Banner Advertiser

Monday, May 20, 2013

[mukto-mona] কর্নেল তাহেরের ফাঁসি ॥ ঠাণ্ডা মাথায় খুন




মঙ্গলবার, ২১ মে ২০১৩, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২০
কর্নেল তাহেরের ফাঁসি ॥ ঠাণ্ডা মাথায় খুন
০ ট্রাইব্যুনাল গঠনের আগেই জেনারেল জিয়া কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড বিষয়ে মনস্থির করেন
০ জিয়া জীবিত নেই তাই তাঁর বিচার সম্ভব নয়
০ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়া জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ এসেছে
আরাফাত মুন্না ॥ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল এমএ তাহের বীর উত্তমসহ অন্যদের গোপন বিচার, সাজা কার্যকর এবং বিচারের জন্য ১৯৭৬ সালের ১৬ নম্বর সামরিক আইন আদেশের মাধ্যমে সামরিক ট্রাইব্যুনাল গঠনকে অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায়ের অভিমতে আদালত বলে, 'কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড একটি হত্যাকা-, কারণ ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড প্রদানের বিষয়ে মনস্থির করেন।' রায়ে বলা হয়, যেহেতু জেনারেল জিয়া জীবিত নেই, আইন অনুযায়ী তার বিচার সম্ভব নয়। এর পরও সরকারের উচিত হবে এই হত্যার জন্য দায়ী কেউ জীবিত থাকলে, তাঁকে খুজে বের করে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা।
১৯৮ পৃষ্ঠার এই রায়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দিক তুলে ধরেন আদালত। হাইকোর্টের রায়ে কর্নেল তাহেরকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের গৌরব বলে আখ্যায়িক করেছেন। তার হত্যাকাণ্ডকে আদালত দেশের ইতিহাসের একটি কলঙ্কময় অধ্যায় বলে উল্লেখ করে। রায়ে কর্নেল তাহেরের ফাঁসিকে নিরঙ্কুশ খুন বলে আখ্যায়িত করেছে আদালত। এ ছাড়া দ-িত ব্যক্তিদের তালিকা থেকে রিট আবেদনকারীদের নাম মুছে ফেলারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে রায়ে। এ দিকে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর কর্নেল তাহেরের পরিবারের পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ রায়ে আমরা অত্যন্ত খুশি ও আনন্দিত।
এর আগে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও বিচরপতি মোঃ জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১১ সালের ২২ মার্চ এ রায় ঘোষণা করেন। সোমবার পূর্ণাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর করেন এই দুই বিচারপতি। এ ছাড়া সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটেও রায়টি প্রকাশ করা হয়েছে। পরে সোমবার দুপুরে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান। তিনি রায়টি সাংবাদিকদের পড়ে শোনান।
রায়ে বলা হয়, যে অপরাধের জন্য তাহেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, সেই অপরাধে মৃত্যুদ-ের কোন বিধান ছিল না। সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদ-ের বিধান ছিল। তথাকথিত বিচারকে কোন অবস্থাতেই বিচার বলে বিবেচনা করা যায় না। বিচারকরা যে রায় দিয়েছেন, তা ছিল নেহাতই প্রভুদের কণ্ঠস্বর। রায়ে আদালত বলে, এখানে আসামিদের আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়নি। দেয়া হয়নি আত্মপক্ষ সমর্থনেরও সুযোগ। এমনকি সাক্ষীদের জেরা করারও সুযোগ দেয়া হয়নি। রায়ে আদালত আরও বলে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ, তা-ও শোনানো হয়নি। তাঁদের জিজ্ঞাসা করা য়নি, তাঁরা দোষ স্বীকার করেন কি-না। তাঁদের সাফাই সাক্ষীরও সুযোগ দেয়া হয়নি। আত্মীয়-পরিজন ও আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা ও কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। দেয়া হয়নি এফআইআর ও অভিযোগপত্রের কপি। ফৌজদারি মামলায় যেসব প্রক্রিয়ার অনুসরণ করার কথা ছিল, তার কোনটাই অনুসরণ করা হয়নি। 
