Banner Advertiser

Thursday, February 13, 2014

[mukto-mona] এক রাজাকারের আত্মজীবনী (৩ - ৪ )



বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ১ ফাল্গুন ১৪২
এক রাজাকারের আত্মজীবনী ( -  )
মুনতাসীর মামুন
(পূর্ব প্রকাশের পর)
॥ ৩ ॥
১৯৭০-এর নির্বাচনের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পাকিস্তান আদর্শের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে বাংলাদেশ আদর্শ। পাকিস্তান আদর্শ যারা অটুট রাখতে চেয়েছিল তারা গুরুত্ব দেয় পেশীশক্তির ওপর। পরিণামে শুরু হয় তাদের ভাষায় 'গৃহযুদ্ধ'। বাংলাদেশ আদর্শের পতাকাবাহীদের ভাষায় মুক্তিযুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধ পাকিস্তান আদর্শবাদীদের জন্য বিপন্ন অবস্থার সৃষ্টি করে। এদের মধ্যে যাঁরা নিষ্ক্রিয় জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন তাঁরা মানসিক কষ্টের শিকার হলেও নিষ্ক্রিয়ই ছিলেন। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে পাকিস্তান আদর্শের বিপর্যয় হিসেবেই দেখেছিলেন। কারণ, তাঁদের কাছে কখনও মনে হয়নি বাঙালী পরিচয়টি প্রথম, পাকিস্তানী পরিচয় আসে তার পরে।
রাজনীতির সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল তারা ফিরতে চায়নি। কারণ, পাকিস্তান আদর্শ ও কেন্দ্রের সেনাবাহিনীর শক্তি তাদের কাছে ছিল অজেয়। তাদের মনে হয়েছিল, বাংলাদেশের আদর্শ জয়ী হলে তাদের স্থান হবে বিপন্ন। যে রাজনীতি করে তারা ক্ষমতার অংশীদার বা কায়েমি স্বার্থের অংশীদার হয়েছিল সেটি থাকবে না। নতুন বাংলাদেশে তাদের স্থান থাকবে না। এর চেয়ে পাকিস্তানে অধস্তন হিসেবে ক্ষমতার সহযোগী হওয়া ছিল শ্রেয়। এখানে আদর্শ বা ধর্মের প্রশ্ন আসতে পারে। কিন্তু সেটি গৌণ। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালী কি মুসলমান ছিল না? বা ইসলামে বিশ্বাস করত না? তবে ধর্মটিকে ঢাল হিসেবে রাখা ছাড়া তাদের উপায় ছিল না। একটা উদাহরণ দিলেই তা স্পষ্ট হবে। তারা যা করেছে তা কি ইসলামী আদর্শে অনুমোদিত? ফলে, অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে যা করার করেছে। ড. সাজ্জাদ হোসায়েনের পক্ষে সম্ভব ছিল না, সাধারণ আল-বদরের মতো অস্ত্র হাতে ঘোরা। কিন্তু লক্ষ্য ছিল এক। ফলে, যার যার অবস্থান থেকে সে সে কাজ করে গেছে। এভাবে সৃষ্টি হয়েছে পাকিস্তানীদের দালালদের, দালালদের মধ্যে অবস্থানগত কারণে আবার বিভিন্ন গ্রুপের। এর মধ্যে সবচেয়ে হিংস্র ও ফ্যাসিস্ট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে জামায়াতে ইসলাম ও তার অঙ্গ সংগঠন ছাত্রসংঘ। পাকিস্তানের অ্যাকাডেমিশিয়ান আব্বাস রশীদ 'পাকিস্তান : মতাদর্শের পরিধি' শীর্ষক প্রবন্ধে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন- "উলেমাগোষ্ঠীর নিকট আইউব খানের নির্ভরশীলতার মধ্য দিয়ে সামরিক বাহিনী এবং সনাতনপন্থী সংগঠনের মাঝে অসম হলেও পারস্পরিক ফলপ্রসূ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে, সনাতনপন্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে অগঠিত, অসংঘবদ্ধ উলেমাগোষ্ঠী নয় বরং তাদের স্থান ইতোমধ্যে দখল করে নেয় সুসংগঠিত জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞকে কেবল সমর্থনই করেনি, তাদের কর্মী ও সদস্যরা শান্তি কমিটিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। সামরিক বাহিনী কর্তৃক সৃষ্ট এই শান্তি বাহিনীর দায়িত্ব ছিল বিদ্রোহ দমনে সামরিক কর্মকর্তাদের সহায়তা করা। আদর্শগত পর্যায়েও জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত সামরিক বাহিনী স্বাগত জানিয়েছিল সর্বান্তকরণে।" তাই আমরা দেখি, আল-বদর ও আল-শামসদের মধ্যে জামায়াতের কর্মীই বেশি।