Banner Advertiser

Sunday, December 29, 2013

[mukto-mona] জেল হত্যাকাণ্ড ॥ আবদুস সামাদ আজাদের সাক্ষাতকার - ১



সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩, ৯ পৌষ ১৪২০
জেল হত্যাকাণ্ড ॥ আবদুস সামাদ আজাদের সাক্ষাতকার
শারমিন আহমদ
জেল হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে ভূমিকা
১৯৭৫ সালের ৩ নবেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচএম কামরুজ্জামানের নির্মম হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে যখন স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী (১৯৭২-৭৩) আবদুস সামাদ আজাদের সাক্ষাতকারটি পত্রিকায় পাঠাচ্ছি, তখন সারা বাংলাদেশে বইছে চরম অস্থিরতার ঝড়। 
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার নিরীহ মানুষের রক্তে প্লাবিত হচ্ছে মাঠ-ঘাট-রাজপথ, হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বলছে, ধ্বংস হচ্ছে জাতীয় সম্পদ, ধসে পড়ছে আশা ও স্বপ্ন। শিশু, কিশোর ও তরুণ যারা এই জাতির ভবিষ্যত, তাদের মধ্যকার সব সম্ভাবনা শ্বাসরুদ্ধ হচ্ছে এই নৈরাজ্যপূর্ণ ও কলুষিত রাজনৈতিক আবহাওয়ায়। হরতালে কিশোর মনিরের ভস্মীভূত দেহখানি আমাদের মৌন বিবেকের ওপর আর্তনাদ করে প্রশ্ন করেছে কেন আমরা জাতিগতভাবে মেনে নিচ্ছি এমন অন্যায়-অপরাধ? 
হরতালকারীদের হিংস্রতার আরেক বলি, মাথার খুলি বিদীর্ণ হয়ে নিহত (২৭ নবেম্বর) মনোয়ারা বেগমের কন্যা শোকাহত নাসিমা ধিক্কার দিয়ে বলছে, 'একজন রাজনীতিবিদের নাম দাও, যে এই হরতালের সহিংসতায় মৃত্যুবরণ করেছে?' আসলেই তাই, রাজনীতিবিদ যারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে তারা কিন্তু নিরাপদেই রয়েছে। তাদের নিয়োজিত কর্মীবাহিনী দেশকে জিম্মি করে ঘটিয়ে যাচ্ছে এসব নারকীয় কার্যকলাপ। 
সবই হচ্ছে জনগণের স্বার্থ রক্ষার নামে। জনগণের স্বার্থ রক্ষার নাম করে যখন জনগণকেই জিম্মি করে তাদের হত্যা ও তাদের জানমাল ভস্মীভূত করা হয় তখন সেই রাজনৈতিক দল-দলসমূহ হারায় জনগণের প্রতিনিধি হওয়ার বৈধতা ও যোগ্যতা। কিন্তু বাংলাদেশের ভাগ্যেই ঘটছে ব্যতিক্রম। যুগ থেকে যুগে। সে যেই দলই হোক না কেন, পেশীবলে, অর্থবলে, প্রতারণা ও মিথ্যাচার বলে কোন প্রকার রাজনীতিবিদের সিলটি যদি একবার গায়ে এঁটে যায় তখন তাকে সেই পদ থেকে হটানো হয় মুশকিল। 
জনগণের অর্থ ও সম্পদ ডাকাতি করে, আত্মসাত করে (যাকে বলা হয় দুর্নীতি), রাহাজানি, খুন, গুম খুন ও সকল প্রকার অমানবিক কাজ ও অসভ্য আচরণ করেও এই পেশাদার রাজনীতিবিদ ও তাদের অনুসারীরা ভালমতোই বেঁচে থাকে। ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়, কিন্তু যেখানে পুরো রাষ্ট্র পরিচালনা পদ্ধতিটিই কলুষিত সেখানে মুষ্টিমেয়র সততা ও ন্যায়নীতি কতটুকুই-বা পরিবর্তন আনতে পারে অথবা তাদের কতদূরই-বা সত্যিকারের কাজ করতে দেয়া হয়! 