রায়ে আদালত মেজর জিয়াউদ্দিন, কর্পোলার সামসুল হক, হাবিলদার আব্দুল হাই মজুমদার ও মোঃ আব্দুল মজিদকে সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্তের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে তাঁরা পূর্ণ মেয়াদে চাকরিতে বহাল ছিলেন বলে গণ্য করার নির্দেশ দেন এবং তাদের সমস্ত বকেয়া বেতন, পেনশনসহ অন্যান্য সুবিধাদী ও পদোন্নতির বিষয় বিবেচনা করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আদালত রায়ে বলে, যেদিন সামরিক বিধি জারি করা হয় তার পরদিনই ট্রাইব্যুনাল তথাকথিত বিচারকার্য শুরু করে। এছাড়া আদালত রায়ে উল্লেখ করে, পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী মামলার রায়ের পর এটি অত্যন্ত পরিষ্কার, যে সামরিক আদালত এই বিচার করেছে সেই আদালতের আদৌ কোন বিচারিক এখতিয়ার ছিল না।
আদালত রায়ে বলে, এ মামলায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, মি. লরেন্স লিফসুল্্স নামক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক মার্কিন সাংবাদিকের সাক্ষ্য এবং বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের লিখিত বইয়ে এ বিচার নিয়ে লেখা বিবেচনায় আনা। রায়ে উল্লেখ করা হয়, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তাঁর 'ডেমোক্র্যাসি এ্যান্ড চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলপমেন্ট : এ স্টাডি অব পলিটিক্যাল এ্যান্ড মিলিটারি ইন্টারভেশন ইন বাংলাদেশ' বইয়ে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যক্ত করেছেন, এই বিচারের ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান পাকিস্তান ফেরত সামরিক অফিসারদের তুষ্ট করার জন্য কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেয়ার বিষয় মনস্থির করেছিলেন। জেনারেল মঞ্জুরের উদ্ধৃতি দিয়ে মার্কিন সাংবাদিক লিফস্কল্্সও একই বক্তব্য তাঁর সাক্ষ্যে প্রতিধ্বনিত করেন। আদালত এ বিষয়ে রায়ে উল্লেখ করে, যেহেতু ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ জেনারেল জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন ছিলেন এবং তিনি জেনারেল জিয়ার মুখ থেকেই এই কথাগুলো শুনেছেন বলে তাঁর বইয়ে দাবি করেছেন সেহেতু তাঁকে অবিশ্বাস করার কোন কারণ থাকতে পারে না। রায়ে আদালত উল্লেখ করে, এই মামলার শুনানির একপর্যায়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন। পরে আদালত তাঁর লেখার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি স্বীকার করেন এই বক্তব্য ও বইয়ের লেখা তিনি সরাসরি জেনারেল জিয়ার মুখ থেকেই শুনেছেন। এছাড়া তৎকালীন ঢাকা জেলা ম্যাজিস্টেট ড. এমএম শওকত আলীর এবং প্রখ্যাত সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসানের লিখিত দাবিসহ আদালতে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবীদের মতামতের ভিত্তিতে আদালত এই সিদ্ধান্তে এসেছে, কর্নেল তাহের বীর উত্তমের মৃত্যুর মূল আসামি জেনারেল জিয়াউর রহমান।
আদালত এই মামলার আরও একটি বৈশিষ্ট্য রায়ে উল্লেখ করে, তাহলো এই মামলার এফআইআর, চার্জশীট ও রায়ের কপিসহ সমস্ত নথিপত্র গায়েব করে দেয়া হয়েছে। সে কারণে আদালত বাধ্য হয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করতে। ভারতীয় সুপ্রীমকোর্টের বিভিন্ন রায়ের নজির ও হাইকোর্ট রুলের কথা উল্লেখ করে আদালত রায়ে বলে, রিট মামলায়ও বিশেষ ক্ষেত্রে সাক্ষ্য গ্রহণ করা যেতে পারে।
আদালত রায়ে বলে, এই মামলায় দেশের খ্যাতিমান আইনজীবিগণ আদালতের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে ছিলেন, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমির-উল-ইসলাম, ড. এম জহির, এম আই ফারুকী, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ব্যারিস্টার আখতার ইমাম, এ্যাডভোকেট এএফএম মেজবাহউদ্দিন, আব্দুল মতিন খসরু, ইফসুফ হোসেন হুমায়ুন, জেডআই খান পান্না ও ড. শাহদীন মালিক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান। তাঁরা সকলেই তাঁদের দীর্ঘ শুনানির বক্তব্যে কর্নেল তাহেরের ফাঁসিকে নিছক হত্যাকা- ও বিচারকে প্রহসন ছাড়া অন্য কিছু নয় বলে উল্লেখ করেন। আদালত রায়ে বলে, শুনানির সময় কয়েক আইনজীবী মত প্রকাশ করেন, তাহের হত্যার জন্য ইতিহাস জেনারেল জিয়াউর রহমানকে কখনও ক্ষমা করবে না, যেমন ক্ষমা করেননি অলিভার ক্রমওয়েলকে।
