On Sunday, January 25, 2015 4:26 AM, "SyedAslam Syed.Aslam3@gmail.com [notun_bangladesh]" <notun_bangladesh@yahoogroups.com> wrote:
শওগাত আলী সাগর
একটি মৃত্যুশোক, সামান্য সৌজন্য আর জনগণের আশাবাদ
জানুয়ারী ২৫, ২০১৫
খুব বেশি কিছু কি চায় তারা? খুব বেশি কিছু? না, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের চাওয়ার দিগন্ত একেবারেই সীমিত। খুব অল্পতেই তারা খুশি হয়ে যায়। সামান্য প্রাপ্তিতেই তাদের অনেক বড় বেদনার হাহাকারও যেন আড়াল হয়ে যায়। নইলে ছোট্ট একটা খবরে পুরো দেশের মানুষের চোখ আনন্দে এমন চক চক করে উঠবে কেন? পেট্টল বোমার আগুনে দগ্ধ হতে হতে ছটফট করতে থাকা দেশটা যেন শান্তির একটা প্রলেপ পেয়ে গেল তাতে!
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাচ্ছেন গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে– ছোট্ট এই খবর চাওড় হয়ে গিয়েছিল আগেই। আর এ খবরে বার্ন ইউনিট হয়ে ওঠা বাংলাদেশ যেন খানিকটা স্বস্তির নিশ্বাস নিতে শুরু করেছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মালয়েশিয়ায় মারা গেছেন ২৪ জানুয়ারি দুপুরের দিকে। মৃত্যু জীবনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, কিন্তু অকালমৃত্য অপার বেদনার। আর সেই মৃত্যু যদি হয় 'নির্বাসিত' জীবনে, স্বজনদের অনুপস্থিতিতে– তাহলে সেটি তো আরও বেদনার। বেগম খালেদা জিয়ার জন্য এই মৃত্যু অনেক বেশি কষ্টের হবারই কথা। ২০০৮ সালে সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন কোকো। পরে চিকিৎসার জন্য তিনি থাইল্যান্ডে যান। সেখান থেকে মালয়েশিয়ায় বসবাস করতে শুরু করেন। সেখানেই গতকাল মৃত্যু হয় তার।
কোকোর মৃত্যু এমন একটা সময়ে হয়েছে যখন পুরো বাংলাদেশই মৃত্যুপুরীতে রূপান্তরিত, মূলত কোকোর মা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষিত আন্দোলন সন্ত্রাসী তৎপরতায় রূপ নিয়েছে বলে। বাসে আগুন জ্বলছে রোজ; পেট্টল বোমায় প্রতিদিনই মানুষ মরছে; অগ্নিদগ্ধ হয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছে শিশু। সেই মৃত্যুযন্ত্রণা বেগম খালেদা জিয়াকে কখনও স্পর্শ করেছে বলে দেশবাসীর বোধ হয়নি। আমি নিজেও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্য করেছিলাম: ''বেগম খালেদা জিয়াকে একদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে বসিয়ে রাখা হোক। আগুনে পোড়া মানুষদের যন্ত্রণা দেখে যদি তার হৃদয়ে মানুষের জন্য সহানুভূতি তৈরি হয়।''
এমন একটা অবস্থায় কোকোর মৃত্যুসংবাদ শোনার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ খালেদা জিয়ার প্রতি প্রতিসহানুভূতিশীল হয়ে পড়েছে। নিজের সন্তানের আগুনে পোড়া দেহ বার্ন ইউনিটে রেখেও তারা খালেদা জিয়ার জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে; সেই দীর্ঘশ্বাসটা অবশ্যই সহানুভূতির।
এর সঙ্গে মানুষের মনের একটা আকুতিও কিন্তু থেকেছে। বেগম খালেদা জিয়া কেবল রাজনৈতিক নেত্রী নন– তিনি একজন মা; একজন নারী; সর্বোপরি, একজন মানুষ– এই বিশ্বাস তাদের মধ্যে কাজ করেছে। সন্তান হারানোর বেদনা তাকে আর দশটা মায়ের মতো স্পর্শ করবে, এটা ভাবাই স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষ প্রকাশ্যে বলতে না পারলেও মনে মনে চেয়েছে, খালেদা জিয়ার মনে সন্তান হারানোর যে ব্যথা, তা অন্তত কিছু সময়ের জন্য দেশের তাণ্ডব থামাতে সহায়তা করুক।
