Banner Advertiser

Tuesday, December 23, 2014

[mukto-mona] বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নেতৃত্ব দেন একজন জেনারেল



বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নেতৃত্ব দেন একজন জেনারেল
মুসা সাদিক


টিপু সুলতানের প্রধান সেনাপতি মীর সাদিক ও নবাব সিরাজদ্দৌলার প্রধান সেনাপতি মীর জাফর তাঁদের স্ব-স্ব অন্নদাতা শাসককে নির্মমভাবে হত্যা করিয়ে ভারতকে যেভাবে ইংরেজের হাতে তুলে দিয়েছিল, ঠিক সেভাবে শেখ মুজিবের উপপ্রধান সেনাপতি ও অন্যরা বিশ্বাসঘাতকতা করে বাংলাদেশকে '৭১-এর পরাজিত শত্রুদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। দেশবাসী ও বিশ্ববাসী জানে যে বাংলাদেশ থেকে ফিরে যাওয়া ৯৮ হাজার পাকিস্তানি আর্মির একজনকেও পাকিস্তানি আর্মিতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সেটাই বিশ্বের অপরিবর্তনশীল ও অলঙ্ঘনীয় সামরিক বিধান। মহাসাগরের চেয়েও অধিক দয়ার সাগর শেখ মুজিব তা করেননি বলে তাঁর প্রতিদান তাঁকে নির্মমভাবে তারা ১৫ আগস্ট দিয়ে দিয়েছিল। '৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশের চেহারায় '৭১-এর জল্লাদ টিক্কা-নিয়াজিরাও ফরমান আলীদের পূর্ব পাকিস্তানের চেহারা যে ফুটে উঠেছিল, সেই পাপের বীজ '৭৫-এর ১৫ আগস্টে এই বিশ্বাসঘাতকরা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে বপন করেছিলেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বিষাক্ত পাপের বীজ সম্পর্কে বাঙালি জাতিকে হুঁশিয়ার করে বহু বছর পূর্বে লিখে রেখে গেছেন যে 'পাপের একটি বীজ যেখানে পড়ে, সেখানে দেখিতে দেখিতে গোপনে কেমন করিয়া সহস্র বিষবৃক্ষ জন্মায়, কেমন করিয়া অল্পে অল্পে সুশোভন মানব সমাজ অরণ্যে পরিণত হইয়া যায় তাহা কেউ জানিতে পারে না।' ১৯৭১-এর পরাজিত পাকিস্তানি সেনাদের প্রেতাত্মা রাজাকার-আলবদরদের বিষাক্ত দন্ত-নখরে ক্ষতবিক্ষত '৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশের খুন-খারাবি-ধর্ষণ-পীড়ন-বর্বরতার বীভৎস অরণ্যের চেহারা বিশ্বকবির সেই হুঁশিয়ারি ১৪ কোটি বেদনাহত বাঙালি ভাইবোনকে শোকাহতচিত্তে আজও স্মরণ করে।

১৫ আগস্ট যে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বীজ বপন করা হয়েছিল, সেই ষড়যন্ত্রের গুপ্ত কথা জানতে আমি '৯৪ সালে এক সরকারি কাজে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর তদানিন্তন প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে '৯৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার তাঁর ১১৫/বি জামাল খান রোডের বাসায় সাক্ষাৎ করেছিলাম। প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী থাকতে ঢাকায় যখন ৩ নম্বর মিন্টো রোডের বাসায় তিনি থাকতেন, তখন তাঁর একান্ত সচিব '৭১ সাল থেকে আমার বন্ধু অধ্যাপক সুরঞ্জন সেনের সঙ্গে বহুবার তাঁর বাসায় গেছি। তাঁর জামাল খান রোডের বাসায় ওই সাক্ষাৎকারের সময় তাঁর ডাক্তার পুত্র ডা. মঈনুল ইসলাম চৌধুরীসহ তাঁদের পরিবারের আরো লোকজন উপস্থিত ছিলেন এবং অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ছিলেন। চট্টগ্রামে তাঁর বাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে শুয়ে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই ১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডির অজানা রহস্যের পর্দা তিনি উন্মোচন করেছিলেন, যা বাঙালি জাতির কাছে শত-সহস্র বছর ধরে কারবালার চেয়েও ভয়াবহ নিষ্ঠুর ট্র্যাজেডি হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে।