রায়ের শেষে আদালত প্রখ্যাত উপন্যাসিক হুমায়ূন আহমদের কিছু কথা উদ্ধৃতি দিয়েছেন। যা পরে তার দেয়াল উপন্যাসে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রহসনের এক বিচার শুরু হলো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে। কর্নেল তাহেরসহ অভিযুক্ত সর্বমোট ৩৩ জন। মামলার প্রধান বিচারকের নাম কর্নেল ইফনুফ হায়দার। মামলা চলাকালে একপর্যায়ে কর্নেল তাহের প্রধান বিচারকের দিকে তাকিয়ে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলেন, আমি জীবনে অনেক ক্ষুদ্র মানুষ দেখেছি, আপনার মতো ক্ষুদ্র মানুষ দেখিনি।
সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা ॥ কর্নেল তাহেরের গোপন বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তার পরিবারের সদস্যদের ও অন্যদের রিটের ওপর শুনানি শেষে ২০১১ সালের ২২ মার্চ আদালত রায় ঘোষণা করে। রায়ে তাহেরের গোপন বিচার অবৈধ ও বেআইনী ঘোষণা করে হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, তাহেরসহ অন্যদের বিচার ছিল লোক দেখানো ও প্রহসনের নাটক। এটা কোন বিচার হয়নি। তাই বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন, বিচার-প্রক্রিয়া ও সাজা ছিল অবৈধ। বিচার ও সাজা বাতিল করা হলো। আদালত অভিমতে বলে, ওই বিচার প্রথম থেকেই অবৈধ, আর পুরো বিচারটি ছিল একটি বিয়োগান্তক নাটক ও বানানো বিচার।
বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, তাহেরের তথাকথিত বিচার ও ফাঁসি দেয়ার ঘটনা ঠা-া মাথার হত্যাকা-। ওই বিচার ও হত্যাকা-ের পরিকল্পনাকারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। একই সঙ্গে তাহেরকে শহীদের মর্যাদা দেয়ার পাশাপাশি কথিত ওই সামরিক আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করতে নির্দেশ দেয়া হয়।
ঘটনার বর্ণনা করে রায়ে বলা হয়, ১৯৭৬ সালের ১৪ জুন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ১৭ জুলাই তাহেরকে ফাঁসির রায় দেয়া হয়। এরপর ২১ জুলাই তাঁর মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। কিন্তু তাহেরকে যে আইনে বিচার করে মৃত্যুদ- দেয়া হয়, সেই আইনে ওই সময় মৃত্যুদ-ের কোন বিধান ছিল না। মৃত্যুদ- কার্যকরের পর ১৯৭৬ সালের ৩১ জুলাই মৃত্যুদ-ের বিধান করা হয়। তাই আইনগতভাবে ওই দ- ছিল অবৈধ। তথাকথিত ওই আদালতের বিচারক আবদুল আলী ও অন্যরা বলেছেন, বিচারের সময় তাঁদের সামনে কোন কাগজ বা নথিপত্র ছিল না। এ ছাড়া আসামিরা জানতেন না যে, তাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ। তাদের পক্ষে বক্তব্য দিতে কোন আইনজীবীও দেয়া হয়নি। এসব বিবেচনায় ট্রাইব্যুনাল ও এর কার্যক্রম ছিল অবৈধ। তথাকথিত ওই বিচার সংবিধানের ২৭, ২৯, ৩০, ৩২, ৩৩ ও ৩৫ অনুচ্ছেদ ও সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার পরিপন্থী।
তথ্য পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, তাহেরের তথাকথিত বিচার ও ফাঁসি ছিল ঠা-া মাথার হত্যাকা-। ওই বিচার ও হত্যাকা-ের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। দুর্ভাগ্যজনক হলো, জিয়া আজ আর জীবিত নেই। তবে ওই বিচারে জড়িত ও সহযোগী অন্তত একজন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুল আলী এখনও জীবিত আছেন। ওপরের নির্দেশে ও প্রয়োজনের তাগিদে ফৌজদারি বিচারের ক্ষেত্রে এমন যুক্তি খাটে না। আবদুল আলীর বিরুদ্ধে খুনের মামলা করার কথাও বলে আদালত।
জিয়া জড়িত ॥ রায়ে লিফসুল্্্জ ও অন্যদের বক্তব্য তুলে ধরে বলা হয়, জেনারেল জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ এসেছে, যদিও বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনা এ মামলার বিচার্য বিষয় নয়। ওই সময় হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা, সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। সঠিক ইতিহাস ও সত্যের খাতিরে বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এটা খতিয়ে দেখতে পূর্ণাঙ্গ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে তা যাচাই করতে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হলো। সুপ্রীমকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, আইনজ্ঞ, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং অবসরপ্রাপ্ত বেসামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তার সমন্বয়ে ওই কমিটি গঠন করতে বলা হয় আদেশে।
