প্রিয় জাফর ইকবাল, আপনি সত্য লিখছেন তো?
16 Aug, 2013
আপনার 'মিথ্যা বলার অধিকার' শীর্ষক লিখাটি পড়লাম। আর অবাক হলাম যে, শেষ পর্যন্ত আপনি আপনার লিখাতেই মিথ্যা বলার অধিকারের প্রয়োগ ঘটালেন!
আপনি আপনার পর্যবেক্ষনের পক্ষে কয়েকটি জ্বলজ্যান্ত উদাহরন দিয়েছেন। প্রথম জ্বলজ্যান্ত উদারহনটি আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা। যে ঘটনার সাথে আপনি ওত:প্রোতভাবে সম্পৃক্ত। আপনি লিখেছেন, "যেখানে সঠিক তথ্য রয়েছে সেখানে সেই তথ্যটাকে আড়ালে রেখে অন্য কিছু ইচ্ছে করে বলা হলে আমি সেটাকে মিথ্যা বলে বিবেচনা করি।" আপনার সাথে সম্পূর্ণ সহমত পোষন করছি। আপনি আপনার বিশ্ববিদ্যালয়, পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সম্পর্কে অনেক তথ্য দিলেন। পত্রিকার নাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য থাকার পরেও আপনি নিজস্বার্থে নামটাকে আড়ালে রাখলেন। একবারও পত্রিকার নামটি উচ্চারন করলেন না। আপনি পত্রিকা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ছাত্র সাংবাদিকটিকে নিরাপত্তা দেবার বিষয়ে আপত্তি তুলছেন। স্যার, আপনি সুস্থ আছেন তো? কারন, ঐ ছাত্র সাংবাদিকটিকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া সংবাদপত্র কর্তৃপক্ষের নৈতিক দায়িত্ব। সংবাদ মিথ্যা হলে আপনাদের জন্য সংবাদিক, প্রকাশক এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আদালতের দরজা উন্মু্ক্ত ছিল। আপনারা সেই পক্রিয়ায় কেন আগ্রহী হলেন না সেটা একটা প্রশ্ন। অন্যদিকে, খবর মিথ্যা হলে যথাযথ তথ্য উপাত্ত দিয়ে প্রতিবাদলিপি পাঠালে বাংলাদেশের পত্রিকাগুলো সেটা প্রকাশ করে। আপনারা প্রতিবাদ লিপি প্রেরন করেছিলেন কিনা সেটাও উল্লেখ করেন নাই। আপনি ছাত্রটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পেরে ক্ষোভ এবং অক্ষমতা থেকে যে তথ্য উপস্থাপন করেছেন সেটা আপনার ভাষাতেই "মিথ্যা বলা হবে না কী অসত্য বলতে হবে নাকি অর্ধসত্য বলা হবে সেসব নিয়ে তর্ক করা যেতে পারে। আমি সেই তর্কে যাচ্ছি না যেখানে সঠিক তথ্য রয়েছে সেখানে সেই তথ্যটাকে আড়ালে রেখে অন্য কিছু ইচ্ছে করে বলা হলে আমি সেটাকে মিথ্যা বলে বিবেচনা করি।" স্যার, আমরাও মিথ্যা বলেই বিবেচনা করি।
আপনি লিখেছেন, "আমাদের দেশে একটা পত্রিকা অনেক সময় রাজনৈতিক দল, পুলিশ, র্যা ব এমনকি, সরকার থেকেও বেশী ক্ষমতাশালী।"- একটা পত্রিকা গণমাধ্যমের অংশ। বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই পঞ্চম স্তম্ভ হিসাবে বিবেচনা করা হয় সংবাদপত্রকে। আপনি সংবাদপত্রের ক্ষমতা দেখে অবাক হবেন কেন? আমাদের দেশে সংবাদপত্র 'অনেক সময়' বেশী শক্তিশালী। অথচ হওয়া উচিত ছিল 'সকল সময়' বেশী শক্তিশালী। অনেক সময় শক্তিশালী বলেই সংবাদপত্র লিমনের উপর RAB-এর অন্যায় কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সরকারকে বাধ্য করতে পারে RAB-র বিরুদ্ধে মামলা করতে। যদিও মানবাধিকার কমিশনের কাজ ছিল লিমনের পাশে দাড়ানো অথচ তারা দাড়িয়েছিল RAB-এর পক্ষে। এই দেশে সংবাদপত্রই মানুষের শেষ কন্ঠস্বর। আপনি ২১শে আগষ্টের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ভুলে গেছি কিনা জানতে চেয়েছেন। আপনার কি মনে আছে এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে প্রথম সোচ্চার হয়েছিল সংবাদপত্র। আপনি লিখেছেন,"এই ঘটনাটি আমার চোখ খুলে দিয়েছে, দেশের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকায় (আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগের পরও) যদি এরকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে তাহলে নিশ্চয়ই অন্যান্য পত্রিকায় অসংখ্যবার এই ঘটনা ঘটেছে। আমার একটা বড় ক্ষতি হয়েছে, খবরের কাগজে কিছু লেখা হলে আমি আজকাল ভুরু কুঁচকে সেটার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেকে জিজ্ঞেস করি, আসলেই কী এটা ঘটেছে? পত্রিকাটি কি সত্যি কথা বলছে?"-আপনার ক্ষতি হয় নাই। আপনার লাভ হয়েছে। কারন, আপনি প্রথম আলো পত্রিকায় নিয়মিত লিখেন। সেই পত্রিকা যখন কানিজ আলমাসের পক্ষে দাড়ায় তখন আপনি নীরব থাকেন, যখন জামাতী প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন ছাপায় তখন আপনি নীরব থাকেন, ঐ পত্রিকা যখন বদলে যাও, বদলে দাও-এর নামে সাংস্কৃতিক অগ্রাসন চালায় তখনও আপনি ঐ পত্রিকায় লিখতে দ্বিধাবোধ করেন না, রানা প্লাজা ধ্বসের পরে ঐ পত্রিকা যখন আনন্দ উৎসব করে সেটাও আপনার কাছে দৃষ্টিকটু মনে হয় না, ঐ পত্রিকা যখন দেশপ্রেম শিখানোর জন্য হাস্যকর চেষ্টা চেলায় তখনও তাদের সাথে আপনার সম্পর্ক অঁটুট থাকে। তাই ভুরু কুঁচকে নয়, আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের চোখে চোখ রেখে নিজেকেও প্রশ্ন করুন "আমি যা লিখছি তা কি সত্যি লিখছি?"