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরই দালালদের দ্বারা গঠিত হয় শান্তি কমিটি। ২৬ এপ্রিল, ১৯৭১ সালের 'দৈনিক পাকিস্তানে'র সংবাদ অনুসারে "স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দ্রুত পুনর্প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রবিরোধী ও সমাজবিরোধী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জনগণকে সজাগ রাখা ও গুজব রচনাকারীদের দুরভিসন্ধি প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে এই কমিটি গঠিত হয়েছে।" এর সদস্যরা ছিল পাকিস্তান আদর্শের অনুসারী বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, এলিট, যারা অস্ত্রহাতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ করতে যায়নি। কিন্তু হত্যাকা-ের পরিকল্পনায় বা অংশগ্রহণে তারা নিষ্ক্রিয় ছিল না অনেক ক্ষেত্রে।
বিভিন্ন পেশায় বা পদে থেকে এবং রাজনীতিবিদ হিসেবে যারা হানাদারদের সহযোগিতা করেছে সেই সময়, তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে 'কোলাবরেটর' হিসেবে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক অনেকেই ছিলেন।
এরপর ছিল রাজাকার। আসলে এর শুদ্ধ উচ্চারণ 'রেজাকার'- ফারসী শব্দ। 'রেজা' হলো স্বেচ্ছাসেবী, 'কার' অর্থ কর্মী। এক কথায় স্বেচ্ছাসেবী। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় হায়দরাবাদের নিজাম অনিচ্ছুক ছিলেন ভারতের সঙ্গে মিলনে। আত্মরক্ষার জন্য তিনি গঠন করেছিলেন একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী যার নাম দেয়া হয়েছিল রেজাকার বাহিনী।
মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত নেতা এ.কে.এম. ইউসুফ শব্দটি ধার করেন এবং খুলনায় রেজাকার বাহিনীর সূত্রপাত করেন। 'একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়' গ্রন্থের তথ্য অনুযায়ী, ৯৬ জন জামায়াত কর্মী নিয়ে এই বাহিনীর সূত্রপাত যা পরে পুরো বাংলাদেশ ছড়িয়ে পড়ে। পূর্বোক্ত গ্রন্থ অনুযায়ী- "প্রশাসনিকভাবে এই বাহিনীতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর লোক অন্তর্ভুক্ত হলেও তাদেরকে তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথমত যারা 'পাকিস্তান' ও ইসলামকে রক্ষার জন্য বাঙালী হত্যা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধ করাকে কর্তব্য করেছিল, দ্বিতীয়ত, যারা লুটপাট, প্রতিশোধ গ্রহণ, নারী নির্যাতন করার একটি সুযোগ গ্রহণ করতে চেয়েছিল এবং তৃতীয়ত, গ্রামের দরিদ্র অশিক্ষিত জনগণ যারা সীমান্তের ওপারে চলে যেতে ব্যর্থ হয় এ ধরনের লোককে প্রলুব্ধকরণ, বল প্রয়োগ বা ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে রাজাকার বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।"
রাজাকার বাহিনী যাদের নিয়েই গঠিত হোক না কেন, এই বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করত জামায়াতে ইসলামী। আবু সাইয়িদ তাঁর সাধারণ ঘোষণার প্রেক্ষিত ও গোলাম আজম' গ্রন্থে জনৈক রাজাকারের পরিচয়পত্র তুলে দিয়েছেন যেখানে তার প্রমাণ পাওয়া যাবে-
''This is to certify that Mr. haroon-ur-Rashid khan. S/o. Abdul Azim Khan, 36 Purana Paltan Lane. Dacca-2 is our active worker. He is ture Pakistani and dependable. He is trained Razakar. He has been issued a Rifle No-776.. with ten round ammunition for self-protection.
