রবিবার, ২ নভেম্বর ২০১৪, ১৮ কার্তিক ১৪২১
চট্টগ্রামের কসাই-উত্থান উপাখ্যান
মোয়াজ্জেমুল হক ॥ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভয়ঙ্কর এক অপরাধী। মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য এখন বিচারের কাঠগড়ায়। ডাক নাম পিয়ারু। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালী নিধন পর্ব শেষে স্বাধীনতার পর ঢাকায় পালিয়ে গিয়ে নিজেকে মিন্টু নামে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু আসল মুখোশ উন্মোচন হয়ে গেলে পালিয়ে যায় ল-নে। সেখান থেকে সৌদি আরবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক সরকার ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। প্রত্যাহার করে নেয় দালাল আইন। ফলে দেশে ফেরার পথ উন্মুক্ত হয়ে যায়। ফিরে আসে ঢাকায়। ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘ নাম পাল্টিয়ে ইসলামী ছাত্র শিবির নামে আত্মপ্রকাশ হয় তারই সভাপতিত্বে। তার নাম মীর কাশেম আলী। জামায়াত-শিবিরের অর্থ যোগানদাতা। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ শেষে তার রায় হতে যাচ্ছে আজ রবিবার।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চালাগ্রামে এক সাধারণ পরিবারে মীর কাশেম আলীর জন্ম। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী তায়েব আলীর চতুর্থ পুত্র মীর কাশেম মুক্তিযুদ্ধের সময়ে চট্টগ্রামে মুক্তিকামী মানুষের জন্য আবির্ভূত হয়েছিল ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে। গড়ে তোলে স্বাধীনতাকামীদের নির্যাতনের জন্য পাঁচটি টর্চার শেল। যার হেড কোয়ার্টার স্থাপন করা হয় একটিতে। যেটির নাম মহামায়া ভবন। ডালিম হোটেল নামে যার বহুল পরিচিতি। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে চট্টগ্রামে সে ছিল আলবদর বাহিনীর প্রধান। ডালিম হোটেলে স্থাপিত জল্লাদখানায় ধরে আনা বাঙালীদের সামনে তার পরিচিতি ছিল কখনও কমান্ডার, কখনও কমান্ডার খান, আবার কখনও বাঙালী খান রূপে।
মীর কাশেম আলী আলবদর বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করে আসাদগঞ্জের দোস্তা মোহাম্মদ পাঞ্জাবির বিল্ডিং, পাঁচলাইশের সালমা মঞ্জিল, মদিনা হোটেল ও প্রবর্তক এলাকা মিলে চারটি সাব টর্চার শেল গড়ে তুলেছিল। চালিয়েছিল অপহরণ, হত্যা, জোর জবরদস্তিমূলক সই আদায় ও আটক-নির্যাতনসহ নানা অপরাধজনক কর্মকা-। ডালিম হোটেলসহ মোট ৫টি টর্চার শেলে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হওয়াদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন মোঃ ওমর উল ইসলাম চৌধুরী, লুৎফুর রহমান ফারুক, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সাইফুদ্দিন খান, আবদুল জব্বার মেম্বার, হারুন অর রশীদ খান, মোঃ সানাউল্লাহ চৌধুরী, নূরুল কুদ্দস, সৈয়দ মোঃ এমরান, মোঃ জাকারিয়া, জসিম, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, রাজু, সুনীল কান্তি বর্ধন প্রকাশ দুলাল, সাংবাদিক নাসির উদ্দিন। এদের কাউকে কাউকে হত্যা করে লাশ পর্যন্তও গুম করে ফেলা হয়েছে। ডালিম হোটেলের জল্লাদখানায় মীর কাশেম আলীর নেতৃত্বে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয় কিশোর মুক্তিযোদ্ধা সন্দ্বীপের জসিম, রঞ্জিত দাস ওরফে লাতু, প্রদীপ দাসসহ অজ্ঞাতনামা অনেককে।
পিডিবি কর্মচারী পিতা মীর তায়েব আলীর চাকরির সুবাদে চট্টগ্রাম এসেছিল মীর কাশেম। ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে সে এসএসসি পাস করে। ১৯৬৯ সালে একই কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। '৭০ সালে সে এ কলেজের পদার্থবিদ্যা বিষয়ে প্রথমবর্ষে অনার্স পড়ুয়া ছিল। এ সময় বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের দামামা বেজে উঠতে থাকে। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সে চট্টগ্রামে আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে আবির্ভূত হয়। পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের পূর্ব পর্যন্ত সে এ বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত ছিল। সে পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের হাইকমান্ডের শীর্ষ নেতৃত্বে পর্যন্ত যেতে সক্ষম হয়েছিল। মীর কাশেম আলী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামে বাঙালী কিলিং স্কোয়াডের প্রধান হিসেবেও নেতৃত্ব দিয়েছিল। এ জন্য সতীর্থ যুদ্ধাপরাধীরা তাকে 'টর্চার আইডল' নামেও ডাকতেন।
