Banner Advertiser

Tuesday, August 20, 2013

[mukto-mona] পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা ঐ অঞ্চলের আদিবাসী নয়



পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা ঐ অঞ্চলের আদিবাসী নয়

মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন : দেশ গঠনে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-আঞ্চলিক অখ-তা সুসংহতকরণে, সর্বোপরি জাতীয় ঐক্য ও সমৃদ্ধি অর্জনে তথা জাতিকে দিক-নির্দেশনা প্রদানে একটি দেশের শিক্ষিত সমাজ বিশেষতঃ বুদ্ধিজীবী কিংবা আমলারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। এগুলো তাদের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ অনেক ক্ষেত্রে তাদের এসব দায়িত্ব পালনে বিবেকের কাছে যে দায়বদ্ধ তা তারা ভুলে যান বলেই মনে হয়। অভিযোগ রয়েছে যে, এদের মধ্যে কেউ কেউ নাকি সুবিধাবাদী চরিত্রের । এরা যেদিকে স্রোত যায়, সেদিকেই ভেসে বেড়ান। কিংবা যেপক্ষে কথা বললে কিছু প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকে সেদিকেই কথা বলেন। এরা খেয়াল রাখেন কোন ধরনের কথা বললে তাদের স্বদেশী-বিদেশী প্রভুরা খুশী হবে। এরা মনে করেন স্বদেশী-বিদেশী প্রভুদের খুশী করার মতো কথা না বললে তাদের চাকরিও চলে যেতে পারে। তাই এরা সব সময়ই মনে রাখেন সত্যি হলেও এমন কোন কথা বলা যাবে না, যাতে বিদেশী প্রভুরা রেগে যায়। তাদের এ ভূমিকা দেশের জন্য যতো ক্ষতিকরই হোক না কেন।
এ কারণে তারা ইতিহাসকে রাতারাতি অস্বীকার করেন কিংবা নিজেরাই একটা ইতিহাস তৈরি করেন, যার অসত্য এবং বাস্তব ইতিহাসের সাথে কেবল সাংঘর্ষিকই নয়, বরং উল্টো। কোন রকমে একটা পদ পেয়ে গেলেই হলো। তখন সুবিধাবাদী নীতি অনুসরণ কিংবা ইতিহাস উল্টে দেয়ার বেসাতি শুরু করেন। সত্যকে মিথ্যে দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করেন। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে এ দলে সর্বশেষ নাম লিখিয়েছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। ইতিহাস ও বাস্তবতাকে অস্বীকার করে তিনি বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী উপজাতিদের আদিবাসী না বললে নাকি আইনের লঙ্ঘন হয়।  'দৈনিক প্রথম আলো'র ২ আগস্ট (২০১৩) তারিখে প্রকাশিত ড. মিজানুর রহমানের বক্তব্যটি ছিল এ রকম : ''দেশের আদিবাসীরা তাদের আদিবাসী বলতে পছন্দ করে, তাদের সেই নামে অভিহিত না করাটা অন্যায়। এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি আনুগত্য ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের যে বিধান আছে, সেটিরও লঙ্ঘন।" প্রথম আলো জানায়, 'আদিবাসী' শব্দের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মিজানুর রহমান বলেন, 'আমার নাম কী হবে, সেটি আমি ঠিক করব। আপনি আমার নাম ঠিক করে দেয়ার কেউ নন।'