Sd/illegible
INCHARGE
RAZAKAR AND MUZAHID JAMAT-E-ISLAM
91/92 Siddique Bazar, Dacca."
রাজাকারদের বিভিন্ন স্থাপনা পাহারা দেয়া, মুক্তিবাহিনীর খোঁজ করা প্রভৃতি কাজে ব্যবহার করা হতো। বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে এরাই ছড়িয়ে পড়েছিল। সে কারণে, বাঙালীদের কাছে রাজাকার শব্দটি বেশি পরিচিত হয়ে ওঠে।

॥ ৪ ॥
১৯৭১ সালে তো বটেই, তারপর প্রায় চার দশক পর্যন্ত, এ দেশে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি কিভাবে কাজ করে বা মনোজগতে আধিপত্য বিস্তার করে যাচ্ছে সে ব্যাপারে গভীরভাবে কেউ চিন্তা করেছেন বলে জানি না।
আগেই উল্লেখ করেছি মুক্তিযুদ্ধের বা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বা স্বায়ত্তশাসনেরও বিরোধিতা করেছেন অনেকে ১৯৭১ সালের আগে। ঐ বিরোধিতা, যুক্তির খাতিরে অগ্রহণযোগ্য এমন বলা যাবে না। কিন্তু, ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর এবং স্বাধীনতার পর এ যুক্তি কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সংবিধানের প্রথম পাতাতেই লেখা আছে-
"আমরা, বাংলাদেশের জনগণ, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধের (সংশোধিত পাঠ) মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি।"
এরপর স্বাধীনতাসংক্রান্ত কোন বিষয় আদালতের এখতিয়ারে পর্যন্ত আসতে পারে না। কিন্তু, বাংলাদেশ যেহেতু পৃথিবীর একমাত্র সব সম্ভবের দেশ সেহেতু এখানে এর উল্টোটাই ঘটেছে। পৃথিবীতে একমাত্র বাংলাদেশেই স্বাধীনতাপক্ষের ও বিপক্ষের শক্তি আছে। এ প্রশ্ন অবশ্যই অনেকে করতে পারেন যে, স্বাধীনতালাভের পর একটি দেশে আবার স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি হয় কিভাবে? পৃথিবীতে, এ দেশেরই একমাত্র সরকার ও বিরোধীদল একই সঙ্গে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির সঙ্গে নমনীয় ব্যবহার করে। পৃথিবীতে একমাত্র বাংলাদেশেই স্বাধীনতার বিপক্ষের পত্রিকাসমূহ অবাধে প্রকাশিত হয় এবং স্বাধীনতার বিপক্ষীয়রা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ক্রমাগত বিষোদগার করে যেতে পারছে। শুধু তাই নয়, প্রাক্-মুক্তিযুদ্ধ পর্বের পাকিস্তান প্রত্যয়ের বিভিন্ন উপাদান আবার যুক্ত হচ্ছে রাজনীতিতে। বাংলাদেশ আদর্শের বিপরীতে সে বিষয়গুলো তুলে ধরা হচ্ছে, যে দেশের ভবিষ্যতের জন্য ভয়ঙ্কর। এই আদর্শের নাম দেয়া যেতে পারে পাক-বাংলা আদর্শ। এ আদর্শের যারা ধারক তাদের বাংলাদেশের অস্তিত্ব মেনে নিতে হচ্ছে। কিন্তু, বাংলাদেশ আদর্শ তাদের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না হীনম্মন্যতার কারণে। কায়েমি স্বার্থ যা সৃষ্টি হয়েছে গত ত্রিশ বছরে তা বজায় রাখতে গেলেও পাক-বাংলা আদর্শ ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। এর প্রধান উপাদান পাকিস্তানে বিশ্বাস, ভারতকে ইহজগতের প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা কিন্তু ভারতকে গোপনে