Banner Advertiser

Monday, April 2, 2012

[mukto-mona] Fw: যুদ্ধাপরাধী বিচার : অভিযোগপত্র ২ ॥ মোল্লার নির্দেশে লস্করকে গুলি, স্ত্রী দুই মেয়েকে জবাই ও ছেলেকে আছড়িয়ে হত্যা করা হয়


----- Forwarded Message -----
From: SyedAslam <syed.aslam3@gmail.com>
To: Khobor <khabor@yahoogroups.com>; notun Bangladesh <notun_bangladesh@yahoogroups.com>; chottala@yahoogroups.com
Sent: Monday, April 2, 2012 2:39 PM
Subject: যুদ্ধাপরাধী বিচার : অভিযোগপত্র ২ ॥ মোল্লার নির্দেশে লস্করকে গুলি, স্ত্রী দুই মেয়েকে জবাই ও ছেলেকে আছড়িয়ে হত্যা করা হয়

অভিযোগপত্র ২ ॥ মোল্লার নির্দেশে লস্করকে গুলি, স্ত্রী দুই মেয়েকে জবাই ও ছেলেকে আছড়িয়ে হত্যা করা হয়
যুদ্ধাপরাধী বিচার
বিকাশ দত্ত ॥ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চীফ প্রসিকিউটরের দেয়া অভিযোগপত্র থেকে নানা অজানা কাহিনী বেরিয়ে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি তার আলবদর বাহিনী নিয়ে শহীদ হযরত আলী লস্করের বাড়িতে ঢুকে মধ্যযুগীয় তা-ব চালায়। আব্দুল কাদের মোল্লার নির্দেশে হয়রত আলী লস্করকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার স্ত্রী আমেনা ও দুই শিশু মেয়ে খোদেজা ও তাছলিমাকে জবাই করে হত্যা করা হয়। ছোট ছেলে বাবুু যার বয়স মাত্র ২ বছর তাকে মাটিতে আছড়িয়ে হত্যা করা হয়। দ্বিতীয় মেয়ে আমেনাকে (১১) পালাক্রমে ১২ জন মিলে ধর্ষণ করে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭৩-এর ৩(২) (সি) (জি)৪ (১) ধারায় আব্দুল কাদের মোল্লা অপরাধ সংঘটন করেছেন। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটরদের দেয়া অভিযোগপত্র থেকে এ ধরনের তথ্য রেরিয়ে এসেছে। 
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, একাত্তরের ২৬ মার্চ সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টায় শহীদ হজরত আলী লস্কর হাফাতে হাফাতে দৌড়ে তার ঘটনাস্থলের বাড়িতে আসে এবং তার স্ত্রী, চার কন্যা ও একশিশু পুত্রকে নিয়ে দ্রুত ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় এবং বলে কাদের মোল্লা ও বিহারী আক্তার গু-াসহ কয়েকজন বিহারী পাকিস্তানী সেনা নিয়ে তাকে ধাওয়া করেছে। তখন ভেতর থেকে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয় এবং তার বড় মেয়ে, তখন বয়স অনুমান ১২ বছর, তার ছোট বোন আমেনাকে (বয়স অনুমান ১১ বছর) নিয়ে চৌকির নিচে ট্রাঙ্কের পেছনে লুকায়। 
তখন বাইরের থেকে আসামি কাদের মোল্লার নেতৃত্বে বিহারী আক্তার গু-াসহ ১২/১৩ জন বিহারী ও পাকিস্তানী সেনা নিয়ে হয়রত আলীর বাড়িতে ঢোকে এবং বাইরের থেকে দরজায় লাথি মেরে হয়রত আলীকে দরজা খুলে দিতে বলে। দরজা না খুললে বোমা মারবে। এর পরও হজরত আলী লস্কর দরজা না খুললে আসামিরা বোমা মারে এবং এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তখন হজরত আলী লস্কর একটি দা হাতে নিয়ে দরজা খোলে। সঙ্গে সঙ্গে আসামি কাদের মোল্লার নির্দেশে পাক আর্মিরা ঘরে ঢুকেই প্রথমে হজরত আলী লস্করের পেটে গুলি করে। সঙ্গে সঙ্গে হজরত আলী লস্কর গুলি খেয়ে চিৎকার দিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। তখন হয়রত আলীর স্ত্রী আমিনা (অন্তঃসত্ত্ব¡া) চিৎকার দিয়ে ঘর থেকে বের হলে আব্দুল কাদের মোল্লা নির্দেশে পাকিস্তানী আর্মি ও সঙ্গে থাকা বিহারীরা হজরত আলী লস্করের স্ত্রী আমিনা বেগমকে জবাই করে হত্যা করে। 
