বগুড়ায় দিনভর জামায়াত-শিবির যা করল (ভিডিও)
নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধি, বগুড়া | তারিখ: ০৩-০৩-২০১৩
বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া ও শিবগঞ্জ উপজেলায় আজ রোববার দিনভর তাণ্ডব চালিয়েছেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এ সময় তাঁরা কয়েকটি এলাকায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস, আওয়ামী লীগের নেতার বাড়ি ও কার্যালয় ভাঙচুর করে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেন।
জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা থানা ও ফাঁড়িতে হামলা চালালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তাঁদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এসব সহিংসতায় সদরে তিনজন, শাজাহানপুরে চারজন ও শিবগঞ্জের মোকামতলায় দুজনসহ মোট নয়জন নিহত হয়েছেন। বগুড়ার পুলিশ সুপার সামগ্রিক পরিস্থিতি ভয়াবহ বলে জানিয়েছেন।
শাজাহানপুরে চারজন নিহত
স্থানীয়, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, সারা দেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিন আজ। হরতালকে কেন্দ্র করে নাশকতা এড়াতে বগুড়া পৌর এলাকায় আজ সকাল সাতটা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।তবে গতকাল শনিবার রাত থেকেই গুজব রটে—একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চেহারা চাঁদে দেখা যাবে। রাত তিনটার দিকে বিভিন্ন মসজিদ থেকে মাইকিং করে সবাইকে বাইরে এসে তা দেখার জন্য আহ্বান জানানো হয়। এভাবে জড়ো হয়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ভোর থেকেই মিছিল শুরু করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙচুর চালাতে থাকেন।
সকাল সাতটার দিকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা শাজাহানপুর থানায় হামলা করেন। পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাঁদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ একপর্যায়ে গুলি ছোড়ে। এতে দুজন নারীসহ চারজন নিহত হন।
শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলাম প্রথম আলো ডটকমকে তিনজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তাঁদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, থানায় হামলা চালানো হলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হয়।
দুপুর দেড়টা থেকে শাজাহানপুর উপজেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
শাজাহানপুরে সেনা টহল
শাজাহানপুর থানার পাশেই বগুড়া সেনানিবাস অবস্থিত। থানায় হামলার পর বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সেনাসহায়তার জন্য অনুরোধ জানান।জেলার সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, পুলিশ সুপার প্রয়োজনে সেনাবাহিনী চেয়ে অনুরোধ জানাতে পারেন।
পরে ঢাকায় সেনা সদর দপ্তর সূত্র জানায়, বগুড়ার জেলা প্রশাসকের অনুরোধে শাজাহানপুরে সেনানিবাস এলাকা ও তার আশপাশে সেনা টহল বাড়ানো হয়েছে। দুই প্লাটুন সেনা টহল দিচ্ছে।
সদর এলাকায় তিনজন নিহত
সকাল সাড়ে সাতটার দিকে বগুড়া সদরের ইয়াকুবিয়া স্কুলের মোড়ে র্যাবের গাড়িতে হামলা চালায় হরতাল সমর্থকেরা। র্যাব বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে র্যাবের সদস্যরা গুলি চালিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেন। এ সময় তিনজন নিহত হন।সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ সহিদ আলম প্রথম আলো ডটকমকে একজনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ
ভোর থেকেই বগুড়া শহর ও আশপাশের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা মিছিল বের করে নানা সহিংস কর্মকাণ্ড চালান।সকাল আটটার দিকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা বগুড়া রেলস্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেন। তাঁরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজউদ্দিনের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাচুর করেন। এ ছাড়া তাঁরা শহরে অবস্থিত এসএ পরিবহনের অফিস, করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিসের অফিস ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়ে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেন। একপর্যায়ে তাঁরা ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়িতেও হামলা চালান।
নন্দীগ্রামে সরকারি কার্যালয়ে আগুন-লুটপাট
নন্দীগ্রাম উপজেলায় আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়ে সরকারি বিভিন্ন কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেন। এ সময় তাঁরা ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সরকারি গাড়ি, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন, উপজেলা যুবলীগের কার্যালয় ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। পরে তাঁরা থানায় হামলার চেষ্টা করলে পুলিশ রাবারের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।এ ছাড়া, হরতালের সমর্থকেরা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট চালিয়েছে।
ইউএনও আসিব আহসান প্রথম আলো ডটকমকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
রেললাইন উপড়ে ফেলা হয়েছে
সকাল ১০টার দিকে সদরের কামারগাড়ি এলাকায় সরকারি আজিজুল হক কলেজের সামনে রেললাইন উপড়ে ফেলেছেন হরতালের সমর্থকেরা। ওই ঘটনার পর সান্তাহার-লালমনিরহাট রেলপথে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে।পুলিশের বক্তব্য
জেলার পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ। পুলিশই এখন জামায়াত-শিবিরের আক্রোশের লক্ষ্যবস্তু। শাজাহানপুর থানা ও কয়েকটি ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আরও বিজিবি চাওয়া হয়েছে।দুপচাঁচিয়ায় থানা ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ
আজ ভোর রাত থেকেই দুপচাঁচিয়ায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা মিছিল ও পিকেটিং শুরু করেন। সকালে তাঁরা সিও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বগুড়া-নওগাঁ সড়কের পাশে অবস্থিত আওয়ামী লীগের অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন।একপর্যায়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে থানা ঘেরাও করেন। থানার প্রধান ফটক তালাবদ্ধ থাকায় বিক্ষোভকারীরা থানার সামনে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন এবং থানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা উপজেলা সদরের পুরাতন বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের সভাপতির বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। এ ছাড়া তাঁরা দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খান টাওয়ারে ভাঙচুর চালান।
জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তালোড়া রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মের সামনে রেললাইনের ওপর কাঠের গুঁড়ি ও টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে রেল চলাচল বন্ধ করে দেন।
দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
শিবগঞ্জের মোকামতলায় দুজন নিহত
উপজেলার মোকামতলায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন।বর্তমান ও সাবেক সাংসদের বাসায় হামলা-ভাঙচুর
জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা বগুড়া-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ আব্দুল মান্নানের চকলোকমানের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। একই সময়ে সাবেক সাংসদ ও বগুড়ার প্রবীণ সাংবাদিক আমানুল্লাহ খানের বাসায়ও হামলা ও ভাঙচুর করা হয়।বগুড়ায় দিনভর জামায়াত-শিবির যা করল (ভিডিও)
__._,_.___