বেডে শুয়ে দেওয়া সাক্ষাৎকারের প্রথমে জনাব চৌধুরী খুব আবেগতাড়িত হয়ে গেলেন। তাঁর দুই চোখের কোণ গড়িয়ে অবিরল ধারায় ফোঁটা ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল। প্রায় পাঁচ-সাত মিনিট তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে থাকলেন। এরপর ধীরে ধীরে উন্মোচন করলেন, ১৫ আগস্টের সেই খলনায়কদের আসল চেহারা। যে চেহারা দেশবাসী কখনো দেখতে পায়নি। তিনি বারবার বাকরুদ্ধ কণ্ঠে, চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন, "বঙ্গবন্ধুকে আমরা রক্ষা করতে পারিনি, এর দায়দায়িত্ব সফিউল্লাহ, সেনাবাহিনী, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর চেয়ে আমার সবচেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু আমি একজনের বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু আগস্টের প্রথম সপ্তাহে এই হুঁশিয়ারি ঠিকই দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি ভুল করেছিলাম। আমার assessment-এ মারাত্মক ভুল হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর assessment সঠিক ছিল। বঙ্গবন্ধু খবর পাচ্ছিলেন এবং আমিও খবর পাচ্ছিলাম যে সেনাবাহিনীর ভেতরে বিচ্ছিন্ন কিছু ষড়যন্ত্র চলছে। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন এবং তাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর শীর্ষের দু-একজন এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমাদের কয়েকটি বন্ধুরাষ্ট্রের গোয়েন্দারাও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আমাদের বারবার সতর্ক করছিল। কিন্তু সন্তানতুল্যরা কেউ যে পিতার প্রাণ বধ করবে, এটা বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাসই হতো না। বিশ্বাস করতেই পারতেন না তিনি। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর সামনে আমাকে উদ্দেশ করে বলেছেন, 'স্যার, বঙ্গবন্ধুর গায়ে আঁচড় লাগার আগে আমার বুক বুলেটে ঝাঁঝরা করতে হবে।' বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি সস্নেহে তাঁকে বুকে টেনে নিয়ে সন্তানের মতো আদর করতে। শেখ কামাল, জামালের মতো আদর করতে। আর আজ যখন পেছনের দিকে তাকাই, তখন ভাবি, কত বড় ভুল হয়ে গেছে! কত বড় বিশ্বাসঘাতক বঙ্গবন্ধুর পুত্রস্নেহের আদর-স্নেহ পেয়ে গেছে! আল্লাহ যেন কখনো তাঁকে মাফ না করেন। অসুস্থ অবস্থায় আল্লাহর কাছে এই আমার ফরিয়াদ।"

আমি প্রশ্ন করলাম, 'স্যার, পুত্রতুল্যরা পিতৃতুল্যের অধিক ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীকে বুলেট বিদ্ধ করে হত্যা করেছিল। সে ঘটনা তো আপনাদের চোখের সামনে ছিল। তাহলে এই ভুল করলেন কেন?' অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বিরাট এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। অঝোর ধারায় তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। বেদনায়, কষ্টে থরথর করে কাঁপতে লাগলেন তিনি। তারপর বেদনাদীর্ণ কণ্ঠে বললেন, সব লিখে নিন। চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে জিয়াউর রহমান আমাকে 'স্যার' বলে সম্বোধন করতেন, দেখলেই স্যালুট করতেন। আমাকে খুবই ভক্তি করতেন ও সম্মান দেখাতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি তাঁর অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে আমার নির্বাচনী এলাকায় এপ্রিল মাসে ছিলেন। তখন থেকেই তিনি আমার প্রতি খুবই respect show করতেন। আমিও তাঁকে আপনজনের মতো গণ্য করতাম। আমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর আমার মিন্টো রোডের বাসায় জিয়া সস্ত্রীক ঘন ঘন যাতায়াত করতেন। একটু গভীর রাতে তাঁরা আসতেন। তাঁরা দুজনই যতবার আসতেন, ততবার দুজনই আমি বাধা দেওয়া সত্ত্বেও পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতেন। আমার প্রতি ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর অন্ধ আনুগত্যের কথা বারবার বলতেন। এসব দেখা-সাক্ষাতের মধ্যে তিনি কখনো লুকাননি যে তিনি আর্মির চিফ হতে চান। ভারত-পাকিস্তানসহ এই উপমহাদেশের উদাহরণ দিয়ে তিনি আমাকে বারবার বলেছেন যে এসব দেশে আর্মির চিফ অব স্টাফ পদে এক টার্মের বেশি থাকার নজির নেই। সফিউল্লাহর টার্ম শেষ হলে তাঁকে যেন চিফ করা হয় এবং ১৯৭৫ সালে সফিউল্লাহর টার্ম শেষ হবে। তাহলে স্বাভাবিক নিয়মে জিয়া আর্মির চিফ হতে পারেন। কারণ তিনি তখন ডেপুটি চিফ। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর আনুগত্য ও ভক্তি-শ্রদ্ধা এবং বাকশালের মেম্বার হওয়ার জন্য আমার কাছে তাঁর বারবার ছুটে আসা এবং তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টা ইত্যাদি মনে রেখে আমিও তাতে সায় দিয়েছিলাম। আমিও মনে মনে চাইতাম, সফিউল্লাহর টার্ম শেষ হলে জিয়া হবেন আর্মির চিফ। আমার মনের কথা তাঁর কাছে প্রকাশও করেছিলাম এবং একরকম নিশ্চিত করেছিলাম।

