বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০১৪, ২২ ফাল্গুন ১৪২০
লাদেনের চেয়ে ভয়ঙ্কর খালেদা
স্বদেশ রায়
বর্তমান বিশ্বের সব থেকে বড় সমস্যা সন্ত্রাসবাদ। এই সন্ত্রাসবাদকে মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে গোটা পৃথিবী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পৃথিবীর সামনে মানুষের জন্য মানবসৃষ্ট এত বড় বিপদ আর সৃষ্টি হয়নি। পৃথিবীর যে ফোরামে যে ক'জন বিশ্বনেতা এক হোন না কেন, তাদের অন্তত একটি অঙ্গীকার থাকে যে, জঙ্গী ও সন্ত্রাসমুক্তির যুদ্ধে তাঁরা এক হয়ে যুদ্ধ করবেন।
যুদ্ধ করাটা সহজ। কিন্তু কখন যুদ্ধ করতে হবে, কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে তা সঠিক চিহ্নিত করতে না পারলে ওই যুদ্ধে জেতার কোন কারণ নেই। তাই এখন বিশ্ব নেতাদের প্রথমেই চিহ্নিত করা প্রয়োজন এই মুহূর্তে কার নেতৃত্বে, কার প্রশ্রয়ে, কী ভাবে জঙ্গী বাড়ছে, সন্ত্রাসী বাড়ছে। এই সঠিক শত্রু চিহ্নিত করতে না পারলে কোন যুদ্ধেই জয়লাভ করা যায় না। যখন কোন একটি দেশ আরেকটি দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বা কয়েকটি দেশ বা জোট মিলিত হয়ে আরেকটি জোট বা দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, তখন ওই যুদ্ধ হয় খুব সহজ যুদ্ধ। কারণ, শত্রু তখন চিহ্নিত। কিন্তু সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গীবাদ জটিল বিষয় এবং এর আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতারা আরও রহস্যজনক। যে কারণে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অনেক জটিল, অনেক কঠিন। বর্তমান বিশ্ব সেই যুদ্ধে নেমেছে। তাই সারা পৃথিবীর শান্তিপ্রিয়, জঙ্গীবাদ বিরোধী মানুষ ও নেতৃত্বকে এখন খুব বিচক্ষণতার সঙ্গে এগুতে হবে।
বর্তমান বিশ্বের এই জঙ্গীবাদ সৃষ্টির ইতিহাসে গিয়ে লেখার কলেবর বড় না করে সোজাসুজি বলা যায়, জঙ্গীবাদের একটি পর্যায়ে এসে চিহ্নিত হয় লাদেনই পৃথিবীর জঙ্গীদের অন্যতম নেতৃত্ব। তালেবানের নেতা লাদেনের নেতৃত্বে সৃষ্টি হয় আধুনিক অস্ত্রের ট্রেনিং নেয়া এক বিশাল জঙ্গীবাহিনী। আইএসআইয়ের এক প্রাক্তন কর্মকর্তার আত্মজীবনীতে জানা যায়, তালেবানরা যখন সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল, ওই সময়ে শুধু আইএসআই ৮০ হাজার তালেবানকে ট্রেনিং দিয়েছিল। আর এই ৮০ হাজার ছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের। আইএসআই ৮০ হাজার তালেবানকে ট্রেনিং দেয়। এছাড়া আমেরিকা ও লাদেনের তৎকালীন অন্য মিত্রদের সহযোগিতায় আরও তালেবান ট্রেনিং নেয়। যাহোক, ইতিহাসের পরিক্রমায় আজ আমেরিকা তালেবানদের শত্রু। অনেক দেরিতে হলেও তাদের কিছুটা উপলব্ধি হয়েছে এবং সেটা আরও বেশি করে তারা বুঝতে পেরেছে যখন তাদের ওপর বার বার এই জঙ্গী হামলা ও সর্বশেষ টুইন টাওয়ারে হামলা হয়। এর পরে আমেরিকা সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করে তালেবানদের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ সফল অপারেশন চালিয়ে তারা লাদেনকে হত্যা করে।
