ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করার জন্য বিএনপিকে অভিযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করবেই।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য স্বাধীনতার সপক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
রোববার গণভবনে কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় শেখ হাসিনা বলেন, "মানবতাবিরোধী অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়েছে বিএনপি। বাংলাদেশের জনগণ মাথা উঁচু করে দাঁড়াক, তা তারা চায় না।"
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের মুক্তিতে বিরোধীদলীয় নেতার দাবির জবাবেই যে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য, তা স্পষ্ট। বিএনপি অবশ্য বলছে, তারাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়, তবে তা সুষ্ঠু হতে হবে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করেই হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "এই বিচার করে দেশকে অভিশাপ মুক্ত করতে হবে।"
যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পদক্ষেপের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য বঙ্গবন্ধু বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করেছিলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান তাদের মুক্ত করতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে কিছু আইন বাতিল করেছিলেন।
জিয়ার মতো খালেদা জিয়াও একই পথ ধরে চলছেন দাবি করে তিনি বলেন, "উনি (খালেদা জিয়া) প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে নেমেছেন। উনি লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।"
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদার সন্তানের বিরুদ্ধে মুদ্রাপাচার মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার (এফবিআই) কর্মকর্তার বাংলাদেশের আদালতে সাক্ষী দেওয়ার বিষয়টি জাতির জন্য 'লজ্জাজনক' আখ্যায়িত করে হাসিনা বলেন, "তারা এখন লুটপাট করতে পারছে না। তাদের লুটের টাকা কমে এসেছে। ক্ষমতায় বসে লুটপাট করে খেতে পারছে না বলেই অশান্তি চালিয়ে যাচ্ছে।"
বিডিআর বিদ্রোহের দিন বিএনপি চেয়ারপারসনের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "বিডিআর মিউটিনির ঘটনা ঘটে সকাল সাড়ে ৯টায়। আর উনি (খালেদা জিয়া) তার দু'ঘণ্টা আগে সেনানিবাসের বাসা ছেড়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেলেন। উনি কি জানতেন, কী হতে যাচ্ছে?
"বিডিআর মিউটিনির পর সব রাজনৈতিক দলের লোকজন সেখানে গেছেন, শুধু বিএনপি-জামায়াতের একটি লোকও যায়নি। তারা কী জানত? উনি (খালেদা জিয়া) পালালেন কেন? তার জবাব এখনো তিনি দেননি।"
তিন বছর আগে বিডিআর বিদ্রোহ দমন সরকার সফলভাবেই করতে পেরেছিল বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। এই হত্যাকাণ্ডের বিচারও সরকার সুষ্ঠুভাবে করবে বলে জানান তিনি।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে মেয়র প্রার্থী দলীয় নেতাকে বহিষ্কারের পর জয়ী হলে ফুল দিয়ে খালেদার বরণ করারও সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, "আওয়ামী লীগের সময় যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, তা নিয়ে কোথাও কেউ এতটুকু কথাও বলতে পারেনি।"
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, "আওয়ামী লীগ আমলে মিডিয়া স্বাধীন। যা ইচ্ছা সত্য-মিথ্যা লিখে যাচ্ছে। কখনো কখনো একটু বেশিও লিখছে।"
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সফলতা তুলে ধরে তা দেশের মানুষের কাছে মেলে ধরতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
তিনি বলেন, "সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এনে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়িয়েছে। আমরা গ্রামের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে চাই। কসমেটিকস প্রলেপ দিয়ে শহরের উন্নয়ন দেখাতে চাই না।"
জনগণের সেবার জন্য দলীয় কর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানিয়ে হাসিনা বলেন, "কী পেলাম, আর কী পেলাম না। সেটা বড় কথা নয়। আমরা মানুষকে কী দিতে পারলাম- সেটাই বড় কথা।"
অনুষ্ঠানের শুরুতেই কুমিল্লা থেকে আসা নেতা-কর্মীদের বসা নিয়ে কিছুটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ব্যাংকোয়েট হলের চেয়ার পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা নেতা-কর্মীরা হৈ চৈ শুরু করেন।
এরপর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আ হ ম মুস্তফা কামাল নেতা-কর্মীদের কাছে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এসময় হলের দক্ষিণ দিকের কাচের দরজা খুলে তাদের বসতে দেওয়া হয়।
হাসিনা তার বক্তব্যের শুরুতেই সামনের সারিতে বসে থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের চার নেতাকে উঠে গিয়ে কুমিল্লার নেতাদের বসার সুযোগ করে দিতে বলেন। "তোমরা বাগানে গিয়ে ঘোর। কুমিল্লার লোকজনকে বসতে দাও," বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, সতীশ চন্দ্র রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, আইন বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মতিন খসরু।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসইউএম/এমআই/১৬১০ ঘ.