আজ বাংলাদেশে যে চরম নৈরাজ্যপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তার মূল কারণ হলো এই আষ্টেপৃষ্ঠে দুর্নীতিগ্রস্ত মানসিকতাসম্পন্ন রাজনৈতিক দল, প্রশাসন ও রাষ্ট্র পরিচালনা পদ্ধতি। তারা জনগণের সেবক হওয়ার বদলে পরিণত হয়েছে ভক্ষকে। স্বাধীনতার মহান আদর্শকে অপমানিত করে ব্যক্তি, পরিবার-স্বজন ও দলীয় স্বার্থে সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেয়া ও লালন করা দুর্নীতি, অনাচার ও আইনের শাসনের গতিপথ রুদ্ধ করার প্রবণতাÑ এই কারণগুলোর শিকড় বেয়েই আজ উঠে এসেছে গণহত্যাকারী রাজাকার-আলবদর ও তাদের নির্লজ্জ সমর্থকরা। 
আওয়ামী লীগ উন্নয়ন ক্ষেত্রে (বিশেষত শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি) বিএনপির চাইতে অনেক ভাল করেও জনগণের আস্থা এবং জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে উল্লিখিত কারণগুলোর জন্য। আর উল্লিখিত কারণগুলোসহ বিএনপির দুঃশাসনের চরম নমুনা সৃষ্টির প্রতিবাদে এক-এগারোই শুধু ঘটেনি এবং গত নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হয়নি, তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিজেদের নিক্ষিপ্ত করার আয়োজন করেছে একাত্তরের পরাজিত, পাকিস্তান-সৌদিপালিত সাম্প্রদায়িক ও গণহত্যাকারী দলের বাহন হয়ে। 
তাদের এই অশুভ এ্যালায়েন্স লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্যই আজ হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামসহ পবিত্র ধর্মের নাম বিক্রি করে চরম অধর্মপূর্ণ কর্মকাণ্ডের হোতা দলগুলোর মধ্যকার আদর্শগত পার্থক্য আজ বিলীন হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের ভাগ্য হয়ে উঠছে জটিল থেকে জটিলতর। আর এমনি একটি অনিশ্চিত সময়ের প্রেক্ষাপটে আমি জেলহত্যার সাক্ষাতকারের অবতারণা করছি। 
ওই নির্মম হত্যাকাণ্ডগুলো এমন এক সময়ের ইতিহাস যাকে দল-মতের উর্ধে উঠে বস্তুনিষ্ঠভাবে গবেষণা-বিশ্লেষণ না করা ও তার থেকে শিক্ষা না নেয়ার বিষয়টিও ছিল অন্যতম এক কারণ, যে জন্য আমরা আজও পরিগণিত হতে পারিনি সভ্য এক রাষ্ট্ররূপে। যে কারণে আজও বাংলাদেশ লাভ করেনি মানসিক স্বস্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের দেশে মৌলিক গবেষণা হয়নি বললেই চলে। 
আজকে জেল হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত সাক্ষাতকারটি উল্লেখ করার আগে এক ঝলক চোখ বুলানো যাক সেই সময়টিতে। আজকের প্রজন্ম যারা সেই সময়টি সমন্ধে জানে না বা তাদের আমরা সঠিকভাবে জানাতে ব্যর্থ হয়েছি, বিশেষত তাদের জন্যই সেই ইতিহাসের অতিসংক্ষিপ্ত এই বর্ণনা।
দেশ যখন স্বাধীন হলো তখন যদি সদ্যস্বাধীন দেশটির প্রশাসনে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অনুযায়ী, আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখা হতো এবং নিজ দলের ভেতর লুকিয়ে থাকা স্বাধীনতাবিরোধী ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী প্রথম বাংলাদেশ সরকারবিরোধী মূল ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতো, তাহলে ভেতরের ও বাইরের কোন চক্রই তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত করতে পারত না। আজকের দুঃখজনক এই প্রসঙ্গেরও অবতারণা হতো না। 
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর পরিবারসহ নির্মমভাবে নিহত হন। বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন, তাঁর মন্ত্রিসভা ও বাকশাল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য খন্দকার মোশতাক আহমেদ এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী জুনিয়র আর্মি অফিসাররা ক্ষমতা দখল করে। অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতির পদ দখলকারী মোশতাক অর্ডিন্যান্স জারি করে যে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করা যাবে না। 
মুক্তিযুদ্ধের সেনাপতি জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী যিনি বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত একদলীয় বাকশালের প্রতিবাদ করে তাতে যোগদান করেননি, তিনি নির্দ্বিধায় বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদে যিনি ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুসহ নারী-শিশুর হত্যাকারীদের অন্যতম মোশতাকের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টার পদে নিয়োজিত হন। চীফ অব আর্মি স্টাফ মেজর জেনারেল শফিউল্লাহকে সরিয়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান তার স্থলভুক্ত হন। 