আমেরিকা লাদেনকে হত্যা করেছে ঠিকই। কিন্তু তালেবানকে নিষ্ক্রিয় বা নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি। লাদেনের সেকেন্ড ইন কমান্ড জাওয়াহিরি এখন তালেবানের দায়িত্ব নিয়েছে। তবে তার থেকে বড় হলো, একমাত্র আইএসআই যে ৮০ হাজার তালেবান ট্রেনিং দিল তারা কোথায় গেল? তারা কিন্তু এখন আর শুধু আফগান ও পাকিস্তানে নেই। তারা সারা পৃথিবীতে যেখানে তাদের জন্য সুবিধাজনক স্থান পেয়েছে, সেখানেই ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু যে তারা ছড়িয়ে পড়েছে তা নয়, তারা ওই সব স্থানে তাদের অবস্থান সুসংগঠিত করছে এবং বিস্তৃত করছে তাদের কাজ। এই তালেবানরা যেসব দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ও তাদের অবস্থান বিস্তৃত ও সুংগঠিত করছে, তার ভেতর অন্যতম দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সরকার আত্মপ্রাসাদে ভুগতে পারে যে, তারা দেশে জঙ্গীবাদ দমনে সমর্থ হয়েছে। জানিনা, বর্তমান বাংলাদেশ সরকার এমনটি মনে করে কিনা? কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। পৃথিবীর যে কয়টি দেশ জঙ্গীদের অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য এবং বিস্তৃতি লাভ করার জন্য উর্বর ক্ষেত্র, বাংলাদেশ তার ভিতর অন্যতম। বাংলাদেশ যে জঙ্গীদের জন্য অন্যতম উর্বর ক্ষেত্র তার প্রমাণ কিন্তু ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা বলছে, পৃথিবীর তিন নম্বর সশস্ত্র জঙ্গী সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির। আর তারা গত এক বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ও মানুষের বিরুদ্ধে কোন্ ধরনের জঙ্গী হামলা চালিয়েছে সেটা উল্লেখ করার আর কোন প্রয়োজন পড়ে না। কারণ, দেশের মানুষ সেটা প্রত্যক্ষ করেছে। এই ইসলামী ছাত্র শিবিরের মূল সংগঠন জামায়াতে ইসলামীও বাংলাদেশে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছে। তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখানে নানান পথে জঙ্গী বা ইসলামী মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের অবস্থান দৃঢ় করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া হিযবুত তাহরীর, ইসলামিক ব্রাদারহুড, জয়শ-ই-মোহাম্মদ ও তালেবানসহ শতাধিক জঙ্গী সংগঠন বাংলাদেশে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা শুধু শহরে নয়, প্রত্যন্ত এলাকায় তাদের অবস্থান দৃঢ় করার জন্য নানান ধরনের ধর্মীয় লেবাসের কৌশল ও বিপুল পরিমাণ অর্থব্যয় করে চলেছে। তারা আজ এ অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে যে, বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে আরবান গেরিলা ওয়ার শুরু করেছে এবং সেটা চালিয়ে যাচ্ছে। এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য বর্তমান তালেবান প্রধান জাওয়াহিরি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আহ্বানও জানিয়েছে।