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের সাথে দৈনিক আমার দেশের দ্বন্দ্ব সম্পর্কেও আপনি ভুল তথ্য দিয়েছেন। কারন, দৈনিক আমার দেশ শাহবাগ আন্দোলনকে প্রথমে সমর্থন করেছিল এবং আন্দোলন নিয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। পরবর্তীতে বিএনপি-জামাত জোটের অবস্থানের সাথে সাথে আমার দেশের অবস্থানের পরিবর্তন হয়। কারন জনকন্ঠ আর নয় দিগন্তর মত আমার দেশ-ও একটি দলীয় পত্রিকা। শাহবাগের সকল তরুন/ব্লগারকে নাস্তিক হিসাবে চিহ্নিত করে প্রথম প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাব। আমার দেশ ব্লগার রাজীব এবং আসিফ মহিউদ্দীনের কিছু লেখা প্রকাশ করে। ব্লগার রাজীব একজন নাস্তিক ছিলেন। অথচ, তাকে আস্তিক হিসাবে প্রমানের জন্য তখন শাহবাগ মরিয়া হয়ে পড়েছিল। তাতে, সাধারন মানুষের কাছে নিজেদের নিজেরাই বির্তকিত করার রাস্তা প্রশস্ত করেছিল শাহবাগ আন্দোলনের উদ্যোক্তরা। অন্যদিকে, রাজীবকে প্রধানমন্ত্রী শহীদ হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন। কিন্তু শাহবাগের আন্দোলনে অংশগ্রহন বা আমার দেশ পত্রিকায় তার লেখা ছাপানোর জন্য তিনি খুন হন নাই। তাকে খুনের সাথে জড়িতরাই স্বীকার করেছে তার ধর্মবিদ্বেষী (নাস্তিক আর ধর্মবিদ্বেষী নিশ্চয়ই এক নয়) পোস্টের কারনেই শাহবাগ আন্দোলন শুরুর আগেই তারা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। আপনি আপনার জীবন বিঘ্নের কথা বলেছেন এবং একটা এসএমএস উল্লেখ করেছেন। এমন এসএমএস বা ফোনে হুমকী নতুন কিছু নয়। আমি আপনার মত বিখ্যাত নই, আমার ভাগ্যেও এমন এসএমএস আর ফোনে হুমকী পাওয়ার ভাগ্য হয়েছে। আর আমার সৌভাগ্য এই যে সেটা দুইপক্ষ থেকেই পেয়েছি।
"আমার দেশ" এবং মাহমুদুর রহমান এবং ১৫জন সম্পাদককে নিয়ে আপনি যা লিখেছেন -সেটা উদ্দেশ্যমূলক। মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে প্রমান করা সম্ভব হবে না। অপরাধ মহা গুরুতর হলেও তাকে গ্রেফতারের বিষয়ে সরকার সময়ক্ষেপন করেছিল। তাকে একের পর এক উস্কানীমূলক প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য সময় ও সুযোগদানের মাধ্যমে সরকার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছিল। অন্যদিকে ইনকিলাবের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় নাই। অর্থাৎ, কৃত জঘন্য অপরাধের জন্য মাহমুদুর রহমানকে শাস্তি প্রদান অপেক্ষা হয়রানী করাতেই সরকারের আগ্রহ বেশী। ধূর্ত মাহমুদুর রহমান আইনগতভাবে নিজেকে নির্দোষ প্রমানের মত ফাঁকফোকড় রেখেই অপপ্রচার করেছেন। আইনের ফাঁক গলিয়ে তিনি বেরিয়ে আসবেন। বেরিয়ে আসবেন এই কারনে যে যাদের ব্লগগুলো তিনি প্রকাশ করেছিলেন সেই ব্লগপোস্টগুলো মিথ্যা ছিল না। আর, এই কারনেই ১৫জন সম্পাদক বিবৃতি দিয়েছিলেন। প্রথম আলো এবং প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের সাথে আপনার ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান। আপনি ঐ পত্রিকায় এই বিষয়ে কি কিছু লিখেছেন? মতিউর রহমানসহ ১৫জন কেন বিবৃতি দিলেন সেটা কি ঘনিষ্ট সম্পাদকের কাছে জানতে চেয়েছেন? আপনি ঐ ১৫টি পত্রিকাকি বর্জন করেছেন? শুধু পত্রিকাই যা খুশী তা লিখেনা, আপনার মত তুমুল জনপ্রিয় লেখকরাও যা খুশী তাই লিখেন, খুব কৌশলে লিখেন।
হাইব্রিড তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে আপনার অবস্থান দেখে প্রীত হলাম। হাইব্রিড তত্বাবধায়ক সরকারের অন্যতম রূপকার ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। আপনি কি ভুলে গেছেন সেই হাইব্রীড তত্ববধায়ক সরকারের আমলে আপনি যে এই প্রথম আলোতেই নিয়মিত লিখতেন? শিক্ষকদের স্মৃতিশক্তি খুব ভাল হয় বলে জানতাম। এখন দেখছি কারো কারো গোল্ডফিশ মেমোরী। আপনি লিখেছেন "হাইব্রিড তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল।"- স্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকগন (তাদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি) কি আইন ও রিমান্ডের উর্দ্ধে!! অধ্যাপকদের বিশাল একটা অংশ কি অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত নয়? সাম্প্রতিক সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি গ্রুপের ক্যাডারদের তান্ডব কি অধ্যাপক বিধায় আইনসিদ্ধ কাজ!! আপনার বক্তব্যেই ফিরে আসি 'সত্য এবং মিথ্যার মাঝখানে নিরপেক্ষ থাকা যায় না। এই অত্যন্ত সহজ কথাটি কি বোঝার জন্যে খুব কঠিন?" বোঝার জন্য খুব কঠিন কিনা জানিনা। তবে আপনার মতন কেউ কেউ যে উদ্দেশ্যমূলভাবে আংশিক সত্য আর আংশিক অর্ধসত্য বা অসত্য বা মিথ্যাকে মিশিয়ে সত্যের পক্ষ নেয় এটা সত্য, আপনার এই লেখাতে সেটা পরিস্কার।