আগস্টের ৪ তারিখ সোমবার অথবা ৫ তারিখ মঙ্গলবার অধ্যাপক নুরুল ইসলাম যখন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কার্যালয়ে (শিল্প ভবন) তদানিন্তন প্রতিরক্ষাসচিব মুজিবুল হকসহ আর্মির ডেপুটি চিফ জেনারেল জিয়ার সঙ্গে একটি পদাতিক বাহিনীর কাঠামো বিন্যাস (আরেকটি ব্রিগেড গঠন বিষয়ে) সম্পর্কিত একটি মিটিং করছিলেন, সেই সময় বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে রেড টেলিফোনে একটি টেলিফোন কল পান। সে সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমাদের তিনজনের মিটিং চলাকালে বঙ্গবন্ধু আমাকে রেড ফোনে ফোন করলেন। তিনি জানালেন, জেনারেল সফিউল্লাহকে আর্মির চিফ হিসেবে আরো এক টার্ম (অর্থাৎ আরো তিন বছরের জন্য) নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়েছি। এ সম্পর্কিত গেজেট নোটিফিকেশন আজই ছাপা হবে।' যেহেতু আমি মিটিং চলাকালে তাঁদের সামনে টেলিফোন কলটি পেলাম, জেনারেল জিয়া আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'স্যার, এটা কি বঙ্গবন্ধুর কল?' আমি বললাম, 'হ্যাঁ, বঙ্গবন্ধুর কল ছিল।' জেনারেল জিয়া আবার বললেন, 'স্যার, এটা কি জেনারেল সফিউল্লাহকে আরেক টার্ম দেওয়ার ডিসিশন দিলেন উনি?' (বঙ্গবন্ধুর ওপর জেনারেল জিয়ার ও অন্য ষড়যন্ত্রকারীদের নেটওয়ার্ক কত গভীর ও নিখুঁত ছিল, জেনারেল জিয়ার এই প্রশ্ন তার উত্তর। বস্তুত '৭৪-এর দুর্ভিক্ষের পর থেকে পাকিস্তান প্রত্যাগতরা ও খুনিরা মিলে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত এত পাকাপোক্তভাবে করেছিল যে তারা এমনকি বঙ্গবন্ধুর সব ফোন গোপনে বাগিং (আড়িপাতা) করতে শুরু করেছিল। আবদুর রউফের নেতৃত্বে ডিজিএফআই থেকে এটা করা হতো। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুসহ বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও ঘনিষ্ঠ সব মন্ত্রী, এমপি এবং সচিবের সব টেলিফোন ও সব গোপন ও ব্যক্তিগত কথাবার্তা, আলোচনা-বৈঠক ও কর্মকাণ্ড ষড়যন্ত্রকারীরা গোপনে মনিটর করে চলেছিল। '৭৫-এর মার্চে এসে বঙ্গবন্ধুর মুখ্যসচিব আমার মামা রুহুল কুদ্দুস প্রথমবারের মতো আকস্মিকভাবে জানতে পারলেন যে সেনাবাহিনীর একটি চক্র দেশের রাষ্ট্রপতির টেলিফোনে গোপনে আড়ি পাতছে এবং তাঁর সব কথাবার্তা ও গোপন আদেশ-নিষেধ গোপনে জেনে যাচ্ছে। দেশের রাষ্ট্রপতির কার্যক্রমের ওপর বিনা অনুমতিতে গোপন তৎপরতা চালানো দেশদ্রোহিতা ও সংবিধানের মারাত্মক লঙ্ঘন। তৎক্ষণাৎ তিনি বঙ্গবন্ধুকে সাক্ষাতে জিজ্ঞেস করলেন : 'আপনি কি সেনাবাহিনীকে আপনার টেলিফোন বাগিং (আড়িপাতার) করার জন্য বলেছেন? নাকি তারা আপনার অনুমতি নিয়ে এ কাজ করেছে?' সরলপ্রাণ বঙ্গবন্ধু এবার হেসে বললেন, 'এমন কোনো অনুমতি আমি কাউকে দিইনি। তবে তোমাদের সব কিছুতে সন্দেহ। তারা আমার সন্তান। তারা এসব নিশ্চয়ই আমার ভালোর জন্য করেছে।' ১৫ আগস্টের সকালে দয়ালু পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে সিমার সন্তানরা প্রমাণ করেছে, তারা পিতার ভালোর জন্য এসব করেছে।)