এর পর তার তৃতীয় মেয়েকে (বয়স অনুমান ৯ বছর) জবাই করে হত্যা করা হয়। পরে ৪র্থ মেয়ে তাসলিমাকেও (বয়স ৬/৭ বছর) জবাই করে হত্যা করা হয়। ছোট শিশু (বয়স অনুমান ২ বছর) বাবুকে মাটিতে আছড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ দৃশ্য দেখে ঘরের ভেতর ট্রাঙ্কের পেছনে লুকিয়ে থাকা হজরত আলী লস্করের ২য় মেয়ে (বয়স অনুমান ১১ বছর) চিৎকার দেয়। এ চিৎকার শুনে আসামি আব্দুল কাদের মোল্লার সহযোগী (পরবর্তীতে আলবদর) আমেনাকে চৌকির নিচে ট্রাঙ্কের পেছন থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে তার পরনে থাকা প্যান্ট-ফ্রক খুলে ফেলে বিবস্ত্র করে ঘরের মেঝেতে ফেলে একজন একজন করে ধর্ষণ করতে থাকে। এ দৃশ্য দেখে ফেলে বড় মেয়ে মোমেনা। সে কোন ডাক চিৎকার দেয়নি। 
ট্রাঙ্কের পেছন থেকে তার বোনকে ধর্ষণ করার ঘটনা দেখে। প্রথম ব্যক্তি ধর্ষণ করার সময় ধর্ষিতা আমেনা খুব চিৎকার করছিল এর পর কয়েকজন ধর্ষণ করার পর সে আর চিৎকার করেনি। বিহারী ও পাকিস্তানী আর্মি মিলে আনুমানিক ১২ জন পরপর এই ১১ বছরের আমেনাকে ধর্ষণ করে। এই ঘটনা দেখে উক্ত শহীদ হজরত আলী লস্করের বড় মেয়ে মোমেনা (তখন তার বয়স ছিল ১২ বছর) জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। গভীর রাতে তার জ্ঞান ফেরে। তখন অন্ধকারে কিছুই দেখতে পায় না। কিন্তু বাঁ পায়ে ব্যথা অনুভব করে। অনেক কষ্ট করে খাটের নিচ থেকে বের হয়ে আসে এবং চিৎকার করে তার আব্বা ও বোনদের ডাকতে থাকে। কিন্তু তাদের কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। তখন সে তার পায়ে ব্যথা নিয়ে দৌড়িয়ে ১০ নং সেনপাড়াপর্বতা ফকির বাড়িতে যায়। তারা তার পায়ের চিকিৎসা করায়। 
এ ঘটনার পূর্বেই মোমেনার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু শ্বশুর বাড়িতে উঠিয়ে নেয়নি। কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরায় তার স্বামীর বাড়ি ছিল। তারা এ ঘটনার সংবাদ শুনে ঘটনার ৩/৪ দিন পর এই নির্মম রোমহর্ষক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিকটিম মোমনাকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যায়। উক্ত ঘটনার কারণে সে প্রায়পাগল হয়ে যাওয়া শ্বশুর বাড়ির লোকেরা তাকে ২/৩ মাস চিকিৎসা করে ভাল করায়। স্বাধীনতার পর অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বরের পর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে উক্ত মোমেনা তাদের বাড়িতে আসে কিন্তু তার মা বাবা ভাই বোন কারও লাশ পায়নি। ঘরে তখনও রক্তের দাগ ছিল। সারা এলাকায় শুধু লাশ আর লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখে। তাদের বাড়ির সব মালামাল লুট হয়ে যায়। ওখানে গিয়ে মোমেনা বেগম স্থানীয় লোকদের কাছে জল্লাদখানার নাম শুনে জল্লাদখানায় যায় এবং সেখানে গিয়ে মাথার খুলি ও হাড় দেখতে পায়। জল্লাদখানায় যে নারীদের ধরে এনে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছে তাদের অনেক শাড়ি চুরি ইত্যাদি পড়ে থাকতে দেখে। এর পর মোমেনা বেগম পাগল হয়ে যাওয়ায় তাকে ৩ বছর শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয় । অনেক চিকিৎসার পরে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। 