গত ১ আগস্ট ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে চূড়ান্ত পরিণতিতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ববিরোধী এক অনুষ্ঠানে ড. মিজানুর রহমান এসব মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য, কিংবা সবার জন্য সম-অধিকারের প্রশ্ন, বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি কোন অঞ্চলে আরেকটি সমান্তরাল সরকার কতোখানি শাসনতন্ত্রসম্মত, কী কী কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি শাসনতন্ত্র, গণতন্ত্র, ও মানবাধিকারের পরিপন্থী, এসব বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কিছুই বলেননি। এসব ব্যাপারে তিনি ভাবছেন বলে মনে হয় না।  কিন্তু যারা আদতেই আদিবাসী নয়, সেই বহিরাগত উপজাতিদেরকে আদিবাসী না বললে কিভাবে তা আমাদের সংবিধান কিংবা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হবে, তার কিছুই তিনি বলেননি।। আগে তো দেখতে হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা আসলে ঐ অঞ্চলের আদিবাসী কী না। তারা বাস্তবেই পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম মানব না হলে তাদেরকে কেন আদিবাসী বলতে হবে? তা'ছাড়া দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখ-তার প্রশ্নটি গুরুত্ববহ না কী পার্বত্য চট্টগ্রামের বহিরাগত ও আশ্রয়প্রাপ্ত উপজাতিদের অন্যায় আবদারটি বড়।
শুধু ড. মিজানুর রহমানই নন, বিদেশ-নির্ভর আরো কিছু বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, রাজনীতিক এ ধরনের মন্তব্য করে কেবল সত্য ও ইতিহাসকেই অস্বীকার করছেন না, বাংলাদেশের জন্য চরম বিপদ ডেকে আনছেন। উপজাতিদের জন্য তাদের এ অমূলক আনুকূল্য তথা ফতোয়ার পেছনে কোন ঐতিহাসিক দলিল তারা উপস্থাপন  করতে পারবেন না যে, পার্বত্য উপজাতিরা ঐ অঞ্চলের আদিবাসী।
আদিবাসী প্রত্যয়টির ইংরেজী প্রতিশব্দ হলো 'অ্যাবরিজিন' (ধনড়ৎরমরহব) এবং এর বিশেষণ হলো 'অ্যাবরিজন্ল' (ধনড়ৎরমরহধষ)। ড. জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী সম্পাদিত বাংলা একাডেমী ইংরেজী-বাংলা অভিধান অনুযায়ী 'ধনড়ৎরমরহধষ'-এর বাংলা হলো (জাতি, গোষ্ঠী বা জীবিত প্রাণী সম্পর্কে) আদিম, কোনো এলাকার প্রাচীনতম কাল থেকে কিংবা ঐ এলাকা পরিচিতি লাভের সময় থেকে বর্তমান (পর্যন্ত বসবাসকারী)। "ধনড়ৎরমরহব" এর বাংলা হলো আদিবাসী, যেমন অস্ট্রেলীয় আদিবাসী। ইউরোপীয়দের আমেরিকা আবিষ্কার ও দখলের আগে ঐ ভূখন্ডে বসবাসকারীদেরকে আদিবাসী না বলে সাধারণত: 'নেটিভ' (হধঃরাব) মানে 'স্থানীয়' (অধিবাসী) বলা হয়। অক্সফোর্ড অ্যাডভ্যানস্ড লারনার্স অভিধানে (Oxford Advanced Learner's Dictionary)'এ অ্যাবরিজন্ল বলতে বুঝানো হয়েছে, কোন জনগোষ্ঠীর এমনসব সদস্য যারা একটা দেশে বসবাসকারী আদি মানুষ, বিশেষত: অস্ট্রেলিয়া বা কানাডার' আদিবাসীরা (Sixth Edition, Edited by Salley Wehmeier : Oxford University Press : 2001-2003.)|  'ওয়েবস্টার নিউ ওয়ার্ল্ড' অভিধান অনুযায়ী আদিবাসী অর্থ ''কোনো জায়গায় প্রথম থেকে বসবাসকারী মানবগোষ্ঠী।" Ó (p. 3: Webster' New World Dictionary: Basic School Edition: 1983)। অর্থাৎ যে জায়গা আগে কখনোই কারো অধিকারে বা দখলে ছিল না, এমন স্থানে যারা প্রথমে বসতি নির্মাণ করেছিল তারাই হলো আদিবাসী। আমেরিকান রেড ইন্ডিয়ানরা আমেরিকাতে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃত, কেননা তারাই এ অঞ্চলে সর্বপ্রথম বসতি নির্মাণকারী মানব সন্তান। এ সব বিবরণী থেকে সহজেই বুঝা যায় ষোড়শ শতাব্দী থেকে পরবর্তীকালে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন দেশ হতে বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলে আশ্রয় নেয়া বহিরাগতরা কোনভাবে এ অঞ্চলে সর্বপ্রথম বসতি নির্মাণকারী তথা আদিবাসী নয়।
