বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০১৩, ১৪ চৈত্র ১৪১৯
জামায়াতে ইসলামের উত্থান কাহিনী
রণেশ মৈত্র
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষে কয়েকটি রায় ঘোষণার সাথে সাথে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির দেশজুড়ে যে তা-ব ও হত্যালীলা, ভাংচুর শুরু করেছে সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদেরকে বাঁচানো ও ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দেয়ার দাবিতেÑ তাতে মনেই হয় না জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাঙালী জাতির হাতে পরাজিত একটি শক্তি। তারা এতদিন ঘাপটি মেরে থেকেছে, দেশ বিদেশে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিয়েছে, অস্ত্র সংগ্রহ করেছে, সমাজের নানা অঙ্গনে অনুপ্রবেশ করেছে এবং জানা-অজানা বহু উৎস থেকে প্রকাশ্যে সেখানে বিপুল পরিমাণে অর্থ সংগ্রহ করেছেÑ বহু অর্থকরী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে এই দীর্ঘ ৪২ বছরে। আজ তারা প্রশাসনে, রাজনৈতিক দল ও সংগঠনে অনুপ্রবেশ করে রীতিমতো প্রভাব বিস্তারেও সক্ষম হচ্ছে সমাজে ও রাষ্ট্রে। জামায়াত-শিবির বাংলাদেশের মাটিতে বিন্দুমাত্র ঠাঁই করে নিতে পারবেÑতারা কদাপি প্রকাশ্যে দল গঠন বা রাজনীতি করতে পারবে, নির্বাচনে দাঁড়াতে সাহস পাবে, এখানে চাকরিবাকরি পাবে, সংবিধানে বৈধতা পাবে, নির্বাচনে আবার দাঁড়ানো বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয় শুধুÑতাতে অপরাপর প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মারফত পরাজিত করে আমাদের পবিত্র সংসদ ভবনে প্রবেশ করবে সেখানে সম্মানিত ও মর্যাদাকর আসনে বসার সুযোগ পাবেÑএমনটাও ছিল কল্পনার অতীত।
কিন্তু তারা উপরে বর্ণিত সবই করল এবং তাই না শুধু, তারা নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে দেশের অন্যতম কা-ারীও হতে পারল। যাঁরাই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন যারাই মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেছেন এবং যারাই ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন দান করেছেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, যাদের পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধকালে তাদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, ধর্ষিত হয়েছেন সেই লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষগুলো ঐ চরম লগ্নে যে অসাধারণ দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন আজ তেমন কোটি কোটি পরিবার জামায়াতের এমন বিচরণ দেখে স্তম্ভিত, বিস্মিত, ক্ষুব্ধই নন, তারা প্রচ-ভাবে লজ্জিতও বোধ করছেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আদর্শে প্রাণিত কোটি কোটি বাঙালী আজ চরমভাবে অপমানিত বোধ করছেন। নানাবিধ প্রশ্নও আজ জন্ম দিচ্ছে তাদের মনে। এর কারণ কি জিয়াউর রহমান? তিনি তো বহু আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে কি তাঁর পতœী বেগম খালেদা জিয়া? কয়েক দফা প্রধানমন্ত্রী হলেও দশ বছর তো বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেন এবং এখনও করছেন। অন্তত মৌলিকভাবে হলেও তিনি তো জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে প্রতিদিনই বক্তব্য রাখছেন দেশজুড়ে। তিনি তো জামায়াত নেতাদেরকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তাদের বিচারেরও ব্যবস্থা করেছেন। তবুও তো জামায়াত থামছে না। তারা বড্ড বেশি বেপরোয়া। এতটা সাহস ও হিম্মত তারা কোথা থেকে পেল? এটা কি আকস্মিক? না কি আরও কিছু কারণ আছে যা বিশ্লেষণের দাবি রাখে? এর অনুসন্ধান করতে হলে আমাদের চলে যেতে হবে অতীত ইতিহাসের দিকে। ভারতবর্ষের ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিকে।
