দায় মোচনের আরেক ধাপ
শাহীন করিম, হরলাল রায় সাগর, শাহীন রহমান ও মিজানুর রহমান
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলায় চার দশকেরও বেশি সময় দম্ভের অট্টহাসি হেসেছে স্বাধীনতা বিরোধীরা। এই পাক-দোসররা বারবার ভূলুণ্ঠিত করেছে দেশের পতাকার সম্মান, অস্বীকার করেছে শহীদের আত্মত্যাগের ইতিহাস। কিন্তু ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে নি। দেরিতে হলেও ধাপে ধাপে শোধ হচ্ছে লাখো শহীদের রক্তের ঋণ। বিচারহীনতার দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি ভুলে বাঙালির বিজয় গাথার দিন ১৬ ডিসেম্বরের আগেই ২২ নভেম্বর দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের কলঙ্ক মোচনের পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। এ যেন নতুন প্রজন্মের কাছে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদদের আত্মত্যাগের বাণী- 'তোমাদের জন্য রেখে গেলাম এক রাজাকার মুক্ত দেশ'।
শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিট। ফাঁসি কার্যকর করা হয় একাত্তরের ভয়ঙ্কর দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মিত স্থায়ী ফাঁসির মঞ্চে একই সঙ্গে পাশাপাশি দড়িতে ঝুলিয়ে জল্লাদ শাহজাহান ও রাজু মঞ্চের গিয়ার টেনে ঘৃণ্য দুই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন।
রাত ২টা ৫০ মিনিটে সামনে পেছনে র্যাব-পুলিশের কঠোর পাহারায় অ্যাম্বুলেন্সে করে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী লাশ তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানে ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের লাশ ফরিদপুরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হবে।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় আইজি (প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন, অতিরিক্ত আইজি (প্রিজন) কর্নেল ফজলুল কবির, ঢাকার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তোফাজ্জল হোসেন, সিভিল সার্জন ডা. আবদুল মালেক মৃধা, র্যাব-১০ এর অধিনায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর, গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম, কারা চিকিৎসক আহসান হাবিব, দুই ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আহমেদ ও মোহাম্মদ মুশফিকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া কারাগারের ভেতরে ছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম ও লালবাগ বিভাগের ডিসি মফিজুর রহমান। ফাঁসির মঞ্চে দুই যুদ্ধাপরাধী তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি বলে কারা সূত্র জানায়।
গতকাল শনিবার দিনভর প্রাণভিক্ষার আবেদন নিয়ে নানা নাটকীয়তার পর ফাঁসি কার্যকরের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মোহাম্মদ মারুফ হাসান রাত সাড়ে ১০টায় নিশ্চিত করেন আজ (গতকাল শনিবার) রাতেই ফাঁসি কার্যকর করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর লাশ তাদের নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে দাফনের জন্য পাঠানো হয়।
দায় মোচনের আরেক ধাপসাকা ও মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করতে রাজুর নেতৃত্বে একটি জল্লাদ দল আগ থেকেই প্রস্তুত ছিল। শেষ দেখার জন্য রাতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের স্বজনদের কারাগারে ডেকে আনা হয়। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মো. মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা নেই বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নাকচ করার পর গতকাল রাত সোয়া ১০টার দিকে তিনি একথা জানান।
এর আগে রাত সাড়ে ৮টার পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসিকে ঘিরে রাতে ওই এলাকায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেয়ার পরই দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এ জোড়া ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে তৃতীয় ঘটনা। একই অপরাধে এর আগে জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল রাতে ও আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর।
