শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৩, ৭ বৈশাখ ১৪২০ প্রবাসীদের নানা প্রশ্ন- ॥ বাংলাদেশে কি ব্লাসফেমি আইন হচ্ছে? হারুণ চৌধুরী আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে জামায়াত-শিবিরের তা-ব ও সন্ত্রাসী তৎপরতায় আজ জনজীবন বিপর্যস্ত। যে দেশে কাকডাকা ভোরে মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি শোনা যায়- সে দেশে একশ্রেণীর ধর্মান্ধ উগ্রবাদী মানুষ ইসলামকে হেফাজত করার জন্য জামায়াত-শিবির ও তাদের সমর্থকদের সঙ্গে মিলে ইসলাম গেল ইসলাম গেল বলে মায়াকান্না করছে কেন? '৭১ সালের যুদ্ধাপরাধী বলে চিহ্নিত মতিউর রহমান নিজামী গত নির্বাচনে জামায়াতের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রকাশ্যে বাংলাদেশে ব্লাসফেমী আইন চালুর পক্ষে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছিল। তা ছাড়াও খালেদা-নিজামীর বিগত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় সংসদ অধিবেশন চলাকালে এই ঘৃণ্য ব্লাসফেমী আইন প্রণয়নের কথা আরেক যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী উত্থাপন করে। সে সময় আমাদের দেশের সুশীল সমাজ নারী ও পুরুষ মিলে প্রতিরোধের ঝড় তোলে। এই ব্লাসফেমী আইন একটি গণতান্ত্রিক দেশে শান্তিকামী মানুষের অধিকারকে যে কিভাবে হরণ করে নেয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ১৯৯৮ সালে পাকিস্তানে ব্লাসফেমী আইন চালু হলে বেলুচিস্তানের এক খ্রিস্টান ধর্মযাজক বিশপ জন জোসেফ ওই বছর ৭ মে এই ঘৃণ্য ব্লাসফেমী আইনের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ করে। তার প্রতিবাদটি ছিল অন্য রকম। নির্বিঘেœ মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে নিজেকে হত্যা করে। তার এই প্রতিবাদের ভাষা বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়েছিল। পাকিস্তানে এক ব্লাসফেমী আইনের বিরুদ্ধে যেই কথা বলেছে পাক সরকার তাকেই মৃত্যুদ- দিয়েছে। ব্যক্তিগত ক্ষোভ মেটানোর জন্য প্রতিশোধমূলক মিথ্যা অপবাদ দিয়ে অনেক নিরীহ মানুষও হয়রানির শিকার হয়েছে। এ থেকে শিশুরাও বাদ যায়নি। পাকিস্তানে হিউম্যান রাইটস নারী সংগঠন ও বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদ করে। ওয়াশিংটন প্রবাসী প্রগতিশীল মানুষের প্রশ্ন সরকার তথাকথিত হেফাজতে ইসলামের ভয়ে কি কয়েক জন ব্লগারকে গ্রেফতার করে তাদের বিচার করে পাকিস্তানের মতো ব্লাসফেমী আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। কারা শান্তিপূর্ণভাবে শাহবাগে '৭১-এর মতো জয় বাংলা ধ্বনি দেয়। যারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে সম্মান করে, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি জাতীয় সঙ্গীত গায়; যারা শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের স্মরণ করে; শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক দেয়; যারা নিরীহ, নিরস্ত্র, রাস্তায় তা-ব চালায় বা মানুষ খুন করে না; ককটেল বিস্ফোরণ করেনি, নারী ধর্ষণ করেনি, বাসে আগুন দেয়নি, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেনি, রেললাইনের বগিতে আগুন দেয়নি, নিরীহ পুলিশকে হত্যা করেনি, হিন্দুদের মন্দির ভেঙ্গে লুটতরাজ করেছিল, হত্যা করেনি, সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়নি, কারও বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়নি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে যারা বিশ্বাসী। ওরা আজ কারাগারে। অপরদিকে যারা আমাদের জাতীয় জতাকা, জাতীয় সঙ্গীত বিশ্বাস করে না। ক্ষমতায় গেলে ওরা এসবের পরিবর্তন করবে। অনেক মাদ্রাসার কোন দিন জাতীয় পতাকাই উত্তোলন হয় না। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না। অথচ সব মাদ্রাসা সরকার থেকে অনুদান পায়। আরবী ও উর্দুতে কথা বলে। আরবীতে ছুটির জন্য দরখাস্ত করে। যারা মাদ্রাসায় পড়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাদের জিহাদ শিখানো হয়। ইসলামের জন্য বিধর্মীদের সঙ্গে জিহাদ করে শহীদ হলে তার জন্য বেহেস্তের দরজা নাকি খুলে যাবে। আমাদের এই ভাষা আন্দোলন পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ। যারা শহীদ মিনার উড়িয়ে দেয়। জাতীয় পতাকাকে গুঁড়িয়ে ফেলে। তারা তো রাষ্ট্রদ্রোহী। প্রকাশ্যে জাতীয় পতাকা জাতীয় সঙ্গীতের কেউ অবমাননা করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। অথচ ওদের কিছু হয়নি, তোপের মুখে গ্রেফতার করা হয় ব্লগারদের। এই প্রবাসে আজ আমাদের প্রশ্নÑআমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ভোল পাল্টে গিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে দেশের সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিল। হেফাজতে ইসলাম কি চায়? বাংলাদেশে নতুন করে ইসলাম কায়েম করতে? দেশের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ মুসলমান। অধিকাংশ মুসলমানই ধর্মপ্রাণ, কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। যার প্রমাণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। এক সময় ওরা ঢাকার রাজপথে কোরান শরীফ বুকে নিয়ে বলেছিল, আমরা সবাই তালেবান বাংলা হবে আফগান। সর্বস্তরের প্রগতিশীল জনতা ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। এবারও তাই হবে। জয় হবে জনগণের। কে অনাস্তিক কে নাস্তিক ওরা বলার কে? হেফাজতে ইসলাম ওরা কারা? মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। জামায়াতের টাকায় এদের উত্থান। প্রকাশ্য সভায় সরকারকে নাস্তিক বলে আঘাত করেছে। জানা যায়, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্যই এই লংমার্চের আয়োজন। প্রশ্ন উঠেছে রাজীবকে চাপাতি দিয়ে হত্যা করার পরই এই মোনাফেকরা ব্লগকে হেকিং করে ধর্মের অনুভূতিতে মিথ্যা অপবাদ তুলেছে কে নাস্তিক কে অনাস্তিক প্রশ্ন তুলেছে। ইসলাম কি ওদের একার সম্পত্তি?আমাদের ধারণা, দেশের উন্নয়ন কার্যকলাপ যাতে ব্যাহত হয়, মৌলবাদী শক্তি, ধর্মের প্রতি মানুষের দুর্বলতাকে পুঁজি করেই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে জামায়াতের রাজনীতি। নারী স্বাধীনতায় ওরা বিশ্বাসী নয়। ওরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ছাড় দেবে না। সেই সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেত্রীও বাদ পড়বে না। সারা বিশ্বে ঝর্ণা বেগমের নাম সবার জানা। সে মায়ের ভূমিকা পালন করেছে। অতএব হেফাজতে ইসলাম থেকে সাবধান।
লেখক : আমেরিকা প্রবাসী, কলামিস্ট ও বীর মুক্তিযোদ্ধা |