আমি আগেই উল্লেখ করেছি মৌর্যযুগেও পার্বত্যাঞ্চল বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। অর্থাৎ প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই আমাদের পূর্ব-পুরুষরা পার্বত্যাঞ্চলের বাসিন্দা তথা মালিক ছিলেন বলেই তারাই ছিলেন ঐ অঞ্চলের প্রথম মানব। সুতরাং বহিরাগত ও আশ্রিত ১৩টি উপজাতির কোনটিই বাংলাদেশের তথা বর্তমানের বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলা তথা সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম কিংবা সাবেক চট্টগ্রামের আদিবাসী নয়। আমি আমার রচিত 'পার্বত্য চট্টগ্রাম: স্বরূপ সন্ধান' নামক গ্রন্থে অন্যান্য সূত্র তো বটেই এমনকি চাকমা ঐহিহাসিক ও গবেষকদের গ্রন্থ ও গবেষণা উদ্ধৃত করে প্রমাণ করেছি ১৩টি জাতির কোনটিই পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমিপুত্র কিংবা আদিবাসী নয়। যারা পার্বত্য চট্টগ্রামের আশ্রিত ও বহিরাগতদের কথিত আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবীকে সমর্থন করছেন কিংবা সে অনুকূলে ফতোয়া দিচ্ছেন তাদের চ্যালেঞ্জ করে বলছি তারা তাদের মতলবী ফতোয়ার সপক্ষে কোন গ্রহণযোগ্য দলিল হাজির করতে পারবেন না। আরো মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ পার্বত্য চট্টগ্রামে দখলীস্বত্বে মালিক নয়, ঐতিহাসিকভাবেই এটা আমাদের দেশের ভূখ-ভুক্ত। তবে মাঝে মাঝে স্বল্প সময়ের জন্য চট্টগ্রাম (১৮৬০ সালের আগ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম ছিল চট্টগ্রামের অন্তর্ভুক্ত) আরাকান রাজার দখলে যায়, আবার কখনো কখনো আরাকান রাজ্যও বাংলাদেশের শাসক-সুলতান-রাজাদের দখলে আসে। মৌর্যযুগে বাংলার হরিকেল জনপদের অন্তর্ভুক্তিই প্রমাণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১২০৪ সনে ইখতিয়ার উদ্দিনের বঙ্গ বিজয়ের পথ ধরে বাংলায় রাজনৈতিকভাবে মুসলিম যুগের সূচনা হলেও এর বহু আগেই চট্টগ্রাম, নোয়াখালী তথা বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলসমূহে মুসলমানদের আগমন ঘটে । ঐতিহাসিক মারওয়াজি (গঁযধফফরং ওসধস অনধফহধ গধৎধিুর) তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই নোয়াখালী-চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলসমূহে আরব বণিকদের মাধ্যমে ইসলামের বাণী ছড়িয়ে পড়ে। তিনি লিখেছেন, মহানবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ)'এর জীবদ্দশায় ৬১৮ খ্রিস্টাব্দে আবু ওয়াক্কাস ইবনে ওহাব, কায়েস ইবনে সাঈরাদি, তামীম আনসারী, ইউরাহ্ ইবনে আস্সা, আবু কায়েস ইবনে হারেছাসহ একদল সাহাবী চট্টগ্রামে এসে ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। বাংলাদেশের বর্তমান মুসলমানরা তাদেরই উত্তরপুরুষ কিংবা ইসলামে দীক্ষিতদের উত্তরসুরী এবং হিন্দু-বৌদ্ধদের উত্তরপুরুষ, যারা ইসলামের আগমনের  বহু আগ থেকেই এ অঞ্চলে বসবাস করতেন। *  (http://www.inkofscholars.com/ inkofscholars.php? file=article.php&id= 186&title= Islam%20in%20 Bangladesh)