আপনার সবচাইতে হাস্যকর স্ববিরোধিতা হচ্ছে, তত্বাবধায়ক সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের গ্রেফতার করছে বলে হা-পিত্যেশ করেছেন আবার পরের প্যারাতেই লিখেছেন, "বিগত বি.এন.পি জামায়াত আমলে যখন সারাদেশে একটা রুদ্ধশ্বাস অবস্থা তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিবেশ ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর। দলীয় শিক্ষকেরা নানা ধরনের তান্ডব করে বেড়াচ্ছেন, প্রায় ডি.এন.এ টেস্ট করে দেখা হচ্ছে রক্তের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রয়েছে কি না, যদি বিন্দুমাত্র চেতনা খুঁজে পাওয়া যায় তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। আমরা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সূতা পর্যন্ত নাড়াতে পারি না, কিছু করতে দেয়া হয় না, কোথাও যেতে দেয় হয় না। পাঁচ মহাদেশ থেকে পাঁচ শিক্ষাবিদকে জার্মানীর একটা অনুষ্ঠানে ডাকা হয়েছে, আমি তাদের একজন, আমাকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হলো না। আমি আবিষ্কার করলাম শিক্ষকেরা যখনই একত্র হচ্ছে তখনই কথাবার্তা আলোচনায় শুধু মাত্র ক্ষোভ আর হতাশা। ক্রোধ এবং যন্ত্রনা। একাত্তরে আমি একটা জিনিস শিখেছিলাম সেটা হচ্ছে যুদ্ধের আসল অস্ত্র রাইফেল নয়, যুদ্ধের আসল অস্ত্র হচ্ছে মনোবল, তাই কখনো মনোবল হারাতে হয় না। সহকর্মীদের মনোবল ধরে রাখার জন্যে আমরা তখন অনেক কিছু করেছি তার মাঝে সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল আমদের সান্ধ্যকালীন আড্ডা। বেশ কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে আমরা শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি বিজ্ঞান প্রযুক্তি দর্শণ–এরকম বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম। শ্বাসরুদ্ধকর একটা পরিস্থিতিতে যখন স্বাধীনতা বিরোধীদের এরকম রমরমা অবস্থা তখন আমাদের এই পুরোপুরি বুদ্ধিভিত্তিক আলোচনাগুলো ছিল খুব আনন্দের, মনোবল ধরে রাখার জন্যে অসাধারণ।" আপনার সাংগঠনিক কৌশলের সাথে তৎকালীন দলীয় শিক্ষকদের কর্মকান্ড সম্পর্কে জানলাম। বর্তমান সময়ে কি দলীয় শিক্ষক নেই। আপনি কি দলনিরপেক্ষ শিক্ষক?!
আপনি অধিকারের তথ্যানুসন্ধান বিষয়ে বলতে গিয়ে অনেক ধান ভেনেছেন। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর একান্ত সচিবের চিঠিতে অধিকারের কাছে ৫মে রাতে নিহত ৬১ জনের নাম, বাবা-মায়ের নাম এবং ঠিকানা চাওয়া হয়েছিল। অধিকার তথ্যমন্ত্রী বরাবর চিঠির জবাবে জানিয়েছিল:- "উল্লেখ্য যে, ভিকটিম ও সাক্ষীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবার কোন আইন বাংলাদেশে নাই। মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে ভিকটিমদের নিরাপত্তা বিধান আমাদের কর্তব্য। সুতরাং ভিকটিমদের পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে দায়িত্বশীল মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে আমরা আপনাকে নিচে উল্লেখিত বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি: ১. নিহতদের তালিকা অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে যেসব মানবাধিকার সংগঠন কাজ করছে তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা। ২. তথ্য প্রদানকারী, ভিকটিম/তাঁদের পরিবার এবং সাক্ষীদের জন্য সুরক্ষার সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়া ও সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৩. এই তথ্য প্রদানকারী, ভিকটিম/তাঁদের পরিবার এবং সাক্ষীদের ক্ষেত্রে কোন ধরনের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটবে না সেই ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেয়া। অধিকার অবশ্যই সেই কাংখিত কমিশনের কাছে প্রাসঙ্গিক সমস্ত তথ্য সরবরাহ ও সহযোগিতা করবে। অধিকার তার তথ্যানুসন্ধান রিপোর্টসহ নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা সেই নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশনের কাছে হস্তান্তর করবে। ওপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে নিশ্চয়তা বিধান ছাড়া নিহতদের নাম, ঠিকানাসহ পূর্ণাঙ্গ তালিকা সরবরাহ করা দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকার লংঘনে সহায়তা বলে বিবেচিত হবে। মানবাধিকার সংগঠন হিসাবে আমাদের পক্ষে এই দায় নেয়া সম্ভব নয়। তবে আমরা আমাদের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনটি আপনার অবগতির জন্য পাঠাচ্ছি।" (অধিকারের চিঠির বিস্তারিত লিংক: http://www.prothom-alo.com/contents/uploads/media/2013/08/11/52074c151cab8-Reply-to-the-Information-Minister_Bangla.pdf)
আপনি মহাজ্ঞানী মহাজন। আপনি এতকিছু জানেন অথচ জানেন না যে, ভিকটিম ও সাক্ষীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ব্যতীত কারো কাছে তথ্য প্রদান বা তথ্য প্রকাশ বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংগঠনগুলোর জন্য অমার্জনীয় অপরাধ। তাই, কমিশনের কাছে তথ্য প্রদানে ব্যর্থ হলেই অধিকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা যেত এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা যেত। একটা সভ্য রাষ্ট্রে সেটাই শোভন যেখানে অধিকারের দাবীকৃত সংখ্যা সত্যা বা মিথ্যা তা নিয়ে সরকারও দ্বিধান্বিত। তাই আদিলুরকে গ্রেফতারের পরে তথ্যমন্ত্রী বলেছেন মিথ্যা তথ্যের জন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন অধিকারের তথ্য মিথ্যা প্রমানিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন আপনিই বলুন কেন আদিলুরকে গ্রেফতার করা হয়েছে?
