দু'মাস ধরে প্রতিদিন প্রাণ যাচ্ছে। শিবির সন্ত্রাসীরা রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে; কখনো পুলিশ হত্যা করছে; কখনো গরিব শ্রমজীবী মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে; কখনো বা হাত-পায়ের রগ কেটে রক্তশূন্য করে রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যা করছে; কুপিয়ে গুলি করেও হত্যা করছে ঐ গেস্টাপো বাহিনী; হরতালের নামে গাড়ি পুড়িয়ে সঙ্গে মানুষও পুড়িয়ে হত্যা করছে; আবার ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মানুষকে রাজপথে নামিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে দিচ্ছে এবং যার ফলে যেমন পুলিশের গুলিতে মানুষ হত্যা করাচ্ছে, তেমনি হত্যা করাচ্ছে পুলিশও। একইসঙ্গে একদিকে হরতাল দিচ্ছে, মানুষের গাড়ি-বাড়ি-দোকানপাট ভাংচুর করছে, লুট করছে, জ্বালিয়ে দিচ্ছে, অপরদিকে হিন্দুদের বাড়ি-ঘর, মন্দির ভাংচুর করছে, জ্বালিয়ে দিচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের গ্রাম। এ জন্যে জামায়াত-বিএনপি জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সামান্যতম দুঃখ প্রকাশ নেই, অনুতাপ নেই বরং তিনি বলছেন, আরও হরতাল দেবেন, এতে যদি আরও প্রাণ যায় যাক, তবু সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাবেন। ক্ষমতায় তাঁকে যেতেই হবে, মানুষের রক্তের ওপর দিয়ে ক্ষমতার মইয়ের ওপর বসে নিজেকে মহিমান্বিত করতে চান তিনি- যায় যদি যাক প্রাণ, আমাদের দেশনেত্রী (!) মহীয়ান।
এ লেখা যখন লিখছি তখন বিএনপি-জামায়াত জোটের ৩৬ ঘণ্টার হরতাল শেষ হলো। এই হরতালের দামী উপহার হলো শুরুর পূর্ব মুহূর্তে হাতিরঝিলে গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করলে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের এক ডাক্তারের শরীর ঝলসে যায়, তাঁর জীবন সঙ্কটাপন্ন এবং হরতালের শেষ দিনে টাঙ্গাইলে এক ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। যতদূর জানা গেল পেট্রোল বোমায় শরীর ঝলসে যাওয়া এবং জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডাক্তারের নাম ডিউক এবং এককালে তিনি ছাত্রদল করতেন, এখন ড্যাব-এর সিরিয়াস কর্মী। নিহত ছাত্রলীগ নেতার নাম ইমরান হোসেন, তিনি স্থানীয় উপজেলা ছাত্রলীগের কনভেনর। বোমা-গুলি সে তো অন্ধ, বেছে বেছে ঘায়েল করে না, যাকে সামনে পায় তাকেই আঘাত করে। লেখার ফাঁকে টিভি স্ক্রিনে দেখলাম রেললাইনে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।
কিন্তু কেন এই ধ্বংসযজ্ঞ? ক্ষমতা? নাকি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো? দুটোই চাই বেগম খালেদা জিয়ার। কেননা একটি না হলে যে আরেকটি হবে না। ক্ষমতায় না গেলে কোনভাবেই যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে পারবেন না। নিজের গুণধর পুত্রদ্বয়কেও দেশে আনতে পারবেন না। আবার যুদ্ধাপরাধীদের ছাড়িয়ে না-আনতে পারলে এতদিন যাবত জামাত-শিবিরের কাছ থেকে যত সুবিধা খেয়েছেন তার হিসেব দিতে হবে, ক্ষমতা হবে সুদূর পরাহত। এ জন্যেই তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তার মিথ্যার ঢোল মির্জা ফখরুল, এম কে আনোয়ার, মওদুদ, ড. মোশাররফ, রিজভীদের দিয়ে যত মিথ্যাই বলান না কেন বাংলার মানুষ কি দেখেননি, কারা দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে, কারা বোমা ফাটাচ্ছে, কারা ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, সবই দেখছে মানুষ। এর জবাবও জনগণ সময়মতোই দেবে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সময়কালে খালেদা-নিজামী ক্ষমতায় বসেই যেভাবে দেশব্যাপী হত্যা, নারী ধর্ষণ, লুটপাট, চাঁদাবাজি, দখল, হামলা-মামলার ঘটনা ঘটিয়েছিলেন, বিশেষ করে সাম্প্রতিককালে যেভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর জ্বালাচ্ছে, লুট করছে তেমনি করেছিল সেই ২০০১-এর পর, বাংলাদেশের জনগণ তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছিল ২০০৮-এর ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে। এবারের ধ্বংসযজ্ঞ এবং নৈরাজ্য সৃষ্টির জবাবও বাংলার জনগণ দেবে আগামী নির্বাচনে। উপরন্তু তরুণ প্রজন্ম শাহবাগ চত্বর থেকে শুরু করে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি, অর্থাৎ ফাঁসি, যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা, জামাত-শিবিরের মালিকানাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান হাতে নেয়া; তাদের মিডিয়া বর্জন করা এবং সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতিকে প্রগতির পথে নিয়ে যাবার যে আন্দোলন রাজধানী থেকে শুরু করে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছে, তাতে বেগম খালেদা জিয়ার ভোটের ভবিষ্যত যে গতবারের চেয়েও আরো করুণ হবে তা তিনি ঠিকই বুঝতে পেরেছেন। তাই তো গণতন্ত্রের পথ পরিহার করে ধ্বংসাত্মক পথ বেছে নিয়েছেন। বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
আর বুঝতে পেরেছেন বেগম জিয়ার মধ্যরাতের গলাবাজ শওকত মাহমুদ, মাহফুজ উল্লাহ, ফরহাদ মাযহার, পিয়াস করিম, দিলারা চৌধুরী, আসিফ নজরুল, কাদের সিদ্দিকী, সঞ্জীব, অঞ্জন, আমেনা মহসিনরা এবং কয়েকটি প্রিন্ট এবং ইলেট্রনিক মিডিয়া। এদের এখন কাজ হলো বেগম জিয়ার রোষের আগুনে ফুঁ-দিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে দিয়ে অসাংবিধানিক শক্তিকে আহ্বান জানানোÑ আসুন ভায়েরা, আসুন, 'সিপাই-জনতার বিপ্লব' করি। একবার যদি তাদের নামানো যায় তবে আওয়ামী লীগ তো গেল। আমরা নাইবা পেলাম হাতি এবং এই গলাবাজদের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে আইলে দাঁড়িয়ে কতিপয় উচ্ছিষ্টভোগী। প্রথমোক্ত গ্রুপটির টার্গেট দ্বিমুখীÑপ্রথমত, যদি বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসে তবে তো ক্ষমতারই স্বাদ পাওয়া যাবে, হাওয়া ভবন খোয়াব ভবনে বসে যেমন টুপাইস কামানো যাবে তেমনি আমোদ-ফুর্তি করা যাবে। জীবন উপভোগ করা যাবে। দ্বিতীয়ত, একবার যদি কেয়ারকেটারের ট্রাকে ওঠা যায় তবে আমৃত্যু তা বিক্রি করে খাওয়া যাবে।
কে কাকে নষ্ট বলেন, কেন বলেন নাস্তিক
বেগম খালেদা জিয়ার পরবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতায় যাবার ব্যাপারটি দিনে দিনে যত জটিল হচ্ছে তিনিও ততই জটিল হয়ে উঠছেন। দেখছেন প্রজন্ম চত্বরের আহ্বানে লাখে লাখে মোমবাতি জ্বলে, শহর-বন্দর-গ্রামে গঞ্জে কোটি মানুষ তিন মিনিটের মানববন্ধন করছেন। আর তাই কখন যে কি বলছেন বা আগামীকাল কি বলবে, মনে হয় তিনি নিজেও বুঝতে পারছেন না। নইলে প্রজন্ম চত্বরের ছেলেমেয়েদের তিনি নষ্ট বলেন কি করে? ওরা তো আমাদেরই সন্তান। কেবল সন্তান বলাটাও ঠিক হবে না, বাঙালী জাতির অতি আদরের সন্তান, আমরা যা করতে পারিনি তা করে দেখিয়েছে। ওরা