Banner Advertiser

Tuesday, March 18, 2014

[mukto-mona] চতুর পাঞ্জাবি ও সরল বাঙালি



চতুর পাঞ্জাবি ও সরল বাঙালি
ওয়াহিদ নবী
মার্চ মাস এলেই রক্তাক্ত অধ্যায়ের কথা মনে পড়ে যায়। আর মনে পড়ে সাবেক পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর কথা। পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তানের দূরত্ব এক হাজার মাইল। মাঝখানে যে ভূখণ্ডটি তাকে বৈরী একটি দেশ বলে বিবেচনা করা হতো। পশ্চিম পাকিস্তানের লোকসংখ্যা শতকরা ৪৪ ভাগ, কিন্তু সেখানেই দেশের রাজধানী। সেনাবাহিনীর প্রধান কার্যালয়, নৌ ও বিমান বাহিনীরও। দেশের সব প্রধান দফতরও সেখানে। সেখানেই দেশের সব নীতি প্রণয়ন করা হতো। বাণিজ্যিক প্রধান দফতর সেখানেই। পুরো দেশের আর্থিক লেনদেন স্বাভাবিকভাবেই হতো সেখানে। অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত বেশি। অর্থনীতির স্বাভাবিক কারণ রাজধানী থেকে দূরে অবস্থিত পূর্বের অংশটি অপর অংশের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আমরা বাঙালিরা সরল, তাই দেশটির অস্বাভাবিক কাঠামোকে গ্রহণ করে সব সুযোগ-সুবিধা পশ্চিমের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমাদের এই সরলতার কারণ আমাদের ধর্মবোধ। আমরা আমাদের মুসলিম ভাইদের হাতে সব ছেড়ে দিয়েছিলাম। এমন একটি অস্বাভাবিক রাষ্ট্রের ভৌগোলিক কাঠামোর অবশ্যম্ভাবী চরিত্রের কথা ভাবিনি। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছিল। পশ্চিমের অংশটির চারটি প্রদেশ যাদের ভাষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাস আলাদা। বৃহত্তর প্রদেশ পাকিস্তানে সর্বেসর্বা হয়ে দাঁড়াল পাঞ্জাব। প্রশ্ন হচ্ছে পাঞ্জাবিরা কি পূর্ব পাকিস্তানে রাজধানী ও অন্যসব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে একটি রাষ্ট্রের কাঠামোতে রাজি হতো? প্রশ্ন হচ্ছে এতদিন পরে এসব কথা আসছে কেন? এর কারণ হচ্ছে যেসব কারণে সরল মনে বাঙালিরা পাকিস্তান মেনে নিয়েছিল সেসব কারণের কিছু কিছু আবার আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা কি কিছু শিখেছি পাকিস্তানের ইতিহাস থেকে? আমরা কি বাস্তবতার আলোকে আমাদের পথ বেছে নিতে পারব? নাকি আমরা আবার ভাবপ্রবণ হয়ে সরল মনে দিশেহারা হয়ে পড়ব?
আমরা তো পাকিস্তানিদের ভাই হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম, কিন্তু তারা আমাদের সম্বন্ধে কী ভাবত? একাত্তরের যুদ্ধে পরাজয়ের পর পূর্ব পাকিস্তানে নিয়োজিত সেনাকর্তারা যুদ্ধবন্দি হিসেবে ভারতে অবস্থান করেন। তারপর পাকিস্তানে ফিরে তাদের কেউ কেউ স্মৃতিকথা লেখেন। এসব বই পড়লে তাদের মনোভাব জানা যায়। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন সেনাকর্তাদের মনোভাব পাকিস্তানের অন্যান্য মানুষের মতো? সংক্ষেপে বলা যায় 'হ্যাঁ'। কারণ পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা ও গণধর্ষণ চলার সময় পশ্চিম পাকিস্তানিরা একদিন চুপ করেছিল।  এদের প্রায় সবাই মন্তব্য করেছেন যে, বাঙালি মুসলমানরা হিন্দুদের দ্বারা প্রভাবান্বিত। তারা বলেন যে, পাকিস্তানের জšে§র পর হিন্দুরা পশ্চিম পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে চলে যায়। কিন্তু হিন্দুদের একটি বৃহৎ অংশ পূর্ব পাকিস্তানে থেকে যায়। এদের মধ্যে অনেকে শিক্ষকতা করতেন। এরা বাঙালি মুসলমানদের মগজ ধোলাই করেন। এর ফলে বাঙালি মুসলমানরা হিন্দুঘেঁষা হয়ে যায়। প্রশ্ন করা যেতে পারে যে, হিন্দুদের সঙ্গে বাস করা সত্ত্বেও বাঙালি মুসলমানরা তবে পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন কি করে! পাকিস্তানিদের এসব বক্তব্যের সারাংশ হচ্ছে এই যে, বাঙালিদের মস্তিষ্কে ঘিলু নেই। যে যা বলেন তারা তাই মেনে নেন। বাঙালিদের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেগুলো কিছুই নয়। হিন্দুরা বলেছে বলেই তারা পাকিস্তানবিদ্বেষী হয়েছেন। পাকিস্তানিরা আরো বলতে চেয়েছেন যে, বাঙালি মুসলমানরা নিকৃষ্ট শ্রেণীর মুসলমান। কিন্তু নিকৃষ্ট হলেও তারা মুসলমান, তাই তারা পাকিস্তানে থাকতে পারেন। তাদের ভারতে চলে যাওয়ার দরকার নেই। তবে যেহেতু তারা নিকৃষ্ট শ্রেণীর মুসলমান তাদের অধীনস্থ হয়ে থাকতে হবে। 
দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, শুধু ধর্মের ভিত্তিতে দেশ চলতে পারে না। হাসান হক্কানি তার  'পাকিস্তান : বিটউইন মস্ক অ্যান্ড মিলিটারি' বইতে এসব আলোচনা করেছেন। জিন্নাহ ঘোষণা করেছিলেন যে, রাষ্ট্র পরিচালনায় ধর্ম ব্যবহৃত হবে না। কিন্তু তার মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান দেশ ভিন্ন পথে চালিত করেন। তিনি ৩টি নীতির কথা উল্লেখ করেন আর সেগুলো হচ্ছে (ক) পাকিস্তানের অখণ্ডতা, (খ) ইসলাম ও (গ) অর্থনৈতিক উন্নতি। তখনকার রুশ-মার্কিন দ্বন্দ্বের কারণ অর্থের জন্য পাকিস্তান মার্কিনদের আশ্রয় নেয়। সেনাবাহিনী শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তারা বিরামহীনভাবে নিজেদের ইমেজ বৃদ্ধির কাজে লেগে যায়। যার ফলে পাকিস্তানের অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী পৃথিবীর সেরা সেনাবাহিনী। প্রথমে বেসামরিক আমলা ও সেনাকর্তারা মিলিতভাবে দেশ পরিচালনা করেন। এরপর প্রথমে ইস্কানদার মির্জা ও  পরে আইয়ুব খানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে। আইয়ুব খানের বাঙালিবিদ্বেষ তার  'ফ্রেন্ডস নট মাস্টার্স' বইতে ফুটে ওঠে। শেরে বাংলা সম্বন্ধে তিনি জঘন্য মন্তব্য করেন। এতপর তার রোজনামচায় তিনি বঙ্গবন্ধুকে 'মূর্খ ও গুণ্ডা' বলে অভিহিত করেন। তার দশ বছরের শাসনকালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিশাল বৈষম্য গড়ে ওঠে। এসব বৈষম্যের বিরুদ্ধে বাঙালিদের প্রতিবাদ ও প্রতিকার হিসেবে ৬ দফা ঘোষিত হয়। এটিকে বিচ্ছিন্নতার দলিল হিসেবে আখ্যায়িত করে পাকিস্তান সরকার। আগরতলা মামলায় জড়ানো হয় বঙ্গবন্ধুকে। ৬ দফাকে ভিত্তি করে নির্বাচনে বিশাল জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই দেশের মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখে যাত্রা শুরু করলেও আজ পর্যন্ত তাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটেনি। এর দায় কার? 
শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের এতদিনের গোঁজামিলভিত্তিক রাজনীতির স্বরূপ প্রকাশ পেল। সেনাবাহিনী বহু বছর ধরে ক্ষমতার ফায়দা লুটে আসছে। তারা সে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকতে চায়। সেনাবাহিনীর একচ্ছত্র কর্তৃত্ব রাজনীতিবিদরা মেনে নিতে চান না। তারা সেনাবাহিনীর জায়গায় ক্ষমতায় যেতে চান। কিন্তু পশ্চিম  পাকিস্তানের সেনা ও রাজনীতিবিদ দু'পক্ষই জানেন যে, পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা গেলে পশ্চিম পাকিস্তানের পঁচিশ  বছরের প্রাধান্য চলে যাবে। তাই ইয়াহিয়া আর  ভুট্টো ষড়যন্ত্রের পথ ধরলেন। অস্ত্রের জোরে দেশের শতকরা ৫৬ জন মানুষের কণ্ঠকে তারা স্তব্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করলেন। নিয়াজিসহ অনেকেই মনে করেন যে, পূর্ব পাকিস্তানকে একটি সরকারবিহীন অবস্থায় পরিত্যাগ করার ষড়যন্ত্র ছিল এটি। মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা তার বইয়ের নাম দিয়েছিলেন 'স্বদেশে বহিরাগত'। পূর্ব পাকিস্তানকে কি পশ্চিম পাকিস্তানিরা স্বদেশ বলে মনে করেছিলেন? 
পাকিস্তানিরা কি ভেবেছে ভাবুক। প্রশ্ন হচ্ছে জাতীয়তাবাদের একটি মাত্র বিষয়কে ভিত্তি করে একটি দেশ শুধু অন্যের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে কি টিকে থাকতে পারে? পাকিস্তানের ইতিহাস থেকে আমরা কিছু শিখতে পারি জীবনের বাস্তবতা সম্বন্ধে। নাকি আমরা আবার সরল মনে মোহচ্ছন্ন হয়ে চাঁদে মুখ দেখার কথা বিশ্বাস করে বিদ্যুৎকেন্দ্র পোড়াব? আমরা কি অবাস্তব আদর্শে মোহচ্ছন্ন হয়ে হাজার হাজার গাছ নষ্ট করব আর রেললাইন উপড়ে ফেলব? আমরা কি সরল মনে অন্যের কথায় ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হব উসকানিদাতাদের জীবনযাত্রা প্রণালী পরীক্ষা না করে? আমরা কি সরল মনের কারণে একবারও ভেবে দেখব না আমাদের কাজে লাভবান হবে কে?
লেখক: রয়াল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্টের ফেলো
- See more at: http://www.manobkantha.com/2014/03/19/164523.html#sthash.6gtQflh4.dpuf



__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___