Banner Advertiser

Monday, August 19, 2013

[mukto-mona] ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা শুধুই কি একটি হত্যাকাণ্ড?



 

১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা শুধুই কি একটি হত্যাকাণ্ড?

জা হি দ হা সা ন
প্রতি বছর ১৫ আগস্ট যেমন ঘুরে ঘুরে আসবে, তেমনি এ দিনের মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতিচারণ, ইতিহাস ও পর্যালোচনাও অব্যাহত থাকবে। ১৯৭৫ সালের পর ৩৮ বছর পার হয়ে গেছে, সামনে আরও অনেক বছর পার হবে। দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট এখন বদলে গেছে। তাই এখন ১৫ আগস্টের ঘটনাকে বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে যে যার মতো করে আপন দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করছেন। কিন্তু বাংলাদেশের ১৯৭২-৭৫ সালের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখে ১৫ আগস্টকে মূল্যায়ন করা না হলে ১৫ আগস্টের প্রকৃত ইতিহাসের প্রতি অবিচার করা হবে।
১৫ আগস্টের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট : এ ঘটনার স্মৃতিচারণ, বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস জানার ও পর্যালোচনা করার সময় কতগুলো মৌলিক প্রশ্ন ও প্রেক্ষাপট অবশ্যই বিবেচনায় বা মনে রাখতে হবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছিল, তা কি শুধু 'কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্য' কর্তৃক শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের খুনের ঘটনাই ছিল, নাকি এটা প্রকৃত অর্থে ক্ষমতার মসনদ পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের বিশ্বাসঘাতক একটি মহল, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও সশস্ত্র বাহিনীর একটি সফল সামরিক অভ্যুত্থান বা বিপ্লব ছিল? আজ যারা এটাকে শুধুই একটি খুনের ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করছেন, তারা আর কেউ নন—তারা সুবিধাবাদী, বর্ণচোরা অর্থাত্ ভোল পাল্টাতে অভ্যস্ত আওয়ামী রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী একদল চাটুকার। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত এই দালাল গোষ্ঠীই চাটুকার হিসেবে শেখ মুজিবের চারপাশে অবস্থান করে দেশের অর্থসম্পদ লুটেপুটে খেয়েছিল, দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছিল, লাল বাহিনী, নীল বাহিনী, রক্ষীবাহিনী তৈরি করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তথা দেশের হাজার হাজার ভিন্নমতাবলম্বী মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করতে শেখ মুজিবকে উদ্বুদ্ধ ও উত্সাহিত করেছিল। ১৯৭৪ সালে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে দেশের লাখ লাখ মানুষকে না খেয়ে মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য করেছিল। সে সময় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম দৈনিক গড়ে শুধু ঢাকা শহরেই ১০টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেছে, ডাস্টবিনে মানুষ ও কুকুর খাওয়া (উচ্ছিষ্ট) নিয়ে টানাটানি করেছে, কাপড়ের অভাবে কলাপাতা দিয়ে লাশ দাফন করতে হয়েছিল। এসবের সচিত্র করুণ প্রতিবেদন ওই সময় প্রতিদিন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৭২-৭৫ সালের মধ্যেই বাংলাদেশে প্রথম ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল বাংলাদেশের জন্মের পর ওই সময়েই প্রথম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের দলীয় কোন্দলের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতজন ছাত্রকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল। ছাত্রলীগ তাদের এই ঐতিহ্যকে এখন আরও উচ্চতর ও জঘন্য পর্যায়ে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে। ওই সময়েই বাংলাদেশে ছিনতাই বা হাইজ্যাক শব্দটির জন্ম হয়েছিল, সন্ধ্যার পর ছিনতাইয়ের ভয়ে মানুষ ঘর থেকে বের হতো না। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ, দুঃশাসন/কুশাসন বলতে যা বোঝায়, তার সফল সূচনা বা শুরু ওই সময়েই হয়েছিল। বিচারবহির্ভূত হত্যার প্রচলন (বিপ্লবী সিরাজ সিকদার হত্যার মাধ্যমে) ওই সময় থেকেই শুরু হয়েছিল। নির্বাচনে কারচুপি (ব্যালট বাক্স ছিনতাইসহ) ওই সময়েই শুরু হয়েছিল, পরীক্ষায় ফ্রি-স্টাইল নকলের মহোত্সব ওই সময়েই শুরু হয়েছিল। চাটুকার আওয়ামী গোষ্ঠীর দালালরা ওই সময় দেশের এমন পরিস্থিতির বিরুদ্ধে মানুষ যাতে গণতান্ত্রিক পন্থায় বিরোধিতা করতে না পারে, দেশের ও জনগণের প্রকৃত দুর্দশার অবস্থা পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করতে না পারে, সে জন্য মানুষের গণতান্ত্রিক ও বাকস্বাধীনতাকে স্তব্ধ করার উদ্দেশ্যে এবং শেখ মুজিবকে ইতিহাসের ঘৃণ্যতম স্বৈরাচারী শাসক বানানোর উদ্দেশ্যে তখন বাকশাল নামক একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে শেখ মুজিবকে উদ্বুদ্ধ করেছিল, তাদের সবার মুখে তখন স্লোগানও ছিল একটি—'এক নেতা এক দেশ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ'। দেশের সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে শুধু সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন চারটি সংবাদপত্র প্রকাশের অনুমতি দিয়েছিল। দেশের ওই সময়কার এমন অরাজক, শ্বাসরুদ্ধকর ও অসহনীয় জঘন্য পরিস্থিতিকে পটপরিবর্তনের সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি বিবেচনা করেই ১৫ আগস্টের গভীর রাতে কিছু সেনা কর্মকর্তা শেখ মুজিবকে হত্যা করে দেশের শাসনভার তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে এ ঝুঁকিপূর্ণ ও মারাত্মক দুঃসাহসী কাজটি তারা সফলভাবে সম্পন্ন এজন্য করতে পেরেছিলেন; কারণ তাদের সঙ্গে ও তাদের প্রতি বলতে গেলে আওয়ামী লীগের একটি বিরাট অংশ ও পুরো সশস্ত্র বাহিনীর সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল। তা না হলে শুধু ১০-১২ জন সামরিক অফিসারের পক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন জাতীয় নেতাকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশের শাসনভার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়া কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠজনরাই সেদিনের ঐতিহাসিক ঘটনার নায়ক সামরিক অফিসারদের রাজনৈতিক সমর্থন দিয়েছিলেন, যার প্রমাণ হলো পটপরিবর্তনের পর শেখ মুজিবের মন্ত্রিসভার প্রভাবশালী মন্ত্রী প্রয়াত খন্দকার মোশতাক আহমদ হয়েছিলেন বিপ্লব/সামরিক অভ্যুত্থানের নায়ক সামরিক অফিসারদের মনোনীত প্রেসিডেন্ট এবং তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা ছিলেন আর কেউ নন, শেখ মুজিবের মন্ত্রিসভা ও তার দল আওয়ামী লীগেরই সদস্য ও নেতারা। সংসদে তখন দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যই ছিলেন আওয়ামী লীগের লোক, তারা তখন কেউ তাদের নেতার হত্যার প্রতিবাদে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেননি, এমনকি তারা বা তখনকার আওয়ামী গোষ্ঠীর কোনো নেতা, কথিত বুদ্ধিজীবী বা সুশীল সমাজের আজকের গলাবাজরা শেখ মুজিবের জন্য ঢাকার পরিবর্তে (ঢাকায় না হয় সামরিক বাহিনীর ভয় ছিল) দেশের কোথাও একটি শোকমিছিল বা গায়েবানা জানাজার আয়োজনও করেননি। বরং শেখ মুজিবের রক্তের দাগ না শুকাতেই তারা খন্দকার মোশতাকের সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে সংসদ অধিবেশনে যোগদান করেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরাই ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে (১৩ সেপ্টেম্বর '৭৫) সংসদে বসে একবাক্যে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, শেখ মুজিবের হত্যার বিচার কোনোদিন করা যাবে না (পরে জিয়াউর রহমান ও এরশাদের শাসনামলে ইনডেমনিটি বিল আকারে যেটাকে সংবিধানসিদ্ধ করা হয়েছিল)। জ্ঞানপাপী আওয়ামী গোষ্ঠীর এসব মীরজাফর যারা এখনও বেঁচে আছেন তারা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি ১৫ আগস্ট শেখ মুজিব নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের অন্যতম সিনিয়র নেতা মরহুম আবদুল মালেক উকিল মন্তব্য করেছিলেন, 'বাংলাদেশে ফেরাউনের রাজত্বের অবসান হয়েছে।' আরেক জাঁদরেল আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি নোয়াখালীর মুহাম্মদউল্লাহ বলেছিলেন, 'এ পরিবর্তন অনিবার্য ছিল।' আওয়ামী লীগের আরেক সিনিয়র নেতা টাঙ্গাইলের মরহুম আবদুল মান্নান ওই সময় মোশতাক সরকারের বিশেষ দূত হয়ে রাশিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের দেশসমূহে সফরে বের হয়েছিলেন এসব দেশের সরকারকে বোঝানোর জন্য যে, শেখ মুজিব সরকারকে উত্খাত করা কেন প্রয়োজন ও যুক্তিসঙ্গত ছিল।
১৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে দেশের অনেক জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ১৫ আগস্টের পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে এর অপরিহার্যতাকে অনিবার্য হিসেবে উল্লেখ করে সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় প্রকাশ করেছিল। সেই দিনের ঘটনাপঞ্জি সংবলিত দৈনিক পত্রিকার পাতাগুলো উল্টালেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। যার মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত ও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ১৫ আগস্টের ঘটনা শুধু কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের একটা খুনের ঘটনা ছিল না। ওই ঘটনার সঙ্গে শুধু কয়েকজন সামরিক অফিসারই জড়িত নন, তারা ছিলেন ফ্রন্টলাইনের সৈনিক, তাদের পেছন থেকে কমান্ড দিয়েছিলেন এবং সমর্থন ও সাহায্য-সহযোগিতা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগেরই অধিকাংশ নেতা, গোটা সশস্ত্র বাহিনী, দেশের অরাজক ও নাজুক পরিস্থিতি এবং পরিবর্তনপ্রত্যাশী দেশের গণতন্ত্রকামী সাধারণ জনগণ। তা না হলে এমন ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান কখনও সফল হতো না এবং ঘটনার পর কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই রাষ্ট্রক্ষমতা তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারত না।
আজ যারা শেখ মুজিবের জন্য মায়াকান্না করছেন, শেখ মুজিবের প্রশংসা করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন এবং শেখ মুজিব হত্যার বিচারের দাবিতে বা বিচারের রায় পুরোপুরি কার্যকর করার দাবিতে সোচ্চার হয়ে মুজিব-প্রেমী বা মুজিব-সৈনিক সাজার মহড়া দিচ্ছেন তারা সেদিন কোথায় ছিলেন? মুজিব হত্যার পর একজনকেও তো সেদিন ঢাকার রাস্তায় একটা প্রতিবাদ মিছিল বা সভা এমনকি একটা গায়েবানা জানাজার আয়োজন করতেও দেখা যায়নি। কিসের ভয় ছিল সেদিন, সৈনিকরা মেরে ফেলত? যদি একজনও সেদিন মুজিবের জন্য রাস্তায় নেমে জীবন দিত (শহীদ নূর হোসেনের মতো) তাহলেও আজ বলা যেত বা স্মরণ করা যেত শেখ মুজিবের সত্যিকার সৈনিক বা অনুসারী অন্তত একজনও ছিল। ঢাকায় না হয় ভয় ছিল, কিন্তু দেশের অন্য কোথাও এমন একটা ঘটনাও তখন দৃশ্যমান হয়নি বা জানা যায়নি। আসলে এরা সবাই ছিল শেখ মুজিবের ভাষায় 'চাটার দল'। তাই মুজিব মারা যাওয়ার পর এদের মধ্যে নামমাত্র কয়েকজন জীবন বাঁচানোর জন্য পালিয়ে আত্মগোপন করেছিল আর অধিকাংশই মোশতাক সরকার তথা অভ্যুত্থানকারী সেনা অফিসারদের অনুগত হয়ে বহাল তবিয়তে ছিল। এমনকি দেশের বাইরে বাংলাদেশের কোনো একটা দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত বা কর্মকর্তারাও এ ঘটনার প্রতিবাদে বিদ্রোহ বা পদত্যাগ করেনি। বরং মোশতাক সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে।
শেখ মুজিব নিহত হওয়ার ৩৮ বছর পর আজকের বাস্তবতায় শেখ মুজিবকে তার কথিত অনুসারীরা যেভাবে মূল্যায়ন ও তার জন্য মায়াকান্না করছে একইভাবে ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত তখনকার শেখ মুজিব ও বাস্তবতাকে বিবেচনা করা হলে ১৫ আগস্টের ঘটনাকে কেবল একটা হত্যাকাণ্ড বা খুনের ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। যদি তাই হতো তবে ওই সময় ঘরে ঘরে মুজিবের জন্য মাতম করা হতো।
ত্রিশ বছর পর শেখ মুজিব হত্যার বিচার চলাকালীন আইনজীবী, আইনমন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী ওই সময়কার বিচারপতিদের ধিক্কার দিয়ে বলেছিলেন, ওই সময় বিচারপতিরা খন্দকার মোশতাক বা বিচারপতি সায়েমকে বা জিয়াউর রহমানকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন, তাদের পেশাগত দায়িত্বের শপথ ভঙ্গ করেছেন, ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলে কি তাই অথবা এ মন্তব্য কি তাদের মুখে মানায়? পাকিস্তানের সামরিক জান্তারা ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে আরও বেশি ভয়ঙ্কর ও হিংস্র ছিল, তখনও প্রধান