দেশের মানুষ নিরবে চাইলেও কাদের সিদ্দিকী সেটি প্রকাশ্যেই চেয়েছেন; তিনি খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেই ফেলেছেন: ''সন্তান হারানোর এই শোকের দিনে এই মুহূর্তে অবরোধসহ সকল কর্মসূচি স্থগিত করুন।''
উপায়হীন আর সব মানুষজনও সম্ভবত একটা মৃত্যুর ভেতরেই নিজেদের জীবনের নিরাপত্তার সম্ভাবনা খুঁজতে চেয়েছেন। আর সে কারণেই, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যাচ্ছেন'– খবরটা মানুষকে উজ্জীবিত করে তুলেছিল। হাটে-ঘাটে আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে মানুষে সেই উজ্জীবিত হওয়ার কথা প্রকাশও করে ফেলেছিল। শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে গেলে কী এমন ঘটবে– রাজনীতির বিদ্যমান অবস্থায় এই প্রশ্ন যৌক্তিক হলেও কেউ কিন্তু সেটি তুলেনি। 'হাসিনা-খালেদা' সংলাপের দাবিও তো সাম্প্রতিক সময়ে বেশ উচ্চকিত হয়ে উঠেছে। সরকার এবং তার সমর্থকদের মধ্য থেকে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে তর্জন-গর্জনের মধ্যেও বিএনপি নেতারা সংলাপের দাবি জানিয়ে গেছেন। সে কারণেই প্রধানমন্ত্রীর গুলশান-যাত্রা সাধারণ মানুষকে আশাবাদী করে তুলেছিল– এই বুঝি জট খোলার একটা সুযোগ তৈরি হল!
রাজনীতির মাঠ পেট্টল বোমার আগুনের তাপে উত্তপ্ত হলেও কালকের পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। সন্তান হারানোর বেদনায়, শোকে মূহ্যমান একজন মায়ের কাছে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে ছুটে গেছেন আরেক মমতাময়ী মা। শোকের সময় নাকি মানুষের মন 'তরল' হয়ে ওঠে। মৃতের বাড়িতে সমবেত মানুষের মনও হয়ে ওঠে নরম কাদার মতো। গ্রামীণ সেই বিশ্বাস থেকেই হয়তো শেখ হাসিনার গুলশান-যাত্রা নিয়ে এত বেশি আশাবাদ পল্লবিত হয়ে উঠেছিল সাধারণ মানুষের মনে।
কিন্তু শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ের গেটে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে এসেছেন। বেগম খালেদা জিয়াকে ব্যক্তিগতভাবে সমবেদনা জানানো তাঁর আর হয়ে ওঠেনি। বাংলাদেশের সংস্কৃতিই তো এটা। গ্রামেগঞ্জে; এমনকি শহরে, যেখানে প্রতিবেশির সঙ্গে কালেভদ্রে দেখা হয় কিনা সন্দেহ, সেখানেও কোনো বাড়িতে শোকার্তর কান্নার শব্দ পাওয়া গেলে প্রতিবেশিরা ছুটে যান, চেনা-পরিচয়ের প্রয়োজন পড়ে না। তারা শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গল্পগুজব করে সময় কাটান; এতে পরিবারের সদস্যদের মনের ভার লাঘব হয়।
কিন্তু শেখ হাসিনা সেই সুযোগ পাননি। তাঁকে গেট থেকে ফিরে আসতে হয়েছে। কেন? বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা আমরা বুঝতে পারি। অনেকটা 'নির্বাসনে' থাকা অবস্থায় সন্তানের মৃত্যু তাকে অবশ্যই বিচলিত করেছে। অতিথি আপ্যায়নের মতো মানসিক অবস্থায় তিনি ছিলেন না, সেটি আমরা ধরে নিতে পারি। যে বাড়িতে স্বজনের মৃত্যুতে শোক চলছে, সে বাড়িতে অতিথি আপ্যায়ন মূখ্য নয়। শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুর পর সুধা সদনে ছুটে গিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। সে সময় তিনি শেখ হাসিনাকে সমবেদনা জানিয়েছিলেন এবং দুজনে কিছুক্ষণ কথাও বলেছিলেন।