প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী পূর্বের সূত্র ধরে বললেন, 'জিয়া বিষয়টা বুঝে গেছেন বলে তখন আমিও তাঁদের বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্তের কথাটা বললাম। এতে জেনারেল জিয়াকে খুবই বিপর্যস্ত ও ক্ষুব্ধ হতে দেখলাম। তিনি আমার কাছ থেকে একটি সাদা কাগজ চেয়ে নিয়ে তৎক্ষণাৎ স্বহস্তে ইংরেজিতে তাঁর পদত্যাগপত্র লিখে আমার কাছে পেশ করলেন এবং চলে যেতে উদ্যত হলেন। আমি জিয়াউর রহমানকে ধৈর্য ধারণ করার জন্য বললাম এবং তাঁর জন্য কী করতে পারি সে জন্য আমাকে দু-এক দিন সময় দেওয়ার জন্য বললাম। কিছুটা ক্ষুব্ধ ও বিমর্ষ জিয়া আমাকে স্যালুট করে চলে গেলেন। আমি তখন জিয়ার মুখরক্ষার জন্য তৎক্ষণাৎ বঙ্গবন্ধুকে ফোন করে তাঁর পক্ষে অনেক করে বললাম। তারপর আমি যখন বঙ্গবন্ধুর কাছে জিয়াউর রহমানের পদত্যাগপত্র পেশ করার বিষয়ে বললাম, তৎক্ষণাৎ তিনি তাঁর পদত্যাগপত্র অনুমোদনের জন্য তাঁর (রাষ্ট্রপতির) কাছে পাঠিয়ে দিতে বললেন। তিনি এই প্রথমবারের মতো দৃঢ়স্বরে আমাকে বললেন যে 'প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় কখনো দোটানায় থাকবা না। এটা স্মরণে রেখো।' তখন আমি বঙ্গবন্ধুকে বললাম, 'আরেকটি ব্রিগেড গঠনের অবকাঠামো বিন্যাসের যে কাজ আমি করছি, সে কাজ শেষ করার জন্য জিয়াকে আমার আরো কিছুদিনের জন্য লাগবে। বঙ্গবন্ধুকে convince করার জন্য আমি বেশি করে জিয়ার পক্ষে আরো বাড়িয়ে বললাম যে সে ছাড়া আমরা এটা পারব না। সে জন্য আগস্ট মাস পর্যন্ত সে আমাদের সঙ্গে থাক।'

জেনারেল জিয়ার পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করা, জিয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর কাছে বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলে সুপারিশ করা এবং জিয়ার ওই ঔদ্ধত্যের (পদত্যাগের) পর আর্মির ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তাঁকে ওই পদে রাখা কতখানি আত্মঘাতী হয়েছিল, বারবার চোখ মুছে কাঁদতে কাঁদতে এবং দুই হাত দিয়ে মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে সে কথা আমাকে বলেছিলেন বঙ্গবন্ধুর সরলপ্রাণ প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী।