বিচারপতি বাঙালি বিএ সিদ্দিকী টিক্কা খানকে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের (আজকের বাংলাদেশ) গভর্নর হিসেবে শপথ করাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে জাতির ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। সে তুলনায় ১৯৭৫ সালের অবস্থা এমন ছিল না যে তখন কোনো বিচারপতি উল্লিখিত ব্যক্তিদের শপথ করানোর দায়িত্ব প্রত্যাখ্যান করতে বা অস্বীকৃতি জানাতে পারতেন না, তখনও বিচার বিভাগে সাহসী ব্যক্তিরা ছিলেন, কিন্তু পার্থক্য হলো ১৯৭১ সালে বাঙালি বিচারপতিরা সবাই ছিলেন পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে, আর ১৯৭৫ সালে বিচার বিভাগের অধিকাংশ ব্যক্তিই ছিলেন ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পক্ষে বা সমর্থক। তাই তারা তখন খন্দকার মোশতাক, বিচারপতি সায়েম বা জিয়াউর রহমানকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করাতে বিব্রত বোধ করেননি বা অস্বীকৃতি জানাননি। এটা হলো বাস্তবতা এবং এর মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয় ১৫ আগস্টের ঘটনা শুধু কিছু সেনা অফিসারের খুনের বা হত্যার ঘটনা ছিল না।
আওয়ামী লীগের এই চাটুকার গোষ্ঠীর আরও একটা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে তখন এরা রাজনৈতিক ও আর্থিক ফায়দা হাসিলের হীন উদ্দেশ্যে নিজেদের শেখ মুজিব তথা আওয়ামী লীগের কথিত আদর্শের সৈনিক হিসেবে জাহির করার অভিনয় করা শুরু করে। আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীরা এদের ছলা-কলা ও উদ্দেশ্য বুঝতে পারেন না। তাই তাদের কর্মকাণ্ড ও অতিভক্তির কারণে একপর্যায়ে এরা দেশ ও জাতিকে বিভ্রান্তি ও হতাশার দিকে ঠেলে দেয় এবং কোনো কোনো সময় দল ও দলের নেতা-নেত্রীদেরও বিপদ ও ভয়ঙ্কর পরিণতিতে নিপতিত করে। যেমন শেখ মুজিবকে এই তোষামোদী ও চাটুকার গোষ্ঠী কুবুদ্ধি দিতে দিতে একপর্যায়ে জনগণ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে স্বৈরাচারী শাসকে পরিণত করেছিল। ১৫ আগস্টের করুণ পরিণতির পর এই 'চাটার দল' ২১ বছর পর্যন্ত ভোল পাল্টিয়ে এবং সুযোগ বুঝে আবার মাঠে নামার অপেক্ষায় ছিল। ১৯৯৬ সালে যখন মুজিব-কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় এলো তখন আবার এই দালালচক্র সক্রিয় হয়ে উঠল, হাসিনার ৫ বছরের শাসনের পর ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি'র শাসনামলে এরা কিছুটা নীরব থাকলেও ২০০৮-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যখন বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে এলো তখন রাজনৈতিক, আর্থিক সুবিধা নেয়া ও পাওয়ার জন্য মুজিব-কন্যাকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে মুজিব হত্যা তথা ১৫ আগস্টের ঘটনার বিচার ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা ও তত্কালীন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যেভাবে বিষোদগার ছড়াচ্ছে ও কটূক্তি করছে তাতে এদের স্ববিরোধী চরিত্র বাঙালি জাতির সামনে আবারও তীব্রভাবে ফুটে উঠছে। যেসব পাকা চুলের অধিকারী সাবেক আমলা, আইনজীবী, সাবেক সামরিক অফিসার, রাজনীতিবিদ, কথিত সুশীল সমাজের বর্ণচোরা প্রতিনিধি বা মুখপাত্র এখনও যারা জীবিত আছেন এবং শেখ হাসিনাকে খুশি করানোর জন্য এখন মুজিব-প্রেমের গদগদ সংলাপ আওড়াচ্ছেন তারা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর কোথায় ছিলেন এবং সেদিন তারা কী ভূমিকা পালন করেছিলেন? আপিল বিভাগে মুজিব হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তদের শুনানি চলাকালে তত্কালীন সেনাপ্রধান (জে. শফিউল্লাহ) ও অন্যান্য সামরিক অফিসারকে ভূমিকা নিয়ে স্বয়ং বিচারপতিরা তাদেরকে তিরস্কার করে মন্তব্য করেছিলেন, তারা সেদিন ছিল ভীরু, কাপুরুষ ও মিথ্যাবাদী। অর্থাত্ সেদিন শেখ মুজিবকে বাঁচানো বা রক্ষা করার জন্য তারা কেউ এগিয়ে আসেনি বলে বা সাহসী ভূমিকা দেখায়নি বলে এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময়ে তারা যেসব তথ্য দিয়েছে তা মিথ্যা ছিল বলে বিচারকরা তাদের সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছিলেন। বিচারপতিরা খন্দকার মোশতাককেও বিশ্বাসঘাতক বলে মন্তব্য করেছিলেন। আজকের এসব 'সাহসী' বিচারপতির মতো কাউকে '৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর সাহসী ভূমিকা পালন করতে বা সাহসী মন্তব্য করতে দেখা যায়নি কেন? এখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে বলে সাহস দেখাচ্ছেন? এসব সুবিধাবাদীদের কারণেই এ দেশে বার বার স্বৈরাচারের জন্ম নেয় এবং অসাংবিধানিক শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার সাহস পায়।