সুযোগ দেয়া, ইসলাম ধর্মকে ক্ষমতা দখলের স্বার্থে ব্যবহার করা, সামরিক আধিপত্যে বিশ্বাস ইত্যাদি। এই আদর্শের স্রষ্টা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শত্রুরা। এদের পুনর্বাসিত করে জিয়াউর রহমান এই আদর্শের প্রবক্তা হয়ে ওঠেন, পরে হুসাইন মুহম্মদ এরশাদ তাঁকে অনুসরণ করেন। আরো পরে খালেদা আসেন। তিনি রাজাকারদের ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। পৃথিবীতে এ ধরনের ঘটনা বিরল। জিয়া ও এরশাদ যুক্ত করেন কাকুল কালচার। কাকুলে যৌবনে তারা প্রশিক্ষিত হয়েছিলেন এবং তা মগজে গেঁথে গিয়েছিল। সেটিরও আবার ক্লোন তৈরিতে তাঁরা সমর্থ হয়েছেন। পাকিস্তানে আদর্শের স্রষ্টাদের অনেকের মৃত্যু হলেও তাদের দলে নতুন ক্লোন সৃষ্টি করা হয়েছে। এই ক্লোনরা যে সবাই সে আদর্শে বিশ্বাসী তা নয়। তারা বিশ্বাসী কায়েমি স্বার্থ বজায় রাখা, স্বার্থের নতুন মানচিত্র তৈরি করায়।
এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানী একাডেমিশিয়ান পারভেজ আলী হুদোভয় আবদুল হামিদ নায়ার 'পাকিস্তানের ইতিহাস পুনর্লিখন' প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন "দেশ বিভাগের ৩০ বছর পর পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের পুনর্জাগরণে এটাই প্রমাণ করে যে ধর্মীয় কোন মহৎ উদ্দেশ্য নয়, রাজনৈতিক মতলববাজিই এখানে বৃহত্তর ভূমিকা পালন করেছে। সমাজের চিরস্থায়ী সামরিকীকরণের জন্য চাই একজন চিরস্থায়ী শত্রু। অনেক কারণেই পাকিস্তানের অন্যান্য প্রতিবেশীরা এই কাজের জন্য উপযুক্ত নয়। অপরদিকে ভারত ও পাকিস্তানের শাসকবর্গ এই পারস্পরিক শত্রুতা ও উত্তেজনাকে একটি অপরিহার্য রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে দেখে আসছে।"
এখানে সৃষ্ট পাকি ক্লোনরা ঠিক একই কাজ করছে কিনা সচেতন নাগরিক মাত্রই তা বিচার করতে পারবেন। গত বিশ বছরে এ দেশে সৃষ্ট নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতিই এর প্রমাণ।
এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা হলে হয়ত কিছু জানা যেত। কিন্তু হয়নি এবং তথ্যের স্বল্পতাও লক্ষণীয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের কার্যকলাপের বিবরণ সংগ্রহ করা এখন প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরাই এগুলো নষ্ট করে ফেলেছে বা ফেলছে। মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ বছর পর, এ. এস. এম.শামসুল আরেফিন 'রাজাকার ও দালাল অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের তালিকা' প্রণয়ন করেছেন যার কয়েকটি খ- মাত্র প্রকাশিত হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতাবিরোধী যাঁরা আত্মজীবনী লিখেছেন এবং পাক-বাংলা আদর্শের হয়ে কাজ করেছেন তাঁদের গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে রচনা করেছিলাম- 'রাজাকারের মন' বা অন্যভাবে বলা যেতে পারে, 'রাজাকারের দৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধ'। সরল