সাকা-মুজাহিদের সঙ্গে পরিবারের শেষ সাক্ষাৎ: ফাঁসিরদণ্ড কার্যকরের কিছুক্ষণ আগে যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মো. মুজাহিদের সঙ্গে গতকাল রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শেষ সাক্ষাৎ করেন এই তাদের পরিবারের সদস্যরা। কারা সূত্র জানায়, সবশেষ গতকাল রাত ১০টা ৫ মিনিটে যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদের সঙ্গে শেষ দেখা করতে কারা ফটকে যান তার পরিবারের সদস্যরা। সাকার স্বজনরা কারাগার থেকে বের হওয়ার পর মুজাহিদের স্বজনদের কারাগারে প্রবেশ করানো হয়। এর আগে রাত ৯টা ৩৩ মিনিটে শেষ দেখা করতে কারাগারে প্রবেশ করে যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর পরিবার। সাতটি গাড়িতে চড়ে স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও ছেলে হুম্মাম কাদেরসহ সাকা পরিবারের ৪০ জন সদস্য রাত সোয়া নয়টার দিকে কারা ফটকে পৌঁছান। তবে তাদের মধ্য থেকে ১৮ জনকে সাক্ষাতের জন্য ভেততের প্রবেশ করতে দেয়া হয়। উভয়ের পরিবারের সদস্যরা সোয়া ঘণ্টা করে সাক্ষাৎ করেন।
এর আগে রাত সোয়া আটটার দিকে শেষ দেখা করার জন্য সাকা ও মুজাহিদ পরিবারের সদস্যদের কারাগারে আসতে অনুরোধ জানান কারা কর্মকর্তারা।
দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের সার্বিক প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে গতকাল রাত আটটার পরপর কারাগারের প্রবেশ করেন অতিরিক্ত আইজি কর্নেল ফজলুল কবির ও ডিআইজি গোলাম হায়দার। এর পরপরই ভেতরে প্রবেশ করেন আইজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন ও কারা চিকিৎসক। আগে থেকেই কারাগারের ভেতরে ছিলেন সিনিয়র জেল সুপার মো. জাহাঙ্গীর কবির ও জেলার নেছার আলমসহ ডেপুটি জেলাররা।
ফাঁসি কার্যকর করেন সাত জল্লাদ: ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর রায় ফাঁসি কার্যকর করেন রাজু ও শাহজাহানের নেতৃত্বে সাত জল্লাদ। সূত্র জানায়, গতকাল রাত নয়টার পরপরই রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির মঞ্চে আলো জ্বালানো ও শামিয়ানা টানানোর ব্যবস্থা করা হয়। প্রস্তুত রাখা হয় সাত জল্লাদ রাজু, শাহজাহান, সাত্তার, আবুল, মাসুদ, ইকবাল ও মুক্তারকে। রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে এই সাত জল্লাদ এক সঙ্গে একই মঞ্চে দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করেন।
যেভাবে ফাঁসি কার্যকর: কারাগার সূত্র জানায়, রাত আটটার দিকে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদকে রাতের খাবার দেয়া হয়। কিন্তু তারা খাবার খাননি। সাড়ে নয়টার দিকে কারা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মনির হোসেন তাদের তওবা পড়ান। রাত সাড়ে ১২টার দিকে সিনিয়র জেল সুপার মো. জাহাঙ্গীর কবির, কারা মসজিদের পেশ ইমাম মনির হোসেন, জল্লাদ রাজুসহ কয়েকজন কনডেম সেল থেকে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদকে মঞ্চে আনা হয়। আগ থেকে ফাঁসি মঞ্চ প্রস্তুত ছিল। দুই জল্লাদ মঞ্চের ডান পাশে, তিনজন ছিলেন বামে ও দুজন ছিলেন সামনে। ফাঁসির মঞ্চের অদূরেই অবস্থান নেন জেল সুপার, সিভিল সার্জনসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। ফাঁসির মঞ্চে সাকা ও মুজাহিদকে পাশাপাশি দাঁড় করানো হয়। জল্লাদ তাদের মুখে জমটুপি পরিয়ে দেন। এ সময় গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হয় 'ম্যানিলা রোপ'। জেল সুপার লাল রুমাল উপরে তুলে রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে নিচে ফেলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে জল্লাদ রাজু ও শাহজাহান মঞ্চের গিয়ার টান দেন। ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলতে থাকেন সাকা ও মুজাহিদ। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই নিস্তেজ হয়ে যান দুই যুদ্ধাপরাধী। নিয়ম অনুযায়ী প্রায় ২০ মিনিট তাকে ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে জানায় কারা সূত্র। পরে লাশের পরীক্ষা ও সুরতহাল সম্পন্ন করেন সংশ্লিষ্টরা।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেন। আসামি পক্ষের আপিলের পর চলতি বছর ২৯ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আপিল শুনানি শেষে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
