হরতাল পালন করুন, নইলে বিবি তালাক হয়ে যাবে
নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ১০ জুলাই ॥ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ও তাদের শরিক দলের আহ্বানে রবিবার সকাল থেকে লালমনিরহাট জেলায় ৩০ ঘন্টার হরতাল কর্মসূচী চলছে। শহরে হরতালকারীদের দেখা নেই। তবে শহরের অদূরের সাপ্টিবাড়ি, বড়বাড়ি ও কুলাঘাট বাজারের হরতালের সমর্থনে পিকেটিং করতে দেখা গেছে মাদ্রাসার ছাত্র ও কিছু বয়স্ক মানুষকে। পিকেটিংয়ের খবর শুনে নিউজ কভার করতে বেলা সাড়ে ১১টায় মোটরসাইকেলে কুলাঘাটে যাই। সেখানে মোটর সাইকেল দেখে দৌড়ে এসে গাড়ি চালাতে বাঁধা দেয়। কয়েকজন মাদ্রসার ছাত্র ও বয়স্ক কিছু গ্রামের মানুষ। এ সময় পুলিশও দৌড়ে এসে তাদের থামিয়ে দেয়। এ সময় হঠাৎ এক বৃদ্ধ বলে ওঠে 'হরতাল মেনে চলুন। তা না হলে বিবি তালাক হয়ে যাবে।' হুজুর বলেছেন, 'এ হরতাল ধর্ম রক্ষার হরতাল। এ হরতাল নারীনীতি বাতিলের হরতাল।' পুলিশ অবশ্য তাকে ধরার চেষ্টা করে। কিন্তু সে পালিয়ে যায়।
হরতালের ডিউটিরত পুলিশের এসআই মোঃ নাজমুল বলেন, হরতালের বহু ডিউটি করেছি। কিন্তু এবারে ব্যতিক্রম। যারা পিকেটিং করতে এসেছে, তারা আইন আদালত কিছুই মানতে চায় না। গ্রামের একদম মূর্খ মানুষকে ধর্মের দোহাই দিয়ে পিকেটিংয়ে নামিয়েছে। তিনি বলেন, বড়বাড়িতে কিছু পিকেটার ১টি গাড়ি চলতে বাঁধা দেয়। এ সময় পুলিশ এগিয়ে এলে মৌলবাদী চক্রটি পুলিশের ওপর চড়াও হয়। বলে হরতালে গাড়ি চললে কিসের হরতাল। পুলিশ বাঁধা দেয়ার কে। পুলিশ কর্মকতর্া বলেন, বয়স্ক গ্রামের মানুষকে মৌলবাদী চক্রটি ধর্ম সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মাঠে নামিয়েছে। তাদের দেশের আইন সম্পর্কে সামান্য জ্ঞানটুকু নেই। তারা মনে করছে হুজুরদের কথাই ঠিক, ধর্ম রক্ষায় এ হরতাল।
প্রিয় লেখক আনিসুল হক তার এক লেখাতে লিখেছেন: "১৯৫২ সালে বলা হয়েছিল, ভাষা-আন্দোলন করছে কমিউনিস্টরা, নাস্তিকেরা। একুশে ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা থেকে দলে দলে হিন্দুরা এসেছে, তারা ধুতি বদলে পায়জামা পরে এই আন্দোলন করেছে। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে কিছুদিন পরে ঢাকায় এসে শেখ মুজিব বললেন, ভাষা আন্দোলন করেছে কলকাতা থেকে আসা হিন্দুরা? রফিক, শফি, বরকত, সালাম-- এরা হিন্দু? হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে, তাদের মধ্যে হিন্দু কয়জন? ইতিহাস সাক্ষী, বাংলা-বিদ্বেষী শাসকগোষ্ঠীর সেই সাম্প্রদায়িক প্রচারণায় কাজ হয়নি। সারা বাংলায় রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ল। উপ্ত হলো স্বাধিকার আন্দোলনের বীজ, বাঙালি গর্জে উঠল: তুমি কে, আমি কে বাঙালি বাঙালি, তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বলা হলো, কোনো মুসলমান যদি যুক্তফ্রন্টকে ভোট দেয়, তাহলে তার বিবি তালাক হয়ে যাবে। বাঙলার মানুষ দলে দলে ভাসানী-শেরে বাংলা- সোহরাওয়ার্দীর যুক্তফ্রন্টকে ভোট দিল আর ভাষা-আন্দোলনের বিরোধিতা কারী নুরুল আমিন সরকারের মুসলিম লীগকে চরমভাবে পরাজিত করল। আল্লাহর রহমতে কোনো মুসলমানের বিবি তাতে তালাক হয়ে যায়নি।
১৯৭১ সালে বলা হয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধারা কাফের। তারা ইন্ডিয়ার দালাল। দুষ্কৃতকারী। কিন্তু রাজাকার-আলবদরদের এই অপপ্রচারে কাজ হয়নি। দেশের প্রায় সব মানুষ তখন হয়ে উঠেছিল মুক্তিযোদ্ধা। বাংলার সব মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। ওই রাজাকার-আলবদর আর তাদের রক্ষক পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী পরাজিত হয়েছিল। "
http://www.priyoaustralia.com.au/articles/180210-amader-priyo-canberra-ebong-rajakar.html
__._,_.___