সুশিক্ষিত, বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ-স্কুলের মেধাবী ছাত্র, অনেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রীপ্রাপ্ত, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস-ঐতিহ্য, তথ্য প্রযুক্তিগত বিদ্যায় সবার ওপরে প্রথম শ্রেণীর দেশপ্রেমিক নাগরিক। ওদের তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞান দেশ ও জাতির কল্যাণে ব্যবহৃত-জামায়াত শিবিরের মতো নোংরা 'বেদা'তি কাজ করার জন্য নয়। সর্বোপরি ওরা ৬ লাখ সম্ভ্রমত্যাগী ও শহীদ এবং ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময় অর্জিত স্বাধীনতার সঙ্গে এক মুহূর্তও কম্প্রোমাইজ করতে রাজি নয়। ওরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ধারায় দেশকে গড়তে চায়, ওরা জাতির জনকের 'সোনার বাংলা' গড়তে চায়।
ওরা 'জয় বাংলা' 'জয় বঙ্গবন্ধু' সেøাগান দেয়।
যে সব তথাকথিত (অশিক্ষিত) বুদ্ধিজীবী, অর্ধ-শিক্ষিত সমাজ বিজ্ঞানী দীর্ঘদিন যাবত বলে আসছিলেন 'জয় বাংলা' 'জয় বঙ্গবন্ধু' আওয়ামী লীগের সেøাগান। অতএব অন্য রাজনৈতিক দল ও গৃহপালিত বুদ্ধিজীবীরা এ সেøাগানের বিপক্ষে ছিলেন। আরেক গ্রুপ আছে যারা পবিত্র ধর্মকে তাদের নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে রাজনীতি করে, রীতিমতো ইসলাম বিরোধীই মনে করে সেøাগানটিকে। কিন্তু শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের তরুণ প্রজন্ম ইমরান-লাকি আখতার বাহিনী 'জয় বাংলা' 'জয় বঙ্গবন্ধু' সেøাগান তুলে যেন ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে তুলল, আত্ম-পরিচয়ের সন্ধান দিল :
'পদ্মা-মেঘনা-যমুনা- তোমার আমার ঠিকানা'
'তুমি কে আমি কে- বাঙালী বাঙালী'
ওরা বলল আমাদের পূর্ব পুরুষরা লড়াই-সংগ্রাম করে, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করে, মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করে, স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। বাঙালী জাতির হাজার বছরের স্বপ্ন সাধ নিজস্ব স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র বানিয়ে দিয়েছেন। আমরা উত্তরসূরিরা তোমাদের মনে রাখব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ এগিয়ে নিয়ে যাব। তোমরা যারা এতদিন এই নজিরবিহীন ত্যাগ, তুলনাবিহীন অর্জন ভুলেছিলে, এবার জেগে ওঠো। তোমাদের উত্তরসূরি হিসেবে আমরাও এ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা। ওরা বলল :
'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি'
আর এই ভালবাসা এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এই 'জয় বাংলা'-কে নিরঙ্কুশ করার জন্যই আমরা যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি করছি। ওরা বলল : বিষাক্ত আগাছা সাফ না করে টনে টনে জৈব সার দিলেও কাজ হবে না, ক্ষেতের ফসল পাওয়া যাবে না। তাই সমাজ থেকে আগাছা দূর করতে হবে। ওদের 'জয় বাংলা' ধ্বনি বেগম জিয়ার কানেও পৌঁছেছে বলেই তিনি অস্থির হয়ে উঠেছেন। বাইচাঞ্চ 'কানের ভিতর দিয়া মরমে পষিয়া' মুখ দিয়া বের হয়ে গেলে বিপদ? তবে তো জামায়াত-শিবির-রাজাকার-আলবদর ছেড়ে ছুড়ে আওয়ামী লীগের বি-টিম হয়ে যেতে হবে। এরই মধ্যে 'জয় বাংলা' পাকি আদলের 'জিন্দাবাদ'কে তাড়াতে তাড়াতে নয়াপল্টনের চাঙ্গে তুলে দিয়েছে। বেগম জিয়ার রাগ এখানেই। তাই যা বললেন :
প্রজন্ম চত্বরের ছেলেমেয়েরা 'নষ্ট'(?)