একাত্তর সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর মীর কাশেম আলী ঢাকায় পালিয়ে গিয়ে মিন্টু নাম ধারণ করে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিত। কিন্তু একপর্যায়ে তার আসল পরিচয় উদ্ঘাটিত হলে সে আরেক যুদ্ধাপরাধী মাঈনুদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে যায় লন্ডনে। পরে সেখান থেকে চলে যায় সৌদি আরবে। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি হওয়ার পর সে দেশে ফিরে আসে। ১৯৭৭ সালে তার সভাপতিত্বে জামায়াতের আর্মড ক্যাডার ইসলামী ছাত্র শিবিরের আত্মপ্রকাশ ঘটে। পরবর্তীতে সে জামায়াতে যোগ দিয়ে অদ্যাবধি দলটির শূরা সদস্য পদে আসীন।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, অপহরণ, ধর্ষণের ঘটনা ছাড়াও অসংখ্য অপরাধের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা। দেশে ফিরে আসার পর সে সৌদিভিত্তিক বেসরকারী সংস্থা রাবেতা আলম আল ইসলামীর দেশীয় পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে তার অর্থনৈতিক উত্থান ঘটতে থাকে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার জন্য রামু থানাধীন খুনিয়া পালং এলাকায় রাবেয়া আল ইসলামীর আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠা করেন রাবেতা হাসপাতাল। যেটি জামায়াত-শিবিরের অস্ত্রের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল।
স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে তার হাতে যেন আলাদিনের চেরাগ এসে যায়। ব্যাংক, চিকিৎসা সেবা, পরিবহন, টেলিযোগাযোগ, গণমাধ্যম ও শিক্ষা সেক্টরে তার নেতৃত্বে জামায়াতীরা গড়ে তুলেছে মজবুত ভিত। গণমাধ্যম জগতেও তার বিচরণ ঘটেছে। তিনি হয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিচালক, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইবনে সিনা ট্রাস্ট ও ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের বোর্ড অব ডিরেক্টর সদস্য। ইবনে সিনা ট্রাস্টের রয়েছে ৮টি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক ও ইমেজিং সেন্টার, একটি মেডিক্যাল কলেজ, একটি নার্সিং কলেজ, একটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি, একটি ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, একটি ইসলামী ব্যাংক স্কুল ও কলেজ। এ ছাড়া দিগন্ত পেপার মিলের একক মালিক মীর কাশেম আলী। এ ছাড়া সে ফুয়াদ আল খতিব ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্ট ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানও সে।
মীর কাশেম আলীর ব্যক্তিগত বাণিজ্যিক গ্রুপের নাম কেয়ারি। সে কেয়ারি হাউজিং ও ইডেন শিপিং লাইন্সের চেয়ারম্যান। কেয়ারি নামের দশটি কোম্পানির পরিচালক সে । এগুলো হলো কেয়ারি লিমিটেড, কেয়ারি পোল্ট্রি হ্যাচারি এ্যান্ড প্রসেস, কেয়ারি স্প্রিং, কেয়ারি শান, কেয়ারি ট্যুরস এ্যান্ড সার্ভিসেস, কেয়ারি তাজ, কেয়ারি কালার সেন্টার, কেয়ারি ঝর্ণা, কেয়ারি রিয়েল এস্টেট ও কেয়ারি টেলিকম লিমিটেড। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের জন্য তার মালিকানায় রয়েছে বিলাসবহুল ৫টি প্রমোদ তরি। এগুলো হচ্ছেÑ কেয়ারি ক্রুজ, কেয়ারি ডাইন, কেয়ারি সিন্দবাদ, কেয়ারি কর্ণফুলী ও কেয়ারি তরঙ্গ। কেয়ারি গ্রুপের মালিকানায় রয়েছে সহস্র্রাধিক এ্যাপার্টমেন্ট ও বিপণি বিতান। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এগুলোর অবস্থান।
