রবিবার, ৩ মার্চ ২০১৩, ১৯ ফাল্গুন ১৪১৯ জামায়াতী মিথ্যাচারের সর্বত্র সঙ্গী বিএনপি বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নিজ অপর্কীতি ঢাকতে গোয়েবলসীয় অপপ্রচারে এবার জামায়াতের সঙ্গে সুর ধরেছে বিএনপি। জামায়াতের সঙ্গে অভিন্ন সুরে এবার পরিকল্পিত মিথ্যাচারে নেমেছে বিএনপি! দ্বিধা-দ্বন্দ্বে এতদিন চুপ করে থাকলেও সাংবাদিক সম্মেলনে জামায়াতের দেশব্যাপী তা-বে খালেদা জিয়ার সাফাই গাওয়ার পর গোয়েবলসীয় মিথ্যাচারের সঙ্গে এখন শামিল হয়েছেন বিএনপি নেতারাও। দল দুটির টার্গেট এক ও অভিন্ন। আর তা হলো- মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত, শাহবাগের নতুন প্রজন্মের মহাজাগরণ সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানো, মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষকে উস্কে দিয়ে দেশব্যাপী পরিকল্পিত সংঘাত-নৈরাজ্য সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা এবং যেনতেনভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করা। আর এই চার টার্গেট পূরণেই দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে জামায়াতের যুদ্ধে খালেদা জিয়া সমর্থন দিয়েছেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে ধরাশায়ী জামায়াতচক্র ফের অপপ্রচারের মাধ্যমে সাধারণের ধর্মীয় মূল্যবোধকে পুঁজি করে 'গৃহযুদ্ধ' বাঁধানোর প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েই গত কিছুদিন ধরে সারাদেশে হত্যা-সন্ত্রাস-তাণ্ডব চালিয়ে দেশের জনগণকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। জামায়াত-শিবির প্রকাশ্যে পিটিয়ে প্রায় ৮ পুলিশ, দুই সরকার সমর্থক নেতাকর্মীকে হত্যার ঘটনায় শুধু দেশেই নয়, সারাবিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোও এমন হত্যাযজ্ঞ ও তা-বে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এ অবস্থায় এতদিন জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে বড়ই বেকায়দায় ছিল বিএনপি। সারাদেশের মানুষ যখন জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে ফুঁসে উঠেছে, জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য বিএনপির ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করছে ঠিক তখন জনগণের পক্ষে না থেকে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেই খালেদা জিয়া প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন জামায়াতের পক্ষেই। শুধু তাই নয়, জামায়াতের অপপ্রচারের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গোয়েবলসীয় কায়দায় খালেদা জিয়ার অভিন্ন বক্তব্যে গোটা জাতিকেই বিস্মিত করেছে। জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা নির্মম ও নৃশংসভাবে ৮ পুলিশকে হত্যা করলেও সাবেক দু'বারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সহানুভূতি না দেখিয়ে উল্টো তাদের দোষারোপ করায় সর্বস্তরে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে তরুণ প্রজন্মের মহাজাগরণ নিয়ে জামায়াত এতদিন যে স্টাইলে অপপ্রচার চালাচ্ছে, সাংবাদিক সম্মেলনে খালেদা জিয়ারও টার্গেটে পরিণত হয়েছিল প্রজন্ম চত্বর। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে প্রজন্ম চত্বরের ডাকে দেশব্যাপী গড়ে ওঠা গণআন্দোলনকে 'ফ্যাসিবাদী আন্দোলন' বলতেও দ্বিধা করেননি বিরোধীদলীয় নেত্রী। শুধু তাই নয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে 'তথাকথিত' বলার পাশাপাশি একাত্তরের ৩০ লাখ মানুষের গণহত্যার সঙ্গে সম্প্রতি জামায়াত-শিবিরের তা-ব মোকাবেলায় দায়িত্বপালনকারী পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কিছু প্রাণহানীর ঘটনাকে 'একাত্তরের মতোই গণহত্যা' তুলনা করে জামায়াতের মতোই খালেদা জিয়া মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার চেতনা এবং লাখো শহীদকে অপমানিত করতেও দ্বিধা করেননি। স্বাধীনতাবিরোধী এবং একাত্তরের গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাসে বিশ্বের ইতিহাস ভঙ্গকারী পাক হানাদারবাহিনীর ভয়াল গণহত্যার সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের তা-ব-সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতদের তুলনা করায় খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করেছেন দেশের সব শ্রেণীর পেশার মানুষ। তাঁরা বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী যে স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, এ কথা বলে তিনি আবারও তা প্রমাণ করেছেন। দু'বারের প্রধানমন্ত্রী আর তিনবারের বিরোধীদলীয় নেত্রীর খালেদা জিয়ার মুখে গোয়েবলসীয় কায়দার মিথ্যাচার, একাত্তরের গণহত্যাকারীদের