অপরদিকে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যা ও অপহরণের দায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। আসামি পক্ষের আপিলের পর চলতি বছর ১৬ জুন আপিল বিভাগ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এর পর তারা উভয়ই সাজা বাতিল চেয়ে রিভিউ আবেদন করেন। বুধবার তাদের আবেদন দুটি নিষ্পত্তি করেন সর্বোচ্চ আদালত। ইতিপূর্বে একই অপরাধে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ কার্যকর হয়।
স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন: একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার লিখিত আবেদন সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়। সেখানকার আইনগত প্রক্রিয়া শেষে রাত পৌনে ৮টার দিকে তা বঙ্গভবনের রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়। এর আগে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানান, সাকা ও মুজাহিদ প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে এসেছে। আইনমন্ত্রী জানান, এরপর তাদের আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যাবে। সেখান থেকে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আইন মন্ত্রণালয় বিষয়টির ওপর মতামত দিয়ে সেটি রাষ্ট্রপতি বরাবর পাঠাবে। এরপর এটি রাষ্ট্রপতি জরুরিভাবে বিবেচনা করবেন, তাই বেশি সময় লাগবে না।
ওই আবেদনে কী বলা হয়েছে, জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ আমাকে জানিয়েছে, দু'জনই প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন। তারা প্রাণভিক্ষার আবেদন ছাড়া আর কিছু পাঠাতে পারেন না। এতে কী লেখা আছে, সেটা দেখার বিষয় তাদের নয়। কারা কর্তৃপক্ষ প্রাণভিক্ষার আবেদন মনে করেই পাঠিয়েছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আইনসচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক জানান, তারা আবেদন দুটি পেয়েছেন। এর ওপর কাজ সেড়ে রাত পৌনে ৮টার দিকে বঙ্গভবনের তা পাঠানো হয়।
প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ: মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের সূত্র রাত সাড়ে নয়টার দিকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
কারাগারে দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট: মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কিনা তা জানতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার মুসফিকুর রহমান ও তানভীর আহমেদ। গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কারাগারে প্রবেশের প্রায় ছয় ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ম্যাজিস্ট্রেটরা কারাগার থেকে বেরিয়ে যান। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি তারা।
কারাগার সূত্র জানায়, দুই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা তা জানতে চান ওই ম্যাজিস্ট্রেটরা। এক পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেটদের উপস্থিতিতে কারাগারের নির্ধারিত ফরমে দুটি প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন এই দুই যুদ্ধাপরাধী। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগারের ডেপুটি জেলার সর্বোত্তম দেওয়ান ও আরিফ হোসেন ওই আবেদন নিয়ে বেলা সোয়া ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হকের হাতে প্রাণভিক্ষার ওই আবেদনপত্র তুলে দিয়ে কারাগারে ফিরে আসেন ওই কারা কর্মকর্তারা।
প্রাণভিক্ষা নয়, দ্বিতীয় দফা বিচারের আবেদন করার দাবি সাকা-মুজাহিদের পরিবারের: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি বলে দাবি করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। তাদের দাবি, আবেদনে প্রাণভিক্ষা নয়, সাকা-মুজাহিদের প্রতি ন্যায়বিচার করা হয়নি বলে উল্লেখ করা হতে পারে।
মানবকণ্ঠ/এনআই
শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিট। ফাঁসি কার্যকর করা হয় একাত্তরের ভয়ঙ্কর দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মিত স্থায়ী ফাঁসির মঞ্চে একই সঙ্গে পাশাপাশি দড়িতে ঝুলিয়ে জল্লাদ শাহজাহান ও রাজু মঞ্চের গিয়ার টেনে ঘৃণ্য দুই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন।