'৯৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তার বিচরণ শুরু হয়ে যায়। ২০১০ সালের ১০ মে মীর কাশেম আলী যুক্তরাষ্ট্রের কনসালটেন্সি ফার্ম কেসিডি এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে চুক্তি করেন। এ সংস্থার কাজ হয়ে দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে লবিং। আমেরিকান কংগ্রেস, সিনেট সদস্য এবং ইউএস প্রশাসনের প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করাই এই চুক্তির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। এর লবিংয়ে হাউস অব কমন্সের শক্তিশালী একটি লবিং গ্রুপ কাজ শুরু করে এবং তারা যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন শহরে সেমিনার ও আলোচনা অনুষ্ঠান করতে থাকে। মানবাধিকার নেতা লর্ড এ্যাভিব্যারিকে নিয়ে জামায়াত ও তাদের সহযোগী সংস্থাগুলো লন্ডনে একটি সেমিনারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে মতামত দিয়েছিল। বিশ্বব্যাংক যাতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থ না দেয় সেক্ষেত্রে মীর কাশেম আলীর লবিং রয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
নানা পথে কাড়ি কাড়ি অর্থ কামিয়ে বিত্তের পাহাড়সম মালিকানা অর্জন করে মীর কাশেম আলী মৌলবাদী জামায়াত-শিবিরের অর্থ যোগানের প্রাণ প্রবাহিনী শিরায় পরিণত হয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে তার মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে থাকত প্রচারের আড়ালে। চট্টগ্রামে ভয়ঙ্কর এক খুনী হিসেবে পরিচিত মীর কাশেম আলী তার জামায়াতী চেলাচামু-াদের নিয়ে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কর্মকা- পরিচালনা করে আসছিল বছরের পর বছর। চট্টগ্রামে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি যাতে উঠে আসতে না পারে এ জন্য তার পক্ষে চেষ্টা চলেছে নজিরবিহীন। বিভিন্নভাবে লবিংয়ের জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্থ ঢেলেছেন স্রোতের মতো। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বিচারের কাঠগড়ায় তাকে দাঁড়াতে হয়েছে। আজ বহুল প্রতীক্ষিত সেই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। চট্টগ্রামে তার নির্মম বর্বরতার শিকার যারা হয়েছেন তাঁরা এবং যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের স্বজনরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন মীর কাশেম আলীর সর্বোচ্চ শাস্তির ঘোষণাটি শোনার জন্য।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চালাগ্রামে এক সাধারণ পরিবারে মীর কাশেম আলীর জন্ম। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী তায়েব আলীর চতুর্থ পুত্র মীর কাশেম মুক্তিযুদ্ধের সময়ে চট্টগ্রামে মুক্তিকামী মানুষের জন্য আবির্ভূত হয়েছিল ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে। গড়ে তোলে স্বাধীনতাকামীদের নির্যাতনের জন্য পাঁচটি টর্চার শেল। যার হেড কোয়ার্টার স্থাপন করা হয় একটিতে। যেটির নাম মহামায়া ভবন। ডালিম হোটেল নামে যার বহুল পরিচিতি। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে চট্টগ্রামে সে ছিল আলবদর বাহিনীর প্রধান। ডালিম হোটেলে স্থাপিত জল্লাদখানায় ধরে আনা বাঙালীদের সামনে তার পরিচিতি ছিল কখনও কমান্ডার, কখনও কমান্ডার খান, আবার কখনও বাঙালী খান রূপে।
মীর কাশেম আলী আলবদর বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করে আসাদগঞ্জের দোস্তা মোহাম্মদ পাঞ্জাবির বিল্ডিং, পাঁচলাইশের সালমা মঞ্জিল, মদিনা হোটেল ও প্রবর্তক এলাকা মিলে চারটি সাব টর্চার শেল গড়ে তুলেছিল। চালিয়েছিল অপহরণ, হত্যা, জোর জবরদস্তিমূলক সই আদায় ও আটক-নির্যাতনসহ নানা অপরাধজনক কর্মকা-। ডালিম হোটেলসহ মোট ৫টি টর্চার শেলে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হওয়াদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন মোঃ ওমর উল ইসলাম চৌধুরী, লুৎফুর রহমান ফারুক, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সাইফুদ্দিন খান, আবদুল জব্বার মেম্বার, হারুন অর রশীদ খান, মোঃ সানাউল্লাহ চৌধুরী, নূরুল কুদ্দস, সৈয়দ মোঃ এমরান, মোঃ জাকারিয়া, জসিম, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, রাজু, সুনীল কান্তি বর্ধন প্রকাশ দুলাল, সাংবাদিক নাসির উদ্দিন। এদের কাউকে কাউকে হত্যা করে লাশ পর্যন্তও গুম করে ফেলা হয়েছে। ডালিম হোটেলের জল্লাদখানায় মীর কাশেম আলীর নেতৃত্বে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয় কিশোর মুক্তিযোদ্ধা সন্দ্বীপের জসিম, রঞ্জিত দাস ওরফে লাতু, প্রদীপ দাসসহ অজ্ঞাতনামা অনেককে।