পৃথিবীর অনেক দেশে এমনিভাবে বর্তমান মুহূর্তে শত শত ইসলামিক মৌলবাদী জঙ্গী সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। তারা একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তারা তাদের এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা, বৃটেন, চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোতে বসেও। এ সপ্তাহে চীনে ইসলামিক জঙ্গী মৌলবাদীদের হামলায় ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। কিন্তু এই সব দেশ থেকে বাংলাদেশ জঙ্গীদের জন্য অনেক উর্বর ক্ষেত্র এবং বাংলাদেশ এই জঙ্গীদের জন্য উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে পরিণত হওয়ার পেছনে বুঝে বা না বুঝে হোক সব থেকে বড় ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশের এক শ্রেণীর মিডিয়া ও তাদের পরিচালক, আমেরিকাসহ পশ্চিমা অনেক রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশের কিছু তথাকথিত সুশীল সমাজ। তারা ইসলামী ছাত্র শিবিরের মাদার অর্গানাইজেশন জামায়াতে ইসলামীকে মডারেট মুসলিম দল হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের এই সকল জঙ্গী কা- চালানোর জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। অন্যদিকে এই ইসলামী ছাত্র শিবির থেকে শুরু করে জামায়াতে ইসলামীসহ যে শতাধিক জঙ্গী সংগঠন বাংলাদেশে কাজ করছে, তাদের পূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতা খালেদা জিয়া। অথচ সেই খালেদা জিয়াকে বলা হচ্ছে একটি সেন্টার রাইট পলিটিকাল পার্টির নেতা।
খালেদা জিয়াকে সেন্টার রাইট পলিটিক্যাল পার্টির নেতা হিসেবে চিহ্নিত করার ফলে ইসলামী ছাত্র শিবির, জামায়াতে ইসলামীসহ শতাধিক জঙ্গী সংগঠন সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে সেন্টার রাইট বা মডারেট মুসলিম কভারেজে থেকে তাদের জঙ্গী তৎপরতা চালানোর। অন্যদিকে বেগম জিয়াও মাস পিপলের পলিটিক্যাল পার্টি হিসেবে জঙ্গীদের আশ্রয় দিয়ে দেশটাকে জঙ্গী ও মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের উর্বর ও নিরাপদ ভূমিতে পরিণত করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। যার ফলে আজ শুধু বাংলাদেশী সন্ত্রাসী নয়, বিশ্বের অন্যান্য জায়গা থেকে জঙ্গীরা এসে বাংলাদেশে অবস্থান নিচ্ছে। যার কয়েকটি উদাহরণ দেশের মানুষ দেখেছে। শাহবাগ আন্দোলনকে ধ্বংস করার সময় জামায়াত ও খালেদা নেতৃত্বাধীন জোটের ডাকে যে হরতাল হয়, সে সময়ে শাহবাগে পাকিস্তানী জঙ্গী ধরা পড়ে। ঠিক একইভাবে পাটগ্রামে ভারতীয় জঙ্গী ধরা পড়ে। তাদের এখানে আসার কারণটি কিন্তু অতি সহজ। আন্তর্জাতিক জঙ্গীরা এই সত্য চিহ্নিত করতে পেরেছে যে, খালেদা জিয়া রাজনীতির নামে বাংলাদেশে যেভাবে জঙ্গীদের আশ্রয় দিতে ও নিরাপত্তা দিতে পারছে এ সুযোগ অন্য কোথাও নেই। তাঁর রাজনীতির পর্দার আড়ালে যেভাবে জঙ্গীদের লুকিয়ে রাখতে পারছে এমন সুযোগটি পৃথিবীতে কোথাও নেই। আর এই সত্যটি সকল রাজনৈতিক স্বার্থ, ব্যক্তি স্বার্থে এবং আর্থিক স্বার্থের উর্ধে উঠে স্বীকার করতে হবে যে, মাস পিপলের পলিটিক্যাল পার্টি হিসেবে খালেদা যেভাবে জঙ্গীদের আশ্রয় দিচ্ছেন, তাদের জঙ্গী কর্মকা- চালানোর সুযোগ করে দিচ্ছেন , তাদের সঙ্গে এক সঙ্গে কর্মসূচী দিচ্ছেন, তাদের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে নিজের দলকে যুক্ত করছেন এমনটি পৃথিবীতে আর কোথাও নেই।