তিনিও হত্যাকারীদের বিরদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেন না; বরং হত্যাকারীদের বিচার করা যাবে না এই অর্ডিন্যান্সকে পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর সংবিধানে পঞ্চম সংশোধনীর (৬ এপ্রিল, ১৯৭৯) মাধ্যমে বৈধতা দেন (বলাবাহুল্য, কোন অন্যায় কখনওই আইনত বৈধ হতে পারে না, তা একদিন বাতিল হতে বাধ্য)। 
১৫ আগস্টে হত্যাকাণ্ডের দুই মাস বিশ দিন পর ৩ নবেম্বর দিবাগত রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (লেখার শুরুতে উল্লিখিত) মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধুর চার সহকর্মী নিহত হন। ওই একই রাতে অবৈধ মোশতাক সরকার ও বঙ্গভবন দখলকারী হত্যাকারী সেনা অফিসারদের ক্ষমতাচ্যুত করে এবং জিয়াকে গৃহবন্দী করে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। 
তার মাত্র চার দিন পরে, ৭ নবেম্বর সিপাহি বিদ্রোহে (এই দিনটিকে সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান বলা হলেও, আসলে এই বিদ্রোহটি ছিল বামপন্থী জাসদ সংগঠিত এবং জনতার অংশগ্রহণ এতে ছিল না) নেতৃত্বদানকারী কর্নেল তাহের জিয়াকে মুক্ত করেন। ওই একই দিন খালেদ মোশাররফ ও তাঁর দুই সহকর্মী কর্নেল নাজমুল হুদা ও কর্নেল এটিএম হায়দার নিহত হন। 
তাদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানকারীরা এই অপবাদ ছড়ায় যে খালেদ ও তার অনুগামীরা ভারতের দালাল। যারা খালেদ মোশাররফ সমন্ধে কিছুটা ধারণা রাখেন তারা জানেন যে এই অকুতোভয় স্বাধীনচেতা বীর মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে ওই কথাটি ছিল অপপ্রচার মাত্র। 
পরবর্তীতে জিয়াকে মুক্তকারী, কর্নেল তাহেরকেই এক প্রহসনমূলক গুপ্ত বিচারের মাধ্যমে জিয়া ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেন এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে একাত্তরের পরাজিত ঘাতক-দালালদের পুনর্বাসিত করেন। জিয়াউর রহমান পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর মেজর জেনারেল মঞ্জুর নির্দেশিত আরেক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হন। জিয়ার বিএনপি সরকারকে এক রক্তপাতহীন ক্যু-এর মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় আসেন ১৯৮২ সালে। 
এই এতগুলো বছরেও জাতির জনক ও স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী চার নেতা, যারা গোটা জাতিরই নেতা, তাদের হত্যার কোন বিচার হয় না। তার জন্য অপেক্ষা করতে হয় আরও চৌদ্দ বছর; আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ একুশ বছর পর পুনরায় ক্ষমতায় আসার সময় পর্যন্ত।
১৯৮৭ সালে আমি যখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে এসে জেল হত্যাকাণ্ডের ওপর তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করি তখন অবাক হয়ে লক্ষ্য করি যে এই সম্পর্কে হত্যাকাণ্ডের সুদীর্ঘ বারো বছর পরও তথ্য, উপাত্ত এবং প্রমাণসহ গবেষণামূলক কোন লেখনী প্রকাশিত হয়নি। জেল হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী ব্যক্তিবর্গ এবং এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গের সাক্ষাতকার, ইতিহাসের উপাদান হিসেবে যার গুরুত্ব অনেক, তা সংগ্রহ করে জাতিকে জানাবারও কোন প্রচেষ্টা নেয়া হয়নি। 
জাতির বিবেককে যারা নাড়া দেবেন বলে আশা করা যায় সেই বুদ্ধিজীবী সমাজ এই বিষয়টি সমন্ধে জানতে এবং জানাতে তেমন আগ্রহ প্রকাশ করেননি। আমাদের এমনিতর ইতিহাস সংরক্ষণ চেতনার অভাবের কারণেই তো ঘটে যায় আরও নির্মমতা এবং জাতি ঘুরপাক খায় বিভ্রান্তিতে। বৈহাসিকের পার্শ্বচিন্তা কলামে, প্রখ্যাত কলামিস্ট আবু জাফর শামসুদ্দীন, জাতীয় ইতিহাসের মর্মান্তিক ঘটনাবলী সম্পর্কে আমাদের এই সম্মিলিত উদাসিনতা ও অবহেলাকে চিহ্নিত করে জাতির কাছে কিছু প্রশ্ন রেখেছিলেন। জেলহত্যা দিবসে তিনি লিখেছিলেনÑ 
'কী দোষ করেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ ও তাঁর তিন সহকর্মী এ প্রশ্নের জবাব এ পর্যন্ত কোন সরকার দেয়নি। আমরা দেশবাসীও সোচ্চার হয়ে এ প্রশ্ন করিনি এবং তার জবাব চাইনি। এই যে প্রশ্ন করিনি এবং তার জবাব চাইনি এটাও আমাদের লজ্জার বিষয়Ñ গণতন্ত্রের সমর্থকরূপে প্রশংসিত নাগরিকদের কর্তব্যকর্মে চরম ঔদাসীন্য ও অবহেলার প্রমাণ।' (সংবাদ, ৫ নবেম্বর, ১৯৮৪) 
