র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক কর্মকর্তা মেজর (অব.) আতিকুর রহমান আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ২০০৫ সালে গ্রেপ্তারের পর র্যাবের কাছে ২১ আগস্ট হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশে তখন এই মামলায় আদালতে মুফতি হান্নানের জবানবন্দি নেওয়া সম্ভব হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ আতিকুর রহমান এই সাক্ষ্য দেন। তিনি ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার উপপরিচালক ছিলেন। তিনি ওই সময় জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গঠিত টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশনের (টিএফআই) সমন্বয়কারী ছিলেন। মুফতি হান্নান ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর গ্রেপ্তারের পর টানা চার মাস র্যাব সদর দপ্তরে অবস্থিত টিএফআই সেলে রিমান্ডে ছিলেন। তখন র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক ছিলেন কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমেদ। তিনি ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিয়ার বিদ্রোহের ঘটনায় পিলখানায় নিহত হন।
গতকাল আদালতে মেজর আতিক বলেন, তাঁকে তখন কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মুফতি হান্নান গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছেন। হান্নান জানিয়েছেন যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনাকালে তাঁরা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারেক ও বাবর হামলাকারীদের প্রশাসনিক সাহায্য ও নিরাপত্তা প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
আতিক আরও বলেন, গুলজার তাঁকে এ-ও বলেছেন, তারেক ও বাবর র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক আবদুল আজিজ সরকার ও পরিচালক গুলজারকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা ছাড়া অন্য কোনো মামলায় মুফতি হান্নানের জবানবন্দী নেওয়া হয়। এরপর তাঁরা রমনার বটমূলে বোমা হামলার মামলায় হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী গ্রহণের ব্যবস্থা করেন।
প্রসঙ্গত, হরকাতুল জিহাদের (হুজি) অন্যতম প্রধান নেতা মুফতি হান্নান যে ২০০৫ সালেই রিমান্ডে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা স্বীকার ও ঘটনার বিবরণ দিয়েছিলেন, তা প্রথম আলোতে ২০০৭ সালের ২১ আগস্ট বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছিল।
গতকাল আদালতে মেজর আতিক আরও বলেন, গ্রেনেড হামলার আগে সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাসায় তাঁর সঙ্গে জঙ্গি নেতা আহসান উল্লাহ ওরফে কাজল, আবু জান্দাল, মাওলানা আবু তাহের বৈঠক করেন বলেও মুফতি হান্নান জিজ্ঞাসাবাদে বলেছিলেন।
আতিক বলেন, ২০০৬ সালে ডিজিএফআই হুজির দুই সদস্য শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও মিজানকে সিলেট থেকে আটক করে। সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তাঁদের আটক করা হয়। টিএফআই সেলে তখন তাঁরা স্বীকার করেন যে ব্রিটিশ হাইকমিশনার, সিলেটের মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, আওয়ামী লীগ নেত্রী জেবুন্নেছা হক, সুনামগঞ্জে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও হবিগঞ্জে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এ এস এম কিবরিয়ার ওপর তাঁরা হামলা চালিয়েছেন। এসব গ্রেনেড হামলা চালানোর জন্য মুফতি হান্নান, তাঁর ভাই অভি, আহসানউল্লাহ কাজল ও আবু জান্দাল দুই দফায় নয়টি গ্রেনেড দিয়েছেন। এসব গ্রেডেন তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন সরবরাহ করেছিলেন।
সাক্ষ্যে আতিক বলেন, মুফতি হান্নানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাওলানা তাজউদ্দিনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হয়। তখন বাবর কর্নেল গুলজারকে বলেন, তাজউদ্দিনকে খুঁজতে হবে না। সে নিজেই আসবে। পরে ডিজিএফআইয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এম আমিনের নির্দেশে ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দারের তত্ত্বাবধানে তাজউদ্দিনকে ভিন্ন নামে পাসপোর্ট বানিয়ে বিদেশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মাওলানা তাজউদ্দিন কাশ্মীরভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল মুজাহিদিনের একজন নেতা এবং বাংলাদেশে এই দলের সমন্বয়কারী ছিলেন। কাশ্মীরে জঙ্গিদের জন্য পাকিস্তান থেকে গ্রেনেড ও গোলাবারুদ তাজউদ্দিনের কাছে পাঠানো হতো। তাজউদ্দিন ভারতের সীমান্ত দিয়ে তা কাশ্মীর পাঠাতেন বলে সাক্ষ্যে বলা হয়।
http://www.prothom-alo.com/national/article/40906/%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%95_%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87_%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%9C%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%BF_%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87