সত্যি অর্থে লাদেন এই সুযোগ জঙ্গীদের দিতে পারেনি। পাকিস্তানেরও কোন মাস পিপলের পলিটিকাল পার্টি এ সুযোগ জঙ্গীদের দিতে পারেনি। ইউরোপ, আমেরিকা বা অন্যান্য কোন দেশেও এটা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা ঘটছে। যে কারণে খালেদা যখন বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন তালেবান নেতা জাওয়াহিরি সে সময়ে বাংলাদেশে এসেছিল। এখন জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতসহ শতাধিক জঙ্গী সংগঠন নিয়ে খালেদা যখন সরকারের বিরুদ্ধে আরবান গেরিলা যুদ্ধ করছেন, সে সময়ে তালেবান নেতা জাওয়াহিরি ওই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ভিডিও বার্তা পাঠাচ্ছে। এই ভিডিও বার্তা জঙ্গীদের একটি কৌশল। খালেদা নিজেও এই কৌশল এখন গ্রহণ করেছেন।
বাংলাদেশকে এখন যদি বাংলাদেশের মানুষ ও বিশ্ব সম্প্রদায় জঙ্গীমুক্ত করতে চায়, তাদের এই সত্য উপলব্ধি করতে হবে যে, অনেক জনসমর্থনের বা মাস পিপলের রাজনৈতিক দল হিসেবে পৃথিবীতে খালেদাই একমাত্র জঙ্গীদের সমর্থন করছেন। তাদের বেড়ে ওঠার ও কার্যকলাপ চালানোর সব সুযোগ করে দিচ্ছেন। যে সুযোগ লাদেনেরও ছিল না। তাই জঙ্গী নেতা হিসেবে ছদ্মাবরণে থাকলেও খালেদা অনেক বেশি ভয়ঙ্কর লাদেনের থেকে। পৃথিবীকে জঙ্গীমুক্ত করতে হলে বিশ্বনেতৃত্বকে এই সত্য বুঝতে হবে। এ সত্য বুঝতে হবে আমেরিকাসহ অন্য যে সব পশ্চিমা দেশ এখনও খালেদাকে মডারেট মুসলিম নেতা হিসেবে মনে করছেন। এ কথা সত্য, গোটা বিএনপি জঙ্গী নয়। মওদুদ আহমদরা জঙ্গী নন। তবে খালেদা এখন লাদেনের থেকে ভয়ঙ্কর জঙ্গী নেতা। আর তারেক রহমান তো নিজেই বলেছেন, ইসলামী ছাত্র শিবির ও ছাত্রদল একই মায়ের সন্তান। তাই তারেক রহমান আর ইসলামিক ছাত্র শিবিরের কোন পার্থক্য নেই। এ কারণে বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের মিলিত চেষ্টায় যতক্ষণ দেশকে এই লাদেনের থেকে ভয়ঙ্কর জঙ্গী নেতা হতে মুক্ত করা না যাবে, ততক্ষণে এটা গোটা বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য হুমকি আর দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য অবশ্যই।
swadeshroy@gmail.com
যুদ্ধ করাটা সহজ। কিন্তু কখন যুদ্ধ করতে হবে, কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে তা সঠিক চিহ্নিত করতে না পারলে ওই যুদ্ধে জেতার কোন কারণ নেই। তাই এখন বিশ্ব নেতাদের প্রথমেই চিহ্নিত করা প্রয়োজন এই মুহূর্তে কার নেতৃত্বে, কার প্রশ্রয়ে, কী ভাবে জঙ্গী বাড়ছে, সন্ত্রাসী বাড়ছে। এই সঠিক শত্রু চিহ্নিত করতে না পারলে কোন যুদ্ধেই জয়লাভ করা যায় না। যখন কোন একটি দেশ আরেকটি দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বা কয়েকটি দেশ বা জোট মিলিত হয়ে আরেকটি জোট বা দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, তখন ওই যুদ্ধ হয় খুব সহজ যুদ্ধ। কারণ, শত্রু তখন চিহ্নিত। কিন্তু সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গীবাদ জটিল বিষয় এবং এর আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতারা আরও রহস্যজনক। যে কারণে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অনেক জটিল, অনেক কঠিন। বর্তমান বিশ্ব সেই যুদ্ধে নেমেছে। তাই সারা পৃথিবীর শান্তিপ্রিয়, জঙ্গীবাদ বিরোধী মানুষ ও নেতৃত্বকে এখন খুব বিচক্ষণতার সঙ্গে এগুতে হবে।
