Banner Advertiser

Sunday, June 1, 2014

[mukto-mona] মঞ্জুর হত্যাকারীদের বিচার করা হোক -ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন



মঞ্জুর হত্যাকারীদের বিচার করা হোক   রবিবার, ১ জুন ২০১৪, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২১
ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন
তিন বছর বয়সী একটি মেয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই রাতে তার পিতা-মাতা, কয়েক মাসের ছোট ভাই এবং বাবার বন্ধু কয়েকজন সাহসী মানুষের সঙ্গে এক অনিশ্চিত, দুর্গম যাত্রায় শামিল হয়েছিল। সে মেয়েটির পরিচয় জানতে একটু পেছনে যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ। মুক্তিযুদ্ধের ঘাঁটি বলে পরিচিত প্রত্যন্ত কাজলায় আমাদের গ্রামের বাড়িতে প্রতি সন্ধ্যার মতো সেদিনও অনেকে এসেছেন স্বাধীন বাংলা বেতারের খবর শুনতে। পশ্চিম পাকিস্তান সীমান্ত অতিক্রম করে চারজন বাঙালী সামরিক অফিসার মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছেন। এ খবরটি প্রচারিত হলো সে রাতে। অফিসারদের নাম বলা না হলেও আমরা বুঝে নিলাম এঁদের মধ্যে আমাদের অগ্রজ মেজর তাহের অবশ্যই আছেন। বলতে কি এমন একটা খবরের জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম। এর আগে আম্মাকে ডাকে পাঠানো চিঠিতে তাহের ভাই লিখেছিলেন, "যখনই সম্ভব হবে আমি আপনাদের কাছে পৌঁছব" ('একাত্তরের চিঠি', পৃষ্ঠা ১২৬)। আমাদের অনুমান ভুল হয়নি। এর অল্প কিছুদিন পর আমরা জানতে পারি তাহের ভাইয়ের সাথে মেজর মঞ্জুর, মেজর জিয়াউদ্দিন এবং ক্যাপ্টেন পাটোয়ারী পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছেন।
১৯৭২-এর শেষে কর্নেল তাহেরের লেখা 'এবোটাবাদ থেকে দেবীগড়' প্রকাশিত হয়েছিল দৈনিক বাংলার সাপ্তাহিক সাময়িকী 'বিচিত্রায়'। সে দুঃসাহসিক রোমাঞ্চকর কাহিনীর শ্রুতিলিখনের কাজটি আমি করেছিলাম। শিয়ালকোট সেনানিবাস পাক-ভারত সীমান্ত থেকে দূরে নয়। মেজর মঞ্জুর সপরিবারে আছেন সেখানে। মেজর তাহের, মেজর জিয়াউদ্দিন এবং ক্যাপ্টেন পাটোয়ারী একটি ভোক্সওয়াগনে এবোটাবাদ থেকে শিয়ালকোটে মেজর মঞ্জুরের বাড়িতে এসেছেন দিনের বেলাটা কাটাতে। ঐ রাতেই তারা সীমান্ত পাড়ি দেবেন। তাহের লিখছেন, 'মঞ্জুরের সঙ্গে অনেক আলাপ-আলোচনা হলো। শেষ পর্যন্ত আমাদের পালাবার পরিকল্পনা তাকে বললাম এবং তাকেও আমাদের সঙ্গী হতে অনুরোধ জানালাম। মঞ্জুরের স্ত্রী, তিন বছরের মেয়ে ও কয়েক মাসের একটি ছেলে সে সময় তার সঙ্গেই ছিল। এ অবস্থায় পালানো মঞ্জুর বিপজ্জনক মনে করল এবং আমাদের সঙ্গে যেতে রাজি হলো না। কিন্তু মঞ্জুরের স্ত্রী আমাদের সঙ্গে আসার জন্য জেদ ধরে বসলেন। 
রাত পৌনে ৯টায় কোন রকমে চাপাচাপি করে আমরা গাড়িতে বসে রওয়ানা হলাম। চলার পূর্বে মিসেস মঞ্জুর বাচ্চা দুটোকে শান্ত রাখার জন্য স্লিপিং পিল খাইয়ে দিলেন। রাত দুটোর সময় একটা শুকনো খালের পাড়ে আমরা উপস্থিত হলাম। খালের ভেতর টর্চ জ্বালিয়ে আবার ম্যাপটি ভাল করে দেখা হলো। এবার আমরা ভুল করিনি। সীমান্ত থেকে ৩ মাইল ভেতরে চলে এসেছি। কয়েক শত গজ দূরেই ভারতীয় সীমান্ত ঘাঁটি দেবীগড়। মিসেস মঞ্জুর তার বাচ্চাদের একটি গাছের নিচে শুইয়ে দিলেন। ভোরের প্রত্যাশায় আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলাম।'
