নাগরিক সমাজের আহ্বান
সাম্প্রদায়িক হামলা, সহিংস তৎপরতা রুখে দাঁড়াও
বিশেষ প্রতিনিধি | তারিখ: ০৫-০৩-২০১৩
একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীরা আবার সেই পুরোনো কৌশলে নতুন করে একই অপরাধ শুরু করেছে। তাদের অপরাধ সংঘটনের ধরনও সেই একাত্তরের মতোই। তাই একাত্তরের মতো দেশের গণমানুষকেই এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা দেশবাসীর উদ্দেশে এসব কথা বলেছেন। তাঁদের আহ্বান, 'মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী চক্রের সাম্প্রদায়িক হামলাসহ সব সহিংস তৎপরতা রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ।' গতকাল সোমবার সকালে সেগুনবাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এই আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে একই সঙ্গে কাল বুধবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আহূত গণমানববন্ধন কর্মসূচিতে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী সবাইকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনের প্রারম্ভিক বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেশবাসীর ৪২ বছরের দাবি। এই দাবির পক্ষে শাহবাগের অভূতপূর্ব সমাবেশ সারা দেশে গণজাগরণ সৃষ্টি করেছে। আর মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীরা হুমকি দিয়েছিল গৃহযুদ্ধের। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কয়েকজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর সেই যুদ্ধকেই আসন্ন করতে তারা উঠেপড়ে লেগেছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত বৃহস্পতিবার জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণার পর থেকে ওই রায় প্রত্যাখ্যান করার নামে একটি মহল সুপরিকল্পিত উপায়ে দেশকে নৈরাজ্য ও সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে সহিংস পথ বেছে নিয়েছে। ফলে ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। শত শত মানুষ আহত বা সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। হতাহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সদস্য এবং নারী-শিশুসহ নিরীহ সাধারণ নাগরিক রয়েছেন।
ওই বক্তব্যে বলা হয়, 'আমরা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে চাই, একাত্তরে যারা মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতা করেছিল এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সর্বাত্মক সহযোগিতায় নারী-পুরুষ-শিশুনির্বিশেষে দেশের মানুষ, বুদ্ধিজীবী, লেখক, শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার ও অন্যান্য পেশাজীবীদের হত্যা করেছিল, তাদের সেই জঘন্য যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিটি দল-মত-জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে গণমানুষের দাবি হিসেবে ৪২ বছর ধরে নানাভাবে ধ্বনিত ও উচ্চারিত হয়ে এসেছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে দেশে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। অতএব এই যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে সন্ত্রাস বা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে চরম অরাজক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে যারা দেশকে ঠেলে দিতে চাইছে, তারা আসলে নতুনভাবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেরই বিরোধিতায় নেমেছে। তাদের এই তৎপরতা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধেরই শামিল।'
সাধারণ নিরীহ নাগরিকদের ওপর আক্রমণ, হত্যা, পুলিশের ওপর সশস্ত্র হিংস্র আক্রমণ ও খুন এবং সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে একাত্তরের মতোই অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, তাদের মন্দির ও অন্যান্য উপাসনালয়ে আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহিংস ও সশস্ত্র আক্রমণের পথ পরিহার করে প্রতিবাদ করার বিষয় থাকলে শান্তিপূর্ণ পথে তা করার আহ্বান জানানো হয়। সরকার ও প্রধান বিরোধী দলসহ সব রাজনৈতিক দলের কথা ও আচরণে সংযম ও দায়িত্বশীলতা আশা করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। একই সঙ্গে পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনীকে সাধারণ মানুষ-নারী, শিশু, সংখ্যালঘু, আদিবাসীসহ সবার জানমালের নিরাপত্তা দিতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি, সকলের মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়ে আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে ইতিমধ্যে যেসব স্থানে সহিংস ঘটনায় সাধারণ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অনেকে হতাহত হয়েছেন, বাড়িঘরে আগুন লাগানো, লুটপাট, মন্দির ভাঙার মতো ঘৃণ্য কাজ করা হয়েছে, জাতীয় পতাকায় আগুন দেওয়া হয়েছে, শহীদ মিনার ভাঙা হয়েছে—ওই সব ঘটনার দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
বলা হয়, দেশের বর্তমান সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে চান, তাঁদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে উক্ত চক্রের সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় এসেছে এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাঁদের কর্মকাণ্ডকে রুখে দাঁড়ানোর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সারওয়ার আলী, অজয় রায়, ইফতেখারুজ্জামান, এম এম আকাশ, শামসুল হুদা, জিয়াউদ্দিন তারেক আলী, খুশী কবির ও সুশান্ত কুমার দাস। এ ছাড়া এই উদ্যোগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত কয়েকজনের নাম ঘোষণা করা হয়। তাঁরা হচ্ছেন অধ্যাপক সালাউদ্দিন আহমেদ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আকবর আলি খান, সৈয়দ শামসুল হক, অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, কামাল লোহানী, রাশেদা কে চৌধূরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল মান্নান, আলী যাকের, অধ্যাপক অজয় রায়, আবুল বারকাত, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, শাহদীন মালিক, আয়েশা খানম, শাহীন আনাম, ইয়াসমিন হক, হারুন হাবিব, বিনায়ক সেন ও সারা হোসেন।
http://prothom-alo.com/detail/date/2013-03-05/news/334024
সহিংসতা বন্ধ করতে উদ্যোগী মানুষ
বাঁশখালীতে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব
তারা এসে পানি চেয়ে খেল, পরে আগুন দিল ঘরে
প্রণব বল, বাঁশখালী থেকে ফিরে | তারিখ: ০৫-০৩-২০১৩
http://prothom-alo.com/detail/date/2013-03-05/news/334027
তারা এসে পানি চেয়ে খেল, পরে আগুন দিল ঘরে
__._,_.___