আপনি তথ্য প্রযুক্তির মানুষ। আদিলুরকে তথ্যপ্রযুক্তি আইন-২০০৬-এর ৫৭-এর অভিযোগ ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে। চারদলীয় জোটের আমলে প্রনীত তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০৬-এর ৫৭-এর ধারায় বলা হয়েছে ,"'কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসত্য হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় বা রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে অপরাধ। কোনো ব্যক্তি এর অধীন অপরাধ করলে তিনি অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ডে অথবা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।"- এই ধারায় অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হওয়ার জন্য যে সকল শর্ত আরোপ করা হয়েছে সেটার ফাঁকিগুলো কি আপনার চোখে পরে? একটু ভালো করে খেয়াল করুন ধারায় বলা হয়েছে "যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল"-এই বিষয়ে কোন মতপার্থক্য নাই কিন্তু তারপরেই বলা হচ্ছে "বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসত্য হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় বা রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে অপরাধ।"- এই অংশে তথ্যের সত্যতা আ অশ্লীলতা বিষয় নয় বিষয় হল "অবস্থা বিবেচনা" অর্থাৎ কারো কারো স্বার্থ রক্ষার জন্য অবস্থা বিবেচনা করে সত্য তথ্যও প্রকাশ হলেও সেটা অপরাধ বলে গন্য হবে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় প্রধানমন্ত্রীসহ (মদীনা সনদের ভিত্তিতে দেশ পরিচালিত হবে, ড. কামাল হোসেনর মেয়ে ইহুদী বিয়ে করেছেন-এমন হাজারো বক্তব্য) অন্যান্য সকল মন্ত্রী, বিরোধী দলীয় রাজনীতিক এমনকি আপনাকে এই লেখাটি লেখার কারনে ও আর আমাকে জবাব দেবার কারনে অভিযুক্ত করা যাবে।
আপনি লিখেছেন, "এই দেশে এমনিতেই অনেক মিথ্যা কথা বলা হয়েছে এখন কি আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সেটাকে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দিতে হবে?" না, আনুষ্ঠানিকভাবে অধিকার প্রতিষ্ঠা করে দেবার কিছু নাই। আমার দেশ, জনকণ্ঠ, আসিফ নজরুল, পিয়াস করিম, মোজাম্মেল বাবু এবং আপনি ও আপনার মতন যারা আছেন তাদের কল্যানে এই অধিকার এমনিই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। আপনার নামটি এখানে উল্লেখ করায়, আপনার অন্ধ ভক্তগোষ্ঠী প্রশ্ন তুলতে পারে। তাদের অবগতির জন্য বলছি, এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানের আমন্ত্রনে আপনি একটা অনুস্ঠানে ইসলামী ব্যাংকের পুরস্কার প্রাপ্তীতে মন খুলে তালি বাজিয়েছিলেন। পরে ঘটানাটি পুরোপুরি চেপে যান। কিন্তু অনলাইন খুব খারাপ জিনিস। আপনার হাস্যমুখে তালিরত ছবি প্রকাশ হলে আপনার এক শিষ্য আপনার সাথে যোগাযোগ করে আপনার যে বক্তব্য অনলাইনের মাধ্যমে আমাদের জানায় তা হল আপনি ইসলামী ব্যাংক চিনলেও আইবিবিএল চিনেন না। তাই যখন আইবিবিএল পুরস্কার গ্রহন করে তখন আপনি তালি দিয়েছেন (আপনি ইসলামী ব্যাংক চিনেন আর আইবিবিএল চিনেন না- এই কথাটি কি আপনি নিজে বিশ্বাস করেন! এছাড়া, আপনি আরো জানিয়েছিলেন যে, ঐ অনুষ্ঠানে ইসলামী ব্যাংককে পুরস্কার দেওয়া হবে সেটা কার্ডে উল্লেখ ছি লনা (স্যার, কোন ব্যাংকের নামই কার্ডে উল্লেখ ছিল না) এবং আতিউর রহমানের সামনে এমন কিছু ঘটবে এটা আপনি আশা করেন নাই। আপনার বক্তব্য মেনে নিলেও একটা প্রশ্ন থেকে যায়, বিশাল ভক্তকূলকে আপনি নিজের অবস্থান পরিস্কার করার জন্য কেন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে পারেন নাই? উত্তর হল আপনার অবস্থান ও বক্তব্যের মধ্যে সত্য এবং অসত্য বা অর্ধসত্য আছে। অসত্য বা অর্ধসত্য বা মিথ্যা বলার যে অধিকার আপনি অন্যদের জন্য দাবী করেছেন সেই অধিকার প্রয়োগে আপনিও সিদ্ধহস্ত। আর, সেই অধিকার আপনারও আছে।
পুনশ্চ: এক) আমি হেফাজত সমর্থক নই। কারন, প্রয়াত ফজলুল হক আমিনীর ব্রেইন চাইল্ড হেফাজত গণজাগরণমঞ্চকে ব্যলেন্স করার জন্য নতুন করে অর্গানাইজড বাই আওয়ামী লীগ, প্রমোটেড বাই মিডিয়া, ইউজড এন্ড মিস ইউজড বাই বিএনপি-জামাত, আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি। হেফাজতের ব্যানারে যে সকল মাদ্রাসার শিশু-কিশোর এবং সাধারন ছাত্রদের ঢাকা শহরে আনা হয়েছিল, ঢাকার মিডিয়া এদের যেভাবে জঙ্গীরুপে চিত্রায়িত করেছিল তাকে কোনক্রমেই সমর্থন করতে পারি নাই। কারন, তারা এই দেশের নাগরিক, তারা বহিরাগত নয়। আজ পর্যন্ত সরকার, বিরোধীদল বা মিডিয়া হেফাজতের ব্যানারে এই সাধারন দরিদ্র শিশু-কিশোর-সাধারন মানুষদের ৫মে ঢাকায় আগমন এবং তাদের প্রত্যাবর্তন বিষয়ে কোন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন পেশ করে নাই।
দুই) ৫মে হেফাজতের ব্যানারে শুধু তান্ডবই চলে নাই কোনআন শরীফও পুড়ানো হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ থাকবার পরেও কোরান শরীফ যারা পুড়িয়েছে তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় নাই। উল্লেখ্য যে, ঐ দিন শুধু হেফাজত নয়, হেফাজতের সাথে সহায়ক শক্তি হিসাবে বিএনপি-জামাত ছাড়াও মহাজোটের প্রধান শরীকদল জাতীয় পার্টির ক্যাডাররা উপস্থিত ছিল। কেন ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে সরকারের অনীহা সেটা কিছুটা কি অনুমান করা যায়?