কারণ সাম্প্রদায়িকতা, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রভৃতি যা কিছু আমাদের রাজনীতি ও সমাজদেহে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছেÑতাকে কলুষিত করেছেÑতার উদ্ভব ও প্রয়োগ ঐ সময় থেকেই। যখন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তরকালে তারা বুঝল যে, তাদের ঔপনিবেশিক শাসন শোষণ আর বজায় রাখা যাবে না, ভারতবর্ষে তখন তারা তাদের ফরারফব ধহফ ৎরফব ভাগ কর আর শাসন কর এমন নীতিকে আঁকড়ে ধরে হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেয় মূলত মুসলিম লীগের মাধ্যমে। তাদের লক্ষ্য ছিল এই অস্ত্র সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারলে তারা ব্রিটিশ শাসন অধিকতরকাল বজায় রাখতে পারবে এবং যেতে যখন হবেই তখন ঐ নীতির পরিণতিতে ভারতবর্ষকে মুসলিম লীগের দাবি অনুযায়ী দ্বিখ-িত করে দুটি পৃথক রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে উভয় দেশের ওপর ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ মিলবে। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী মহাযুদ্ধের সমাপ্তির সাথে সাথে উপনিবেশবাদবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন সর্বত্র তীব্র গতিবেগ অর্জন করে এবং তা এক অদম্য শক্তিতে পরিণত হয়। তখন ইংরেজদের কৌশল দাঁড়ায় ঐ স্বাধীনতা আন্দোলনকে সরাসরি মোকাবিলা করার চেষ্টার বদলে ঐ আন্দোলনকে বিপথে পরিচালনা করে তাকে ভ-ুল বা দুর্বল করে দেয়া, যাতে তাদের শাসন-শোষণ কিছুটা হলেও দীর্ঘায়িত করা যায়। আবার যেখানে তাও সম্ভব হবে নাÑসে সব উপনিবেশে যাতে স্বাধীনতার পর পুতুল সরকার গঠন করিয়ে নতুন ঐ সরকারগুলোর মাধ্যমে দেশটির/দেশগুলোর ওপর তাদের প্রভাব সমুন্নত রাখা যায়Ñনয়া ঔপনিবেশিক শোষণ অব্যাহত রাখা যায়। ভারতবর্ষ নামক যে বিশাল এবং বিপুল সম্পদে ভরা দেশটিকে তারা উপনিবেশে পরিণত করতে পেরেছিল এবং দাপটের সঙ্গেই সেখানে প্রায় পৌনে দু'শ' বছরব্যাপী শাসন-শোষণ চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলÑ সেখানকার স্বাধীনতা আন্দোলনকে দমনের কৌশল হিসেবে তারা বেছে নিল হিন্দু ও মুসলিম নামক দুটি প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতায় বীজ বপন করে, উগ্র সাম্প্রদায়িক বিরোধ সৃষ্টি করে, দাঙ্গা ফ্যাসাদ বাধিয়ে রেখে শাসন চালানো এবং অতঃপর যদি তা তেমন একটা দীর্ঘায়িত করা সম্ভব না হয়, তবে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দুটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করে (ভারতবর্ষকে ভেঙ্গে) এবং যতটা সম্ভব নবসৃষ্ট দুটি স্বাধীন দেশের মধ্যে বিরোধ জিইয়ে রেখে তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। দ্বিখ-িত ভারতবর্ষ তাতে অধিকতর দুর্বল হবেÑফলে উভয়েই তাদের উন্নয়নের জন্য পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে বাধ্য হবে এবং তার ফলে তারাও পুতুল সরকার গঠন করে সাধ্যমতো শোষণ অব্যাহত রাখবে আরও কিছুকাল। সম্ভবত সে লক্ষ্য থেকেই তারা পরে সাবেক ব্রিটিশ কলোনিভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে তাদের নেতৃত্বে ব্রিটিশ কমনওয়েলথও গঠন করে যার অস্তিত্ব আছে, তবে তা ইতিহাসের অমোঘ নিয়মেই এবং শক্তিশালী আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের বিপুল প্রভাব বিশ্বব্যাপী বিস্তারলাভ করার ফলে কমনওয়েলথ এখন কার্যত একটি নামমাত্র অস্তিত্ব বজায় রাখছে প্রকৃত প্রস্তাবে একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানেও পরিণত হয়েছে।
