তরুণ প্রজন্মের চোখে সাকা-মুজাহিদের ফাঁসি
বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত ও ইতিহাসের দায়মুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠবে বলে মনে করে তরুণ প্রজন্ম। তাদের মতে, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শেষ হলে বাংলাদেশে ইতিবাচক রাজনৈতিক পরিবর্তন আসবে। তবে এ জন্য জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ চান তাঁরা।
সাকা-মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের পর অনুভূতি জানতে চাইলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ প্রথম আলোকে বলেন, 'এ রায়টি বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত ছিল। তাদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। আশা করি, সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার শেষ হবে। বাংলাদেশ চিরতরে কলঙ্কমুক্ত হবে। তবে জামায়াত-শিবিরকে যত দ্রুত বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করা হবে, তত দ্রুত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠিত হবে।'
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি প্রথম আলোকে বলেন, সাকা-মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর নিয়ে তাদের সংগঠনের নিজস্ব কোনো মন্তব্য নেই। বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন যে মন্তব্য করেছেন, তারা ওই বক্তব্যের সঙ্গে একমত।
তবে ছাত্রদলের সহসভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ নাসির বলেছেন, 'আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। এ জন্য প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের অবশ্যই ঘৃণা করি। তবে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি দেওয়ায় গোটা জাতির সঙ্গে আমরা ভীষণভাবে সংক্ষুব্ধ। কারণ প্রথমে তাঁকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়নি। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য অনেক পরে তাঁকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মিথ্যা তথ্য দিয়ে কাউকে শাস্তি দিলে জাতি মেনে নিতে পারে না।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দী বলেন, সাকা-মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় রাষ্ট্র সামনের দিকে আরও একধাপ এগিয়ে গেল। আশা করি, সাকা-মুজাহিদরা যে দর্শন লালন করত, সেদিকে তরুণ প্রজন্ম আর উৎসাহী বা আকৃষ্ট হবে না। এ জন্য আমাদের পাল্টা যুক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ফিরোজ আহমেদ বলেন, এত দিন ঝুলে থাকা একটি বিচার শেষ হয়েছে, এতে জাতি দায়মুক্ত হয়েছে। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য একটা ইতিবাচক দিক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী আরিফুজ্জামান রোহান বলেন, 'এই দুজন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হলো। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্য সরকার যে কমিটমেন্ট দিয়েছিল, সেটা পূরণ করছে।'
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসুদ আলম বলেন, সাকা-মুজাহিদ যে ধরনের রাজনীতির চর্চা করত, তরুণ প্রজন্ম বুঝবে তাদের সেই পথ কখনো আলোর পথ দেখাবে না। বরং শাস্তি পাবে।
তিতুমীর কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, 'আইনি প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এই রায়ে আমরা খুশি হয়েছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ফলে ইতিমধ্যে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের সময় হরতাল-অবরোধে যে বোমাবাজি হতো, সেটা এখন আর হচ্ছে না। কারণ তাঁদের অনুসারীরা নিরুৎসাহিত হয়ে গেছে।'
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তানজিল অভি বলেন, 'আমরা অবশ্যই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। তাদের (সাকা-মুজাহিদ) রায়েও আমরা খুশি। তবে সব দলের মধ্যে থাকা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করলে এটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে। বিচারে যেন একচোখা নীতি গ্রহণ না করা হয়।'
ঢাকা কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী জহির রায়হান বলেন, 'যারা একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, সেই সব যুদ্ধাপরাধীদের কোনো ক্ষমা নেই। এদের ফাঁসি হয়েছে খুশি হয়েছি, আরও যারা বাকি আছে তাদের ফাঁসি দিতে হবে। যখন সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ হয়ে যাবে, তখন বাংলাদেশে ইতিবাচক রাজনীতির ধারা তৈরি হবে, পরিবর্তন আসবে।'
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী আবু কায়জার বলেন, 'কুখ্যাত রাজাকার সাকা-মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করায় বর্তমান সরকারকে অভিনন্দন। এই দুজনের ফাঁসি কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে।'
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী রেজাউর রহমান বলেন, 'সাকা-মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে দুজন দাম্ভিক রাজনীতিবিদের পতন হয়েছে। তাঁদের ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে দেশের আপামর জনসাধারণ খুশি হবে।'
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন আমাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি তাসনিম হাসান)
__._,_.___