১৫ আগস্টের সামরিক দিক পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করতে গেলে যে তথ্য ও পটভূমি বের হয়ে আসে তাতে ১৫ আগস্টের ঘটনাকে কেবল কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের খুনের ঘটনা হিসেবে কখনও বিবেচনা করার যুক্তি ও সুযোগ নেই। যদি তাই হতো তবে এটাকে বলা যেত শুধু একটা সেনা বিদ্রোহ। কিন্তু ১৫ আগস্টের ঘটনা কোনো সেনা বিদ্রোহ ছিল না, ১৫ আগস্টের সামরিক অভিযানের পর তত্কালীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক সরকারের পতন ঘটেছিল এবং যারা সেনা অভিযান পরিচালনা করেছিলেন তারা তাদের হাতে রাষ্ট্রের পূর্ণ শাসনভার তুলে নিতে ও নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন, তারা তত্কালীন আওয়ামী লীগ নেতাদেরকে সঙ্গে নিয়েই দেশে একটা বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতেও সক্ষম হয়েছি (যদিও এর মেয়াদ তিন মাস ছিল)। ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে যে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছিল এটাকে বরং কিছু সেনা সদস্যের একটা সেনা বিদ্রোহ বলা যায়, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে নেয়া সম্ভব হয়নি, কোনো সামরিক বা বেসামরিক সরকার গঠন করাও তার পক্ষে সম্ভব হয়নি এবং যার মেয়াদকাল ছিল মাত্র তিন দিন। এরপর ১৫ আগস্টের অনুসারী ও সমর্থকদের দ্বারা ৭ নভেম্বর আরেক সামরিক অভিযানের (সিপাহী-জনতার বিপ্লব) মাধ্যমে খালেদ মোশাররফকে মর্মান্তিকভাবে বিদায় নিতে হয়েছিল এবং রাষ্ট্রক্ষমতা আবারও ১৫ আগস্টের সেনা অভিযান পরিচালনাকারীদের হাতে ও নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিল।
১৫ আগস্টের ঘটনা যদি সামরিক বাহিনীর একটা ক্ষুদ্র অংশের বিদ্রোহ বা অ্যাডভেঞ্চার জাতীয় কিছু হতো তবে খালেদ মোশাররফের ৩ নভেম্বরের ঘটনা বা কিছু বিদ্রোহী সেনা সদস্য কর্তৃক চট্টগ্রামে সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মতো বিফলে পরিণত হতো অর্থাত্ বিদ্রোহী সেনা সদস্যরা পরবর্তী সময়ে বা সঙ্গে সঙ্গে সরকার অনুগত বা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেনা সদস্যদের পাল্টা অভিযানে পরাভূত হতো বা ধরা পড়ত বা নিহত হতো। কিন্তু ১৫ আগস্টের নেতৃত্বদানকারী সেনা সদস্যদের বেলায় এমনটা ঘটেনি কারণ তাদের সঙ্গে ও পেছনে ছিল বলতে গেলে গোটা সশস্ত্র বাহিনীর সমর্থন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগিতা। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের কথা বাদ দিলেও তখন বাংলাদেশের অন্য কোনো ক্যান্টনমেন্টেই ১৫ আগস্টের ঘটনার বিরুদ্ধে তাত্ক্ষণিকভাবে একটা ছিটেফোঁটা প্রতিরোধের ঘটনাও ঘটেনি।
শেখ মুজিবের মতো একজন শাসককে উত্খাত বা হত্যার মতো ঘটনার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার সাহস ও শক্তি শুধু কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের পক্ষে কখনও সম্ভব হতো না, গোটা সশস্ত্র বাহিনী যদি তাদের পক্ষে না থাকত। কর্নেল ফারুকের কমান্ডে ঢাকা সেনানিবাস থেকে রাতের অন্ধকারে যখন দরজা-জানালা ফাটানো বিকট শব্দে ১৫-১৬টা ট্যাংক ও সাঁজোয়া বহর বের হয়ে আসছিল তখন ক্যান্টনমেন্টের সেনা অফিসার ও সদস্যরা কেউই নিশ্চয়ই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলেন না। সবাই টের পেয়েছেন এবং কী ঘটতে যাচ্ছে তাও নিশ্চয়ই তখন গোপন ছিল না, কিন্তু তাদেরকে বাধা দিতে তখন কেউই এগিয়ে আসেনি (কারণ এতে সবারই সমর্থন ছিল)। তত্কালীন সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউল্লাহকে নাকি শেখ মুজিব নিহত হওয়ার ৪০ মিনিট আগে অবহিত করেছিলেন, কিন্তু তিনি তখন কোনো প্রতিরোধের বা বিদ্রোহী সেনাদের বিরুদ্ধে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে চাননি বা সক্ষম