প্রত্যাশার সে ভোর এসেছিল। মুক্তিযুদ্ধে চার সেনানী অসীম সাহসিকতায় যুদ্ধ করেছেন। মেজর মঞ্জুর আট নম্বর সেক্টর অধিনায়ক, মেজর তাহের ১১ নম্বর সেক্টরের। মেজর জিয়াউদ্দিন জেড ফোর্সের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার এবং ক্যাপ্টেন পাটোয়ারী কোম্পানি কমান্ডার। তিন বছরের মেয়েটি মুক্তিযুদ্ধ পার করেছে। হয়ত আবছা কোন স্মৃতি সে এখনও ধরে রেখেছে। মেয়েটির নাম রুবানা মঞ্জুর। ওকে দেখেছিলাম ১৯৮১ সালের জুন মাসে কোন এক দিনে। ঢাকার ভূতের গলিতে তাদের এক আত্মীয়ের বাসায়। ৩ বছরের মেয়েটি তখন ১৩ বছরের কিশোরী। ঘোর দুর্দিন তাদের। ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই শত্রুদেশ পাকিস্তান থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বন্ধু দেশে আশ্রয় পেয়েছিলেন মঞ্জুর, রুবানা ও তাদের পরিবার। আর যে দেশ স্বাধীন করতে মঞ্জুর জীবনপণ লড়াই করেছেন, জয়লাভ করেছেন, সেই দেশ আজ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শত্রুদের দখলে। তারা তাকে হত্যা করবে। ১৯৮১ সালের পয়লা জুন ঐ শত্রুদের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে মঞ্জুর ও তার পরিবারের কোন নিরাপদ আশ্রয় পাওয়া গেলনা স্বদেশ ভূমিতে। ফটিকছড়ির অরণ্য থেকে গ্রেফতারের পর রুবানা, তার ভাইবোন ও মায়ের কাছ থেকে বাবাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেছে ঘাতকেরা। সে রাতেই তাঁকে হত্যা করেছে সেই চট্টগ্রাম ক্যান্টমেন্টে, যার জিওসি ছিলেন রুবানার সদা হাস্যময় পিতা জেনারেল মঞ্জুর। শুধু শোকের নয়, চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এক অবিশ্বাস্য নিষ্ঠুরতার ভয়াবহ দৃশ্য সে, তার ছোট তিন ভাইবোন এবং মাকে স্তব্ধ করে রেখেছে। অবিশ্বাস ও আতঙ্ক তাদের চোখেমুখে। মিসেস মঞ্জুর জানালেন, ভয়ে কেউ দেখা করতে আসে না। এরপর বেশ কয়েকবার মিসেস মঞ্জুরের সঙ্গে দেখা করেছি। সর্বশেষ তাঁর সঙ্গে দেখা হয় ১৯৮১ সালের নবেম্বর মাসের শেষে। লন্ডনে যাবার একটি আমন্ত্রণ পাই আমি সে সময়। ১৯৮০ সালের শেষে প্রায় ৫ বছর কারাভোগের পর মুক্তিলাভ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় আবার যোগ দিয়েছি। মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফৎশুলজ আছেন সেখানে, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভাবলাম মিসেস মঞ্জুরের একটি সাক্ষাতকার নিয়ে যাই। লিফৎশুলজকে তা পৌঁছে দেব। ১৯৭৫-এর ৭ নবেম্বর তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহী অভ্যুত্থান, ঢাকা কারাগারে গোপন বিচার, জিয়ার ষড়যন্ত্রে ফাঁসিতে তাহেরের হত্যাকা-- এসব নিয়ে লরেন্স লিফৎশুলজের 'টহভরহরংযবফ জবাড়ষঁঃরড়হ– ঞধযবৎ'ং খধংঃ ঞবংঃধসবহঃ' লন্ডনের জেড প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছে ১৯৭৯ সালের জুলাই মাসে। তাহেরের '৭১-এর সহযোগী জেনারেল মঞ্জুরের নির্মম হত্যাকা- বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধান করার জন্য লরেন্সকেই একমাত্র যোগ্য ও নির্ভরশীল মানুষ বলে মনে হলো। মনে আছে ভূতের গলির বাড়িতে সারারাত জেগে মিসেস মঞ্জুর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে জেনারেল জিয়ার হত্যাকা-ে তাঁর স্বামী জেনারেল মঞ্জুরের যে কোন সম্পৃক্ততা ছিল না সে বিষয়ে বিশদে লিখেছিলেন। ইংরেজীতে মিসেস মঞ্জুরের হাতে লেখা বিবরণ নিয়ে ১৯৮১ সালের ২৭ নবেম্বর তারিখে আমি লন্ডনে যাই। লরেন্স লিফৎশুলজের সঙ্গে দেখা হলে তাঁকে তা প্রদান করে অনুরোধ করি সত্য উদ্ঘাটনে এগিয়ে আসতে। যেমনটা তিনি করেছিলেন তাহের হত্যাকা- নিয়ে। ইতোমধ্যেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদের ষড়যন্ত্রে জিয়া ও মঞ্জুর নিহত হয়েছেন। রহস্যজনক গুলিতে নিহত হন জিয়া