সাম্প্রদায়িকতার বিষধর দাওয়াই ভারতবর্ষের রাজনীতিতে ঠিকই কাজে লেগেছিল নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অবিসংবাদিত নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ এবং আরও কতিপয় মুসলিম লীগ নেতাকে দিয়ে। যারা আগেই মুসলিমদের জন্য পৃথক আবাসভূমি বা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতবর্ষকে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ করার দাবি উত্থাপন করিয়েছে। সর্বভারতীয় কংগ্রেস তখন ছিল ভারতবর্ষের বৃহত্তম এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল। ঐ দলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কিছু সাম্প্রদায়িক হিন্দু নেতাকেও ঐ বিভক্তির সপক্ষে নিয়ে যেতে গোপনে ইংরেজরা সক্ষম হয়। কিন্তু কংগ্রেসের অবিসাংবাদিত এবং সর্বাধিক জনপ্রিয় নেতা মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধী, প-িত জওহর লাল নেহেরু এবং আরও অনেকেই সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী ছিলেন মনেপ্রাণে। তাই তারা অনমনীয়ভাবে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। অবস্থা বেগতিক দেখে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ তখন তাদের শেষ অস্ত্র ছুড়লোÑবাধাল ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশে উন্মুক্ত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং তার মাধ্যমে অগণিত নির্দোষ নিরপরাধ হিন্দু-মুসলিম এবং নারী নিহত হলেন। দাউ দাউ করে জ্বালানো আগুনে হাজার হাজার গ্রাম ও শহর, বাড়িঘর, শিশু-নারী, গৃহপালিত জীবজন্তু অজস্র সম্পদ পুড়ে ছাই হয়ে গেল, অগণিত হিন্দু-মুসলিম নারী হারাতে বাধ্য হলেন তাঁদের সম্ভ্রম। একবার নয়, বারংবার এমন ঘটনা ঘটানো হতে থাকল। মানুষের জীবনের নিরাপত্তাবোধ বিদূরিত হলো। সভ্যতা বিদায় নিল আর তার স্থান দখল করে নিল হিংস্র, বর্বরতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। ইংরেজরা তাদের তুরুপের তাস হিসেবে ক্রমাগতভাবে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে অত্যন্ত কুশলতার সাথে ব্যবহার করল। গান্ধীজীকে দেশভাগে সম্মতি আদায়ে তাঁর নিজ দল কংগ্রেসেরই সাম্প্রদায়িক নেতাদের ব্যবহার করল। বারংবার অসম্মতি জানালেও দাঙ্গা যখন কিছুতেই থামে না তখন 'তবু মানুষ বাঁচুক' এমন একটা মনোভাব থেকে ভারত বিভক্তিতে সম্মতি দিলেন এবং অবশেষে ১৪ আগস্ট, ১৯৪৭ আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তান নামে একটি সাম্প্রদায়িক মুসলিম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটল।
কিন্তু এর পরিণতি দাঁড়াল ভয়াবহ। দাঙ্গা তদাপি থামেনিÑ তবে কখনও কখনও তা কমেছে মাত্র। কিন্তু তার চাইতেও বড় কথা, সাম্প্রদায়িকতা গভীরভাবে দানা বাঁধল বহু হিন্দু-মুসলিম শিক্ষিত মানুষের মধ্যে। সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষ তো দাঙ্গা বা সাম্প্রদায়িকতার ধারেকাছে ছিলেন না, কিন্তু তাঁদের একটি ক্ষুদ্র অংশকে তাঁদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে, দাঙ্গার সংগঠকরা ব্যবহার করে কাজে লাগিয়েছে, নিজেরা থেকেছে আড়ালে।