প্রজন্ম চত্বরের ছেলেমেয়েরা 'নাস্তিক' (?)
লক্ষ্য করার বিষয় হলো এত বড় মিথ্যা অপবাদ দেয়ার পরও প্রজন্ম চত্বরের ছেলেমেয়েরা বেগম জিয়ার উদ্দেশে একটি আপত্তিকর শব্দও উচ্চারণ করেনি-এখানেই একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, দেশপ্রেমিক সুশিক্ষিত প্রজন্মের জ্যোতির্ময় রূপ। শিক্ষা-সংস্কৃতি-কৃষ্টির দৈন্যের যাতনা অনেকের মতো অতিক্রম করতে ওরাও যদি ব্যর্থ হতো, তবে ওরাও অনেক খারাপ কথা বলতে পারত বেগম জিয়ার উদ্দেশে। বেগম জিয়া ওদের সম্পর্কে যা যা বলেছেন সব মিথ্যাচার, কিন্তু বেগম জিয়া সম্পর্কে খারাপ কিছু বলতে চাইলেও মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার প্রয়োজন পড়ত না।
বেগম জিয়া কাদের বললেন 'নষ্ট'? কেন বললেন নাস্তিক? এই শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে এবং প্রজন্ম চত্বর দেশের যেখানে গেছে সর্বত্র ছেলেদের পাশাপাশি স্কুলের কোমলমতি শিশু-কিশোরীরা হাজির হয়েছে- ভিকারুননিসা থেকে শুরু করে মহানগরীর বালিকা বিদ্যালয় থেকে হাজারে হাজারে। তাদের বললেন, 'নষ্ট' ছিঃ। এই যে বোরখা পরা তরুণী ও বয়স্ক মহিলারা প্রজন্ম চত্বরে এসেছেন, মাথায় স্কার্প পরা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা এসেছেন, আসছেন এখনও, দিন নেই রাত নেই, খেয়ে না-খেয়ে সেøাগান দিয়ে যাচ্ছেন, কোন ক্লান্তি নেই, তাদের বললেন 'নষ্ট'(?)।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধী মিরপুরের কসাই কাদের মোল্লাকে ফাঁসি না দিয়ে যাবজ্জীবন সাজা দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে এবং তার ফাঁসির দাবিতে সেই যে গণজাগরণ মঞ্চে লাখো ছেলেমেয়ে আসছে- যাচ্ছে, কই আজ পর্যন্ত একটা ব্যাগ কিংবা মোবাইলও চুরি হয়নি। ভাই বোনের মতো ওরা রাত জাগছে, ওদের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করতে বেগম জিয়ার এতটুকু জিহ্বা জড়াল না, ভাবতে অবাক লাগে। বেগম জিয়া কি দেখেননি, একটি ছোট মেয়ে বয়স বড় জোর ৭/৮ বছর হবে, কি আন্তরিকতার সঙ্গে লাকি আখতারের মতো সেøাগান দিচ্ছে, কিংবা একই বয়সী এক ছোট ছেলে মুজিব কোট পরে, কি ভরা গলায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি দিলেন-তাদের আপনি 'নষ্ট' বললেন? এই ছোট মন নিয়ে আপনি রাজনীতি করছেন? 