হত্যায় সরাসরি অংশগ্রহণকারী বলে কথিত লে. কর্নেল মতিউর রহমান ও লে. কর্নেল মাহবুব। এরপর তড়িঘড়ি কোর্ট মার্শাল করে ১৯৮১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তারিখ রাতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় আরও ১৩ জন অফিসারকে। এদের মধ্যে ১১ জনই মুক্তিযোদ্ধা। এ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ৫ জন বীরত্বসূচক খেতাব পেয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য। যেমনটা পেয়েছিলেন মতিউর রহমান ও মাহবুব। ফাঁসিতে নিহত ২ জন কনিষ্ঠ অফিসার ১৯৭৬ এবং ১৯৭৮-এ কমিশন পেয়েছিলেন।
২০১৪ সালের পয়লা জুন জেনারেল মঞ্জুর হত্যাকা-ের ৩৩ বছর পার হবে। তাঁর কন্যা রুবানা একটি মর্মস্পর্শী সাক্ষাতকার দিয়েছে। সে সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন অন্য কেউ নয়, লরেন্স লিফৎশুলজ। ইংরেজীতে দেয়া রুবানার কথাগুলো দুটো জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। কি বলেছে সে? সে একটি সুষ্ঠু বিচার প্রার্থনা করেছে। এও বলেছে, যারা তার বাবাকে হত্যা করেছে, তাদের যেন আইনের আওতায় আনা হয় এবং তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়। তাহলেই মা এবং তারা চার ভাইবোন এত বছর পরেও শান্তি পাবে। ৩৩ বছর ধরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে রুবানা ও তার পরিবারের। তারপরও রুবানার কথায় কোন বিদ্বেষ বা অভিযোগ নেই। বলেছে, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা সেই শক্ত অবস্থানে দাঁড়াক যাতে সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়। আরও বলেছে, শুধুমাত্র তার বাবার মতো মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ন্যায়বিচার নয়, যে দেশ তারা সৃষ্টি করেছেন, তার প্রতিটি নাগরিকের জন্য তা প্রসারিত হোক। বাবার হাসিটির কথা সবচেয়ে বেশি তার মনে পড়ে। চার ভাইবোন বাবার বিশেষ কোন বৈশিষ্ট্যটি পেয়েছে, তা বলেছে রুবানা।
বিষাদের সেই দিন, ১৯৮১'র পয়লা জুনের মর্মস্পর্শী বর্ণনা আছে রুবানার ভাষ্যে। আমি বাবার কোমর জড়িয়ে ধরে ছিলাম। আর সবাই মিলে কাঁদছিলাম। ওরা জোর করে বাবাকে ছিনিয়ে নিল। আর তাকে দেখিনি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাবাকে খুন করে তারা। তাকে বড় ভালবাসি।
রুবানা বলেছে, যখন কোন বাবা বা স্বামী খুন হয়ে যান, তখন হয়ত অনেকে কষ্ট পায়, সমব্যথী হয়, বিচারের দাবিও জানায় কিন্তু সন্তান বা স্ত্রীর জন্য তা বয়ে আনে সারা জীবনব্যাপী গভীর দুঃখ ও যাতনা। বাবাকে কোথায় কূপে রাখা হয়েছে তা জানতে চায় রুবানা। সে কবরে তারা যেতে চায়, বাবার জন্য দোয়া করতে চায়। এক বীরউত্তম মুক্তিযোদ্ধাকে কেন অজ্ঞাত জায়গায় কূপে রাখা হবে? সরকার ও সেনাবাহিনীর কাছে সে দাবি করেছে সেই জায়গাটি খুঁজে বের করার, যেখানে তাঁর মুক্তিযোদ্ধা পিতা শায়িত আছেন। মুক্তিযুদ্ধের একজন অন্যতম সেক্টর কমান্ডার, একজন বীর উত্তম পিতার জন্য কন্যার একি খুব বড় চাওয়া? সাক্ষাতকার শেষ করেছে সে এই বলে যে এদেশের মানুষের বিচার চাওয়ার আওয়াজটি আবারও উচ্চকিত হবে এবং সবাই তা শুনবে।
আমার লেখাটি এখানেই শেষ করতে পারতাম। কিন্তু কয়েকটি জরুরী কথা বলা প্রয়োজন। সেটি জেনারেল এরশাদকে নিয়ে। লরেন্স লিফৎশুলজের ধারাবাহিক গভীর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, মঞ্জুর হত্যাকা-ের মূল পরিকল্পনাকারী জেনারেল এরশাদ। তাই এ বিষয়ে আর আলোচনা না করে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে এ ব্যক্তিটির ভূমিকা বিষয়ে বলব। ইউপিএল থেকে ১৯৯১ সালে প্রকাশিত মেজর রফিকুল ইসলাম, পিএসসি রচিত পুস্তক 'স্বৈর শাসনের নয় বছর (১৯৮২-৯০)'-এর সাহায্য নেব। মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মেজর সামসুল আরেফিনের কাছ থেকে জানলাম, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রথম ব্যাচের অফিসার মেজর রফিকুল ইসলাম আর বেঁচে নেই। পুস্তকের ৩১ থেকে ৩৬ পৃষ্ঠায় মেজর রফিকুল ইসলাম লিখেছেন, 'বাংলাদেশের মানুষ যখন মুক্তিযুদ্ধরত এরশাদ তখন পাকিস্তানে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক ছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল তাঁর অধিনায়কত্বে যখন পাকিস্তানের হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে, তখন ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমান্ডের আওতায় মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশকে স্বাধীন করার মরণপণ লড়াইয়ে লিপ্ত। একাত্তরের ২৫-২৬ মার্চ মধ্যরাত্রিতে যখন পাকিস্তানী সৈন্যরা পাশবিক হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়, তখন এরশাদ রংপুরে ছুটি ভোগরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে যোগদান না করে এপ্রিলের প্রথম দিকে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে পাড়ি জমান এবং সপ্তম ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক হিসেবে পুনরায় যোগদান করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অসুস্থ পিতাকে দেখার জন্য তিনি সেপ্টেম্বরে রংপুরে এসেছিলেন। এবারেও তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ না দিয়ে পাকিস্তানে ফিরে যান। ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালী অফিসার ও সৈন্যদের দেশদ্রোহিতার অভিযোগে বিচার শুরু হলে লে. কর্নেল এরশাদকে উল্লেখিত ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। সুতরাং এইসব কারণে স্বাধীন বাংলাদেশে তার চাকরি থাকার কথা নয়। তবুও তাকে সেনাবাহিনীতে স্থান দেয়া হয় এবং এই বিপজ্জনক ব্যক্তির সেনাবাহিনীতে বহাল থাকার পরিণতি সবার জানা। 
১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকারের চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয় এবং মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ও এয়ার ভাইস মার্শাল এমজি তাওয়াবকে যথাক্রমে সেনাবাহিনী প্রধান ও বিমানবাহিনী প্রধান নিয়োগ করা হয়। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা ও অমুক্তিযোদ্ধা এই দু'দলের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য ডিফেন্স এডভাইজার জেনারেল ওসমানীর পরামর্শে ভারতে কোর্সে অংশগ্রহণরত এরশাদকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে সেনাবাহিনীর উপ স্টাফ প্রধান নিয়োগ করা হয়।
রাষ্ট্রপতি জিয়া প্রশাসনের সর্বস্তরে স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসিত করেই ক্ষান্ত হলেন না। মেজর জেনারেল এরশাদকে সেনাবাহিনীতে স্টাফ প্রধান হিসেবে নিয়োগ করলেন এবং লে. জেনারেল পদে পদোন্নতি দিলেন। .... জিয়া কর্তৃক তার মন্ত্রিসভায় স্বাধীনতা বিরোধীদের স্থান দেয়া এবং প্রশাসনে স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সোচ্চার ছিলেন জেনারেল মঞ্জুর। মঞ্জুরের এই স্পষ্টবাদিতাকে দাবার ঘুঁটির মতো ব্যবহার করলেন এরশাদ। ....এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, এরশাদ পাকিস্তান ফেরৎ হওয়া সত্ত্বেও ধূর্ততার সঙ্গে অগ্রসর হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে গঠিত সেনাবাহিনীর প্রধান পদটি দখল করেন।"