এবার যখন শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে এলেন, তখন গেট থেকেই তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হল। স্বাভাবিক ভদ্রতাটুকু দেখানোর মতোও কেউ সেখানে ছিলেন না। অথচ শেখ হাসিনার ফিরে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে জামাত নেতা ড. রিদওয়ান উল্লাহ শাহেদি, খেলাফত মজলিস নেতা অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল লতিফ নেজামীকে কার্যালয়ে ঢুকতে দেখা গেছে। পরে তাদের কার্যালয়ের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ছেলে হারানোর শোকে বেগম খালেদা জিয়া মানসিকভাবে বিধ্বস্ত থাকবেন– এটাই স্বাভাবিক। শোকসন্তপ্ত মানুষের অসৌজন্য আমরা শোকের গভীরতা বিবেচনায় এড়িয়ে যেতে পারি। কিন্তু দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, শীর্ষ রাজনীতিক হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া শোক-সন্তাপ ধারণ করেও সামাজিক সৌজন্য প্রদর্শন করতে পারবেন– এটা ভাবাই তো স্বাভাবিক। বিএনপি নেতা শিমুল বিশ্বাসের কথা আমরা ঠিক বলে ধরে নেব: 'বেগম খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।' কিন্তু বিএনপির অন্যান্য নেতারা কী করছিলেন? তাদের মধ্যে কি ভদ্রতাবোধ, সৌজন্য থাকতে নেই!
শিমুল বিশ্বাসের কথা আমরা ঠিক ধরে নেব: 'খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে'-- কিন্তু বিএনপির অন্যান্য নেতারা?
মিডিয়ার খবর থেকে জানি, দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতাই সে সময় গুলশানের অফিসের ভেতরে ছিলেন। তারাও কেউ স্বাভাবিক ভদ্রতা দেখানোর মতো উদার হতে পারেননি। সেটা কি তারা বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে বা সিদ্ধান্তে করেছেন? নাকি নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে গেট থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন? তাহলে কি বিএনপির নেতাদের মধ্যে এমন লোকও আছেন, যারা কোনোভাবে সমঝোতার পথ দেখার সম্ভাবনা তৈরি হোক সেটা চান না? তারা কারা?
আগুনে পোড়া মানুষের আহাজারিতে মন ভারি হয়ে থাকা দেশের সাধারণ মানুষ আরেক দফা হতাশ হয়েছেন। সাধারণ মানুষ বারবারই হতাশ হন। কিন্তু রাজনীতির এ কোন চেহারা আমরা দেখলাম! রাজনীতি মানেই কি কেবল কদর্য অসৌজন্য, অসহিষ্ণুতা!
আমরা, সাধারণ জনতাও কি তাহলে বিএনপি নেতাদের মতো সৌজন্যহীন হয়ে কোকোর মৃত্যু আর পেট্টল বোমায় প্রাণহারানো সন্তানের মৃত্যুশোকের তুলনা করব? প্রশ্ন তুলব, কোন মুত্যুটা বেশি শোকের? সে কাজ আমরা করব না। কেননা, স্বাভাবিক মৃত্যুর সঙ্গে খুনের তুলনা করা যায় না। যার স্বজন খুন হয়েছে, তার বেদনার সঙ্গে কোনো স্বাভাবিক মৃত্যুশোকের তুলনা অর্বাচীনের কাজ। কোনো রাজনীতিক অর্বাচীন হলেও দেশের মানুষ অর্বাচীন নন।
তাই আমরা মৃত্যুর শোকস্তম্ভে দাঁড়িয়ে মৃত্যুর মিছিল বন্ধের দাবিই তুলব।
শওগাত আলী সাগর: টরন্টো থেকে প্রকাশিত 'নতুন দেশ'এর প্রধান সম্পাদক।
__._,_.___
Posted by: Muhammad Ali <man1k195709@yahoo.com>
****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration:
Call For Articles:
http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68
http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585
****************************************************
VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/
****************************************************
"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
-Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190