হননি। কারণ তিনি তখন বুঝেছিলেন বা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন তার কমান্ডে কোনো সৈনিক নেই, ১৫ আগস্টের ঘটনার হোতাদের পক্ষেই বলতে গেলে পুরো সশস্ত্র বাহিনীর সমর্থন চলে গিয়েছিল। অথচ ৩৮ বছর পর জেনারেল শফিউল্লাহ নিজেকে দায়মুক্ত করার জন্য বলছেন ১৫ আগস্টের ঘটনার কথা জেনারেল জিয়াউর রহমান আগেই জানতেন। যদি উপ-সেনাপ্রধান হিসেবে জিয়াউর রহমান জানতেন তবে সেনাপ্রধান হিসেবে শফিউল্লাহ জানতেন না কেন? তখন স্বাধীনতা-পরবর্তী অবস্থায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ছিল জোড়াতালি দেয়া একটি ছোট আকারের বাহিনী। ওই ছোট একটি বাহিনীর অভ্যন্তরে এত বড় একটি বিদ্রোহের পরিকল্পনা হচ্ছিল এটা সেনাপ্রধানের অজানা ছিল কখনও বিশ্বাসযোগ্য নয়; বরং ধরে নেয়া যায় তিনি জানতেন এবং তার সমর্থনও ছিল, তা না হলে নিহত হওয়ার ৪০ মিনিট আগে মুজিব তাকে বলার পরেও তিনি এগিয়ে যাননি কেন? এমনকি কর্নেল জামিল, যিনি প্রেসিডেন্টের (শেখ মুজিব) গার্ড রেজিমেন্টের প্রধান ছিলেন এবং যার অধীনে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তিন হাজার চৌকষ সৈনিক ছিলেন। সেদিন রাতে তিনি তার অধীন একজন সৈনিককেও পাশে পাননি, শেষ পর্যন্ত তিনি একাই যখন শেখ মুজিবের বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখন পথিমধ্যে নিহত হয়েছিলেন। তদুপরি তত্কালীন বিমান বাহিনী প্রধান (বর্তমানে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সদস্য) ও নৌবাহিনী প্রধানও মোশতাক সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে ১৫ আগস্টের পরিবর্তনের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছিলেন। তাছাড়া শেখ মুজিব সরকার সেনাবাহিনীর সমান্তরাল বাহিনী হিসেবে তার নিজস্ব ও বিশ্বস্ত রক্ষীবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। রক্ষীবাহিনীর প্রায় এক লাখ সদস্যও তখন অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে ও যানবাহনে সজ্জিত ছিল। কিন্তু তারাও ওইদিন (১৫ আগস্ট) রাতে শেখ মুজিবকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে পারেননি, কারণ সেনাবাহিনীর সদস্যরা পুরো রক্ষীবাহিনীর সদর দফতর ও ছাউনিগুলো ট্যাংক ও সাঁজোয়া বাহিনী দিয়ে ঘিরে রেখেছিলেন। পরেরদিন সকাল ১০টায় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে লিফলেট ফেলে রক্ষীবাহিনীকে অস্ত্রসমর্পণ ও আত্মসমর্পণের জন্য নির্দেশ দেয়া হলে তারা সবাই আত্মসমর্পণ করেন। এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করলেই পরিষ্কার হয়ে যায়, ১৫ আগস্টের ঘটনা শুধু কিছু বিপথগামী সেনাসদস্যের খুনের ঘটনা ছিল না, এটা ছিল রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের লক্ষ্যে পুরো সশস্ত্র বাহিনীর একটি সফল সামরিক অভিযান বা বিপ্লব। কিন্তু ২১ বছর পর ১৫ আগস্টের ঘটনায় নিহত শেখ মুজিবের জীবিত কন্যার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যখন ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে তখন এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে বর্তমানে যখন শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এসেছে—এখন ভোল পাল্টাতে অভ্যস্ত একশ্রেণীর রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী, সাংবাদিক ও কথিত সুশীল সমাজের বর্ণচোরা অভিনেতারাই নিজেদের দায়দায়িত্ব, ব্যর্থতা ও মীরজাফরী ভূমিকাকে আড়াল করার উদ্দেশ্যে ১৫ আগস্টের ঘটনাকে শুধু কিছু বিপথগামী সেনাসদস্যের খুনের ঘটনা হিসেবেই আখ্যায়িত করছেন এবং খুনিদের বিচারের তথা বিচারের রায় বাস্তবায়নের জন্য সোচ্চার হচ্ছেন। এরা ঘটনার একদিককেই (মুজিব হত্যা) শুধু আজকের জনগণের কাছে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে মুখ্য করে তোলার চেষ্টা করছেন; কিন্তু ঘটনার পটভূমি, নেপথ্য ইতিহাস ও কারণ, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং তখনকার বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে সুকৌশলে ১৫ আগস্টের ঘটনার আরেকদিককে আজকের জনগণের কাছে অন্ধকারে ঢেকে রাখতে চাচ্ছেন। এ কারণেই ১৫ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সেনা অফিসারদের বিচার বা শাস্তি দেয়ার মধ্য