অধ্যাপক নুরুল ইসলাম তার পরের ঘটনা বললেন, 'বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার পর আমি জিয়াকে ডেকে পাঠালাম। তাঁকে ফোন করে আমার অফিসে শীঘ্রই আসতে বললাম। তিনি প্রায় এক ঘণ্টা পর হন্তদন্ত হয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন।' জিয়া এলে তাঁকে বললাম, 'বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করেছি এবং তিনি আমার অনুরোধ রেখেছেন। আপনি আমার সঙ্গে এই নতুন ব্রিগেডের কাঠামো পুনর্গঠনের কাজে এ মাসটি আমাদের সঙ্গে কাজ করুন। এর মধ্যে আমাদের নতুন ব্রিগেড গঠনের কাজ আমরা শেষ করতে পারব আশা করি। ১ সেপ্টেম্বর আপনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করব।' আমার কথা শুনে জিয়াউর রহমানকে অত্যন্ত আনন্দিত হতে দেখলাম এবং আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডির সময় তিনি সরকারি সফরে ভিয়েনায় ছিলেন। তাই আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম, 'ভিয়েনা থেকে ফিরে জিয়ার সঙ্গে আপনার প্রথম দেখা কখন, কিভাবে হয়েছিল?'

অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বললেন, 'কর্নেল অলি আমাকে গাড়িতে করে জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন। জিয়ার বাসায় যেতে আমি খুব ভয় পাচ্ছিলাম। আমি অবিরাম দোয়া ইউনুস পড়ছিলাম। কারণ তিনি জানেন, বঙ্গবন্ধু কিলিং এবং জেল কিলিং কিভাবে হতে পেরেছে এবং তিনি এও জানেন যে তিনি যা জানেন, আমি তা জানি। আমার ব্যর্থতা, আমার দুর্বলতা কী ছিল তিনি জানেন। আর আমার ব্যর্থতা ও আমার দুর্বলতার পরিণতি কী হয়েছে, তার বেনিফিট কে পেয়েছে, আমি জানি। সূর্যের মতো তা আমার চোখের ওপর ভাসছে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে তাঁর বাড়িতে যখন পৌঁছলাম, জিয়া আমাকে বঙ্গবন্ধু হত্যা সম্পর্কে অনেক সাফাই দিলেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারছিলেন যে তাঁর কোনো সাফাই আমার কাছে তিনি বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারছিলেন না। ১৫ আগস্ট সম্পর্কে তিনি তাঁর অজ্ঞতার কথা বারবার বলছিলেন, আর আমার দিকে আড় চোখে দেখছিলেন যে তাঁর কথা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে কি না। তবে ১৫ আগস্টের বিষয় তিনি সবচেয়ে বেশি জানেন এবং আমি সবচেয়ে বেশি জানি...এটা আমরা দুজনে যে এত বেশি জানি, তিনি তা জানতেন এবং সে জন্য তাঁর কাছে আমার ভয় বেশি ছিল। কারণ আমার কাছে তাঁর ১৫ আগস্টের conspiracy স্ফটিকের মতো পরিষ্কার। আমিই ছিলাম তাঁর বসের বস। আমি তাঁকে আর্মিতে 2nd life দিয়েছিলাম বলেই তিনি আগস্ট মাসব্যাপী conspiracy করার ও বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানার জন্য প্রায় ২৫ দিনব্যাপী লম্বা সময় ও সুযোগ পেয়ে যান। আমিই সে জন্য দায়ী। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ ও সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমি আগস্টের প্রথম সপ্তাহে তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করলে এই conspirators-দের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে পড়ত এবং এঁদের সবার একসঙ্গে ফাঁসি হতো বা ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করে এঁদের মারা হতো।'

তিনি বললেন, 'আমি যে প্রতিরক্ষাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ১৫ আগস্টের পূর্বের পটভূমি, বিশেষ করে আমার কক্ষে আগস্টের ৪ বা ৫ তারিখ সোম বা মঙ্গলবারের মিটিং চলাকালে বঙ্গবন্ধুর কল ও জিয়ার পদত্যাগ এবং জিয়ার জন্য পুরো আগস্ট মাস সময় বরাদ্দ এবং এর দেড় সপ্তাহের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যার পশ্চাতে মুখোশধারীদের মুখোশের অন্তরালে আসল চেহারা যে আমার জানা, সে বিষয়ে তিনিও নিশ্চিত ছিলেন, আমিও নিশ্চিত ছিলাম। সেই অবস্থায় আমিও মৃত্যুর জন্য একরকম প্রস্তুত হয়ে জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে গিয়েছিলাম।'

লেখক : স্বাধীন বাংলা বেতারের ওয়ার করেসপন্ডেন্ট এবং সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

Email : infomusabd@gmail.com

web : www.musabd.com

 

- See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/muktadhara/2014/08/31/123018#sthash.VZxoSmZL.dpuf





__._,_.___

Posted by: "Jamal G. Khan" <M.JamalGhaus@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___