দীর্ঘ ৪০ বছর পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামি আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সেই অভিযোগপত্রে সাক্ষীদের নাম ও ঠিকানা পৃথকভাবে দেয়া হয়েছে। পাক বাহিনীর দোসর আলবদর বাহিনীর নেতা আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা, তার সহযোগী আলবদর বাহিনী ও বিহারীদের নিয়ে ঢাকার মিরপুর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর এবং ঢাকা জেলার বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানী হানাদার দখলদার বাহিনীকে সহায়তা করে এবং সঙ্গে থেকে নিজে এবং তারা গুলি করে ও জবাই করে অনেক নিরস্ত্র লোকদের হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে এবং শারীরিক নির্যাতন করে, মানবতাবিরোধী অসংখ্য অপরাধ সংগঠন করে ও সংগঠনে সহয়োগিতা, পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। 
মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর বাহিনীসহ অন্যান্য সহযোগী বাহিনী পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহায়তায় দেশে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। একাত্তরের ২৩ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের সর্বোচ্চ বিকাশ ত্বরান্বি^ত হয়। সেদিন ছিল পাকিস্তানীদের পাকিস্তান দিবস। কিন্তু এই ২৩ মার্চ, ১৯৭১-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব লাহোর প্রস্তাব দিবসের স্মরণে প্রতিরোধ দিবস পালন করেন। সকল অফিস-আদালত ও ভবন চূড়া হতে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে তদস্থলে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। দোকানপাট, গাড়ি-বাড়ি, অফিস-আদালত, সকল সরকারী বেসরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা শোভা পায়। এমনকি প্রেসিডেন্ট ভবনেও বালাদেশের পতাকা উড়তে দেখা যায়। পূর্র্ব বাংলার কোথাও একমাত্র গবর্নর হাউস ও সামরিক আইন সদর দফতর ছাড়া পাকিস্তানের পতাকা দেখা যায়নি। ব্রিটিশ হাইকমিশন ও সোভিয়েত কনস্যুলেট অফিসসহ ঢাকায় বিদেশী দূতাবাসগুলোতেও স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়তে দেখা যায়। 
আওয়ামী লীগের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে শেখ মুজিব সে দিন তার বক্তব্যে বাঙালীদের জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখান এবং তা অর্জনের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সার্বিক প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান। ঠিক একই দিনে ঢাকার মিরপুর ও মোহাম্মদপুরসহ পূর্ব বাংলার বিভিন্ন স্থানে বাঙালী বিহারী দাঙ্গা বেধে যায়। এ ছিল পশ্চিমা সামরিক শাসক গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, অত্র সংশ্লিষ্ট মামলার অভিযুক্ত আসামি আব্দুর কাদের মোল্লা পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর ইঙ্গিতে ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গোপন নির্দেশে ঢাকার মিরপুর ও মোহাম্মদপুরে বিহারীদের সঙ্গে নিয়ে বাঙালীদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা শুরু" করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ার উচ্চারণ করেন।