দিয়েই ১৫ আগস্টের ঘটনার জন্য জাতির কথিত দায়মুক্তি হয়ে যাবে না বা এর সমাপ্তি হবে না, এর রেশ আগামীতেও বিদ্যমান থাকবে। যার সত্যতা বা ইঙ্গিত স্বয়ং শেখ হাসিনার মুখ থেকেই বার বার উচ্চারিত হচ্ছে। তিনি বলছেন, বুলেট ও বোমা/গ্রেনেড নাকি তাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়াচ্ছে, যে কারণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার তার নিজের, শেখ হাসিনার বোন ও তাদের ছেলে, মেয়ে, নাতি-নাতনি অর্থাত্ শেখ মুজিবের পরিবার তথা বংশপরম্পরায় উত্তরসূরিদের আজীবন নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন এক নিরাপত্তা আইন পাস করেছে। ১৫ আগস্টের ঘটনা যদি হাতেগোনা কিছু বিপথগামী সেনাসদস্যের কেবল একটি খুনের ঘটনাই হতো তবে অন্য যে কোনো সন্ত্রাসী বা খুনের ঘটনার মতো খুনিদের বিচার বা মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তি দেয়ার মধ্য দিয়েই তার সমাপ্তি ঘটে যেত, যেমনটা হয়েছিল জিয়াউর রহমানের হত্যার ঘটনায়। বিপথগামী কয়েকজন সেনাসদস্যের খুনের ঘটনা ছিল বলেই তখন ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সামরিক আইনে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পর জেনারেল এরশাদকে বা পরবর্তীতে খালেদা জিয়াকে আজ পর্যন্ত একবারও বলতে বা আতঙ্কিত হতে হয়নি যে, তাদের প্রতিনিয়ত বুলেট বা বোমা তাড়া করছে। তারা দু-তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েও তাদের নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আজীবন নিরাপত্তার জন্য কোনো আইন পাস করতে হয়নি (যদিও জেএমবির শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার, বিচার ও ফাঁসির রায় খালেদা জিয়া সরকারের আমলেই হয়েছিল)। এমনকি শেখ হাসিনার মতো জেনারেল এরশাদ বা খালেদা জিয়াকে উন্মুক্ত জনসভায় বুলেটপ্রুফ ডায়াস ব্যবহার করতেও হয় না; কারণ জিয়াউর রহমানের হত্যার ঘটনাটি ছিল কেবলই বিপথগামী কিছু সেনাসদস্যের খুনের ঘটনা, যার বিচার তাত্ক্ষণিকভাবেই সামরিক আদালতে সম্পন্ন করা হয়েছিল। কিন্তু শেখ মুজিব সেনাসদস্যদের হাতে নিহত হলেও তাকে হত্যার দায়ে সামরিক আদালতে তাত্ক্ষণিকভাবে জড়িতদের কারও কোনো বিচার হয়নি, এমনকি ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্যান্টনমেন্টকে তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে জিয়াউর রহমানকে আটক করে নিজেকে সেনাপ্রধান ঘোষণা করার পরেও ১৫ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সেনা অফিসারদের কারও কোনো বিচার তো দূরের কথা, তাদের কাউকে বন্দি বা আটক করার সাহসও পাননি (যে কারণে ৪ নভেম্বর জেলখানায় শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠ আরও চার শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করার সুযোগ হয়েছিল)। খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানের পর ঢাকার রাজপথে কথিত মুজিবপ্রেমীদের একটি মিছিল হয়েছিল। মনে করা হয়েছিল খালেদ মোশাররফ আওয়ামী লীগ বা মুজিবের সমর্থক। খালেদ মোশাররফই মুজিব হত্যাকারী সেনা অফিসারদের নির্বিঘ্নে একটি বিশেষ বিমানে ওই সময় ব্যাংকক পাঠিয়ে দেশত্যাগ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
আজ বলা হচ্ছে, জিয়াউর রহমান মুজিবের খুনিদের বিচার না করে পুরস্কৃত করেছিলেন, ৩৮ বছর পর আওয়ামী লীগ যখন আজ ক্ষমতাসীন তখন আওয়ামী লীগের একমাত্র সর্ববৃহত্ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জিয়াউর রহমানের সৃষ্ট রাজনৈতিক দল বিএনপিকে মোকাবিলা করার জন্য এমন অভিযোগ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ৩৮ বছর আগের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ও বাস্তবতায় ১৫ আগস্টের ঘটনাটি ছিল তখনকার গোটা বাঙালি জাতির কাছে প্রত্যাশিত একটি পরিবর্তন। তাই তখন মুজিবের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাও তার হত্যার কোনো প্রতিবাদ না করে বরং হত্যাকারীদের সহযোগিতা করেছিলেন। তখন মুজিবের হত্যাকারীদের খুনি না ভেবে জাতীয় বীর হিসেবেই মনে করা হয়েছিল, ঢাকার রাজপথে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল এমনকি জনতা ১৫ আগস্টের নায়কদের গলায় ও ট্যাংকের নলে ফুলের মালাও