তথ্য পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর জিয়াউর রহমানের কর্মকা-ে স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থানের প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের জয় বাংলা সেøাগান মুছে ফেলেন। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণের স্থান রেসকোর্স ময়দানকে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে পরিণত করেন এবং সেখানে শিশুপার্ক স্থাপন করেন।
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রীর পদ দেন জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতাবিরোধী কর্নেল মুস্তাফিজুর রহমানকে দেন মন্ত্রীর পদ। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সেনা কর্মকর্তাদের উচ্চপদে আসীন করেন তিনি।
কর্নেল তাহেরকে শহীদের মর্যাদা ॥ ইতিহাস ও বিভিন্ন নথিপত্র থেকে ওই প্রহসনের বিচার এবং দেশদ্রোহী হিসেবে আখ্যায়িত তাহেরসহ অন্যদের নাম বাদ দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালত বলেছে, তাহেরসহ অন্যরা সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের ক্ষোভের শিকার ছিলেন বলেই মৃত্যুবরণ ও কারাবরণ করেছিলেন। তাঁরা জিয়ার স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠায় পাশে না থেকে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তাহেরকে দেশদ্রোহের অভিযোগ মুছে দিয়ে মহান দেশপ্রেমিক হিসেবে চিহ্নিত করে শহীদের মর্যাদা দিতে নির্দেশ দেয়া হলো। কথিত বিচারের মুখোমুখি হাসানুল হক ইনু, মাহমুদুর রহমান মান্না, মেজর জিয়াউদ্দিনসহ অন্যদের দেশপ্রেমিক হিসেবে মর্যাদা দেয়ার কথাও রায়ে বলা হয়।
ফিরে দেখা ॥ কর্নেল তাহেরসহ ১৭ জনকে বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালের গোপন বিচারে ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই সাজা দেয়া হয়। এরপর ২১ জুলাই ভোরে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। দীর্ঘ ৩৪ বছর পর গোপন বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কর্নেল তাহেরের ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, তাহেরের স্ত্রী লুতফা তাহের এবং সামরিক আদালতের বিচারে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফ্লাইট সার্জেন্ট আবু ইউসুফ খানের স্ত্রী ফাতেমা ইউসুফ সম্মিলিতভাবে ২০১০ সালের আগস্ট হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ আগস্ট আদালত তাহেরের বিচারের জন্য সামরিক আইনের মাধ্যমে জারি করা আদেশ এবং এর আওতায় গোপন বিচার ও ফাঁসি কার্যকর করাকে কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। পরে ২০১১ সালের শুরুতে ওই সময় গোপন বিচারের মুখোমুখি অন্য ছয় ব্যক্তি হাইকোর্টে পৃথক তিনটি রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রুল জারি করে। এই ছয় ব্যক্তি হলেনÑ হাসানুল হক ইনু, রবিউল আলম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জিয়াউদ্দিন, হাবিলদার আবদুল হাই মজুমদার, করপোরাল শামসুল হক ও আবদুল মজিদ।
রিটের শুনানিকালে ১৪ মার্চ মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফসুল্্জ, এর আগে ঢাকার তৎকালীন জেলা প্রশাসক এমএম শওকত আলী, রায় ঘোষণার সময়ে ঢাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোঃ মহিবুল হক, হাসানুল হক ইনু, আনোয়ার হোসেন এবং মৃত্যুদ- কার্যকরের সময় উপস্থিত তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার ফজলুর রহমানও আদালতে বক্তব্য দেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল নূরুল ইসলাম। তাহেরের সঙ্গে সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি কয়েকজনও আদালতে বক্তব্য দেন। চূড়ান্ত শুনানিতে সুপ্রীমকোর্টের কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী এ্যামিকাস কিউরি হিসেবে আদালতে বক্তব্য রাখেন।
