http://www.bhorerkagoj.net/print-edition/2015/05/13/32299.php
লন্ডনে দেশী পলিটিক্স
অনেকগুলো ভাল সংবাদ এ সময়ে। আর খারাপ খবর হলো ক্রিকেটে আবার আমরা 'ধরা খাইলাম'। ভালমন্দ, জয়-পরাজয় নিয়েই সমাজ, জীবন। সিটি নির্বাচনের নিন্দা শুনতে শুনতে বৃটেনের নির্বাচনে তিন বাঙালী কন্যার বিজয় সবাইকে আনন্দিত করেছে। বাংলাদেশের অন্যুন ১১জন প্রতিদ্বন্দিতা করলেও জিতেছেন তিনজন, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এমপি হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন তিন রমনী। দেশের বাইরে আমাদের মহিলারা রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ হওয়ার কারণ সম্ভবত: বাংলাদেশের রাজনীতিতে মহিলাদের দোর্দন্ড প্রতাপ। টিউলিপ তো বলেই দিয়েছেন, 'খালা প্রধানমন্ত্রী তার প্রেরণা'। টিউলিপের এলাকায় আমাদের দেশীয় রাজনীতি হয়েছে, অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর নাতনীকে হারাতে বিএনপি-জামাত লন্ডনেও সচেস্ট ছিলো! কি বিচিত্র বাঙালী, তাই হয়তো কবি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, '---রেখেছো বাঙালী করে মানুষ করোনি'।
তিন বঙ্গ ললনাকে অভিনন্দন। রোশনারা প্রায় ২৫হাজার ভোটে জিতেছেন, তার এলাকা বাঙালী অধ্যুষিত, এবং তিনি জিতবেন তা সবাই জানতেন। রুপা হাজার ভোটে জিতেছেন এবং তার এলাকাতেও প্রচুর বাঙালী। কিন্তু টিউলিপের এলাকা প্রায় বাঙালী শূন্য এবং তার জেতাটা অর্থবহ। এজন্যে তার মা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা এবং স্বামীর অবদান অনস্বীকার্য। অন্য দুই বাঙালী প্রার্থীর এলাকায় বিএনপি-জামাত ঝামেলা করেনি, কিন্তু টিউলিপকে জ্বালিয়েছে। যদিও ওদের অপপ্রচারণা টিউলিপের জয়কে সহায়তা করেছে বলে শুনছি। জানা যায়, বৃটেনের এই নির্বাচনে সাউথ এশিয়ার ৩জন বাঙালী, ১০জন ভারতীয়, ৮জন পাকিস্তানী ও ১জন শ্রীলংকান জয়ী হয়েছেন। টিউলিপ ও অন্য দু'জনের জয়ে নিউইয়র্কে মিষ্টি বিতরণ হয়েছে এবং আমরা সেই মিষ্টি খেয়েছি।
অপর একটি ভালো সংবাদ হলো 'সীমান্ত বিজয়'। সমুদ্র বিজয়ের পর সীমান্ত বিজয় আর এক বিরাট অধ্যায়। একচল্লিশ বছর পর এ ঘটনা আনন্দে কেঁদে ফেলার মত অন্যন্য। এবিজয় সবার, দুই প্রতিবেশীর, দুই প্রধানমন্ত্রীর এবং রাজনীতির বিজয়। মুজিব-ইন্দিরার সময়কার সুবাতাস আমরা দেখেছি। এখন দেখছি হাসিনা-মোদি বা বাংলাদেশ-ভারতের মৈত্রী ও সু-সম্পর্কের জয়জয়কার। যে সমস্যাটি চার দশক আটকে ছিলো তা হটাত করে লোকসভায় সর্বসন্মতভাবে পাশ হয় কি করে? একেই বলে রাজনীতি! জানুয়ারীতে এক সপ্তাহের জন্যে ভারত গেলে আমার মনে হয়েছিলো, আমার চেয়েও ওরা বেশি শেখ হাসিনার সমর্থক! ভারত এখন তা প্রমান করছে। এবার মোদী বাংলাদেশ আসবেন। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নুতন অধ্যায় সূচিত হবে। প্রতিবেশীদের সাথে সু-সম্পর্ক স্থাপনের মোদীর অঙ্গীকার ঠুনকো নয় তা তিনি প্রমান করছেন। শেখ হাসিনা-মোদী দু'জনেই কাজে বিশ্বাসী, এখন সময় এসেছে দু'দেশের সম্পর্ক-কে নুতন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার। দু'জনেই আরো কিছুদিন ক্ষমতায় থাকবেন, সুতরাং এগিয়ে যাবার এইতো সময়।