আপনি আপনার পর্যবেক্ষনের পক্ষে কয়েকটি জ্বলজ্যান্ত উদাহরন দিয়েছেন। প্রথম জ্বলজ্যান্ত উদারহনটি আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা। যে ঘটনার সাথে আপনি ওত:প্রোতভাবে সম্পৃক্ত। আপনি লিখেছেন, "যেখানে সঠিক তথ্য রয়েছে সেখানে সেই তথ্যটাকে আড়ালে রেখে অন্য কিছু ইচ্ছে করে বলা হলে আমি সেটাকে মিথ্যা বলে বিবেচনা করি।" আপনার সাথে সম্পূর্ণ সহমত পোষন করছি। আপনি আপনার বিশ্ববিদ্যালয়, পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সম্পর্কে অনেক তথ্য দিলেন। পত্রিকার নাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য থাকার পরেও আপনি নিজস্বার্থে নামটাকে আড়ালে রাখলেন। একবারও পত্রিকার নামটি উচ্চারন করলেন না। আপনি পত্রিকা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ছাত্র সাংবাদিকটিকে নিরাপত্তা দেবার বিষয়ে আপত্তি তুলছেন। স্যার, আপনি সুস্থ আছেন তো? কারন, ঐ ছাত্র সাংবাদিকটিকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া সংবাদপত্র কর্তৃপক্ষের নৈতিক দায়িত্ব। সংবাদ মিথ্যা হলে আপনাদের জন্য সংবাদিক, প্রকাশক এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আদালতের দরজা উন্মু্ক্ত ছিল। আপনারা সেই পক্রিয়ায় কেন আগ্রহী হলেন না সেটা একটা প্রশ্ন। অন্যদিকে, খবর মিথ্যা হলে যথাযথ তথ্য উপাত্ত দিয়ে প্রতিবাদলিপি পাঠালে বাংলাদেশের পত্রিকাগুলো সেটা প্রকাশ করে। আপনারা প্রতিবাদ লিপি প্রেরন করেছিলেন কিনা সেটাও উল্লেখ করেন নাই। আপনি ছাত্রটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পেরে ক্ষোভ এবং অক্ষমতা থেকে যে তথ্য উপস্থাপন করেছেন সেটা আপনার ভাষাতেই "মিথ্যা বলা হবে না কী অসত্য বলতে হবে নাকি অর্ধসত্য বলা হবে সেসব নিয়ে তর্ক করা যেতে পারে। আমি সেই তর্কে যাচ্ছি না যেখানে সঠিক তথ্য রয়েছে সেখানে সেই তথ্যটাকে আড়ালে রেখে অন্য কিছু ইচ্ছে করে বলা হলে আমি সেটাকে মিথ্যা বলে বিবেচনা করি।" স্যার, আমরাও মিথ্যা বলেই বিবেচনা করি।
আপনি লিখেছেন, "আমাদের দেশে একটা পত্রিকা অনেক সময় রাজনৈতিক দল, পুলিশ, র্যা ব এমনকি, সরকার থেকেও বেশী ক্ষমতাশালী।"- একটা পত্রিকা গণমাধ্যমের অংশ। বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই পঞ্চম স্তম্ভ হিসাবে বিবেচনা করা হয় সংবাদপত্রকে। আপনি সংবাদপত্রের ক্ষমতা দেখে অবাক হবেন কেন? আমাদের দেশে সংবাদপত্র 'অনেক সময়' বেশী শক্তিশালী। অথচ হওয়া উচিত ছিল 'সকল সময়' বেশী শক্তিশালী। অনেক সময় শক্তিশালী বলেই সংবাদপত্র লিমনের উপর RAB-এর অন্যায় কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সরকারকে বাধ্য করতে পারে RAB-র বিরুদ্ধে মামলা করতে। যদিও মানবাধিকার কমিশনের কাজ ছিল লিমনের পাশে দাড়ানো অথচ তারা দাড়িয়েছিল RAB-এর পক্ষে। এই দেশে সংবাদপত্রই মানুষের শেষ কন্ঠস্বর। আপনি ২১শে আগষ্টের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ভুলে গেছি কিনা জানতে চেয়েছেন। আপনার কি মনে আছে এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে প্রথম সোচ্চার হয়েছিল সংবাদপত্র। আপনি লিখেছেন,"এই ঘটনাটি আমার চোখ খুলে দিয়েছে, দেশের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকায় (আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগের পরও) যদি এরকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে তাহলে নিশ্চয়ই অন্যান্য পত্রিকায় অসংখ্যবার এই ঘটনা ঘটেছে। আমার একটা বড় ক্ষতি হয়েছে, খবরের কাগজে কিছু লেখা হলে আমি আজকাল ভুরু কুঁচকে সেটার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেকে জিজ্ঞেস করি, আসলেই কী এটা ঘটেছে? পত্রিকাটি কি সত্যি কথা বলছে?"-আপনার ক্ষতি হয় নাই। আপনার লাভ হয়েছে। কারন, আপনি প্রথম আলো পত্রিকায় নিয়মিত লিখেন। সেই পত্রিকা যখন কানিজ আলমাসের পক্ষে দাড়ায় তখন আপনি নীরব থাকেন, যখন জামাতী প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন ছাপায় তখন আপনি নীরব থাকেন, ঐ পত্রিকা যখন বদলে যাও, বদলে দাও-এর নামে সাংস্কৃতিক অগ্রাসন চালায় তখনও আপনি ঐ পত্রিকায় লিখতে দ্বিধাবোধ করেন না, রানা প্লাজা ধ্বসের পরে ঐ পত্রিকা যখন আনন্দ উৎসব করে সেটাও আপনার কাছে দৃষ্টিকটু মনে হয় না, ঐ পত্রিকা যখন দেশপ্রেম শিখানোর জন্য হাস্যকর চেষ্টা চেলায় তখনও তাদের সাথে আপনার সম্পর্ক অঁটুট থাকে। তাই ভুরু কুঁচকে নয়, আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের চোখে চোখ রেখে নিজেকেও প্রশ্ন করুন "আমি যা লিখছি তা কি সত্যি লিখছি?"
