মেয়ে খোদেজা ও তাছলিমাকে জবাই করে হত্যা করা হয়। ছোট ছেলে বাবুু যার বয়স মাত্র ২ বছর, তাকে মাটিতে আছড়ে হত্যা করা হয়। দ্বিতীয় মেয়ে আমেনাকে (১১) পালাক্রমে ১২ জন মিলে ধর্ষণ করে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এর পর ২০০৮ সালে তার বিরুদ্ধে পল্লবী থানাতেও মামলা দায়ের করা হয়। ২০১০ সালের ১৩ জুলাই তাকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্ত সংস্থা তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। ২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ২-এ স্থানান্তর করা হয়। মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে ২০১৩ সালের ১৭ জানুয়ারি রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়। প্রসিকিউশন লিস্টের মোট ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে এ মামলার দুই তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১২ জন ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত ১৫ নবেম্বর কাদের মোল্লার পক্ষে তার নিজের সাক্ষের মধ্য দিয়ে মোট ৯৬৫ সাক্ষীর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের বেধে দেয়া ৬ সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। কাদের মোল্লার সাজা বাড়াতে গত ৩ মার্চ আপীল করে রাষ্ট্রপক্ষ। পরের দিন ৪ মার্চ বেকসুর খালাস চেয়ে আপীল করে আসামিপক্ষ। গত ২৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আপীল আবেদনের ওপর শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছিল আপীল বিভাগ। চূড়ান্ত শুনানি শেষ হওয়ার এক মাস ২৪ দিন পর ১৭ সেপ্টেম্বর জনাকীর্ণ আদালতে রায় ঘোষণা করে সর্বোচ্চ আদালত। রায়ে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়। ৫ ডিসেম্বর আপীল বিভাগ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রদান করা করে। ৮ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে। এর পর ১০ ডিসেম্বর কারা কর্তৃপক্ষ রায় কার্যকর করার উদ্যোগ নিলে আসামিপক্ষ রাতে চেম্বার জজের কাছ থেকে স্থগিতাদেশ আনেন। এর পর বুধ ও বৃহস্পতি দু'দিন রিভিউ করার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে শুনানি শেষে ওই আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়। এর ফলে রায় বাস্তবায়নে আর কোন বাধা নেই।
৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের ৬টি অভিযোগে মধ্যে ৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করা হয়। চার্জ ৫ ও ৬ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছে। ৪নং অভিযোগটি প্রমাণিত না হওয়ায় এটি থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। অপরদিকে চার্জ ১, ২ ও ৩ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কাদের মোল্লাকে ১৫ বছরের কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। এই সাজাগুলো একসঙ্গে চলবে। অর্থাৎ তাকে ৩০ বছর সাজা ভোগ করতে হবে। রায় ঘোষণার দিন থেকে এই সাজা কার্যকর হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, ছাত্র ও আইনজীবীসহ আরও অনেককে হত্যার মোট ৬টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল। ৫টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এ রায় দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ৬টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়। আপীল বিভাগ আসামি কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ৬ নম্বর অভিযোগে সপরিবারে হযরত আলী লস্করকে হত্যার দায়ে ফাঁসির রায় প্রদান করে আপীল বিভাগ। এ ছাড়া ৪ নম্বর অভিযোগে ঘাটারচর গণহত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনাল খালাস দিলেও আপীল বিভাগ যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ প্রদান করে। ১, ২, ৩ ও ৫ নম্বর অভিযোগগুলোতে ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখেছে আপীল বিভাগ। এর মধ্যে মিরপুরের আলোকদী (আলুব্দী) গ্রামে গণহত্যার দায়ে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়। এ ছাড়া ১ম অভিযোগ, মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেয়া, দ্বিতীয় অভিযোগ কবি মেহেরুন্নেসা, তার মা ও দুই ভাইকে হত্যা এবং তৃতীয় অভিযোগে সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে হত্যার দায়ে প্রতিটিতে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ১৫ বছর করে কারাদ-াদেশ দেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২-এ দেয়া আরও ৬টি মামলার রায় আপীল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এগুলো হলো জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আব্দুল আলীম। পলাতক থাকার কারণে বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবদুল কালাম আজাদ ও আলবদর বাহিনীর অপারেশন ইনচার্জ চৌধুরী মাঈনুদ্দীন এবং চীফ এক্সিকিউটর মোঃ আশরাফুজ্জামান খানকে মুত্যুদ-। এ রায়ের বিরুদ্ধে কোন আপীল করা হয়নি।
এ ছাড়া জামায়াতের বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামীর মামলার রায় ট্রাইব্যুনালে অপেক্ষমাণ রয়েছে। যে কোন সময় তার রায় ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি দুটি ট্রাইব্যুনালে আরও ৮টি মামলার বিচারকাজ চলছে। সেগুলো হলো জামায়াতের নেতা মীর কাশেম আলী, সিনিয়র নায়েবে আমির একেএম ইউসুফ, এটিএম আজাহারুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুস সোবহান, বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন খোকন, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা হাজী মোঃ মোবারক হোসেন, জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মোঃ কায়সার। আর যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে তারা হলেন, বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, জাতীয় পার্টির ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বর, রাজাকার সিরাজুল ইসলাম মাস্টার, রুস্তম আলী, আমজাদ মিনা, যশোরের মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন, রাজাকার সেয়দ মোঃ হোসেন ওরফে হাছেন আলী, মোঃ নাসির, আতাউর রহমান।
শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩, ২৯ অগ্রহায়ন ১৪২০
যে সাক্ষ্যে কাদের মোল্লার ফাঁসি
সুমন মাহবুব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2013-09-18 19:50:09.0 BdST Updated: 2013-09-18 21:36:53.0 BdST
RELATED STORIES
-
কাদের মোল্লার সামনে ফাঁসির দড়ি
2013-09-17 09:27:32.0
যে সাক্ষ্যে কাদের মোল্লার ফাঁসি
বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৩, ২৭ অগ্রহায়ন ১৪২০
বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৩, ২৭ অগ্রহায়ন ১৪২০
---------------------------------------------------------------------------------------------
Also read:
ছাত্র ইউনিয়ন ছেড়ে আলবদর কমান্ডার আবদুল কাদের মোল্লা !
Related video:
লাকী আক্তার- Tui Rajakar Slogan leading by Lucky akter
__._,_.___