যা হোক, এহেন পরিস্থিতির সুযোগে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশ হতে সংখ্যালঘু বিতাড়ন পর্ব চলল ভয়াবহভাবে। পাকিস্তানের উভয় অঞ্চল থেকে হিন্দু-বিতাড়ন এবং ভারত থেকে মুসলিম খেদানো। এসবই উভয় সম্প্রদায়ের অংশের কীর্তি। প্রতিক্রিয়া হিসেবে উভয় দেশের সাম্প্রদায়িকতা আরও বেশি বেশি করে দানা বাঁধল। উভয় দেশের সরকার নিজ নিজ দেশের সরকারী চাকুরেদের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্তদেরকে ড়ঢ়ঃরড়হ দিলেন তাঁরা ইচ্ছে করলে হিন্দুরা ভারতে এবং মুসলিমরা পাকিস্তানে চলে যেতে পারবেন সরকারী চাকরি অব্যাহত থাকবে। কবি সাহিত্যিক সাংবাদিকদের এক অংশ যেমন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তাঁদের লেখনী তীক্ষè করে তুললেন অপর অংশ তেমনি সাহিত্য এবং ইতিহাসকেও বিকৃত করতে শুরু করলেন। যার পরিণতিতে নজরুলের কবিতার যেখানে যেখানে 'ভগবান' 'ভগবান' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছিলÑসেখানে তা বদলে রহমান রহমান করা হলো নেহায়ত হাস্যকরভাবে। কিন্তু পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই আরবী হরফে বাংলা প্রবর্তন বা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু প্রভৃতি ঘোষণা করতে শুরু করলÑপূর্ব বাংলার মানুষের পাকিস্তানের প্রতি মোহ তখন থেকেই কেটে যেতে শুরু করলÑবিশেষ করে পূর্ব বাংলার যুব সম্প্রদায় তীব্র প্রতিবাদে এবং পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতির দাবি ১৯৪৮-এর শুরু থেকেই আন্দোলন শুরু করেন। বস্তুত এ আন্দোলন দ্রুত এতটাই বিস্তার লাভ করতে থাকল এবং এমনই জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকল যে, তার সাথে সাথে মানুষ কখনও সচেতনভাবে কখনও বা অবচেতনে পাকিস্তানের মৌলিক আদর্শ দ্বিজাতিতত্ত্বেরও বিরোধী হয়ে উঠলÑকারণ শাসকগোষ্ঠী এ কথা বলতে শুরু করেছিল যে বাংলা মুসলমানের ভাষা নয়, এটা হিন্দুদের ভাষা। ভাষা আন্দোলন তখন আরও বেশি বেশি করে ব্যাপ্তি লাভ করে এবং সরাসরি সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী রূপ নিতে থাকে। ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী চেতনা মুসলিম মানসে ক্রমান্বয়ে স্থান করে নিতে থাকে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ঢাকায় রাজপথে রক্তঝরার পর তা ছড়িয়ে পড়ে পূর্ববাংলার গ্রামে-গঞ্জে নগরে-বন্দরে সর্বত্র। একই সাথে ছড়াতে থাকে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী চেতনাও। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের চেতনার বীজ তখন থেকেই বিকশিত হতে শুরু করেÑযদিও তা গণদাবিতে পরিণত হতে আরও বহু আন্দোলন, বহু রক্তক্ষয়, বহু আত্মদানের প্রয়োজন হয়েছিল। দেখা গেল ১৯৪৮ এই 'পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ' নামে বামপন্থীদের উদ্যোগ এদেশে প্রথম একটি অসাম্প্রদায়িক যুব সংগঠন গড়ে উঠল, ১৯৪৯-এ জন্ম হলো পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (নামের সাথে 'মুসলিম' শব্দটি থাকলেও দলের নীতি ছিল অসাম্প্রদায়িক), ১৯৫২ সালের মাঝামাঝি এসে গঠিত হলো বামপন্থী, প্রগতিশীল, সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ-বিরোধী, ছাত্র সংগঠন 'পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন' প্রভৃতি। এগুলো সবই ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনেরই ফলশ্রুতি। (চলবে)