একনজরে কর্নেল তাহের ॥ কর্নেল এমএ তাহের ১৯৩৮ সালের ১৪ নবেম্বর ভারতের অসমের বদরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার কাজলা গ্রামে। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় চট্টগ্রামের ফতেহাবাদ স্কুল থেকে। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে স্নাতক পাস শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ভর্তি হন ১৯৬০ সালে। ওই বছর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে কর্নেল তাহের পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন। ১১ নম্বর সেক্টরের তিনি ছিলেন সেক্টর কমান্ডার। জামালপুরে পাকিস্তানী সেনাঘাঁটিতে আক্রমণ পরিচালনার সময় আহত হন। পরবর্তী সময়ে 'বীর উত্তম' খেতাব পান তিনি। পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করে ১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নেন। ১৯৭৫ সালের ৭ নবেম্বর তিনি সিপাহী-জনতার গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭৫ সালের ২৪ নবেম্বর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০১৩, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২০
তাহেরকে ফাঁসি দেয়ার বিষয়টি জিয়া আগেই স্থির করে রেখেছিলেন
রায়ে মওদুদের বই উদ্ধৃত
স্টাফ রিপোর্টার ॥ 'কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড একটি হত্যাকাণ্ড, কারণ ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদ- প্রদানের বিষয়ে মনস্থির করেন।' সোমবার প্রকাশিত কর্নেল এমএ তাহের বীর উত্তমসহ অন্যদের গোপন বিচার, সাজা কার্যকর এবং বিচারের সামরিক ট্রাইব্যুনাল গঠনকে অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিষয়টি উঠে এসেছে। আর হাইকোর্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বইকে এ রায়ে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। 
আদালত রায়ে বলেন, এ মামলায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, মি. লরেন্স লিফসুল্্জ নামক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন মার্কিন সাংবাদিকের সাক্ষ্য এবং বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের লিখিত বইয়ে এ বিচার নিয়ে লেখা বিবেচনায় আনা হয়েছে। এ বিষয়ে আদালত রায়ে উল্লেখ করেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ তার 'ডেমোক্রেসি এ্যান্ড চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলপমেন্ট : এ স্টাডি অব পলিটিক্যাল এ্যান্ড মিলিটারি ইন্টারভেশন ইন বাংলাদেশ' বইয়ে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যক্ত করেছেন, এই বিচারের ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান পাকিস্তান ফেরত সামরিক অফিসারদের তুষ্ট করার জন্য কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেয়ার বিষয়ে মনস্থির করেছিলেন। জেনারেল মঞ্জুরের উদ্ধৃতি দিয়ে মার্কিন সাংবাদিক লিফসুল্জও একই বক্তব্য তার সাক্ষ্যে প্রতিধ্বনিত করেন। 
আদালত এ বিষয়ে রায়ে উল্লেখ করেন, যেহেতু ব্যারিস্টার মওদুদ জেনারেল জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন ছিলেন এবং তিনি জেনারেল জিয়ার মুখ থেকেই এই কথাগুলো শুনেছেন বলে তাঁর বইয়ে দাবি করেছেন সেহেতু তাঁকে অবিশ্বাস করার কোন কারণ থাকতে পারে না। রায়ে আদালত উল্লেখ করেন, এই মামলার শুনানির এক পর্যায়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন। পরে আদালত তাঁর লেখার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি স্বীকার করেন এই বক্তব্য ও বইয়ের লেখা তিনি সরাসরি জেনারেল জিয়ার মুখ থেকেই শুনেছেন।
উল্লেখ্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল এমএ তাহেরসহ (বীর উত্তম) অন্যদের গোপন বিচার, সাজা কার্যকর এবং বিচারের জন্য ১৯৭৬ সালের ১৬ নম্বর সামরিক আইন আদেশের মাধ্যমে সামরিক ট্রাইব্যুনাল গঠনকে অবৈধ ঘোষণা করে ২০১১ সালের ২২ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক ও বিচারপতি শেখ মোঃ জাকির হোসেন এ রায়ে স্বাক্ষর করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান। পরে তিনি পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিষয়টিও সাংবাদিকদের জানান এবং পূর্ণাঙ্গ রায়টি পড়ে শোনান।

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০১৩, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২০
যুগান্তকারী রায় ॥ ড. আনোয়ার
স্টাফ রিপোর্টার ॥ কর্নেল তাহের হত্যার বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তার ভাই ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটা একটা যুগান্তকারী রায়। জেনারেল জিয়ার আমলে অনেক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ওইসময় ছিল অন্ধকারে ঢাকা। এখন সময়ে এসেছে ওইসব কর্মকা- প্রকাশের।
তিনি বলেন, আজকের এই দিন আমাদের পবিবারের কাছে সবচেয়ে মহান। প্রায় ২০০ পৃষ্ঠায় এই পূর্ণ রায় ঘোষিত হলো। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য, কেবল তৃতীয় বিশ্বের জন্য নয়- পুরো বিশ্বের জন্য যুগান্তকারী একটা মাইলফলক বিচার হিসেবে পরিগণিত হবে। শত শত বছর ধরে এবং এই বিচারিক যে ইতিহাস রচিত হবে- এই পৃথিবীতে মানব সভ্যতার ইতিহাসে সেখানে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় হিসেবে বিবেচিত হবে। এই রায়ে আরও উল্লেখ আছে, কর্নেল তাহের কোন দেশদ্রোহী ব্যক্তি ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন মহান দেশপ্রেমিক। তিনি আরও বলেন, এই যে কালো অধ্যায় ছিল, যে সময় শত শত হত্যাকা- হয়েছে। যেগুলোর কথা কেউ জানে না। অনেকেরই কারান্তরালে মৃত্যু হয়েছে। জিয়া যেসব হত্যাকা- করেছেন, তাঁদের অনেকের লাশ পাওয়া যায়নি। আবার অনেকের নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, আজকে বর্তমান সরকারের কাছে সুযোগ এসেছে। যে রায়ের মাধ্যমে সরকার যদি চায় তাহলে একটা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করতে পারেন, তাহলে সেই অন্ধকারের ইতিহাস উন্মুক্ত করা যাবে। এই রায় সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
কর্নেল তাহেরের স্ত্রী লুতফা তাহের তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমাদের পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যই মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা যুদ্ধের ময়দানে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধ করে তাঁরা একটি দেশ নিয়ে এসেছেন। সেই দেশে জিয়াউর রহমান তাহেরকে হত্যা করেছেন। এর প্রতিকার চেয়ে এসেছি। আজ এই রায়ে আমরা অত্যন্ত খুশি ও আনন্দিত।


MONDAY, MAY 20, 2013

Col Taher execution an absolute killing: HC

STAR ONLINE REPORT


                                                    Col Abu Taher in 1972. File photo.

http://www.thedailystar.net/beta2/news/col-taher-execution-an-absolute-killing-hc/


Colonel Abu Taher and the Special Military Tribunal (part 1)


Colonel Abu Taher and the Special Military Tribunal (part 2)


The Testimony of Colonel Taher


SAMPLE FILM ON COL TAHER



Taher execution illegal, murder: HC - New Age | Newspaper

Mar 22, 2011 – ... sentenced war of independence hero lieutenantcolonel Abu Taher to death ... The court observed that Taher's trial, which was held inside the Dhaka ... all records and documents relating to the secret military trial of Taher.




__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___