উপরে মেজর রফিকুল ইসলামের বর্ণনা থেকে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ভূমিকার জন্য জেনারেল এরশাদকে একজন কোলাবোরেটর হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তাই জেনারেল মঞ্জুর হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে শুধু নয়, একজন ঘৃণিত কোলাবোরেটর হিসেবে তার বিচার হওয়া প্রয়োজন তিনি জীবিত থাকতেই।
শেষ করব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে একটি আবেদন জানিয়ে। আপনি বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির (ঈঁষঃঁৎব ড়ভ রসঢ়ঁহরঃু) বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সেজন্য জাতির জনকের হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার সম্পন্ন হয়েছে। ৩৫ বছর অপেক্ষার পর আমরা তাহের পরিবার জেনারেল জিয়া কর্তৃক তাহের হত্যার বিচার পেয়েছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। ৩৩ বছর আগে যে ষড়যন্ত্রে মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী জেনারেল মঞ্জুর বীর উত্তমকে খুন করা হয়েছিল, তার বিচার প্রক্রিয়া বহু বছর ধরে থেমে আছে। তার কন্যা রুবানা মঞ্জুর তার মর্মস্পর্শী সাক্ষাতকারে পিতা হত্যার সুবিচারে আপনার সাহায্য চেয়েছে। সাক্ষাতকারে আপনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সে বলেছে, মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী শক্তির হাতে আপনার পিতা-মাতা, পরিবার-পরিজন নিহত হয়েছেন। নিশ্চয়ই আপনি তাদের অশেষ ব্যথাটি বুঝবেন। সে আরও বলেছে এরশাদের পতনের পর তার মা রানা মঞ্জুর আপনার সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন। দু'জন নারী যাঁদের পরিবার-পরিজনকে খুন করা হয়েছে তারা কথা বলেছিলেন সমব্যথী হয়ে। সে গভীর আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছে শেখ হাসিনা তাদের গভীর যাতনা উপলব্ধি করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রসর হবেন।
আরও একটি নিবেদন আপনার প্রতি। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে এবং স্বৈরশাসনের নয় বছরে এরশাদের ভূমিকা আপনার এবং গণতন্ত্রকামী দেশবাসী সকলের জানা। জামায়াত-বিএনপির হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে এই স্বৈরশাসকের সঙ্গে নির্বাচনী মোর্চা আপনি করেছেন, মন্ত্রিসভায় তার দলের নেতাদের স্থান দিয়েছেন। এর ভাল-মন্দের বিচার নির্মোহ দৃষ্টিতে জনগণ বিচার করবে। তবে এক অর্থে দেশদ্রোহী এবং কোলাবোরেটর জেনারেল এরশাদকে আপনার বিশেষ দূত নিয়োগ করাতে অনেকে মর্মাহত হয়েছেন। এ পদ থেকে অবিলম্বে এরশাদকে সরিয়ে দিন। মঞ্জুর হত্যাকা-ে জেনারেল এরশাদের সংশ্লিষ্টতা আরও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করে তাকে বিচারের আওতায় আনার ব্যবস্থা নিতে আপনার সদয় নির্দেশ প্রদান করুন। দেশে বিচারহীনতার বিরুদ্ধে যে কঠিন সংগ্রামে আপনি অবতীর্ণ হয়েছেন, তাতে মঞ্জুর হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার এদেশে সকল নাগরিকের বিচার পাওয়ার অধিকার আরও নিশ্চিত করবে। 

লেখক : অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রকাশ: রবিবার, ১ জুন ২০১৪, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২১


__._,_.___

Posted by: SyedAslam <Syed.Aslam3@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___