ভাষায়, একজন রাজাকার বা স্বাধীনতাবিরোধী কিভাবে বিচার করেছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বা বাংলাদেশ? সে কি এখনও বিশ্বাস করে বংলাদেশে? তার গ্রন্থে সত্যের ভাগ কতটুকু? কিইবা তারা লিখেছেন বা অধিকাংশই কেন লেখেননি, এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছিল। আমার লেখা রাজাকারের মন (২ খ-) গ্রন্থে। এ প্রবন্ধেও সেই বিষয়গুলো এসেছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে যাদের বই নিয়ে আলোচনা করেছিলাম বা এখন যার বই নিয়ে আলোচনা করছি তাদের কেউ ছিল কোলাবরেটর, কেউ আল-বদর বা অন্যকিছু। কিন্তু আগেই বলেছি কাগজপত্রে বিভিন্ন বিভাগ থাকলেও মূলত এরা সব একই লক্ষ্যের অনুসারী। এই বিভাজন বিভ্রান্তিও সৃষ্টি করতে পারে মাঝে মাঝে। শামসুল আরেফিন নিজেও এ সমস্যায় পড়েছিলেন তাঁর উপযুক্ত গ্রন্থ লিখতে গিয়ে। লিখেছেন তিনি "বিভিন্ন পরিচয়ে এদের ভাগে ভাগে না দেখিয়ে গড়পড়তা সবাইকে 'দালাল' পরিচয়ে চিহ্নিত করার প্রয়াসের পেছনে একটা কারণও রয়েছে। সবচেয়ে বড় কারণ যেটি তা হলো, যে সব সরকারী কাগজের আলোকে এই তালিকাটি প্রস্তুত হয়েছে সেই সবের ছক অভিন্ন ছিল না। কোথাও গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির অপরাধের কারণ সংক্ষেপে বলা হয়েছে, কোথাও শুধু বলা হয়েছে কোলাবরেটর অথবা দালাল অথবা পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী। কোন কোন তালিকায় তাদের পরিচয় এরূপও রয়েছে যে, "Arrested Razakars. Al-Badars and Mujahids', ' Arrested on.. as they were either members of Razakars, Al-Badars, Al-Shams or Mujahid organisation and also supported the Pak Army in killing innocent public. looting, arson etc"
এ পরিপ্রেক্ষিতে এক কথায়, মোটাদাগে স্বাধীনবিরোধীদের আমি 'রাজাকার' নামে অভিহিত করেছি। রাজাকার, আগেই উল্লেখ করেছি, যারা বাংলাদেশে ছিল এবং মানুষ এই নাম ও তাদের কার্যকলাপের সঙ্গে পরিচিত হয়ে সাধারণের ভাষ্যে চলে আসে। হুমায়ূন আহমেদের একটি নাটকের সংলাপ ছিল- 'তুই রাজাকার'। এসব কারণে, স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তি সে আলবদরই হোক বা দালালই হোক বা শান্তি কমিটিই- পরিচিত হয়ে ওঠে রাজাকার হিসেবে। তাঁরা 'রাজাকার' ছিলেন না, ছিলেন 'রেজাকার'। হতে পারে রেজাকার শুদ্ধ, কিন্তু মানুষের কাছে অশুদ্ধ রাজাকারই পরিচিত। তাই আমিও রেজাকার-কে রাজাকারই লিখলাম। 
(চলবে)
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2014-02-13&ni=163484
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ১ ফাল্গুন ১৪২

বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ৩০ মাঘ ১৪২
এক রাজাকারের আত্মজীবনী (১-)
মুনতাসীর মামুন
প্রকাশ : বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ৩০ মাঘ ১৪২


__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___