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের সাথে দৈনিক আমার দেশের দ্বন্দ্ব সম্পর্কেও আপনি ভুল তথ্য দিয়েছেন। কারন, দৈনিক আমার দেশ শাহবাগ আন্দোলনকে প্রথমে সমর্থন করেছিল এবং আন্দোলন নিয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। পরবর্তীতে বিএনপি-জামাত জোটের অবস্থানের সাথে সাথে আমার দেশের অবস্থানের পরিবর্তন হয়। কারন জনকন্ঠ আর নয় দিগন্তর মত আমার দেশ-ও একটি দলীয় পত্রিকা। শাহবাগের সকল তরুন/ব্লগারকে নাস্তিক হিসাবে চিহ্নিত করে প্রথম প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাব। আমার দেশ ব্লগার রাজীব এবং আসিফ মহিউদ্দীনের কিছু লেখা প্রকাশ করে। ব্লগার রাজীব একজন নাস্তিক ছিলেন। অথচ, তাকে আস্তিক হিসাবে প্রমানের জন্য তখন শাহবাগ মরিয়া হয়ে পড়েছিল। তাতে, সাধারন মানুষের কাছে নিজেদের নিজেরাই বির্তকিত করার রাস্তা প্রশস্ত করেছিল শাহবাগ আন্দোলনের উদ্যোক্তরা। অন্যদিকে, রাজীবকে প্রধানমন্ত্রী শহীদ হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন। কিন্তু শাহবাগের আন্দোলনে অংশগ্রহন বা আমার দেশ পত্রিকায় তার লেখা ছাপানোর জন্য তিনি খুন হন নাই। তাকে খুনের সাথে জড়িতরাই স্বীকার করেছে তার ধর্মবিদ্বেষী (নাস্তিক আর ধর্মবিদ্বেষী নিশ্চয়ই এক নয়) পোস্টের কারনেই শাহবাগ আন্দোলন শুরুর আগেই তারা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। আপনি আপনার জীবন বিঘ্নের কথা বলেছেন এবং একটা এসএমএস উল্লেখ করেছেন। এমন এসএমএস বা ফোনে হুমকী নতুন কিছু নয়। আমি আপনার মত বিখ্যাত নই, আমার ভাগ্যেও এমন এসএমএস আর ফোনে হুমকী পাওয়ার ভাগ্য হয়েছে। আর আমার সৌভাগ্য এই যে সেটা দুইপক্ষ থেকেই পেয়েছি।
"আমার দেশ" এবং মাহমুদুর রহমান এবং ১৫জন সম্পাদককে নিয়ে আপনি যা লিখেছেন -সেটা উদ্দেশ্যমূলক। মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে প্রমান করা সম্ভব হবে না। অপরাধ মহা গুরুতর হলেও তাকে গ্রেফতারের বিষয়ে সরকার সময়ক্ষেপন করেছিল। তাকে একের পর এক উস্কানীমূলক প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য সময় ও সুযোগদানের মাধ্যমে সরকার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছিল। অন্যদিকে ইনকিলাবের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় নাই। অর্থাৎ, কৃত জঘন্য অপরাধের জন্য মাহমুদুর রহমানকে শাস্তি প্রদান অপেক্ষা হয়রানী করাতেই সরকারের আগ্রহ বেশী। ধূর্ত মাহমুদুর রহমান আইনগতভাবে নিজেকে নির্দোষ প্রমানের মত ফাঁকফোকড় রেখেই অপপ্রচার করেছেন। আইনের ফাঁক গলিয়ে তিনি বেরিয়ে আসবেন। বেরিয়ে আসবেন এই কারনে যে যাদের ব্লগগুলো তিনি প্রকাশ করেছিলেন সেই ব্লগপোস্টগুলো মিথ্যা ছিল না। আর, এই কারনেই ১৫জন সম্পাদক বিবৃতি দিয়েছিলেন। প্রথম আলো এবং প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের সাথে আপনার ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান। আপনি ঐ পত্রিকায় এই বিষয়ে কি কিছু লিখেছেন? মতিউর রহমানসহ ১৫জন কেন বিবৃতি দিলেন সেটা কি ঘনিষ্ট সম্পাদকের কাছে জানতে চেয়েছেন? আপনি ঐ ১৫টি পত্রিকাকি বর্জন করেছেন? শুধু পত্রিকাই যা খুশী তা লিখেনা, আপনার মত তুমুল জনপ্রিয় লেখকরাও যা খুশী তাই লিখেন, খুব কৌশলে লিখেন।
হাইব্রিড তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে আপনার অবস্থান দেখে প্রীত হলাম। হাইব্রিড তত্বাবধায়ক সরকারের অন্যতম রূপকার ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। আপনি কি ভুলে গেছেন সেই হাইব্রীড তত্ববধায়ক সরকারের আমলে আপনি যে এই প্রথম আলোতেই নিয়মিত লিখতেন? শিক্ষকদের স্মৃতিশক্তি খুব ভাল হয় বলে জানতাম। এখন দেখছি কারো কারো গোল্ডফিশ মেমোরী। আপনি লিখেছেন "হাইব্রিড তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল।"- স্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকগন (তাদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি) কি আইন ও রিমান্ডের উর্দ্ধে!! অধ্যাপকদের বিশাল একটা অংশ কি অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত নয়? সাম্প্রতিক সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি গ্রুপের ক্যাডারদের তান্ডব কি অধ্যাপক বিধায় আইনসিদ্ধ কাজ!! আপনার বক্তব্যেই ফিরে আসি 'সত্য এবং মিথ্যার মাঝখানে নিরপেক্ষ থাকা যায় না। এই অত্যন্ত সহজ কথাটি কি বোঝার জন্যে খুব কঠিন?" বোঝার জন্য খুব কঠিন কিনা জানিনা। তবে আপনার মতন কেউ কেউ যে উদ্দেশ্যমূলভাবে আংশিক সত্য আর আংশিক অর্ধসত্য বা অসত্য বা মিথ্যাকে মিশিয়ে সত্যের পক্ষ নেয় এটা সত্য, আপনার এই লেখাতে সেটা পরিস্কার।
