সেই ২০১৩ সালে গণ জাগরণ মঞ্চ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে যে শুরু হল নাস্তিক আস্তিক বিতর্ক সেটা এই ২০১৫ সালে এসেও বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত/সমালোচিত শব্দ। এই বিষয় নিয়ে একবার হলেও আলোচনা করেনি এমন ব্যাক্তি এখন বাংলাদেশে বিরল। অন্যদের কথা জানিনা কিন্তু এই বিষয় নিয়ে তর্ক, বিতর্ক দেখতে দেখতে আমি নিজেই মনে হয় অসুস্থ হয়ে পড়ছি। পরিচিত, অপরিচিত, বন্ধু, বান্ধব সহ যেকোনো সম্পর্কেই এখন একে অপরকে আস্তিক বা নাস্তিক বলে ট্যাগ দেয়া একটা ফ্যাশান এ পরিণত হয়েছে। এর মানে দাঁড়াচ্ছে তুমি যেই হও না বাপু তোমাকে আস্তিক বা নাস্তিক যেকোনো একটা পরিচয়ে পরিচিত হতেই হবে। বাংলাদেশের জনগণের এখন বড় পরিচয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই আস্তিক, নাস্তিক বা ধর্ম পরিচয়। মনে হচ্ছে পুরো দেশটা যেন ধর্মের নামে বন্দী। কেন রে বাবা আমার বিশ্বাস আমার কাছেই থাকনা তা নিয়ে তোদের কেন এতো মাথা ব্যাথা হবে!!!!! আমাকে আস্তিক বা নাস্তিক ট্যাগ দিয়ে কারো যদি ২ পয়সার লাভ হতো তাও মেনে নেয়া যেতো, কিন্তু অহেতুক এই বিষয় নিয়ে কথা বলার মানে দাড়ায় যে, এর পেছনে একটি অন্যরকম লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আর এই অন্যরকম লাভ টা হল পুরো দেশে মুক্ত মনের মানুষদের যে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, সেই গ্রহণযোগ্যতার মাত্রায় প্রশ্ন তুলে, ধর্মের নামে দেশে বিভক্তি তৈরি করে সেই ১৯৪৭ এর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা বা আস্তিক, নাস্তিক দাঙ্গা লাগিয়ে দেশকে আফগানিস্তানের মতো জঙ্গিদের অভয়ারণ্য করে পাকি জঙ্গিগুলোকে আশ্রয় দেয়া। যদি কোনদিন এই জারজ গুলো বাংলাদেশের নাম বদলে ইসলামী দেশ নাম দেয়ার দাবী তোলে তাতেও আমি অবাক হবোনা। কারণ সত্যিই আজকাল পরিস্থিতি যেভাবে তৈরি করা হচ্ছে তাতে একদিন এই দেশ ধর্মের নামেই পরিচিত হবে, কোন জাতির পরিচয়ে নয়। আর এই মৌলবাদীদের রাজনীতির নামে যারা আশ্রয়, প্রশ্রয় দিচ্ছে একদিন তারাই এই ধর্মান্ধদের তৈরি করা দাঙ্গায় ধ্বংস হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে থাকবে।
এখন কথা হল এই ধর্মান্ধ মানুষগুলো কেন বেছে বেছে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিশানা করছে? এর উত্তরটা খুবই সোজা, তাঁরা ৭১ এ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিশ্চিহ্ন করার যেই অভিযানে নেমেছিল তা অসম্পূর্ণ ছিল তাই এখন তাঁরা সেটা সম্পূর্ণ করতে চাইছে। আর দ্বিতীয় আরেকটা কারণ হল এই মুক্তমনের মানুষগুলো যেভাবে এই দেশের জনগণ কে শিক্ষায় দীক্ষায় এবং জ্ঞানে আলোকিত করছে, এভাবে চলতে থাকলে অদুরেই তাঁদের ধর্ম ব্যাবসা লাটে উঠে যাবে। তাই যতটা পারা যায় জনগণকে মূর্খ রেখে ধর্মের নামে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে নেয়া। যদি তাই না হয় তবে কেন আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর জাফর ইকবাল স্যার বা সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আবু সাইয়িদ স্যার কে নাস্তিক ট্যাগ দেয়া হবে। কেনই বা অভিজিৎ রায় বা রাজীব হায়দারকে তাঁদের হাঁতে প্রান দিতে হবে। আর কেনই বা লেখক হুমায়ূন আজাদ বা তসলিমা নাসরিন কে হামলার শিকার হতে হবে। এই ধর্মান্ধ মানুষগুলোর ভেতরে নেই কোন আলোর সন্ধান বা জ্ঞান আহরণের ইচ্ছা। তাঁরা নিজেরা থাকে অন্ধকারে এবং সবাইকে অন্ধকারে রাখাতেই তাঁরা নিরাপদ বোধ করে। তাঁদের ধারণা বা জ্ঞানের মধ্যেই নেই যে ধর্মগ্রন্থ কোরআন ছাড়াও যে আরও কোন গ্রন্থ থাকতে পারে যেগুলো আলোর পথের দিশারী। যে লেখকদের দ্বারা তাঁরা নিজেরা এবং পুরো জাতি যেখানে আলোকিত হতে পারে সেখানে তাঁরা সবাইকে ঐ একটি ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থের গণ্ডীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চায়, কারণ আলোতে যে তাঁদের প্রচণ্ড ভয়।
সবশেষে এটাই বলতে হয় যে, এই ধর্মান্ধ মৌলবাদী জঙ্গি গুলো যেহেতু আমাদের দেশেরই একটা অংশ তাই এদেরকে কেউ যদি সঠিক পথে আনতে পারে সেটাও পারে শুধু এই দেশেরই আলোকিত বা মুক্ত মনের মানুষগুলো। তাই তাঁদেরকে আলোর পথে আনতে চেষ্টা আমাদের সবসময় থাকবে কিন্তু যারা এই আলোর পথে আনার চেষ্টাকে গ্রাহ্য না করে আমাদের ধর্মের নামে চোখ রাঙ্গাবে, তবে তাঁদেরকেও আমরা বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দিবো এটাও যেন তাঁরা আশা না করে। কারণ আমাদের কাছে অস্ত্র থাকুক বা না থাকুক, সাথে আছে কলম আর ভেতরে আছে অভিজিৎ রায় এবং হুমায়ূন আজাদ স্যার এর উন্মাদনা যা আমাদের দেশের মানুষদের আলোকিত করবেই এবং ধ্বংস করবে ধর্মের নামে যেকোনো হঠকারিতা বা বিভক্তি, সকলের বিশ্বাস হবে, সবার উপরে মানবধর্ম তাহার উপরে নাই।
বিঃদ্রঃ প্রিয় এডমিন আমি বহু বছর থেকে এই গ্রুপ এর নীরব সদস্য কিন্তু কখনো লেখা হয়নি শুধুই পড়ে গিয়েছি। এটাই আমার প্রথম লিখা মুক্তমনা তে। আমি এই গ্রুপ এর সদস্য যে ইমেইল আইডি দিয়ে তা আমি পরিবর্তন করে নতুন ইমেইল আইডি তে যুক্ত করতে চাই। দয়া করে বলবেন এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভব হয় তাহলে আমার নতুন আইডিটি নিম্নরূপ। lupinbd@yahoo.com
__._,_.___