পিডিবি কর্মচারী পিতা মীর তায়েব আলীর চাকরির সুবাদে চট্টগ্রাম এসেছিল মীর কাশেম। ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে সে এসএসসি পাস করে। ১৯৬৯ সালে একই কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। '৭০ সালে সে এ কলেজের পদার্থবিদ্যা বিষয়ে প্রথমবর্ষে অনার্স পড়ুয়া ছিল। এ সময় বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের দামামা বেজে উঠতে থাকে। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সে চট্টগ্রামে আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে আবির্ভূত হয়। পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের পূর্ব পর্যন্ত সে এ বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত ছিল। সে পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের হাইকমান্ডের শীর্ষ নেতৃত্বে পর্যন্ত যেতে সক্ষম হয়েছিল। মীর কাশেম আলী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামে বাঙালী কিলিং স্কোয়াডের প্রধান হিসেবেও নেতৃত্ব দিয়েছিল। এ জন্য সতীর্থ যুদ্ধাপরাধীরা তাকে 'টর্চার আইডল' নামেও ডাকতেন।
একাত্তর সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর মীর কাশেম আলী ঢাকায় পালিয়ে গিয়ে মিন্টু নাম ধারণ করে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিত। কিন্তু একপর্যায়ে তার আসল পরিচয় উদ্ঘাটিত হলে সে আরেক যুদ্ধাপরাধী মাঈনুদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে যায় লন্ডনে। পরে সেখান থেকে চলে যায় সৌদি আরবে। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি হওয়ার পর সে দেশে ফিরে আসে। ১৯৭৭ সালে তার সভাপতিত্বে জামায়াতের আর্মড ক্যাডার ইসলামী ছাত্র শিবিরের আত্মপ্রকাশ ঘটে। পরবর্তীতে সে জামায়াতে যোগ দিয়ে অদ্যাবধি দলটির শূরা সদস্য পদে আসীন।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, অপহরণ, ধর্ষণের ঘটনা ছাড়াও অসংখ্য অপরাধের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা। দেশে ফিরে আসার পর সে সৌদিভিত্তিক বেসরকারী সংস্থা রাবেতা আলম আল ইসলামীর দেশীয় পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে তার অর্থনৈতিক উত্থান ঘটতে থাকে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার জন্য রামু থানাধীন খুনিয়া পালং এলাকায় রাবেয়া আল ইসলামীর আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠা করেন রাবেতা হাসপাতাল। যেটি জামায়াত-শিবিরের অস্ত্রের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল।
স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে তার হাতে যেন আলাদিনের চেরাগ এসে যায়। ব্যাংক, চিকিৎসা সেবা, পরিবহন, টেলিযোগাযোগ, গণমাধ্যম ও শিক্ষা সেক্টরে তার নেতৃত্বে জামায়াতীরা গড়ে তুলেছে মজবুত ভিত। গণমাধ্যম জগতেও তার বিচরণ ঘটেছে। তিনি হয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিচালক, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইবনে সিনা ট্রাস্ট ও ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের বোর্ড অব ডিরেক্টর সদস্য। ইবনে সিনা ট্রাস্টের রয়েছে ৮টি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক ও ইমেজিং সেন্টার, একটি মেডিক্যাল কলেজ, একটি নার্সিং কলেজ, একটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি, একটি ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, একটি ইসলামী ব্যাংক স্কুল ও কলেজ। এ ছাড়া দিগন্ত পেপার মিলের একক মালিক মীর কাশেম আলী। এ ছাড়া সে ফুয়াদ আল খতিব ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্ট ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানও সে।
মীর কাশেম আলীর ব্যক্তিগত বাণিজ্যিক গ্রুপের নাম কেয়ারি। সে কেয়ারি হাউজিং ও ইডেন শিপিং লাইন্সের চেয়ারম্যান। কেয়ারি নামের দশটি কোম্পানির পরিচালক সে । এগুলো হলো কেয়ারি লিমিটেড, কেয়ারি পোল্ট্রি হ্যাচারি এ্যান্ড প্রসেস, কেয়ারি স্প্রিং, কেয়ারি শান, কেয়ারি ট্যুরস এ্যান্ড সার্ভিসেস, কেয়ারি তাজ, কেয়ারি কালার সেন্টার, কেয়ারি ঝর্ণা, কেয়ারি রিয়েল এস্টেট ও কেয়ারি টেলিকম লিমিটেড। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের জন্য তার মালিকানায় রয়েছে বিলাসবহুল ৫টি প্রমোদ তরি। এগুলো হচ্ছেÑ কেয়ারি ক্রুজ, কেয়ারি ডাইন, কেয়ারি সিন্দবাদ, কেয়ারি কর্ণফুলী ও কেয়ারি তরঙ্গ। কেয়ারি গ্রুপের মালিকানায় রয়েছে সহস্র্রাধিক এ্যাপার্টমেন্ট ও বিপণি বিতান। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এগুলোর অবস্থান।