রাত ২টা ৫০ মিনিটে সামনে পেছনে র্যাব-পুলিশের কঠোর পাহারায় অ্যাম্বুলেন্সে করে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী লাশ তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানে ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের লাশ ফরিদপুরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হবে।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় আইজি (প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন, অতিরিক্ত আইজি (প্রিজন) কর্নেল ফজলুল কবির, ঢাকার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তোফাজ্জল হোসেন, সিভিল সার্জন ডা. আবদুল মালেক মৃধা, র্যাব-১০ এর অধিনায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর, গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম, কারা চিকিৎসক আহসান হাবিব, দুই ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আহমেদ ও মোহাম্মদ মুশফিকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া কারাগারের ভেতরে ছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম ও লালবাগ বিভাগের ডিসি মফিজুর রহমান। ফাঁসির মঞ্চে দুই যুদ্ধাপরাধী তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি বলে কারা সূত্র জানায়।
গতকাল শনিবার দিনভর প্রাণভিক্ষার আবেদন নিয়ে নানা নাটকীয়তার পর ফাঁসি কার্যকরের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মোহাম্মদ মারুফ হাসান রাত সাড়ে ১০টায় নিশ্চিত করেন আজ (গতকাল শনিবার) রাতেই ফাঁসি কার্যকর করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর লাশ তাদের নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে দাফনের জন্য পাঠানো হয়।
দায় মোচনের আরেক ধাপসাকা ও মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করতে রাজুর নেতৃত্বে একটি জল্লাদ দল আগ থেকেই প্রস্তুত ছিল। শেষ দেখার জন্য রাতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের স্বজনদের কারাগারে ডেকে আনা হয়। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মো. মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা নেই বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নাকচ করার পর গতকাল রাত সোয়া ১০টার দিকে তিনি একথা জানান।
এর আগে রাত সাড়ে ৮টার পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসিকে ঘিরে রাতে ওই এলাকায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেয়ার পরই দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এ জোড়া ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে তৃতীয় ঘটনা। একই অপরাধে এর আগে জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল রাতে ও আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর।
সাকা-মুজাহিদের সঙ্গে পরিবারের শেষ সাক্ষাৎ: ফাঁসিরদণ্ড কার্যকরের কিছুক্ষণ আগে যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মো. মুজাহিদের সঙ্গে গতকাল রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শেষ সাক্ষাৎ করেন এই তাদের পরিবারের সদস্যরা। কারা সূত্র জানায়, সবশেষ গতকাল রাত ১০টা ৫ মিনিটে যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদের সঙ্গে শেষ দেখা করতে কারা ফটকে যান তার পরিবারের সদস্যরা। সাকার স্বজনরা কারাগার থেকে বের হওয়ার পর মুজাহিদের স্বজনদের কারাগারে প্রবেশ করানো হয়। এর আগে রাত ৯টা ৩৩ মিনিটে শেষ দেখা করতে কারাগারে প্রবেশ করে যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর পরিবার। সাতটি গাড়িতে চড়ে স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও ছেলে হুম্মাম কাদেরসহ সাকা পরিবারের ৪০ জন সদস্য রাত সোয়া নয়টার দিকে কারা ফটকে পৌঁছান। তবে তাদের মধ্য থেকে ১৮ জনকে সাক্ষাতের জন্য ভেততের প্রবেশ করতে দেয়া হয়। উভয়ের পরিবারের সদস্যরা সোয়া ঘণ্টা করে সাক্ষাৎ করেন।
এর আগে রাত সোয়া আটটার দিকে শেষ দেখা করার জন্য সাকা ও মুজাহিদ পরিবারের সদস্যদের কারাগারে আসতে অনুরোধ জানান কারা কর্মকর্তারা।
দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের সার্বিক প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে গতকাল রাত আটটার পরপর কারাগারের প্রবেশ করেন অতিরিক্ত আইজি কর্নেল ফজলুল কবির ও ডিআইজি গোলাম হায়দার। এর পরপরই ভেতরে প্রবেশ করেন আইজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন ও কারা চিকিৎসক। আগে থেকেই কারাগারের ভেতরে ছিলেন সিনিয়র জেল সুপার মো. জাহাঙ্গীর কবির ও জেলার নেছার আলমসহ ডেপুটি জেলাররা।
ফাঁসি কার্যকর করেন সাত জল্লাদ: ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর রায় ফাঁসি কার্যকর করেন রাজু ও শাহজাহানের নেতৃত্বে সাত জল্লাদ। সূত্র জানায়, গতকাল রাত নয়টার পরপরই রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির মঞ্চে আলো জ্বালানো ও শামিয়ানা টানানোর ব্যবস্থা করা হয়। প্রস্তুত রাখা হয় সাত জল্লাদ রাজু, শাহজাহান, সাত্তার, আবুল, মাসুদ, ইকবাল ও মুক্তারকে। রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে এই সাত জল্লাদ এক সঙ্গে একই মঞ্চে দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করেন।
যেভাবে ফাঁসি কার্যকর: কারাগার সূত্র জানায়, রাত আটটার দিকে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদকে রাতের খাবার দেয়া হয়। কিন্তু তারা খাবার খাননি। সাড়ে নয়টার দিকে কারা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মনির হোসেন তাদের তওবা পড়ান। রাত সাড়ে ১২টার দিকে সিনিয়র জেল সুপার মো. জাহাঙ্গীর কবির, কারা মসজিদের পেশ ইমাম মনির হোসেন, জল্লাদ রাজুসহ কয়েকজন কনডেম সেল থেকে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদকে মঞ্চে আনা হয়। আগ থেকে ফাঁসি মঞ্চ প্রস্তুত ছিল। দুই জল্লাদ মঞ্চের ডান পাশে, তিনজন ছিলেন বামে ও দুজন ছিলেন সামনে। ফাঁসির মঞ্চের অদূরেই অবস্থান নেন জেল সুপার, সিভিল সার্জনসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। ফাঁসির মঞ্চে সাকা ও মুজাহিদকে পাশাপাশি দাঁড় করানো হয়। জল্লাদ তাদের মুখে জমটুপি পরিয়ে দেন। এ সময় গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হয় 'ম্যানিলা রোপ'। জেল সুপার লাল রুমাল উপরে তুলে রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে নিচে ফেলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে জল্লাদ রাজু ও শাহজাহান মঞ্চের গিয়ার টান দেন। ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলতে থাকেন সাকা ও মুজাহিদ। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই নিস্তেজ হয়ে যান দুই যুদ্ধাপরাধী। নিয়ম অনুযায়ী প্রায় ২০ মিনিট তাকে ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে জানায় কারা সূত্র। পরে লাশের পরীক্ষা ও সুরতহাল সম্পন্ন করেন সংশ্লিষ্টরা।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেন। আসামি পক্ষের আপিলের পর চলতি বছর ২৯ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আপিল শুনানি শেষে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
অপরদিকে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যা ও অপহরণের দায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। আসামি পক্ষের আপিলের পর চলতি বছর ১৬ জুন আপিল বিভাগ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এর পর তারা উভয়ই সাজা বাতিল চেয়ে রিভিউ আবেদন করেন। বুধবার তাদের আবেদন দুটি নিষ্পত্তি করেন সর্বোচ্চ আদালত। ইতিপূর্বে একই অপরাধে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ কার্যকর হয়।
স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন: একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার লিখিত আবেদন সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়। সেখানকার আইনগত প্রক্রিয়া শেষে রাত পৌনে ৮টার দিকে তা বঙ্গভবনের রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়। এর আগে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানান, সাকা ও মুজাহিদ প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে এসেছে। আইনমন্ত্রী জানান, এরপর তাদের আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যাবে। সেখান থেকে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আইন মন্ত্রণালয় বিষয়টির ওপর মতামত দিয়ে সেটি রাষ্ট্রপতি বরাবর পাঠাবে। এরপর এটি রাষ্ট্রপতি জরুরিভাবে বিবেচনা করবেন, তাই বেশি সময় লাগবে না।