ঢাকায় পৌঁছে আমি যাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করি ও সাক্ষাতকার নেই তারা হলেন স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী (১৯৭২-৭৩) আবদুস সামাদ আজাদ, জেলহত্যা তদন্ত কমিশনের সদস্য, সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি কে এম সোবহান (৭ নবেম্বর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণের পর তদন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়) স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এ এস মহসীন বুলবুল, ব্রিগেডিয়ার আমিনুল হক (ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নির্দেশে তিনি জেল হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ডিআইজি প্রিজনস আবদুল আউয়ালের রেকর্ডকৃত সাক্ষাতকার নেন) ও প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী আবদুল মোমিন। 
উল্লিখিত প্রথম ও তৃতীয় সাক্ষাতকারদাতা ১৯৭৫ সালে চার নেতার সঙ্গে জেলে বন্দী ছিলেন। এ ছাড়াও তাজউদ্দীন আহমদের শৈশব ও ছাত্রজীবন সম্পর্কে ওনার শিক্ষক ও ভাই-বোনদের সাক্ষাতকার নেই। পঁচাত্তরে জেলে কর্মরত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। আরও যাদের সঙ্গে দেখা হয় তারা সে সময় আমাকে সাক্ষাতকার দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। 
বঙ্গবন্ধু ও জেল হত্যাকারী লে. কর্নেল ফারুক ও রশীদ তখন দেশে ফিরে ফ্রিডম পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা প্রকাশ্যেই শেখ মুজিবের মরণোত্তর বিচার করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। লে. কর্নেল ফারুক জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে ১৯৮৬ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছে। মোশতাক দুর্নীতির দায়ে জেল খেটে বেরিয়ে তার আগা মসীহ লেনের বাড়িতে বহাল তবিয়তেই আছে (তাকে হত্যাকাণ্ডের জন্য বিচারের মুখোমুখি কখনওই দাঁড়াতে হয়নি, তার আগেই সে মৃত্যুবরণ করে)। 
সুতরাং এই পরিস্থিতিতে, অনেকেই যে কোন তথ্য বা সাক্ষাতকার দিতে অপারগতা প্রকাশ করবে সেটাই হয়ত স্বাভাবিক। তারপরও সেদিনের সাক্ষাতকার হতে জেলহত্যা সম্পর্কে যে চিত্রটা মনে অস্পষ্ট ছিল তা অনেকখানি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জেল থেকে চিরতরে ও রহস্যজনকভাবে হারিয়ে যাওয়া তাজউদ্দীন আহমদের মহামূল্যবান ও ঐতিহাসিক ডায়েরিটি কে নিয়েছিল সে সমন্ধেও জানতে পারি। 
১৯৮৭ তে সংগ্রহকৃত তথ্যাবলীর ভিত্তিতে রচনা করি '৩ নবেম্বরের জেলহত্যা ও বিবেকের আত্মাহূতি' প্রবন্ধ যা ১৯৮৮ সালে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত প্রথম নিয়মিত সাপ্তাহিক 'প্রবাসী' পত্রিকা এবং পরে বাংলাদেশের অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তিন বছর পরে, ১৯৯১ সালে আমার ছোটবোন সিমিন হোসেন রিমি বহু কষ্টে অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি প্রিজনসের ঠিকানা যোগাড় করে তার সাক্ষাতকার গ্রহণ করতে সমর্থ হয়। ডিআইজিসহ অবসরপ্রাপ্ত আইজি প্রিজনস নুরুজ্জামান, জেলর আমিনুর রহমান ও সুবেদার ওহায়েদ মৃধার সাক্ষাতকার সে 'ভোরের কাগজ' পত্রিকায় এবং তার লেখা 'আমার ছোটবেলা, ১৯৭১ এবং বাবা তাজউদ্দীন আহমদ' বইয়ে প্রকাশ করে। 
বলাবাহুল্য যে, নিজ পিতা ও তাঁর তিন সহকর্মীর নির্মম ও অন্যায় হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজটি মনের দিক থেকেও সহজসাধ্য ছিল না। তারপরও করতে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের কাণ্ডারি অন্যান্য সংগঠক এক অসাধারণ চরিত্রের বাবার প্রতি অসীম ভালবাসা থেকে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের তাঁর তিন সহযোদ্ধার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা হতে। রক্তস্নাত নির্মম অতীতের উত্তরসুরি, দিশাহীন এই বর্তমানের অন্ধকারাচ্ছন পথটিতে, নতুন প্রজন্ম একদিন আশা ও শান্তির আলো ছড়াবে সেই পরম প্রত্যাশা হতে। (চলবে)

লেখক : তাজউদ্দীন আহমদের বড় মেয়ে, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী গবেষক



__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___