[Attachment(s) from Obak Balok strnger17@gmail.com [mukto-mona] included below]
Attachment: একই লেখা MS Office Word ফাইলে।
শিরোনাম: (শিরোনাম সংযোজন/পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে হচ্ছে)
অভিজিৎ রায় আছেন এখনো
পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা দিয়ে এসে ফেসবুকে ঢুকলাম। এক বন্ধু ম্যাসেজে জানালো গত রাতে 'ব্লগার' অভিজিৎ রায় খুন হয়েছেন। পড়ে অবাক হই। বিশ্বাস হওয়ার প্রশ্নই আসেনা! মনে পড়ল উনিতো থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। তারপরও মনের খুঁতখুঁত দূর করতে অনলাইন খবরের ওয়েবসাইটে যাই। পেজটা লোড হতেই আমি স্থির হয়ে পড়ি, স্তব্ধ হয়ে পড়ে আশপাশ। হাত যেন আর মাউসে ক্লিক দেয়না। মনে মনে বলি এটা ভুল, এটা স্বপ্ন। স্থবির হয়ে কয়েক মুহূর্ত চোখ বন্ধ রেখেও দুঃস্বপ্ন থেকে ফিরতে পারলামনা। খবরটি পড়তে ক্লিক দিয়ে মুক্তমনায় ঢুকতে চাইলাম নতুন ট্যাবে, পাওয়া যায়নি। পুরো খবর পড়তে গিয়ে চোখগুলো জ্বলছিল খুব। বিমুঢ় আমার মাথায় ঘুরতে থাকে তাঁর অসংখ্য লেখা। তাঁর সাথে আমার পরিচয় নেই, তবু মনে হচ্ছিলো যেন খুব কাছের কেউ, যিনি শিক্ষক এবং মুক্তির প্রদর্শক, তিনি চলে গেলেন।
আমি মুক্তমনায় নিতান্ত নতুন, বয়সের দিক থেকেও খুব ছোট। বছর দেড়েক আগে একটা বিবর্তনের তথ্য সংক্রান্ত বই পড়ে আমার মাঝে ধর্ম নিয়ে সংকোচ জাগে। ধর্মের ব্যাখাগুলো কিছুতেই মনে ধরেনা। লম্বা একটা সময় ছিলাম দোটানায়। এরপর দেখা মিলল মুক্তমনার। অবাক হয়ে দেখি যুক্তির শক্তিকে, যুক্তির মুক্তিদানকে। আমার মাঝে জাগা প্রশ্নের উত্তর আর সাথে হাজার নতুন-ভিন্ন সব প্রশ্ন-উত্তর দেখে আমার সংকোচ দূর হতে থাকে দ্রুত। খুব অল্প কয়েকদিন সময়ে আমি মুক্তমনার অনেক লেখা পড়ে ফেলি। এর মধ্যে সবচাইতে বেশি পড়ি অভিজিৎ রায় আর আরও কয়জন লেখকের লেখা। মুক্তমনার ই-বই অনেকগুলো পড়ে ফেলেছি এর মধ্যে। অভিজিৎ রায়ের লেখার রীতিমত ভক্ত হয়ে পড়লাম আমি। প্রতিদিন ব্লগে এসেই তাঁর লেখা খুজতাম নতুন কি লিখলেন, পেতামও বটে। প্রথম পাতায় প্রায় সবসময় তাঁর লেখা থাকতোই। (হায়, 'থাকতোই'! আর থাকবেনা!) তাঁর লেখার গুণ নিয়ে বলার কি বা আছে, যারা নিরপেক্ষ দৃষ্টি থেকে মুক্ত মন নিয়ে পড়েছে, তারাই দেখেছে, আর মুগ্ধ হয়েছে তাঁর গোছানো সেই যুক্তির লেখাগুলোতে। শুধুমাত্র পোস্ট নয়, দেখেছি যে তাঁর মন্তব্যগুলোও সর্বদা তথ্য আর যুক্তিতে পরিপূর্ণ আর তাতে সব লেখকদেরই উৎসাহ দিতেন আরও লেখার। সবসময় তাঁর লেখা পড়ার জন্যে বিশেষ প্রস্তুতি নিয়ে বসতাম কারন তিনি এতো বেশি তথ্য দিতেন যে আমার ছোট্ট মাথা সেগুলো একটানা পড়তে পারতোনা। কোন সন্দেহ নেই তাঁর লেখাগুলো সত্যের এক একটি অকাট্য প্রমাণ।
আমার অদ্ভুত একটা শখ ছিল। সেটা হল প্রথম যখন আমি মুক্তমনায় লিখব(মুক্তমনায় আসার শুরু থেকেই বুঝতে পেরেছি এটাই আমার ঠিকানা) আর আমার লেখায় অভিজিৎ রায় মন্তব্য করবেন। তাঁর মন্তব্যের জন্যে রীতিমত আমার লোভ হত। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তাঁর সেই সুন্দর-গোছানো মন্তব্য পাবোনা আমি। তিনি কখনো ব্যক্তিগত আক্রমণ করেননা আর সব কথা যুক্তিসহ বুঝিয়ে বলেন, এই দুটি গুণই সম্ভবত আমার এই ইচ্ছার কারন।
অভিজিৎ রায় ছিলেন মুক্তমনার অন্যতম সক্রিয় লেখক। তাঁর মত দ্বিতীয় কেউ ছিলেন না তবে এবার হবে। এবার আমিও হতে চাই একজন অভিজিৎ রায়। আমি নিশ্চিত যে আমার মতই আরও শত তরুন-কিশোরও আজ অভিজিৎ হতে চায়। আমি, আমরাই এগিয়ে নিবো অভিজিৎ রায়ের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন, সমান অধিকারের একটি সভ্য সমাজ গড়ার স্বপ্ন। হয়তো আমরা অভিজিৎ রায়ের মত দেখে যেতে পারবোনা, হয়তো আরও যুগ যুগ এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবেনা, তবে আমি জানি, এই যুদ্ধে যুক্তির জয় নিশ্চিত। অভিজিৎ আলোর পথ দেখিয়েছেন আমাদের, দেখিয়েছেন কিভাবে জীবনের ঝুকি নিয়েও মানবতার জন্য কলম ধরে যুদ্ধ করতে হয়, দেখিয়েছেন কিভাবে সত্যগুলো যুক্তিতেই মুক্ত হয়। চাপাতি চালিয়ে একজন অভিজিতের শুধুমাত্র দেহকে ধ্বংস করে তারা বরং মুক্তচিন্তার সাথে চলা যুদ্ধে নিজেদের পরাজয়ের ঘোষণা আবারো দিয়েছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি ওই কাপুরুষরা এককভাবে অভিজিৎ রায়ের লেখার কাছে নত স্বীকার করেছে আর সাথে সাথে মুক্তচিন্তার জয়কে তরান্বিত করেছে হাজার অভিজিৎ রায় সৃষ্টি করে।
জয় যুক্তির হবেই।
পারিবারিক ধর্মের খাঁচায় বন্ধি বলে নাম প্রকাশ করছিনা,
২৮.০২.২০১৫
__._,_.___