অন্যদিকে পার্বত্যাঞ্চলের ১৩টি উপজাতির প্রথম আশ্রয় নেয়া শুরু হয় ষোড়শ শতাব্দী বড়জোর পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিকে। সুতরাং চট্টগ্রামের অন্তর্ভুক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী যে চাকমা কিংবা অন্যকোন উপজাতি নয়, তা  আর প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের বিক্রি হয়ে যাওয়া কিছু বুদ্ধিজীবী কিংবা এনজিও ব্যবসায়ীরা স্বার্থ ও প্রাপ্তির বিনিময়ে চাকমাদেরকে আদিবাসী হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করলেই ইতিহাস ঘুরিয়ে দিতে পারবেন না।
ষোড়শ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন দেশ থেকে বহিরাগত ১৩টি উপজাতি বাংলাদেশ ভূখ-ের পার্বত্য অঞ্চলে প্রবেশ করে। ভারতীয় সাংবাদিক বিজি ভার্গিস (BG Verghese) লিখেছেন, ''পার্বত্য (চট্টগ্রামের) উপজাতিরা ষোড়শ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যে বিদেশের মাটি থেকে এ অঞ্চলে আশ্রয় নেয় এবং উপকূলীয় সমতল ভূমিতে বাঙ্গালীদের সাথে বসতি স্থাপন করে। | (BG Verghese, North East Resurgent: Konark Publishers, New Delhi, India, 1996, p. 374.)|। এক্ষণে আমরা দেখব এ উপজাতির কোনটি কোন সময়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
মারমা: বর্তমানে মারমা নামে পরিচিত উপজাতি এক সময়ে আমাদের দেশে মগ নামে পরিচিত ছিল। এদের আদি নিবাস সাবেক বার্মায় (বর্তমানে মায়ানমার)। মারমা শব্দটি 'মাইমা' (গধরসধ) থেকে এসেছে। মায়ানমার, মাইমা, কিংবা মারমা মূলতঃ সমার্থক শব্দ। এক সময় মগরা প্রায়ই বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলে হামলা চালিয়ে লুটপাট করতো। সুগত চাকমা লিখেছেন: মগরা মোগল আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে আরাকানে আশ্রয় নেয়। এক সময় তাদের একটি অংশ আরাকান থেকে আবার ফেরত এসে ১৭৭৪ সনে চট্টগ্রাম অঞ্চলের রামু, ঈদঘর, মাতামুহুরী উপত্যকায় বসবাস শুরু করে। ১৮০৪ সনে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানে প্রবেশ করে বসতি স্থাপন করে। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে এখনো কক্সবাজার, পটুয়াখালী অঞ্চলে দেখা যায়। (সুগত চাকমা: পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি ও সংস্কৃতি: রাঙ্গামাটি, বাংলাদেশ, পৃ:৪০)
এিপুরা উপজাতির নাম থেকেই প্রমাণিত হয়, এরা ভারতের ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সুগত চাকমা মনে করেন, ত্রিপুরা উপজাতির পূর্ব পুরুষরা তাদের প্রতিপক্ষের সাথে দ্বন্দ্ব সংঘাতের কারণে ত্রিপুরা থেকে চলে আসেন। (সুগত চাকমা: পৃ: ৫৭)। সুগত চাকমা জানান, ১৬৬১ সনে রাজা গোবিন্দ মানিক্যের অনুসারী ও আত্মীয়-স্বজন প্রতিপক্ষের আক্রমণে টিকতে না পেরে বর্তমানের পার্বত্যাঞ্চলে আশ্রয় নেন এবং তারা আর স্বদেশে ফেরত যান নি।
লুসাই: এরা পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্ব-সীমান্তে মিজোরামের লুসাই উপজাতিভুক্ত এবং তাদের একটা অংশ প্রায় ১৫০ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি স্থাপন করে। (সুগত চাকমা: পৃঃ ৫৭)