আপনার সবচাইতে হাস্যকর স্ববিরোধিতা হচ্ছে, তত্বাবধায়ক সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের গ্রেফতার করছে বলে হা-পিত্যেশ করেছেন আবার পরের প্যারাতেই লিখেছেন, "বিগত বি.এন.পি জামায়াত আমলে যখন সারাদেশে একটা রুদ্ধশ্বাস অবস্থা তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিবেশ ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর। দলীয় শিক্ষকেরা নানা ধরনের তান্ডব করে বেড়াচ্ছেন, প্রায় ডি.এন.এ টেস্ট করে দেখা হচ্ছে রক্তের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রয়েছে কি না, যদি বিন্দুমাত্র চেতনা খুঁজে পাওয়া যায় তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। আমরা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সূতা পর্যন্ত নাড়াতে পারি না, কিছু করতে দেয়া হয় না, কোথাও যেতে দেয় হয় না। পাঁচ মহাদেশ থেকে পাঁচ শিক্ষাবিদকে জার্মানীর একটা অনুষ্ঠানে ডাকা হয়েছে, আমি তাদের একজন, আমাকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হলো না। আমি আবিষ্কার করলাম শিক্ষকেরা যখনই একত্র হচ্ছে তখনই কথাবার্তা আলোচনায় শুধু মাত্র ক্ষোভ আর হতাশা। ক্রোধ এবং যন্ত্রনা। একাত্তরে আমি একটা জিনিস শিখেছিলাম সেটা হচ্ছে যুদ্ধের আসল অস্ত্র রাইফেল নয়, যুদ্ধের আসল অস্ত্র হচ্ছে মনোবল, তাই কখনো মনোবল হারাতে হয় না। সহকর্মীদের মনোবল ধরে রাখার জন্যে আমরা তখন অনেক কিছু করেছি তার মাঝে সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল আমদের সান্ধ্যকালীন আড্ডা। বেশ কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে আমরা শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি বিজ্ঞান প্রযুক্তি দর্শণ–এরকম বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম। শ্বাসরুদ্ধকর একটা পরিস্থিতিতে যখন স্বাধীনতা বিরোধীদের এরকম রমরমা অবস্থা তখন আমাদের এই পুরোপুরি বুদ্ধিভিত্তিক আলোচনাগুলো ছিল খুব আনন্দের, মনোবল ধরে রাখার জন্যে অসাধারণ।" আপনার সাংগঠনিক কৌশলের সাথে তৎকালীন দলীয় শিক্ষকদের কর্মকান্ড সম্পর্কে জানলাম। বর্তমান সময়ে কি দলীয় শিক্ষক নেই। আপনি কি দলনিরপেক্ষ শিক্ষক?!
আপনি অধিকারের তথ্যানুসন্ধান বিষয়ে বলতে গিয়ে অনেক ধান ভেনেছেন। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর একান্ত সচিবের চিঠিতে অধিকারের কাছে ৫মে রাতে নিহত ৬১ জনের নাম, বাবা-মায়ের নাম এবং ঠিকানা চাওয়া হয়েছিল। অধিকার তথ্যমন্ত্রী বরাবর চিঠির জবাবে জানিয়েছিল:- "উল্লেখ্য যে, ভিকটিম ও সাক্ষীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবার কোন আইন বাংলাদেশে নাই। মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে ভিকটিমদের নিরাপত্তা বিধান আমাদের কর্তব্য। সুতরাং ভিকটিমদের পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে দায়িত্বশীল মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে আমরা আপনাকে নিচে উল্লেখিত বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি: ১. নিহতদের তালিকা অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে যেসব মানবাধিকার সংগঠন কাজ করছে তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা। ২. তথ্য প্রদানকারী, ভিকটিম/তাঁদের পরিবার এবং সাক্ষীদের জন্য সুরক্ষার সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়া ও সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৩. এই তথ্য প্রদানকারী, ভিকটিম/তাঁদের পরিবার এবং সাক্ষীদের ক্ষেত্রে কোন ধরনের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটবে না সেই ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেয়া। অধিকার অবশ্যই সেই কাংখিত কমিশনের কাছে প্রাসঙ্গিক সমস্ত তথ্য সরবরাহ ও সহযোগিতা করবে। অধিকার তার তথ্যানুসন্ধান রিপোর্টসহ নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা সেই নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশনের কাছে হস্তান্তর করবে। ওপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে নিশ্চয়তা বিধান ছাড়া নিহতদের নাম, ঠিকানাসহ পূর্ণাঙ্গ তালিকা সরবরাহ করা দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকার লংঘনে সহায়তা বলে বিবেচিত হবে। মানবাধিকার সংগঠন হিসাবে আমাদের পক্ষে এই দায় নেয়া সম্ভব নয়। তবে আমরা আমাদের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনটি আপনার অবগতির জন্য পাঠাচ্ছি।" (অধিকারের চিঠির বিস্তারিত লিংক: http://www.prothom-alo.com/contents/uploads/media/2013/08/11/52074c151cab8-Reply-to-the-Information-Minister_Bangla.pdf)
আপনি মহাজ্ঞানী মহাজন। আপনি এতকিছু জানেন অথচ জানেন না যে, ভিকটিম ও সাক্ষীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ব্যতীত কারো কাছে তথ্য প্রদান বা তথ্য প্রকাশ বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংগঠনগুলোর জন্য অমার্জনীয় অপরাধ। তাই, কমিশনের কাছে তথ্য প্রদানে ব্যর্থ হলেই অধিকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা যেত এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা যেত। একটা সভ্য রাষ্ট্রে সেটাই শোভন যেখানে অধিকারের দাবীকৃত সংখ্যা সত্যা বা মিথ্যা তা নিয়ে সরকারও দ্বিধান্বিত। তাই আদিলুরকে গ্রেফতারের পরে তথ্যমন্ত্রী বলেছেন মিথ্যা তথ্যের জন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন অধিকারের তথ্য মিথ্যা প্রমানিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন আপনিই বলুন কেন আদিলুরকে গ্রেফতার করা হয়েছে?