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2013-03-29&ni=130321কিন্তু তারা উপরে বর্ণিত সবই করল এবং তাই না শুধু, তারা নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে দেশের অন্যতম কা-ারীও হতে পারল। যাঁরাই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন যারাই মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেছেন এবং যারাই ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন দান করেছেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, যাদের পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধকালে তাদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, ধর্ষিত হয়েছেন সেই লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষগুলো ঐ চরম লগ্নে যে অসাধারণ দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন আজ তেমন কোটি কোটি পরিবার জামায়াতের এমন বিচরণ দেখে স্তম্ভিত, বিস্মিত, ক্ষুব্ধই নন, তারা প্রচ-ভাবে লজ্জিতও বোধ করছেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আদর্শে প্রাণিত কোটি কোটি বাঙালী আজ চরমভাবে অপমানিত বোধ করছেন। নানাবিধ প্রশ্নও আজ জন্ম দিচ্ছে তাদের মনে। এর কারণ কি জিয়াউর রহমান? তিনি তো বহু আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে কি তাঁর পতœী বেগম খালেদা জিয়া? কয়েক দফা প্রধানমন্ত্রী হলেও দশ বছর তো বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেন এবং এখনও করছেন। অন্তত মৌলিকভাবে হলেও তিনি তো জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে প্রতিদিনই বক্তব্য রাখছেন দেশজুড়ে। তিনি তো জামায়াত নেতাদেরকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তাদের বিচারেরও ব্যবস্থা করেছেন। তবুও তো জামায়াত থামছে না। তারা বড্ড বেশি বেপরোয়া। এতটা সাহস ও হিম্মত তারা কোথা থেকে পেল? এটা কি আকস্মিক? না কি আরও কিছু কারণ আছে যা বিশ্লেষণের দাবি রাখে? এর অনুসন্ধান করতে হলে আমাদের চলে যেতে হবে অতীত ইতিহাসের দিকে। ভারতবর্ষের ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিকে।
কারণ সাম্প্রদায়িকতা, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রভৃতি যা কিছু আমাদের রাজনীতি ও সমাজদেহে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছেÑতাকে কলুষিত করেছেÑতার উদ্ভব ও প্রয়োগ ঐ সময় থেকেই। যখন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তরকালে তারা বুঝল যে, তাদের ঔপনিবেশিক শাসন শোষণ আর বজায় রাখা যাবে না, ভারতবর্ষে তখন তারা তাদের ফরারফব ধহফ ৎরফব ভাগ কর আর শাসন কর এমন নীতিকে আঁকড়ে ধরে হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেয় মূলত মুসলিম লীগের মাধ্যমে। তাদের লক্ষ্য ছিল এই অস্ত্র সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারলে তারা ব্রিটিশ শাসন অধিকতরকাল বজায় রাখতে পারবে এবং যেতে যখন হবেই তখন ঐ নীতির পরিণতিতে ভারতবর্ষকে মুসলিম লীগের দাবি অনুযায়ী দ্বিখ-িত করে দুটি পৃথক রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে উভয় দেশের ওপর ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ মিলবে। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী মহাযুদ্ধের সমাপ্তির সাথে সাথে উপনিবেশবাদবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন সর্বত্র তীব্র গতিবেগ অর্জন করে এবং তা এক অদম্য শক্তিতে পরিণত হয়। তখন ইংরেজদের কৌশল দাঁড়ায় ঐ স্বাধীনতা আন্দোলনকে সরাসরি মোকাবিলা করার চেষ্টার বদলে ঐ আন্দোলনকে বিপথে পরিচালনা করে তাকে ভ-ুল বা দুর্বল করে দেয়া, যাতে তাদের শাসন-শোষণ কিছুটা হলেও দীর্ঘায়িত করা যায়। আবার যেখানে তাও সম্ভব হবে নাÑসে সব উপনিবেশে যাতে স্বাধীনতার পর পুতুল সরকার গঠন করিয়ে নতুন ঐ সরকারগুলোর মাধ্যমে দেশটির/দেশগুলোর ওপর তাদের প্রভাব সমুন্নত রাখা যায়Ñনয়া ঔপনিবেশিক শোষণ অব্যাহত রাখা যায়। ভারতবর্ষ নামক যে বিশাল এবং বিপুল সম্পদে ভরা দেশটিকে তারা উপনিবেশে পরিণত করতে পেরেছিল এবং দাপটের সঙ্গেই সেখানে প্রায় পৌনে দু'শ' বছরব্যাপী শাসন-শোষণ চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলÑ সেখানকার স্বাধীনতা আন্দোলনকে দমনের কৌশল হিসেবে তারা বেছে নিল হিন্দু ও মুসলিম নামক দুটি প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতায় বীজ বপন করে, উগ্র সাম্প্রদায়িক বিরোধ সৃষ্টি করে, দাঙ্গা ফ্যাসাদ বাধিয়ে রেখে শাসন চালানো এবং অতঃপর যদি তা তেমন একটা দীর্ঘায়িত করা সম্ভব না হয়, তবে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দুটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করে (ভারতবর্ষকে ভেঙ্গে) এবং যতটা সম্ভব নবসৃষ্ট দুটি স্বাধীন দেশের মধ্যে বিরোধ জিইয়ে রেখে তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। দ্বিখ-িত ভারতবর্ষ তাতে অধিকতর দুর্বল হবেÑফলে উভয়েই তাদের উন্নয়নের জন্য পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে বাধ্য হবে এবং তার ফলে তারাও পুতুল সরকার গঠন করে সাধ্যমতো শোষণ অব্যাহত রাখবে আরও কিছুকাল। সম্ভবত সে লক্ষ্য থেকেই তারা পরে সাবেক ব্রিটিশ কলোনিভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে তাদের নেতৃত্বে ব্রিটিশ কমনওয়েলথও গঠন করে যার অস্তিত্ব আছে, তবে তা ইতিহাসের অমোঘ নিয়মেই এবং শক্তিশালী আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের বিপুল প্রভাব বিশ্বব্যাপী বিস্তারলাভ করার ফলে কমনওয়েলথ এখন কার্যত একটি নামমাত্র অস্তিত্ব বজায় রাখছে প্রকৃত প্রস্তাবে একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানেও পরিণত হয়েছে।
সাম্প্রদায়িকতার বিষধর দাওয়াই ভারতবর্ষের রাজনীতিতে ঠিকই কাজে লেগেছিল নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অবিসংবাদিত নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ এবং আরও কতিপয় মুসলিম লীগ নেতাকে দিয়ে। যারা আগেই মুসলিমদের জন্য পৃথক আবাসভূমি বা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতবর্ষকে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ করার দাবি উত্থাপন করিয়েছে। সর্বভারতীয় কংগ্রেস তখন ছিল ভারতবর্ষের বৃহত্তম এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল। ঐ দলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কিছু সাম্প্রদায়িক হিন্দু নেতাকেও ঐ বিভক্তির সপক্ষে নিয়ে যেতে গোপনে ইংরেজরা সক্ষম হয়। কিন্তু কংগ্রেসের অবিসাংবাদিত এবং সর্বাধিক জনপ্রিয় নেতা মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধী, প-িত জওহর লাল নেহেরু এবং আরও অনেকেই সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী ছিলেন মনেপ্রাণে। তাই তারা অনমনীয়ভাবে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। অবস্থা বেগতিক দেখে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ তখন তাদের শেষ অস্ত্র ছুড়লোÑবাধাল ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশে উন্মুক্ত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং তার মাধ্যমে অগণিত নির্দোষ নিরপরাধ হিন্দু-মুসলিম এবং নারী নিহত হলেন। দাউ দাউ করে জ্বালানো আগুনে হাজার হাজার গ্রাম ও শহর, বাড়িঘর, শিশু-নারী, গৃহপালিত জীবজন্তু অজস্র সম্পদ পুড়ে ছাই হয়ে গেল, অগণিত হিন্দু-মুসলিম নারী হারাতে বাধ্য হলেন তাঁদের সম্ভ্রম। একবার নয়, বারংবার এমন ঘটনা ঘটানো হতে থাকল। মানুষের জীবনের নিরাপত্তাবোধ বিদূরিত হলো। সভ্যতা বিদায় নিল আর তার স্থান দখল করে নিল হিংস্র, বর্বরতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। ইংরেজরা তাদের তুরুপের তাস হিসেবে ক্রমাগতভাবে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে অত্যন্ত কুশলতার সাথে ব্যবহার করল। গান্ধীজীকে দেশভাগে সম্মতি আদায়ে তাঁর নিজ দল কংগ্রেসেরই সাম্প্রদায়িক নেতাদের ব্যবহার করল। বারংবার অসম্মতি জানালেও দাঙ্গা যখন কিছুতেই থামে না তখন 'তবু মানুষ বাঁচুক' এমন একটা মনোভাব থেকে ভারত বিভক্তিতে সম্মতি দিলেন এবং অবশেষে ১৪ আগস্ট, ১৯৪৭ আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তান নামে একটি সাম্প্রদায়িক মুসলিম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটল।
কিন্তু এর পরিণতি দাঁড়াল ভয়াবহ। দাঙ্গা তদাপি থামেনিÑ তবে কখনও কখনও তা কমেছে মাত্র। কিন্তু তার চাইতেও বড় কথা, সাম্প্রদায়িকতা গভীরভাবে দানা বাঁধল বহু হিন্দু-মুসলিম শিক্ষিত মানুষের মধ্যে। সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষ তো দাঙ্গা বা সাম্প্রদায়িকতার ধারেকাছে ছিলেন না, কিন্তু তাঁদের একটি ক্ষুদ্র অংশকে তাঁদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে, দাঙ্গার সংগঠকরা ব্যবহার করে কাজে লাগিয়েছে, নিজেরা থেকেছে আড়ালে।
যা হোক, এহেন পরিস্থিতির সুযোগে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশ হতে সংখ্যালঘু বিতাড়ন পর্ব চলল ভয়াবহভাবে। পাকিস্তানের উভয় অঞ্চল থেকে হিন্দু-বিতাড়ন এবং ভারত থেকে মুসলিম খেদানো। এসবই উভয় সম্প্রদায়ের অংশের কীর্তি। প্রতিক্রিয়া হিসেবে উভয় দেশের সাম্প্রদায়িকতা আরও বেশি বেশি করে দানা বাঁধল। উভয় দেশের সরকার নিজ নিজ দেশের সরকারী চাকুরেদের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্তদেরকে ড়ঢ়ঃরড়হ দিলেন তাঁরা ইচ্ছে করলে হিন্দুরা ভারতে এবং মুসলিমরা পাকিস্তানে চলে যেতে পারবেন সরকারী চাকরি অব্যাহত থাকবে। কবি সাহিত্যিক সাংবাদিকদের এক অংশ যেমন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তাঁদের লেখনী তীক্ষè করে তুললেন অপর অংশ তেমনি সাহিত্য এবং ইতিহাসকেও বিকৃত করতে শুরু করলেন। যার পরিণতিতে নজরুলের কবিতার যেখানে যেখানে 'ভগবান' 'ভগবান' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছিলÑসেখানে তা বদলে রহমান রহমান করা হলো নেহায়ত হাস্যকরভাবে। কিন্তু পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই আরবী হরফে বাংলা প্রবর্তন বা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু প্রভৃতি ঘোষণা করতে শুরু করলÑপূর্ব বাংলার মানুষের পাকিস্তানের প্রতি মোহ তখন থেকেই কেটে যেতে শুরু করলÑবিশেষ করে পূর্ব বাংলার যুব সম্প্রদায় তীব্র প্রতিবাদে এবং পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতির দাবি ১৯৪৮-এর শুরু থেকেই আন্দোলন শুরু করেন। বস্তুত এ আন্দোলন দ্রুত এতটাই বিস্তার লাভ করতে থাকল এবং এমনই জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকল যে, তার সাথে সাথে মানুষ কখনও সচেতনভাবে কখনও বা অবচেতনে পাকিস্তানের মৌলিক আদর্শ দ্বিজাতিতত্ত্বেরও বিরোধী হয়ে উঠলÑকারণ শাসকগোষ্ঠী এ কথা বলতে শুরু করেছিল যে বাংলা মুসলমানের ভাষা নয়, এটা হিন্দুদের ভাষা। ভাষা আন্দোলন তখন আরও বেশি বেশি করে ব্যাপ্তি লাভ করে এবং সরাসরি সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী রূপ নিতে থাকে। ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী চেতনা মুসলিম মানসে ক্রমান্বয়ে স্থান করে নিতে থাকে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ঢাকায় রাজপথে রক্তঝরার পর তা ছড়িয়ে পড়ে পূর্ববাংলার গ্রামে-গঞ্জে নগরে-বন্দরে সর্বত্র। একই সাথে ছড়াতে থাকে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী চেতনাও। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের চেতনার বীজ তখন থেকেই বিকশিত হতে শুরু করেÑযদিও তা গণদাবিতে পরিণত হতে আরও বহু আন্দোলন, বহু রক্তক্ষয়, বহু আত্মদানের প্রয়োজন হয়েছিল। দেখা গেল ১৯৪৮ এই 'পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ' নামে বামপন্থীদের উদ্যোগ এদেশে প্রথম একটি অসাম্প্রদায়িক যুব সংগঠন গড়ে উঠল, ১৯৪৯-এ জন্ম হলো পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (নামের সাথে 'মুসলিম' শব্দটি থাকলেও দলের নীতি ছিল অসাম্প্রদায়িক), ১৯৫২ সালের মাঝামাঝি এসে গঠিত হলো বামপন্থী, প্রগতিশীল, সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ-বিরোধী, ছাত্র সংগঠন 'পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন' প্রভৃতি। এগুলো সবই ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনেরই ফলশ্রুতি। (চলবে)
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০১৩, ১৪ চৈত্র ১৪১৯
জামায়াতে ইসলামের উত্থান কাহিনী -১
রণেশ মৈত্র
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষে কয়েকটি রায় ঘোষণার সাথে সাথে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির দেশজুড়ে যে তা-ব ও হত্যালীলা, ভাংচুর শুরু করেছে সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদেরকে বাঁচানো ও ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দেয়ার দাবিতেÑ তাতে মনেই হয় না জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাঙালী জাতির হাতে পরাজিত একটি শক্তি। তারা এতদিন ঘাপটি মেরে থেকেছে, দেশ বিদেশে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিয়েছে, অস্ত্র সংগ্রহ করেছে, সমাজের নানা অঙ্গনে অনুপ্রবেশ করেছে এবং জানা-অজানা বহু উৎস থেকে প্রকাশ্যে সেখানে . . .
জামায়াতে ইসলামীর উত্থান কাহিনী -৩
রণেশ মৈত্র
( শেষাংশ) (৪) মাওবাদী নকশালপন্থীরাও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। ১৬ ডিসেম্বরে পাক বাহিনীর পরাজয়ের ফলে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তারাও আত্মগোপনে যায়। এই জামায়াত এদেরকেও গোপনে আশ্রয় দেয়। এদের হাতেও বিস্তর অস্ত্র থেকে যায় এবং তা মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের মত মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হয়। (৫) লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে ভারতের আপত্তিকে আমলে না নিয়ে বঙ্গবন্ধু তাদের আমন্ত্রণে লাহোর যান। ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে একটি বিরোধী অংশ তখনও স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। . . .
__._,_.___