ওই আবেদনে কী বলা হয়েছে, জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ আমাকে জানিয়েছে, দু'জনই প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন। তারা প্রাণভিক্ষার আবেদন ছাড়া আর কিছু পাঠাতে পারেন না। এতে কী লেখা আছে, সেটা দেখার বিষয় তাদের নয়। কারা কর্তৃপক্ষ প্রাণভিক্ষার আবেদন মনে করেই পাঠিয়েছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আইনসচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক জানান, তারা আবেদন দুটি পেয়েছেন। এর ওপর কাজ সেড়ে রাত পৌনে ৮টার দিকে বঙ্গভবনের তা পাঠানো হয়।
প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ: মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের সূত্র রাত সাড়ে নয়টার দিকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
কারাগারে দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট: মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কিনা তা জানতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার মুসফিকুর রহমান ও তানভীর আহমেদ। গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কারাগারে প্রবেশের প্রায় ছয় ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ম্যাজিস্ট্রেটরা কারাগার থেকে বেরিয়ে যান। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি তারা।
কারাগার সূত্র জানায়, দুই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা তা জানতে চান ওই ম্যাজিস্ট্রেটরা। এক পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেটদের উপস্থিতিতে কারাগারের নির্ধারিত ফরমে দুটি প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন এই দুই যুদ্ধাপরাধী। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগারের ডেপুটি জেলার সর্বোত্তম দেওয়ান ও আরিফ হোসেন ওই আবেদন নিয়ে বেলা সোয়া ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হকের হাতে প্রাণভিক্ষার ওই আবেদনপত্র তুলে দিয়ে কারাগারে ফিরে আসেন ওই কারা কর্মকর্তারা।
প্রাণভিক্ষা নয়, দ্বিতীয় দফা বিচারের আবেদন করার দাবি সাকা-মুজাহিদের পরিবারের: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি বলে দাবি করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। তাদের দাবি, আবেদনে প্রাণভিক্ষা নয়, সাকা-মুজাহিদের প্রতি ন্যায়বিচার করা হয়নি বলে উল্লেখ করা হতে পারে।
মানবকণ্ঠ/এনআই
নির্বাচিত সংবাদ
ক্রমেই মুছে যাচ্ছে কলঙ্ক তিলক
'বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই, এটা তাদের কল্পনা প্রসূত, নিজের বানানো একটা উদ্ভট চিন্তা।' বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী থাকাবস্থায় এ দম্ভোক্তি করেছিলেন বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। 'আমি রাজাকার, আমার বাপ রাজাকার ছিল, পারলে কিছু করেন।'-বিচারের এজলাসে এ বাঁকা উক্তি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে একাত্তরে চট্টগ্রামের ত্রাস হিসেবে পরিচিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর।
কখনো একাত্তরে শহীদ পরিবারের কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি যে একদিন তারা স্বজন হারানোর বিচার পাবেন। যখন দেখেছেন এসব ঘাতকরা রাষ্ট্র ক্ষমতায়, গাড়িতে উড়ছে জাতীয় পতাকা। তখন তাদের বেঁচে থাকাই অনর্থক দাঁড়িয়েছিল। অবশেষে অভূতপূর্ব এক প্রতীক্ষার অবসান হল। স্বাধীন বাংলাদেশ রক্তের ঋণ শোধ করল। এতে স্বস্তি বোধ করছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। - See more at: http://www.manobkantha.com/2015/11/22/82104.php#sthash.oqV0uUA1.dpuf-
কখনো একাত্তরে শহীদ পরিবারের কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি যে একদিন তারা স্বজন হারানোর বিচার পাবেন। যখন দেখেছেন এসব ঘাতকরা রাষ্ট্র ক্ষমতায়, গাড়িতে উড়ছে জাতীয় পতাকা। তখন তাদের বেঁচে থাকাই অনর্থক দাঁড়িয়েছিল। অবশেষে অভূতপূর্ব এক প্রতীক্ষার অবসান হল। স্বাধীন বাংলাদেশ রক্তের ঋণ শোধ করল। এতে স্বস্তি বোধ করছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। - See more at: http://www.manobkantha.com/2015/11/22/82104.php#sthash.oqV0uUA1.dpuf-
__._,_.___