http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2012-04-03&ni=91992
মঙ্গলবার, ৩ এপ্রিল ২০১২, ২০ চৈত্র ১৪১



অভিযোগপত্র ১ ॥ মিরপুরে জল্লাদ বা কসাই নামে পরিচিত ছিল কাদের মোল্লা
যুদ্ধাপরাধী বিচার
বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার নেতৃত্বে বিহারীদের যোগসাজশে মিরপুরে বাঙালী হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। মিরপুরবাসীর কাছে জল্লাদ বা কসাই নামে পরিচিত ছিল এই কাদের মোল্লা। একাত্তরের ২৪ এপ্রিল তার সহযোগী আল-বদরবাহিনীর প্রায় ৫০ সদস্যকে নিয়ে পাকিস্তানী সেনাবহিনীর সহায়তায় আলুব্দী গ্রাম ঘিরে নির্বিচারে গুলি করে ৩৪৪ জনকে হত্যা করা হয়, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর ৩(এ)(সি) (জি) /৪(১) ধারায় অপরাধ। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরদের অভিযোগ দায়েরে এ তথ্য জানা গেছে। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাত থেকে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদার দখলদার বাহিনী, সহযোগী বাহিনীসহ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের অধিনায়কের নিকট আত্মসমর্পণের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন। দখলদার পাকিস্তান হানাদার বাহিনী এবং এ দেশীয় দোসর পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কনভেনশন, কাউন্সিল ও কাইয়ুম) নেজামে ইসলাম, জামায়াতে ইসলাম, পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি), শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামসহ আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা ও তাদের অনুসারীরা পারস্পরিক যোগসাজশ ও চক্রান্তে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় বিদ্বেষপ্রসূত কারণে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, নারী নির্যাতন, গুম, উচ্ছেদ, বিতাড়ন ইত্যাদি অপরাধসমূহ সংঘটিত করে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার পূর্বে আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা ১৯৭০ সালে ঢাকা শহীদুল্লাহ হলের ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন। তিনি ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্যদের নিয়ে আলবদর বাহিনী গঠন করেন, যা প্রথমে জামায়াতে ইসলামের প্রাইভেট বাহিনী ছিল। 
মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৪ এপ্রিল ফজরের নামাজ পড়ে পাকবাহিনী হেলিকপ্টারযোগে তুরাগ নদীর পাড়ে আলুব্দী গ্রামের পশ্চিম পাশে অবতরণ করে। পূর্বদিকে হতে স্থানীয় আলবদর বাহিনীর নেতা আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর প্রায় ৫০ জন সদস্য ও কতিপয় অবাঙালী বিহারীদের সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় ও যোগসাজশে আলুব্দী গ্রাম ঘিরে ফেলে ও নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে বাসু মিয়া, জহিরুল হক ওরফে জোরা মোল্লা, জেরাত আলী, ফোয়াদ আলী, শুকুর মিয়া, আওয়াল মোল্লা, ছলে মোল্লা, রুস্তম আলী ব্যাপারী, করিম মোল্লা, জয়নাল মোল্লা, কাশেম মোল্লা, বদরউদ্দিন, বিষু মোল্লা, অজল হক, ফজল হক, রহমান ব্যাপারী, নবী মোল্লা, আলামত মিয়া, মোকলেচুর রহমান, ফুলচান, নওয়াব মিয়া, ইয়াছিন ভানু, লালুচান বেপারী, সুনু মিয়াসহ ৩৪৪ জনের অধিক লোককে হত্যা করা হয়।
এ ছাড়া আলবদর বাহিনীর নেতা আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা ও তার সহযোগী অবাঙালী বিহারীদের নিয়ে বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে জোরপূর্বক ধরে এনে মিরপুর-১২ নম্বর থেকে ১ নম্বর এবং ১নং শাহ আলী মাজার থেকে হাতে দড়ি বেঁধে টেনেহিঁচড়ে পুনরায় মিরপুর-১২ নম্বর সেকশনে ঈদগাহ মাঠে নিয়ে এসে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। পল্লবের দেহ দুদিন ঝুলিয়ে রেখে তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর সদস্য ও অবাঙালী বিহারী দ্বারা পল্লবের আঙ্গুলগুলো কেটে ফেলে এবং ৫ এপ্রিল তার নির্দেশে ও উপস্থিতিতে তার প্রধান সহযোগী আলবদর আক্তার গু-া পল্লবের বুকে পরপর ৫টি গুলি করে হত্যা করে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকার মিরপুর এলাকার স্থানীয় জনগণের কাছে আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা জল্লাদ বা কসাই নামে পরিচিত ছিলেন। স্বাধীনতার পর দেশের অন্যতম বৃহৎ গণকবর আবিষ্কৃত হয় মিপুরের শিয়ালবাড়ীতে। অভিযোগপত্রে জানা যায়, স্থানীয় অধিবকাসীরা শিয়ালবাড়ী ও রূপনগরসহ সমগ্র মিরপুর এলাকায় হাজার হাজার বাঙালী হত্যার প্রধান নায়ক ছিলেন আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার আগে বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন বিহারীদের যোগসাজশে কাদের মোল্লার নেতৃত্বে মিরপুরে বাঙালী হত্যা যজ্ঞ শুরু হয়। 