'দেশনেত্রী' অভিধা নিলেন, আমারই তো লজ্জা লাগে? আপনি কাদের 'নাস্তিক' বলছেন? আমি নিজেও প্রায় প্রতিদিন প্রজন্ম চত্বরে গেছি। আমি তো দেখেছি নামাজের সময় হলে, বিশেষ করে আছর, মাগরিবের সময় ছেলেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামাজ আদায় করছে। আমিও তো আল্লাহ রাব্বুল আলা'মীনের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করি, বিশ্বাস করি হযরত মুহম্মদ (সা) আল্লাহর রাসুল এবং সর্বশেষ নবী, আমি বিশ্বাস করি ইমান, নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত-এ, আমি বিশ্বাস করি কিয়ামত, বেহেশত, দোজখ এবং সর্বোপরি হাশরের মাঠে শেষ বিচারের দিনে, আমি যখন বলব 'ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি' তখন সারওয়ারে কায়েনাত মুহম্মদ মুস্তফা (সা) বলতে থাকবেন 'ইয়া উম্মতি, ইয়া উম্মতি' এই বিশ্বাসে যা যা পালনীয় তা পালন করার চেষ্টা করি। তাহলে আপনি কি আমাকেও 'নাস্তিক' বললেন? এটা সত্যিই অনভিপ্রেত এবং দুঃখজনক!
'নষ্ট' কাকে বলে?
যে সন্তান লেখাপড়া করেনি। পথে-ঘাটে বেলেল্লাপনা করে, ইভটিজিং করে, আজে-বাজে জায়গায় যায়, আজে-বাজে কাজ করে, ঘরে বেড রুমের ফ্রিজের যার আইসক্রিমের স্থলে আজে-বাজে জিনিস থাকে, দুর্নীতি-লুটপাট ক্ষমতা ব্যবহার করে সরকারী কাজের কমিশন খেয়ে ব্যক্তিগত অর্থ সম্পদের ভা-ার পুরো করে ইত্যাদি ইত্যাদি হলো 'নষ্ট' কাজ বা 'নষ্টামি'। বিশেষ করে যারা নিজের স্বার্থে খারাপ কাজেও পবিত্র ধর্মকে ব্যবহার করে, যেমন :
ক. মুসলিম বিশ্বের পবিত্র কাবা বা বায়তুল্লা শরীফ-এর গিলাপ পরিবর্তন অনুষ্ঠানের খতিবদের ছবি ব্যবহার করে, যারা বলে দেইল্লা রাজাকারের মুক্তির জন্য খতিবগণ মানববন্ধন করছেন-
খ. যারা বলে দেইল্লা রাজাকার বা সাঈদীর মুখচ্ছবি চাঁদে দেখা যাচ্ছে-
গ. যারা রাজাকার-আলবদরদের সঙ্গে জোট বাঁধে-
ঘ. যারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্যে সদ্যোজাত সন্তান কোলে ক্রন্দনরত রোহিঙ্গা (ফেরত যাবার ভয়ে) মার ছবি ব্যবহার করে বলছে ভিটামিন-এ খাওয়ার সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
ঙ. যারা মুখে ইসলামের কথা বললেও আচার-আচরণ পালন করে না, অনর্গল মিথ্যা বলে-
চ. ধর্মের নামে অধার্মিক কাজ করে। ধর্মের নামে হিন্দুদের বাড়ি পোড়ায়, মন্দির ভাঙ্গে।
ছ. যারা রাজনীতির নামে হরতাল দিয়ে মানুষ হত্যা করে, মানুষের গাড়ি-বাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান লুট করে, পোড়ায় ইত্যাদি ইত্যাদি।
এরাই হলো 'নষ্ট' এবং এই নষ্টরা বেগম জিয়ার আশপাশেই আছে। আয়নায় তাকালেই দেখতে পাবেন।
ঢাকা-২১ মার্চ ২০১৩
লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক