Please read. I collected from Cadet college blog site.
Asoke Bose
আমার বড়ভাই ছিল গভঃ ল্যাবের ছাত্র। ওর ক্লাশ শুরু হত দশটার আশেপাশে। আমারটা সোয়া এগারোটায়। দুইজন একসাথে রিকশায় আসতাম। আমাকে স্কুলগেইটে নামিয়ে দিয়ে ভাইয়া যখন চলে যেত, তখনও ক্লাশ শুরুর ঘন্টাখানেক বাকি। এসময়টা আমার খারাপ কাটতো না কারন আমার মত এরকম আরও কিছু ছেলে ছিল যারা ক্লাস শুরুর আগ পর্যন্ত ঐ সময়টাতে এসে জুটত। আমরা সবাই একসাথে বোমবাস্টিং, সাতচাড়া, রেসকিউ, টিলো এক্সপ্রেস ইত্যাদি খেলে কাটাতাম।
রাসেলের বেশী আগে আসার কোন বাধ্যবাধকতা না থাকলেও শুধুমাত্র এই খেলাটার আকর্ষণেই ও ঘন্টা খানেক আগে পৌছে যেত। প্রথম প্রথম আমরা আলাদা ক্লাসের বলে আলাদা ভাবেই খেলতাম, কিন্তু এক পর্যায়ে খেলোয়ার কমে যাওয়ায় আমরা একসাথে খেলা শুরু করি।
আমি পুরান ঢাকার বাসিন্দা হওয়ায় আর ও জাতির জনকের সন্তান হওয়ায় আমাদের দুজনেরই এই সময়টুকুর বাইরে খেলাধুলার খুব একটা অবকাশ ছিল না। আমরা দুজনেই তাই এই একঘন্টার খেলাধুলাটা প্রানপনে খেলতাম এবং তা থেকে সর্বোচ্চ আনন্দ পেতে চাইতাম। এটাই ছিল আমাদের সখ্যতা গড়ে ওঠার কমন কজ।
১৫ই আগস্টের বেশ আগেই সোয়া এগারোটায় স্কুল শুরুর ব্যাপারটা বদলে যায়। মাঝে মধ্যে টিফিন-টাইমে বা ছুটির পরে ছাড়া আর তেমন একটা খেলাধুলা একসাথে করা হয় নাই। কিন্তু ক্লাস শুরুর আগের ঐ খেলাটা আমি খুব মিস করতাম। রাসেলও করতো সম্ভবত। স্কুলের বারান্দায় চলাফেরার সময় আমাদের দেখা হলে পরিচিত দৃষ্টিবিনিময়, কখনো বা তারথেকে একটু বেশী কিছু সেকথাই মনে করিয়ে দিত।
১৫ই আগস্টে দেশ জাতি অনেকে অনেক কিছু হারিয়েছে। আমি অবলিলায় আমার এক খেলার সাথি হারিয়েছিলাম।
আর কোনদিনও তারসাথে সেই পরিচিত দৃষ্টি বা মৃদু দীর্ঘশ্বাস বিনিময় করা হয়নি।
পরবর্তীতে কেউ কেউ আমার কাছে জানতে চেয়েছে, রাসেল কেমন ছেলে ছিল? খেলার সময়টার বাইরে খুব কোন সখ্যতা ছিল না। তবে যতটুকু দেখেছি, খুব লাজুক ছিল। সে যে জাতির জনকের সন্তান এবং এ জন্য তাঁকে কেউ কেউ একটু অন্যভাবে দেখছে এটা বুঝতে পারলে খুব বিব্রত বোধ করত।
ওকে নিয়ে যে গাড়িটা আসতো, সেটা স্কুল শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করত। এটা নিয়ে ওর ছিল সীমাহিন অভিমান। ও চাইতো অন্য আর দশটা ছেলে-মেয়েদের মত গাড়ি ওকে নামিয়ে চলে যাক। এনিয়ে প্রায়ই চালকের সাথে ওর মান-অভিমান চলত।
বুদ্ধিমান চালক গাড়ি নিয়ে চলে যাবার ভান করত এবং ভিসির বাংলোর কাছে গিয়ে অপেক্ষা করতো।
আমরা বা ওর বন্ধুরা মাঝে-মধ্যে খুনসুটি করে সেটা ওকে জানাতাম। এটা জানালে আরেক দফা বিব্রত হত রাসেল।
ঐদিন রাসেলের সহপাঠি আরিফ সেরনিয়াবাদ ও নিহত হয়। আরিফের পিঠাপিঠি বড় বোনটি আমার সহপাঠি ছিল। ১৫ই আগস্টের পর ওকে আর কখনো দেখি নাই।
তাজউদ্দিন সাহেবের ছোটমেয়ে জাবিনও আমার সহপাঠি ছিল। দুর্দান্ত ছাত্রী ছিল ও। ক্লাস থ্রীতে আমি ফার্স্ট হই, জাবিন সেকেন্ড। ক্লাস ফোরে মোজাদ্দেদ ফার্স্ট, জাবিন সেকেন্ড, আমি থার্ড। মোজাদ্দেদ গভঃ ল্যাব-এ চান্স পেয়ে চলে গেল। ক্লাস ফাইভের হাফ ইয়ারলি পর্যন্ত আমি জাবিনের সাথে মনে মনে প্রতিযোগিতা চালিয়ে গেলাম। রেজাল্ট মনে নেই তবে কাছাকাছিই ছিলাম। ফাইনালে হবে চুড়ান্ত শো-ডাউন।
এক ১৫ই আগস্ট এসে সব ভেস্তে দিল। জাবিন আর ক্লাসে ফিরলো না। যতদুর মনে পড়ে ফাইনালের আগে একবারই এসেছিল জানতে যে কবে পরীক্ষা, ও পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা। সম্ভবত দিয়েও ছিল। এর বেশী কিছু মনে নেই।
১৫ই আগস্ট-এর ঘটনাবলী ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া এক বালকের ছোট ছোট অনেকগুল ক্ষতি করে দিয়ে গেল……
Asoke Bose
১৫ই আগস্টে ঘটে যাওয়া কতিপয় ব্যক্তিগত ক্ষতি
৭২ এর শুরু থেকে ৭৫-এর শেষ, এই চার বছর আমি ইউনিভার্সিটি ল্যাব-এ পড়েছি। ঐ সময়কালে শেখ রাসেলও ছিল ঐ স্কুলের ছাত্র। আমরা এক ক্লাসে না পড়লেও বিরল এক কারনে তারসাথে আমার কিছুটা সখ্যতা গড়ে ওঠে।আমার বড়ভাই ছিল গভঃ ল্যাবের ছাত্র। ওর ক্লাশ শুরু হত দশটার আশেপাশে। আমারটা সোয়া এগারোটায়। দুইজন একসাথে রিকশায় আসতাম। আমাকে স্কুলগেইটে নামিয়ে দিয়ে ভাইয়া যখন চলে যেত, তখনও ক্লাশ শুরুর ঘন্টাখানেক বাকি। এসময়টা আমার খারাপ কাটতো না কারন আমার মত এরকম আরও কিছু ছেলে ছিল যারা ক্লাস শুরুর আগ পর্যন্ত ঐ সময়টাতে এসে জুটত। আমরা সবাই একসাথে বোমবাস্টিং, সাতচাড়া, রেসকিউ, টিলো এক্সপ্রেস ইত্যাদি খেলে কাটাতাম।
রাসেলের বেশী আগে আসার কোন বাধ্যবাধকতা না থাকলেও শুধুমাত্র এই খেলাটার আকর্ষণেই ও ঘন্টা খানেক আগে পৌছে যেত। প্রথম প্রথম আমরা আলাদা ক্লাসের বলে আলাদা ভাবেই খেলতাম, কিন্তু এক পর্যায়ে খেলোয়ার কমে যাওয়ায় আমরা একসাথে খেলা শুরু করি।
আমি পুরান ঢাকার বাসিন্দা হওয়ায় আর ও জাতির জনকের সন্তান হওয়ায় আমাদের দুজনেরই এই সময়টুকুর বাইরে খেলাধুলার খুব একটা অবকাশ ছিল না। আমরা দুজনেই তাই এই একঘন্টার খেলাধুলাটা প্রানপনে খেলতাম এবং তা থেকে সর্বোচ্চ আনন্দ পেতে চাইতাম। এটাই ছিল আমাদের সখ্যতা গড়ে ওঠার কমন কজ।
১৫ই আগস্টের বেশ আগেই সোয়া এগারোটায় স্কুল শুরুর ব্যাপারটা বদলে যায়। মাঝে মধ্যে টিফিন-টাইমে বা ছুটির পরে ছাড়া আর তেমন একটা খেলাধুলা একসাথে করা হয় নাই। কিন্তু ক্লাস শুরুর আগের ঐ খেলাটা আমি খুব মিস করতাম। রাসেলও করতো সম্ভবত। স্কুলের বারান্দায় চলাফেরার সময় আমাদের দেখা হলে পরিচিত দৃষ্টিবিনিময়, কখনো বা তারথেকে একটু বেশী কিছু সেকথাই মনে করিয়ে দিত।
১৫ই আগস্টে দেশ জাতি অনেকে অনেক কিছু হারিয়েছে। আমি অবলিলায় আমার এক খেলার সাথি হারিয়েছিলাম।
আর কোনদিনও তারসাথে সেই পরিচিত দৃষ্টি বা মৃদু দীর্ঘশ্বাস বিনিময় করা হয়নি।
পরবর্তীতে কেউ কেউ আমার কাছে জানতে চেয়েছে, রাসেল কেমন ছেলে ছিল? খেলার সময়টার বাইরে খুব কোন সখ্যতা ছিল না। তবে যতটুকু দেখেছি, খুব লাজুক ছিল। সে যে জাতির জনকের সন্তান এবং এ জন্য তাঁকে কেউ কেউ একটু অন্যভাবে দেখছে এটা বুঝতে পারলে খুব বিব্রত বোধ করত।
ওকে নিয়ে যে গাড়িটা আসতো, সেটা স্কুল শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করত। এটা নিয়ে ওর ছিল সীমাহিন অভিমান। ও চাইতো অন্য আর দশটা ছেলে-মেয়েদের মত গাড়ি ওকে নামিয়ে চলে যাক। এনিয়ে প্রায়ই চালকের সাথে ওর মান-অভিমান চলত।
বুদ্ধিমান চালক গাড়ি নিয়ে চলে যাবার ভান করত এবং ভিসির বাংলোর কাছে গিয়ে অপেক্ষা করতো।
আমরা বা ওর বন্ধুরা মাঝে-মধ্যে খুনসুটি করে সেটা ওকে জানাতাম। এটা জানালে আরেক দফা বিব্রত হত রাসেল।
ঐদিন রাসেলের সহপাঠি আরিফ সেরনিয়াবাদ ও নিহত হয়। আরিফের পিঠাপিঠি বড় বোনটি আমার সহপাঠি ছিল। ১৫ই আগস্টের পর ওকে আর কখনো দেখি নাই।
তাজউদ্দিন সাহেবের ছোটমেয়ে জাবিনও আমার সহপাঠি ছিল। দুর্দান্ত ছাত্রী ছিল ও। ক্লাস থ্রীতে আমি ফার্স্ট হই, জাবিন সেকেন্ড। ক্লাস ফোরে মোজাদ্দেদ ফার্স্ট, জাবিন সেকেন্ড, আমি থার্ড। মোজাদ্দেদ গভঃ ল্যাব-এ চান্স পেয়ে চলে গেল। ক্লাস ফাইভের হাফ ইয়ারলি পর্যন্ত আমি জাবিনের সাথে মনে মনে প্রতিযোগিতা চালিয়ে গেলাম। রেজাল্ট মনে নেই তবে কাছাকাছিই ছিলাম। ফাইনালে হবে চুড়ান্ত শো-ডাউন।
এক ১৫ই আগস্ট এসে সব ভেস্তে দিল। জাবিন আর ক্লাসে ফিরলো না। যতদুর মনে পড়ে ফাইনালের আগে একবারই এসেছিল জানতে যে কবে পরীক্ষা, ও পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা। সম্ভবত দিয়েও ছিল। এর বেশী কিছু মনে নেই।
১৫ই আগস্ট-এর ঘটনাবলী ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া এক বালকের ছোট ছোট অনেকগুল ক্ষতি করে দিয়ে গেল……
__._,_.___