'৯৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তার বিচরণ শুরু হয়ে যায়। ২০১০ সালের ১০ মে মীর কাশেম আলী যুক্তরাষ্ট্রের কনসালটেন্সি ফার্ম কেসিডি এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে চুক্তি করেন। এ সংস্থার কাজ হয়ে দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে লবিং। আমেরিকান কংগ্রেস, সিনেট সদস্য এবং ইউএস প্রশাসনের প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করাই এই চুক্তির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। এর লবিংয়ে হাউস অব কমন্সের শক্তিশালী একটি লবিং গ্রুপ কাজ শুরু করে এবং তারা যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন শহরে সেমিনার ও আলোচনা অনুষ্ঠান করতে থাকে। মানবাধিকার নেতা লর্ড এ্যাভিব্যারিকে নিয়ে জামায়াত ও তাদের সহযোগী সংস্থাগুলো লন্ডনে একটি সেমিনারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে মতামত দিয়েছিল। বিশ্বব্যাংক যাতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থ না দেয় সেক্ষেত্রে মীর কাশেম আলীর লবিং রয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
নানা পথে কাড়ি কাড়ি অর্থ কামিয়ে বিত্তের পাহাড়সম মালিকানা অর্জন করে মীর কাশেম আলী মৌলবাদী জামায়াত-শিবিরের অর্থ যোগানের প্রাণ প্রবাহিনী শিরায় পরিণত হয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে তার মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে থাকত প্রচারের আড়ালে। চট্টগ্রামে ভয়ঙ্কর এক খুনী হিসেবে পরিচিত মীর কাশেম আলী তার জামায়াতী চেলাচামু-াদের নিয়ে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কর্মকা- পরিচালনা করে আসছিল বছরের পর বছর। চট্টগ্রামে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি যাতে উঠে আসতে না পারে এ জন্য তার পক্ষে চেষ্টা চলেছে নজিরবিহীন। বিভিন্নভাবে লবিংয়ের জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্থ ঢেলেছেন স্রোতের মতো। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বিচারের কাঠগড়ায় তাকে দাঁড়াতে হয়েছে। আজ বহুল প্রতীক্ষিত সেই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। চট্টগ্রামে তার নির্মম বর্বরতার শিকার যারা হয়েছেন তাঁরা এবং যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের স্বজনরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন মীর কাশেম আলীর সর্বোচ্চ শাস্তির ঘোষণাটি শোনার জন্য।
মীর কাশেমের রায় আজ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত আলবদর কমান্ডার, তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রামের বাঙালী খান, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর মামলার রায় আজ ঘোষণা করা হবে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ রায় ঘোষণা করবে। রায় ঘোষণার জন্য বৃহস্পতিবার এ দিন নির্ধারণ করা হয়। এর আগে গত বুধবার আলবদর বাহিনীর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীর রায় ঘোষণা করা হয়। মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে . . .
মুক্তিযুদ্ধকালীন অপরাধের বিচার
মীর কাসেমের রায় আজ
মীর কাসেম আলীর মামলার রায় আজনিজস্ব প্রতিবেদক একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর মামলার রায় আজ রোববার। গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ রায়ের জন্য এ দিন ধার্য় করেন। এটি হবে দুই ট্রাইব্যুনালের দেয়া ১১তম রায়। ... http://www.manobkantha.com/2014/11/02/197553.html g †Z gxi Kv‡mg : ZzB ivRvKvi, ZzB ivRvKvi, duvwm PvB, duvwm PvBAvgv‡`i mgq.Kg : 02/11/2014 http://www.amadershomoys.com/newsite/2014/11/02/135602.htm#.VFUyfjTF8-1 Jamaate Islami is জামাত-ই-মুনাফেক!!! |
__._,_.___