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, মিরপুর-১১ নম্বর বি ব্লক তালতলা নিবাসী মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লব স্থানীয় বাঙালী ও অবাঙালীদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ সব কারণে স্বাধীনতাবিরোধীদের হত্যা পরিকল্পনায় তার নাম যোগ হয়। ১৯৭১ সালের মার্চ স্বাধীনতারবিরোধীরা পল্লবের অবস্থান জানতে পেরে নবাবপুর থেকে তাকে জোরপূর্বক ধরে মিরপুরে কাদের মোল্লার কাছে নেয়া হয়। পরে কাদের মোল্লার নির্দেশে তার সহযোগীরা পল্লবকে মিরপুর-১২ নম্বর থেকে ১ নম্বর সেকশন শাহ আলী মাজার পর্যন্ত হাতে দড়ি বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। একইভাবে মিরপুর-১ নম্বর থেকে ১২ নম্বর সেকশনে ঈদগাহ মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে গাছে ঝুলিয়ে আঙ্গুল কেটে দুদিন পর গুলি করে হত্যা করা হয়। এর দুদিন পর পল্লবের লাশ মিরপুর-১২ নম্বর সেকশনে কালাপানি ঝিলের পাশে আরও ৭ জনের সঙ্গে মাটি চাপা দেয়। 
মিরপুরের কসাই এই কাদের মোল্লার পরিচয় অনেকেই জানেন না। আব্দুল কাদের মোল্লা ১৯৪৮ সালের ২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম সানাউল্লা মোল্লা, সাং আমিরাবাদ, থানা-সদরপুর, জেলা-ফরিদপুর। বর্তমান ঠিকানা ফ্ল্যাট-৮/এ গ্রীন ভ্যালী এ্যাপার্টমেন্ট, ৪৯৩ বড়মগবাজার। তিনি ১৯৬১ সালে আমিরাবাদ ফজলুল হক ইনিস্টিটিউশনে ৮ম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে সরকারী রাজেন্দ্র কলেজ হতে ডিগ্রী পাস করেন এবং ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালে সরকারী রাজেন্দ্র কলেজে বিএসসি প্রথম বর্ষে পড়াকালীন ছাত্র ইউনিয়ন ছেড়ে ইসলামী ছাত্র সংঘে যোগদান করেন। বিএসসি ২য় বর্ষের শেষের দিকে তিনি ইসলামী ছাত্র সংঘের কলেজ শাখার সভাপতির দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াকালীন তিনি শহীদুল্লাহ হলে থাকতেন এবং ১৯৭০ সালের অক্টোবরে তিনি শহিদুল্লাহ হলের ছাত্র সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারি ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘ ইসলামী ছাত্রশিবির নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি তখন ইসলামী ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য হন। 
আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা ১৯৭৭ সালের মে মাসে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দান করেন। যদিও জামায়াতে ইসলামী তখনও প্রকাশ্যে রাজনীতিতে আসেননি। ১৯৭৮ সালে তিনি রাইফেল পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়্ত্বি পালন করেন। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ফুয়াদ আব্দুল হামিদ আল খতিবের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও আর্থিক সহায়তায় দেশে মুসলমান ছেলেমেয়েদের আন্তর্জাতিক মানের একটি ইংলিশ স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে গুলশান ১ নম্বর মার্কেটের দক্ষিণ পাশে 'মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল' নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে মানারাত ইউনিভার্সিটি হিসেবে পরিচিত। সেখানে তিনি প্রায় ১ বছর কাজ করেন। ১৯৮০ সালে দৈনিক সংগ্রাম-এর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। তখন তিনি ঢাকা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদের সদস্য হতে সহকারী সেক্রেটারি জোনারেল পদে নিয়োজিত হন। পরবর্তীতে আবদুল কাদের মোল্লা জামায়াতের ইসলামীর প্রচার সম্পাদক পদে নিয়োজিত হন। তিনি ১৯৮৬ ও ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদের নির্বাচনে সদরপুর-চরভদ্রাসন আসন থেকে নির্বাচন করেন। কিন্তু উভয় নির্বাচনে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর অভিযোগ দাখিলের পাশাপাশি অন্যান্য আনুষঙ্গির কাগজপত্রও জমা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি ও ইতিহাস, সাক্ষীদের নামের তালিকা, ঘটনস্থলের স্থিরচিত্র ও খসড়া মানচিত্র, জব্দ তালিকা ও জব্দকৃত দলিলিক কাগজপত্র, বিধিমালার ১৮(৫) অনুযায়ী ভিডিও (ডিজিটাল ভার্সাইল ডিস্ক), বিদেশী টেলিভিশন চ্যানেল এনবিসি ও সিএসবি ও এবিসি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ সময়কালে সংবাদ হিসেবে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজের কপি, এটিএন এক্সক্লুসিভ ডিভিডি ও জাতীয় জাদুঘরের ভিডিও ডিভিডি প্রমুখ।



Related:

নিজামী, কাদের ও কামারুজ্জামানের শুনানি ৮, ৯ ও ১০ এপ্রিল


মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলানিজামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী শুনানি ৮ এপ্রিলhttp://www.dailykalerkantho.com/index.php?view=details&type=gold&data=Recipe&pub_no=839&cat_id=1&menu_id=0&news_type_id=3&news_id=242592
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-04-01/news/237081