বর্তমান বিশ্বের এই জঙ্গীবাদ সৃষ্টির ইতিহাসে গিয়ে লেখার কলেবর বড় না করে সোজাসুজি বলা যায়, জঙ্গীবাদের একটি পর্যায়ে এসে চিহ্নিত হয় লাদেনই পৃথিবীর জঙ্গীদের অন্যতম নেতৃত্ব। তালেবানের নেতা লাদেনের নেতৃত্বে সৃষ্টি হয় আধুনিক অস্ত্রের ট্রেনিং নেয়া এক বিশাল জঙ্গীবাহিনী। আইএসআইয়ের এক প্রাক্তন কর্মকর্তার আত্মজীবনীতে জানা যায়, তালেবানরা যখন সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল, ওই সময়ে শুধু আইএসআই ৮০ হাজার তালেবানকে ট্রেনিং দিয়েছিল। আর এই ৮০ হাজার ছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের। আইএসআই ৮০ হাজার তালেবানকে ট্রেনিং দেয়। এছাড়া আমেরিকা ও লাদেনের তৎকালীন অন্য মিত্রদের সহযোগিতায় আরও তালেবান ট্রেনিং নেয়। যাহোক, ইতিহাসের পরিক্রমায় আজ আমেরিকা তালেবানদের শত্রু। অনেক দেরিতে হলেও তাদের কিছুটা উপলব্ধি হয়েছে এবং সেটা আরও বেশি করে তারা বুঝতে পেরেছে যখন তাদের ওপর বার বার এই জঙ্গী হামলা ও সর্বশেষ টুইন টাওয়ারে হামলা হয়। এর পরে আমেরিকা সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করে তালেবানদের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ সফল অপারেশন চালিয়ে তারা লাদেনকে হত্যা করে।
আমেরিকা লাদেনকে হত্যা করেছে ঠিকই। কিন্তু তালেবানকে নিষ্ক্রিয় বা নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি। লাদেনের সেকেন্ড ইন কমান্ড জাওয়াহিরি এখন তালেবানের দায়িত্ব নিয়েছে। তবে তার থেকে বড় হলো, একমাত্র আইএসআই যে ৮০ হাজার তালেবান ট্রেনিং দিল তারা কোথায় গেল? তারা কিন্তু এখন আর শুধু আফগান ও পাকিস্তানে নেই। তারা সারা পৃথিবীতে যেখানে তাদের জন্য সুবিধাজনক স্থান পেয়েছে, সেখানেই ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু যে তারা ছড়িয়ে পড়েছে তা নয়, তারা ওই সব স্থানে তাদের অবস্থান সুসংগঠিত করছে এবং বিস্তৃত করছে তাদের কাজ। এই তালেবানরা যেসব দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ও তাদের অবস্থান বিস্তৃত ও সুংগঠিত করছে, তার ভেতর অন্যতম দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সরকার আত্মপ্রাসাদে ভুগতে পারে যে, তারা দেশে জঙ্গীবাদ দমনে সমর্থ হয়েছে। জানিনা, বর্তমান বাংলাদেশ সরকার এমনটি মনে করে কিনা? কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। পৃথিবীর যে কয়টি দেশ জঙ্গীদের অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য এবং বিস্তৃতি লাভ করার জন্য উর্বর ক্ষেত্র, বাংলাদেশ তার ভিতর অন্যতম। বাংলাদেশ যে জঙ্গীদের জন্য অন্যতম উর্বর ক্ষেত্র তার প্রমাণ কিন্তু ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা বলছে, পৃথিবীর তিন নম্বর সশস্ত্র জঙ্গী সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির। আর তারা গত এক বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ও মানুষের বিরুদ্ধে কোন্ ধরনের জঙ্গী হামলা চালিয়েছে সেটা উল্লেখ করার আর কোন প্রয়োজন পড়ে না। কারণ, দেশের মানুষ সেটা প্রত্যক্ষ করেছে। এই ইসলামী ছাত্র শিবিরের মূল সংগঠন জামায়াতে ইসলামীও বাংলাদেশে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছে। তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখানে নানান পথে জঙ্গী বা ইসলামী মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের অবস্থান