এই চুক্তিতে বাংলাদেশ লাভবান হবে। তেমনি লাভবান হবেন ওই এলাকার মানুষগুলো। এতদিন তাদের দেশ ছিলোনা, এখন তাদের দেশ হবে এবং তারা ইচ্ছেমত বাংলাদেশ বা ভারতকে তাদের দেশ হিসাবে বেছে নিতে পারবেন। এটা এক ধরনের মুক্তি। বেদনা থেকে মুক্তি। যাদের দেশ নেই, তারা বোঝে কি সে বেদনা। আমাদের দেশে যারা এতকাল সেভেন সিস্টারের বিদ্রোহীদের মদত যুগিয়েছেন তাদের অন্তত: এখন বোঝা উচিত, তাদের রাজনীতি ভুল ছিলো। রোহিঙ্গাদের নিয়ে যারা এখনো রাজনীতি করতে চান, তারাও সময় থাকতে নিজেদের শুধরে নিন। বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানীদের জমানা শেষ হয়ে গেছে। ভোরের কাগজে দেখলাম, বিশ দলীয় জোটে ভাঙ্গনের সুর। সবে তো শুরু, সাম্প্রদায়িক শক্তির মাথায় পচন ধরেছে, আরো দু'তিন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসীর রায় কার্যকর হলে 'পচন' সারা দেহে ছড়িয়ে পড়বে।
এদিকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টার একটি মহতী উদ্যোগ সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে যথার্থই বলেছেন, মানব মুক্তির জন্যে রবিঠাকুর যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা বাস্তবায়ন করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। এরসাথে যোগ দিয়ে তিনি আরো বলেছেন, কবিগুরু বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক মর্যাদা দিয়েছেন, আর বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতিকে একটি স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত কার্যক্রম শুরু করুক, শুভস্য শীঘ্রম। নি:সন্দেহে এটি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে তা বলা বাহুল্য। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় আরো রবিঠাকুর, নজরুল সৃষ্টি করুক।
তবে এর যাত্রাপথ কুসুমাস্তীর্ণ হবে এমন কথা জোর বলা যায়না। ইন্টারনেটে একটি চক্র ইতিমধ্যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টার বিরুদ্ধে যাইচ্ছে তাই লিখে যাচ্ছে। শাহ্জাদ্পুরেও শুনেছি ক'জন গ্রেফতার হয়েছে। আমরা ষাটের দশকে অশুভ চক্রের রবীন্দ্র বিরোধী চক্রান্তের কথা ভুলে যাইনি। ঐসময় যারা বিরোধী ছিলো তারা প্রায় সবাই মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে গেছে। এখনো যারা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়-এর বিরোধী তারা রাজাকার-আলবদরের উত্তরসুরী। এরা ভালো কিছু সইতে পারেনা। একজন বাঙালী টিউলিপ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যাক, তা এরা চায়না। এরা পাকিস্তান চায়। অথচ এদের সাধের পাকিস্তান যে 'লাইফ সাপোর্টে' আছে, তা এরা বুঝতে পারেনা, বা বুঝতে চায়না! আশার কথা, ষাটের দশকের সাথে এখন বিস্তর ফারাক। তখন সরকার ছিলো বিপক্ষে, এখন সরকার পক্ষে। তখন মোনায়েম খান বিএম কলেজে ছাত্রদের বলেছিলেন, "তোমরা রবীন্দ্র সঙ্গীত" লিখতে পারোনা? এখন তার সুহৃদরা 'সর্প দেখে ফাঁসীর রজ্জু' বলে ভয় পাচ্ছে! রবিঠাকুর ও বঙ্গবন্ধুর মত যারা অসম্প্রদায়িক চেতনার ধারক-বাহক তারা সবাই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে। আর বিশ্ববিদ্যালয় যত হবে ততই মঙ্গল।
শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক।
নিউইয়র্ক, ১১মে ২০১৫।
__._,_.___