আপনি তথ্য প্রযুক্তির মানুষ। আদিলুরকে তথ্যপ্রযুক্তি আইন-২০০৬-এর ৫৭-এর অভিযোগ ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে। চারদলীয় জোটের আমলে প্রনীত তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০৬-এর ৫৭-এর ধারায় বলা হয়েছে ,"'কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসত্য হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় বা রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে অপরাধ। কোনো ব্যক্তি এর অধীন অপরাধ করলে তিনি অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ডে অথবা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।"- এই ধারায় অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হওয়ার জন্য যে সকল শর্ত আরোপ করা হয়েছে সেটার ফাঁকিগুলো কি আপনার চোখে পরে? একটু ভালো করে খেয়াল করুন ধারায় বলা হয়েছে "যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল"-এই বিষয়ে কোন মতপার্থক্য নাই কিন্তু তারপরেই বলা হচ্ছে "বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসত্য হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় বা রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে অপরাধ।"- এই অংশে তথ্যের সত্যতা আ অশ্লীলতা বিষয় নয় বিষয় হল "অবস্থা বিবেচনা" অর্থাৎ কারো কারো স্বার্থ রক্ষার জন্য অবস্থা বিবেচনা করে সত্য তথ্যও প্রকাশ হলেও সেটা অপরাধ বলে গন্য হবে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় প্রধানমন্ত্রীসহ (মদীনা সনদের ভিত্তিতে দেশ পরিচালিত হবে, ড. কামাল হোসেনর মেয়ে ইহুদী বিয়ে করেছেন-এমন হাজারো বক্তব্য) অন্যান্য সকল মন্ত্রী, বিরোধী দলীয় রাজনীতিক এমনকি আপনাকে এই লেখাটি লেখার কারনে ও আর আমাকে জবাব দেবার কারনে অভিযুক্ত করা যাবে।
আপনি লিখেছেন, "এই দেশে এমনিতেই অনেক মিথ্যা কথা বলা হয়েছে এখন কি আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সেটাকে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দিতে হবে?" না, আনুষ্ঠানিকভাবে অধিকার প্রতিষ্ঠা করে দেবার কিছু নাই। আমার দেশ, জনকণ্ঠ, আসিফ নজরুল, পিয়াস করিম, মোজাম্মেল বাবু এবং আপনি ও আপনার মতন যারা আছেন তাদের কল্যানে এই অধিকার এমনিই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। আপনার নামটি এখানে উল্লেখ করায়, আপনার অন্ধ ভক্তগোষ্ঠী প্রশ্ন তুলতে পারে। তাদের অবগতির জন্য বলছি, এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানের আমন্ত্রনে আপনি একটা অনুস্ঠানে ইসলামী ব্যাংকের পুরস্কার প্রাপ্তীতে মন খুলে তালি বাজিয়েছিলেন। পরে ঘটানাটি পুরোপুরি চেপে যান। কিন্তু অনলাইন খুব খারাপ জিনিস। আপনার হাস্যমুখে তালিরত ছবি প্রকাশ হলে আপনার এক শিষ্য আপনার সাথে যোগাযোগ করে আপনার যে বক্তব্য অনলাইনের মাধ্যমে আমাদের জানায় তা হল আপনি ইসলামী ব্যাংক চিনলেও আইবিবিএল চিনেন না। তাই যখন আইবিবিএল পুরস্কার গ্রহন করে তখন আপনি তালি দিয়েছেন (আপনি ইসলামী ব্যাংক চিনেন আর আইবিবিএল চিনেন না- এই কথাটি কি আপনি নিজে বিশ্বাস করেন! এছাড়া, আপনি আরো জানিয়েছিলেন যে, ঐ অনুষ্ঠানে ইসলামী ব্যাংককে পুরস্কার দেওয়া হবে সেটা কার্ডে উল্লেখ ছি লনা (স্যার, কোন ব্যাংকের নামই কার্ডে উল্লেখ ছিল না) এবং আতিউর রহমানের সামনে এমন কিছু ঘটবে এটা আপনি আশা করেন নাই। আপনার বক্তব্য মেনে নিলেও একটা প্রশ্ন থেকে যায়, বিশাল ভক্তকূলকে আপনি নিজের অবস্থান পরিস্কার করার জন্য কেন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে পারেন নাই? উত্তর হল আপনার অবস্থান ও বক্তব্যের মধ্যে সত্য এবং অসত্য বা অর্ধসত্য আছে। অসত্য বা অর্ধসত্য বা মিথ্যা বলার যে অধিকার আপনি অন্যদের জন্য দাবী করেছেন সেই অধিকার প্রয়োগে আপনিও সিদ্ধহস্ত। আর, সেই অধিকার আপনারও আছে।
পুনশ্চ: এক) আমি হেফাজত সমর্থক নই। কারন, প্রয়াত ফজলুল হক আমিনীর ব্রেইন চাইল্ড হেফাজত গণজাগরণমঞ্চকে ব্যলেন্স করার জন্য নতুন করে অর্গানাইজড বাই আওয়ামী লীগ, প্রমোটেড বাই মিডিয়া, ইউজড এন্ড মিস ইউজড বাই বিএনপি-জামাত, আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি। হেফাজতের ব্যানারে যে সকল মাদ্রাসার শিশু-কিশোর এবং সাধারন ছাত্রদের ঢাকা শহরে আনা হয়েছিল, ঢাকার মিডিয়া এদের যেভাবে জঙ্গীরুপে চিত্রায়িত করেছিল তাকে কোনক্রমেই সমর্থন করতে পারি নাই। কারন, তারা এই দেশের নাগরিক, তারা বহিরাগত নয়। আজ পর্যন্ত সরকার, বিরোধীদল বা মিডিয়া হেফাজতের ব্যানারে এই সাধারন দরিদ্র শিশু-কিশোর-সাধারন মানুষদের ৫মে ঢাকায় আগমন এবং তাদের প্রত্যাবর্তন বিষয়ে কোন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন পেশ করে নাই।
দুই) ৫মে হেফাজতের ব্যানারে শুধু তান্ডবই চলে নাই কোনআন শরীফও পুড়ানো হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ থাকবার পরেও কোরান শরীফ যারা পুড়িয়েছে তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় নাই। উল্লেখ্য যে, ঐ দিন শুধু হেফাজত নয়, হেফাজতের সাথে সহায়ক শক্তি হিসাবে বিএনপি-জামাত ছাড়াও মহাজোটের প্রধান শরীকদল জাতীয় পার্টির ক্যাডাররা উপস্থিত ছিল। কেন ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে সরকারের অনীহা সেটা কিছুটা কি অনুমান করা যায়?
উৎসঃ পরিবর্তনডটকম
__._,_.___