দৃঢ় করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া হিযবুত তাহরীর, ইসলামিক ব্রাদারহুড, জয়শ-ই-মোহাম্মদ ও তালেবানসহ শতাধিক জঙ্গী সংগঠন বাংলাদেশে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা শুধু শহরে নয়, প্রত্যন্ত এলাকায় তাদের অবস্থান দৃঢ় করার জন্য নানান ধরনের ধর্মীয় লেবাসের কৌশল ও বিপুল পরিমাণ অর্থব্যয় করে চলেছে। তারা আজ এ অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে যে, বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে আরবান গেরিলা ওয়ার শুরু করেছে এবং সেটা চালিয়ে যাচ্ছে। এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য বর্তমান তালেবান প্রধান জাওয়াহিরি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আহ্বানও জানিয়েছে।
পৃথিবীর অনেক দেশে এমনিভাবে বর্তমান মুহূর্তে শত শত ইসলামিক মৌলবাদী জঙ্গী সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। তারা একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তারা তাদের এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা, বৃটেন, চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোতে বসেও। এ সপ্তাহে চীনে ইসলামিক জঙ্গী মৌলবাদীদের হামলায় ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। কিন্তু এই সব দেশ থেকে বাংলাদেশ জঙ্গীদের জন্য অনেক উর্বর ক্ষেত্র এবং বাংলাদেশ এই জঙ্গীদের জন্য উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে পরিণত হওয়ার পেছনে বুঝে বা না বুঝে হোক সব থেকে বড় ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশের এক শ্রেণীর মিডিয়া ও তাদের পরিচালক, আমেরিকাসহ পশ্চিমা অনেক রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশের কিছু তথাকথিত সুশীল সমাজ। তারা ইসলামী ছাত্র শিবিরের মাদার অর্গানাইজেশন জামায়াতে ইসলামীকে মডারেট মুসলিম দল হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের এই সকল জঙ্গী কা- চালানোর জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। অন্যদিকে এই ইসলামী ছাত্র শিবির থেকে শুরু করে জামায়াতে ইসলামীসহ যে শতাধিক জঙ্গী সংগঠন বাংলাদেশে কাজ করছে, তাদের পূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতা খালেদা জিয়া। অথচ সেই খালেদা জিয়াকে বলা হচ্ছে একটি সেন্টার রাইট পলিটিকাল পার্টির নেতা।
খালেদা জিয়াকে সেন্টার রাইট পলিটিক্যাল পার্টির নেতা হিসেবে চিহ্নিত করার ফলে ইসলামী ছাত্র শিবির, জামায়াতে ইসলামীসহ শতাধিক জঙ্গী সংগঠন সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে সেন্টার রাইট বা মডারেট মুসলিম কভারেজে থেকে তাদের জঙ্গী তৎপরতা চালানোর। অন্যদিকে বেগম জিয়াও মাস পিপলের পলিটিক্যাল পার্টি হিসেবে জঙ্গীদের আশ্রয় দিয়ে দেশটাকে জঙ্গী ও মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের উর্বর ও নিরাপদ ভূমিতে পরিণত করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। যার ফলে আজ শুধু বাংলাদেশী সন্ত্রাসী নয়, বিশ্বের অন্যান্য জায়গা থেকে জঙ্গীরা এসে বাংলাদেশে অবস্থান নিচ্ছে। যার কয়েকটি উদাহরণ দেশের মানুষ দেখেছে। শাহবাগ আন্দোলনকে ধ্বংস করার সময় জামায়াত ও খালেদা