হরতাল প্রত্যাখ্যানে শাহবাগের আন্দোলনকারীদের অভিনন্দন (ভিডিও)
নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ১৮-০২-২০১৩
কালো পতাকা উত্তোলনের পর স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল প্রজন্ম চত্বর।
ছবি: মনিরুল আলম
জামায়াতের হরতাল প্রত্যাখ্যান করায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনকারীরা।
গতকাল রোববারের হালকা বৃষ্টির পর আজ সোমবার সকাল থেকেই ছিল কনকনে বাতাস। সেইসঙ্গে শীত। কিন্তু আবহাওয়ার প্রতিকূলতায় একটুও দমে যাননি শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনকারীরা। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে প্রতিবাদের গানে, স্লোগানে আজও মুখর ছিল প্রজন্ম চত্বর।
আজ প্রতিবাদ আর আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে জামায়াতের ডাকা হরতাল প্রত্যাখ্যান করায় দেশবাসীকে বারবারই ধন্যবাদ জানানো হয় শাহবাগের মঞ্চ থেকে।
আজ বেলা ১১টার দিকে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যার প্রতিবাদে কালো ব্যাজ ধারণ করেন শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া রাজীবসহ এ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নিহত তিন কর্মীর স্মরণে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পালন করা হয় নীরবতা। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবির সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কণ্ঠে এখন রাজীব হত্যার বিচারের দাবিও উঠছে।
প্রতিবাদ ১৪তম দিনে গড়াল
কাদের মোল্লাসহ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে তারুণ্যের প্রতিবাদ আজ ১৪তম দিনে গড়াল। প্রতিবাদী স্লোগান-গান আর আবৃত্তিতে আগুন ঝরছে তারুণ্যের কণ্ঠে। আজ এই ঠান্ডা বাতাসের মধ্যেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে আন্দোলনকারীদের ভিড়। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে আন্দোলন আরও উদ্দীপ্ত হয়ে উঠছে, কারও চোখে-মুখে নেই এতটুকু ক্লান্তির ছাপ। সন্ধ্যাতেও শাহবাগে ছিল মানুষের ঢল।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই দিন বিকেল থেকে কাদের মোল্লাসহ একাত্তরের মানবতাবিরোধী সব অপরাধীর ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নেন ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের সদস্যরা। এরপর সেখানে সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ গিয়ে যোগ দেন।
সংহতি প্রকাশ
বিকেলে টেলিভিশন নাটকের শতাধিক শিল্পী ও কলাকুশলী শাহবাগে গিয়ে আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানান। শাহবাগে শিল্পীরা জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক হিসেবে পরিচিত সব গণমাধ্যম বর্জন করার ঘোষণা দেন।
এর আগে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষক শাহবাগে গিয়ে আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। এ সময় তাঁরা যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি এবং জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন সংহতি জানিয়ে বলেন, 'যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি ছাড়া অন্য কিছু আমরা মানি না। রাজাকারদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।' শাহবাগে যে আন্দোলন চলছে সেই আন্দোলনে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ইনামুল হক বলেন, 'আপনারা ১৪ দিন ধরে এখানে আন্দোলনে সোচ্চার। আপনাদের যখন দেখি, তখন আমি একাত্তরে ফিরে যাই। ৪২ বছর ধরে আমরা রাজাকারদের লালন করছি, আর নয়।' তিনি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানানোর পাশাপাশি যার যার অবস্থানে থেকে জামায়াতের মালিকাধানীন পণ্য বর্জনেরও আহ্বান জানান।
বিল পাস আন্দোলনের একটি বড় বিজয়
জাতীয় সংসদে গতকাল বিকেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর সংশোধনী প্রস্তাব পাস হয়েছে। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনকারীরা মনে করছেন, এটি তাঁদের আন্দোলনের একটি বড় বিজয়। তাঁরা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করারও দাবি জানান। তবে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি—এই মূল দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
সংশোধনী প্রস্তাব জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার ফলে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের সমান সুযোগ সৃষ্টি হলো। একই সঙ্গে আপিল নিষ্পত্তির জন্য ৬০ দিনের সময়সীমাও নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে সংশোধনীতে।
স্লোগানে-প্রতিবাদে রাজীব
গত শুক্রবার রাজধানীর পল্লবীতে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার (৩৫) খুন হন। এ হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ আর প্রতিবাদের ঝড় ওঠে একাত্তরের 'রাজাকারদের' ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার আন্দোলনকারীদের মধ্যে। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর আরও তেজোদীপ্ত হয়ে উঠেছে। আগের স্লোগানের পাশাপাশি তাঁরা স্লোগান দিচ্ছে 'রাজীবের রক্ত বৃথা যেতে দেব না', 'এক রাজীব লোকান্তরে, লক্ষ রাজীব ঘরে ঘরে', 'মাগো তোমায় কথা দিলাম, রাজীব হত্যার বদলা নেব'।
স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত প্রজন্ম চত্বর
'তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা'; 'একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার'; 'সাম্প্রদায়িকতার আস্তানা, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও'; 'জ্বালো জ্বালো, আগুন জ্বালো'; 'পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা, পাকিস্তানেই ফিরে যা'; 'বাংলাদেশের মাটিতে জামায়াত-শিবিরের ঠাঁই নাই'; 'আমাদের ধমনিতে শহীদের রক্ত, এই রক্ত কোনো দিনও বৃথা যেতে দেব না'; 'আর কোনো দাবি নাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই'; 'জামায়াতে ইসলাম, মেড ইন পাকিস্তান'; 'এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন', 'জয় বাংলা'—এসব স্লোগানে মুখরিত শাহবাগ চত্বর।
সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে 'ক-তে কাদের মোল্লা, তুই রাজাকার তুই রাজাকার'; 'ক-তে কামারুজ্জামান, তুই রাজাকার তুই রাজাকার'; 'গ-তে গোলাম আযম, তুই রাজাকার তুই রাজাকার'; 'স-তে সাকা, তুই রাজাকার তুই রাজাকার'; 'ম-তে মুজাহিদ, তুই রাজাকার তুই রাজাকার'; 'ন-তে নিজামী, তুই রাজাকার তুই রাজাকার'; 'স-তে সাঈদী, তুই রাজাকার তুই রাজাকার' স্লোগান। প্রতিনিয়তই যোগ হচ্ছে নতুন নতুন স্লোগান।
আরিফুলইসলাম ভূঁইয়া
২০১৩.০২.১৮ ১৬:৪৭হিমেল ৭১৭
২০১৩.০২.১৮ ২০:০৬আশা করি শাহবাগ থেকে নুংরা রাজনীতি বিরোধে নতুন কর্মসূচী আসবে !
হিমেল ৭১৭
২০১৩.০২.১৮ ২০:০৭আশা করি শাহবাগ থেকে নুংরা রাজনীতি বিরোধে নতুন কর্মসূচী আসবে !
A.Forkan
২০১৩.০২.১৮ ২১:৪৯Link:
গুলশানে ৫ শিবিরকর্মী আটক
হরতালে নগরবাসীর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক (ভিডিও)
নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ১৮-০২-২০১৩«
__._,_.___