মুরং: ডঃ মিজানুর রহমান শেলী জানান, অনেকের কাছে 'ম্রো' নামে পরিচিত মুরং'রা আরাকান বা বার্মা হতে কয়েক শত বছর আগে প্রধানতঃ বান্দরবানে বসতি নির্মাণ করে। (Dr. Mizanur Rahman Shelly: The Chittgong Hill Tracts of Bangladesh: The Untold Story পৃষ্ঠা ৫৩)। সুগত চাকমা'র মতে মুরং'রা অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমাংশে উত্তর বার্মা থেকে চট্টগ্রামে প্রবেশ করে। (সুগত চাকমা: পৃঃ ৫৭)
খুমি: খুমি'রা মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চল থেকে সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে চট্টগ্রামের পার্বত্যাঞ্চলে হিজরত করে। (শেলী: পৃঃ ৫৮)। ক্যাপ্টেন টি. এইচ. লেউনকে উদ্ধৃত করে সুগত চাকমা জানাচ্ছেন খুমি ও ম্রো'দের মধ্যে সংঘঠিত রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে প্রথমে পরাজিত ম্রো'রা পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় নেয় এবং পরবর্তীকালে খুমি'রাও তাদের প্রতিপক্ষের চাপের মুখে ম্রো'দের অনুসরণ করে। (সুগত চাকমা: পৃঃ ৮১)
বোম: বর্তমানে বোম'রা বান্দরবান জেলার রামু অঞ্চলে বসবাস করে। সুগত চাকমা'র মতে ১৮৩৮-১৮৩৯ সনের দিকে তাদের গোত্র প্রধান (খরধহশঁহম)'এর নেতৃত্বে ঐ অঞ্চলে আশ্রয় নেয়।
খিয়াং: ড. মিজানুর রহমান শেলীর মতে, খিয়াং'রা অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে আরাকান পাহাড়ের উমাতাংগং'এ বসবাস করতো। (শেলী: পৃঃ ৬২)। বান্দরবান থেকে প্রকাশিত 'গিরি নির্জর' (৩য় সংখ্যা, ১৯৮৩) নামক সাময়িকীতে প্রদীপ চৌধুরী 'খিয়াং উপজাতি' শীর্ষক নিবন্ধে লোক কথার উপর ভিত্তি করে লিখেছেন, খিয়াং'দের রাজা একটি যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বার্মা হতে পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় নেন। পরবর্তীকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে তার স্বদেশে ফেরত যাবার সময় তার কনিষ্ঠ রাণী গর্ভবতী থাকায় তাকে পার্বত্য চট্টগ্রামেই রেখে যান। পার্বত্য চট্টগ্রামের খিয়াং'রা মনে করেন তারা ঐ রাজা ও রাণীর বংশধর।
চাক: চাক'দের আদি নিবাস হলো বার্মার সীমান্তবর্তী চীনের উনান প্রদেশে। তারা কোন সময়ে চীন হতে আরাকানে কিংবা আরাকান হতে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তার কোন সময়-সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত এখনো পাওয়া যায়নি। (সুগত চাকমা: পৃ: ৬৪)
পাঙ্খো: সুগত চাকমার মতে, পাঙ্খো'রা মিজোরামের লুসাই হিল থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পাঙ্খোরা বিশ্বাস করেন যে, মিজোরামে পাঙ্খোয়া নামক একটি গ্রামে তাদের পূর্ব-পুরুষরা বাস করতেন । (সুগত চাকমা: পৃঃ ৮৫)
তনচৈংগা: তনচৈংগা'রা চাকমা উপজাতির একটি গোত্র হলেও তারা নিজেদেরকে চাকমাদের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবী করে। এবং নিজেদেরকে পৃথক উপজাতি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে।