নেতৃত্বাধীন জোটের ডাকে যে হরতাল হয়, সে সময়ে শাহবাগে পাকিস্তানী জঙ্গী ধরা পড়ে। ঠিক একইভাবে পাটগ্রামে ভারতীয় জঙ্গী ধরা পড়ে। তাদের এখানে আসার কারণটি কিন্তু অতি সহজ। আন্তর্জাতিক জঙ্গীরা এই সত্য চিহ্নিত করতে পেরেছে যে, খালেদা জিয়া রাজনীতির নামে বাংলাদেশে যেভাবে জঙ্গীদের আশ্রয় দিতে ও নিরাপত্তা দিতে পারছে এ সুযোগ অন্য কোথাও নেই। তাঁর রাজনীতির পর্দার আড়ালে যেভাবে জঙ্গীদের লুকিয়ে রাখতে পারছে এমন সুযোগটি পৃথিবীতে কোথাও নেই। আর এই সত্যটি সকল রাজনৈতিক স্বার্থ, ব্যক্তি স্বার্থে এবং আর্থিক স্বার্থের উর্ধে উঠে স্বীকার করতে হবে যে, মাস পিপলের পলিটিক্যাল পার্টি হিসেবে খালেদা যেভাবে জঙ্গীদের আশ্রয় দিচ্ছেন, তাদের জঙ্গী কর্মকা- চালানোর সুযোগ করে দিচ্ছেন , তাদের সঙ্গে এক সঙ্গে কর্মসূচী দিচ্ছেন, তাদের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে নিজের দলকে যুক্ত করছেন এমনটি পৃথিবীতে আর কোথাও নেই।
সত্যি অর্থে লাদেন এই সুযোগ জঙ্গীদের দিতে পারেনি। পাকিস্তানেরও কোন মাস পিপলের পলিটিকাল পার্টি এ সুযোগ জঙ্গীদের দিতে পারেনি। ইউরোপ, আমেরিকা বা অন্যান্য কোন দেশেও এটা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা ঘটছে। যে কারণে খালেদা যখন বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন তালেবান নেতা জাওয়াহিরি সে সময়ে বাংলাদেশে এসেছিল। এখন জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতসহ শতাধিক জঙ্গী সংগঠন নিয়ে খালেদা যখন সরকারের বিরুদ্ধে আরবান গেরিলা যুদ্ধ করছেন, সে সময়ে তালেবান নেতা জাওয়াহিরি ওই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ভিডিও বার্তা পাঠাচ্ছে। এই ভিডিও বার্তা জঙ্গীদের একটি কৌশল। খালেদা নিজেও এই কৌশল এখন গ্রহণ করেছেন।
বাংলাদেশকে এখন যদি বাংলাদেশের মানুষ ও বিশ্ব সম্প্রদায় জঙ্গীমুক্ত করতে চায়, তাদের এই সত্য উপলব্ধি করতে হবে যে, অনেক জনসমর্থনের বা মাস পিপলের রাজনৈতিক দল হিসেবে পৃথিবীতে খালেদাই একমাত্র জঙ্গীদের সমর্থন করছেন। তাদের বেড়ে ওঠার ও কার্যকলাপ চালানোর সব সুযোগ করে দিচ্ছেন। যে সুযোগ লাদেনেরও ছিল না। তাই জঙ্গী নেতা হিসেবে ছদ্মাবরণে থাকলেও খালেদা অনেক বেশি ভয়ঙ্কর লাদেনের থেকে। পৃথিবীকে জঙ্গীমুক্ত করতে হলে বিশ্বনেতৃত্বকে এই সত্য বুঝতে হবে। এ সত্য বুঝতে হবে আমেরিকাসহ অন্য যে সব পশ্চিমা দেশ এখনও খালেদাকে মডারেট মুসলিম নেতা হিসেবে মনে করছেন। এ কথা সত্য, গোটা বিএনপি জঙ্গী নয়। মওদুদ আহমদরা জঙ্গী নন। তবে খালেদা এখন লাদেনের থেকে ভয়ঙ্কর জঙ্গী নেতা। আর তারেক রহমান তো নিজেই বলেছেন, ইসলামী ছাত্র শিবির ও ছাত্রদল একই মায়ের সন্তান। তাই তারেক রহমান আর ইসলামিক ছাত্র শিবিরের কোন পার্থক্য নেই। এ কারণে বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের মিলিত চেষ্টায় যতক্ষণ দেশকে এই লাদেনের থেকে ভয়ঙ্কর জঙ্গী নেতা হতে মুক্ত করা না যাবে, ততক্ষণে এটা গোটা বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য হুমকি আর দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য অবশ্যই।
swadeshroy@gmail.com
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০১৪, ২২ ফাল্গুন ১৪২০
__._,_.___