পক্ষে সাফাই গাওয়া সত্যিই জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকেই বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে তিনি (খালেদা জিয়া) ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানীদের মেহমানদারীতে ছিলেন বলেই পাক হানাদার বাহিনী ও তাঁর দোসর যুদ্ধাপরাধীদের ভয়াল গণহত্যা দেখতে পাননি। মাত্র ৯ মাসে মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে গণহত্যা আর দু'লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে নজীর নেই। সেই ভয়াল গণহত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের তা-ব মোকাবেলায় কিছু বিচ্ছিন্ন প্রাণহানির ঘটনার সঙ্গে তুলনা করে খালেদা জিয়া ক্ষমার অযোগ্য কাজ করেছেন। এ প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, খালেদা জিয়া একাত্তরের গণহত্যাকারীদের রক্ষা ও তাদের বিচার বানচালের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেশজুড়ে জামায়াত-শিবিরের তা-বকে গণহত্যা বলে চালানোর অপচেষ্টা করেছেন। আসলে গণহত্যার সংজ্ঞাই তাঁর জানা নেই। কেননা তিনি (খালেদা জিয়া) একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ছিলেন। সুতরাং তাঁর এ বক্তব্যে সম্পূর্ণ ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং চরম ষড়যন্ত্রমূলক। আসলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল তাঁর উদ্দেশ্য নয়, তাঁর মূল লক্ষ্যই হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে এতদিন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে গোয়েবলসীয় কায়দায় দেশব্যাপী সুকৌশলে অপপ্রচারে লিপ্ত ছিল জামায়াত-শিবির চক্র। এখন তাদের সঙ্গে শামিল হয়েছে বিএনপিও। যাত্রী-কাস্টমার-সাধারণ মানুষ ইত্যাদি নানা বেশ ধারণ করে জামায়াত-বিএনপির নিয়োগকৃত নেতাকর্মীদের তাদের শিখিয়ে দেয়া অপপ্রচার সারাদেশের গ্রাম-গঞ্জ, হাটবাজার, অফিস-আদালত, বাস-লঞ্চ-রেলসহ নানা যানবাহনে চালিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার মিশনে নেমেছে। সূত্র জানায়, জামায়াত-বিএনপির নিয়োগকৃত সাধারণ মানুষের ছদ্মবেশ নেয়া নেতাকর্মী-সমর্থকদের দিয়ে গোয়েবলসীয় কায়দায় এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করতে অপপ্রচারগুলোর শীর্ষে রয়েছে- 'শাহবাগে নতুন প্রজন্ম নয়, সরকারের অর্থে কিছু তরুণ সেখানে অবস্থান নিয়েছে, শাহবাগে আন্দোলনের নামে বেহাল্লাপনা চলছে, তরুণ প্রজন্মকে দিয়ে সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে দেশের মানুষকে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নেমেছে, শাহবাগে আন্দোলনরত তরুণ প্রজন্মরা সবাই নাস্তিক, ইসলাম বিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে সরকার বিরোধী দল এবং আলেম-ওলামাদের দমন করছে ইত্যাদি।' এসব নানা গল্প ফাঁদিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার মিশনে জামায়াত-বিএনপির অর্থায়নে অনেকে কাজ করছে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও স্বীকার করেছে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন উর্ধতন কর্মকর্তা এও জানান, বিভিন্ন যানবাহনে যাত্রীবেশে প্রজন্ম চত্বর, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ধর্মীয় উন্মাদনা উস্কের মতো অপপ্রচারে লিপ্ত বেশ ক'জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে, আবার অপপ্রচারে লিপ্ত বেশ ক'জনকে গণধোলাইও দিয়েছে তরুণ প্রজন্মরা। গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদকালে স্বীকার করেছে, আসলে তারা জামায়াত সমর্থক এবং হাইকমান্ডের শিখিয়ে দেয়া গল্প বলে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করার কাজে লিপ্ত ছিল। তাঁদের মতে, তাদের শিখিয়ে দেয়া এই মিথ্যাচার রূপকথার কাহিনীকেও হার মানায়। সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে গোয়েবলসীয় কায়দায় অস্তিত্বহীন অনেক বিষয় ডালপালা ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করা হচ্ছে অনর্থক সংশয়। নাম-গন্ধহীন অনেক বিষয় অভিযোগ আকারে তুলে জামায়াত-বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে শুরু করেছে গোয়েবলসীয় অপপ্রচার। সরকারী দলের অভিযোগ, আন্দোলনের মাঠে জনসমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয়ে এবং জনগণের সামনে তুলে ধরার মতো নিজেদের কোন কর্মকা- না থাকায় বিএনপি-জামায়াত জোট বেছে নিয়েছে ভয়াল তাণ্ডব, নৈরাজ্য আর 'মিথ্যার বেসাতির' এই পথ। ধর্ম রক্ষার সেøাগানে আত্মরক্ষার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর বিএনপি-জামায়াতের এই নতুন ষড়যন্ত্র উল্টো তাদেরই অস্তিত্বের সঙ্কটের মুখে ঠেলে দেবে। |
__._,_.___