১৩টি উপজাতির মধ্যে শেকড়হীন অর্থাৎ আদি পরিচয়বিহীন হলো চাকমা। রূপকথা, উপকথা, লোকগাঁথা ছাড়া তাদের কোন ইতিহাস নেই। তাদের আদিবাস ঠিক কোথায় তাও তারা জানে না। তবে তাদের দাবী চম্পকপুরী হলো তাদের আদিবাস। চম্পক থেকেই নাকি চাকমা নামটি এসেছে। কিন্তু এ জায়গাটা বিশ্বের কোথায় ছিল কিংবা আছে আজ পর্যন্ত চাকমা প-িতরা তা বের করতে পারেন নি। ঐ নামটিও কল্পকাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হওয়াতেই এমনটি হয়েছে। চাকমা বুদ্ধিজীবী সতীশ চন্দ্র ঘোষ, অশোক কুমার দেওয়ান, বিরাজ মোহন দেওয়ান, সুগত চাকমা প্রমুখ তাদের আদিবাসের সন্ধান করতে গিয়ে হিমালয়ের পাদদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, বার্মা'র কথা উল্লেখ করলেও কোন সুনির্দিষ্ট স্থানের উল্লেখ করতে পারেননি। বিরাজ মোহন দেওয়ান চাকমা জাতির ইতিহাস (নতুন রাঙ্গামাটি, ১৯৬৯, পৃ: ৯৪) শীর্ষক ৭৬ পৃষ্ঠার গবেষণাধর্মী গ্রন্থে লিখেছেন,  ''এটা সুস্পষ্ট যে, চাকমারা পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমিপুত্র নয়।" বিরাজ মোহন স্বীকার করেছেন, ''চাকমারা পার্বত্য চট্টগ্রামের আদি বাসিন্দা নয় এবং পঞ্চদশ শতাব্দীতে সুলতানের সহযোগিতা পেয়ে বাংলার পার্বত্যাঞ্চলে প্রবেশ করে।" সি. আর. চাকমা নামক আরেক জন বুদ্ধিজীবী তার গ্রন্থে  স্বীকার করেছেন, (C. R. Chakma: The Chakma Nation in the Evolution of Age (Middle Age), Liluya, Hawra, West Bengal: India, 1988, p. 67) পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যে চাকমা' প্রজারা পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে আশ্রয় নিতে শুরু করে। 
পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা কেন বাংলাদেশে আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ান, এমনকি আমাদের প্রতিবেশী 'সাতবোন' নামে পরিচিত  মিজোরাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড ও অরুনাচল প্রদেশ'এর অধিবাসীরা যে অর্থে আদিবাসী পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৩টি উপজাতির কোনটিই সে অর্থে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী নয়। আদিবাসী কারা তা অনুধাবন করতে আমরা আমেরিকা কিংবা আমাদের প্রতিবেশী সাতবোনের দিকে তাকাতে পারি।
ইউরেশিয়া (ইউরোপ-এশিয়া) থেকে মানবগোষ্ঠীর যে অংশ বেরিং প্রণালী'তে অতীতে বিদ্যমান স্থলসেতু পেরিয়ে আমেরিকান ভূখন্ডে সর্বপ্রথম বসতি স্থাপন করে, তারাই আমেরিকার আদিবাসী। বেরিং প্রণালীর স্থলসেতু এখন থেকে ১২,০০০ বছর আগ পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। সুতরাং রেড ইন্ডিয়ানদেরকে আমেরিকার আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া অতীব বাস্তব ও ইতিহাস-নির্ভর। আমাদের প্রতিবেশী সাতবোনের আদিবাসীরাও ঐ অঞ্চলের ভূমিপুত্র। ১৮২৬ সনে ব্রিটিশদের জবর দখলের আগে  ঐ সাতবোন (ত্রিপুরা বাদে) কখনোই বর্তমান ভারতের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সুতরাং তারা ঐসব অঞ্চলের অধিবাসীরাই হলো আদিবাসী।
বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলের ১৩টি উপজাতির সবগুলোই বহিরাগত, নবাগত, কোনভাবেই আদি ভূমিপুত্র নয়। এরা ষোড়শ শতাব্দী থেকে বার্মা (মিয়ানমার), বর্তমানে ভারতের অধীনস্থ সাতবোন, থাইল্যান্ড, চীন প্রভৃতি দেশ থেকে আমাদের পার্বত্যাঞ্চলে প্রবেশ করেছে, যে অঞ্চল মৌর্য শাসনের সময়ও বাংলার হরিকেল জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৬০ সন পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম বর্তমান চট্টগ্রাম জেলার একটি মহকুমা ছিল। বহিরাগত চাকমাদের কথ্য ভাষার ৮০ ভাগ শব্দই চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার শব্দ। অর্থাৎ স্থানীয় চট্টগ্রামের অধিবাসীরা চাকমাদের এ অঞ্চলে আগমনের আগ থেকেই ঐ অঞ্চলে বসবাস করতো বিধায় চাকমাদের কথ্য ভাষার সিংহভাগ শব্দ স্থানীয়দের ভাষা থেকে এসেছে। চাকমাদের ভাষাই প্রমাণ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলের অধিবাসীরা অর্থাৎ বাংলাভাষীরা পার্বত্যাঞ্চলের আদি অধিবাসী, যখন ঐ অঞ্চলে কোন আদিবাসী ছিল না।  এ কারণে ব্রিটিশদের কোন রেকর্ডেই এদেরকে অ্যাবরিজিন বা আদিবাসী হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। বরং ট্রাইবাল অর্থাৎ উপজাতি হিসেবে দেখানো হয়েছে।
আদিবাসী প্রশ্নে আন্তর্জাতিক আইন বাংলাদেশের উপজাতিদের ক্ষেত্রে কেন প্রযোজ্য নয়, তা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার প্রধান ও মূল দায়িত্ব হলো সরকার ও বুদ্ধিজীবীদের। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন বলে মনে হয়।
বহিরাগত পার্বত্য উপজাতিরা বাংলাদেশের আঞ্চলিক অখ-তাবিরোধী চক্রান্তকে সামনে রেখেই আমাদের দেশে আশ্রিত হওয়া সত্ত্বেও আমাদেরকেই (বাংলাভাষীদেরকে) বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত করে পার্বত্যাঞ্চল থেকে তাড়িয়ে দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। সেনাবাহিনীবিরোধী প্রচারণা কিংবা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও একই উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। এসব ব্যাপারে আমাদেরকে সাবধান থাকতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশকে পূর্ব তিমুর কিংবা সুদানের আদলে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চলছে। বহু এনজিও দোকানীরা তাদের হয়ে কাজ করছে।
যেসব স্বার্থান্বেষী মহল কিছু বৈষয়িক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে বহিরাগত পার্বত্য উপজাতিগুলোকে আদিবাসী হিসেবে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে তাদের বিবেক ও জ্ঞানকে পরিচ্ছন্ন করার জন্য উপরোক্ত তথ্য-প্রমাণাদি ওষুধ হিসেবে কাজ করলে খুশী হব।
শিক্ষিত বিশেষতঃ বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব হচ্ছে জাতিকে সত্যের সন্ধান দেয়া, জাতির বিপদাপদ সম্পর্কে আগাম বিপদ সংকেত দেয়া। কিন্তু আমাদের বুদ্ধিজীবীরা এর উল্টো দিকে হাঁটছেন। তারা তাদের বক্তব্যে কর্মকান্ডে আমাদের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন না। তাদের বুদ্ধি কিংবা সততায় অথবা দেশপ্রেমে  ঘাটতি আছে কী না, তা' নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাদের কাছে জাতির প্রত্যাশা: কোন কিছু প্রাপ্তির বিনিময়ে তারা এমন কোন মন্তব্য করবেন যাতে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখ-তা কোনভাবে দুর্বল কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।*
লেখক: বাংলাদেশী-আমেরিকান সাংবাদিক ও গবেষক


__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___