পরিয়ে দিয়েছিল। তখনকার বাস্তবতায় যাদের একটি সফল সামরিক বিপ্লবের বীর হিসেবে মনে করা হয়েছে, তাদের পুনর্বাসিত বা পুরস্কৃত করাটাই ছিল স্বাভাবিক, জিয়াউর রহমানের জায়গায় অন্য কেউ তখন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলে তা-ই করতেন। তাছাড়া ওরা দেশে ফিরে এলে আবারও সেনাবাহিনীতে নতুন করে বিদ্রোহ বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে বলে জিয়াউর রহমান (পরবর্তী সময়ে এরশাদও) তাদের বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োগ করেছিলেন। উল্লেখ্য, কর্নেল ফারুককে তখন দেশে আসার সুযোগ দেয়ায় তিনি যশোর ক্যান্টনমেন্টে এ ধরনের একটি বিদ্রোহের ঘটনা ঘটান, জিয়াউর রহমান তাকে তখন পাঁচ বছর জেল দেন এবং পাঁচ বছর পর জেলগেট থেকে সোজা বিমানবন্দরে নিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১/১১-র নায়ক জেনারেল মইন, জেনারেল মাসুদ গং কি ১৫ আগস্টের মতো দেশে একটি প্রত্যাশিত পরিবর্তন এনেছিল? দেশবাসী কি তখন তাদের সমর্থনে রাজপথে মিছিল বের করেছিল (কিছু চেনা সুবিধাবাদী দালাল ছাড়া)? তাহলে শেখ হাসিনা সরকার তাদের পুরস্কৃত করল কেন? ১৫ আগস্টের নায়করা দেশ ও জনগণের (কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর নয়) তখনকার প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্ব পালন করেছিল; কিন্তু ১/১১-র নায়করা শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের স্বার্থ হাসিলের দায়িত্ব পালন করেছিল।
১৫ আগস্টের ঘটনার পর দীর্ঘ ২১ বছরেও হত্যাকারীদের কারও বিরুদ্ধে সাধারণ তথা প্রচলিত আইনেও কোনো মামলা হয়নি (হয়তো যুক্তি দেখানো হবে, ইনডেমনিটি থাকায় এবং অনুকূল পরিবেশ না থাকায় তা সম্ভব হয়নি), শেখ হাসিনা ২১ বছর পর রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার পর এ ব্যাপারে প্রথম মামলা হয় এবং ১৫ আগস্টের ঘটনার প্রায় ৪০ বছর পর শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের বিচারপর্ব শেষ করে রায় কার্যকর করা হয়েছে। এ ঘটনার তথা মুজিব হত্যার বিচার প্রক্রিয়ার জন্য দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো, ঘটনাটি নিছক কিছু বিপথগামী সেনাসদস্য কর্তৃক একটি হত্যাকাণ্ড ছিল না, এ ঘটনার সঙ্গে গোটা সশস্ত্র বাহিনী ও আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা জড়িত ছিলেন এবং তখনকার একটি বিরাট রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং আন্তর্জাতিক স্বার্থান্বেষী মহলের মদত ও পৃষ্ঠপোষকতায় ক্ষমতার অনিবার্য পতন ঘটেছিল (যার প্রমাণ এখন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মাধ্যম ও গোয়েন্দা সংস্থার ধারাবাহিক রিপোর্টে প্রকাশ হচ্ছে)। মরহুম শেখ মুজিব ১৫ আগস্টের আগে চাটুকার মহলের কুপরামর্শে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান চেতনা গণতন্ত্র, মুক্তচিন্তা, মতপ্রকাশ তথা বাকস্বাধীনতাকে স্তব্ধ করে দিয়ে দেশে একদলীয় স্বৈরশাসন (এক নেতা এক দেশ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ) কায়েম করার লক্ষ্যে বাকশাল গঠন করেছিলেন, মাত্র চারটি সংবাদপত্র সরকারি মালিকানায়/নিয়ন্ত্রণে রেখে দেশের সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এতে শত শত সাংবাদিক বেকার হয়েছিলেন এবং পরবর্তী জীবনে তাদের কেউ কেউ রিকশা চালিয়েও জীবিকা অর্জনে বাধ্য হয়েছিলেন। মর্মান্তিক ও দুঃখজনক হলেও ১৫ আগস্টের ঘটনার পরই বাংলাদেশের মানুষ আবার গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশ তথা বাকস্বাধীনতা ফিরে পায়, দেশে এখন বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা চলছে, সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার ফিরে পেয়েছেন, দেশে এখন ব্যক্তিমালিকানায় শত শত সংবাদপত্র এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেল চালু হয়েছে, সাংবাদিকতা শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে—যেখানে এখন হাজার হাজার সাংবাদিক ও কলাকুশলীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সাংবাদিক, আলোচক, কলামিস্ট, সম্পাদক সাহেবরা এখন বিভিন্ন সেমিনার, গোলটেবিল আলোচনা, টেলিভিশনের টকশোতে এবং পত্রপত্রিকায় যেভাবে খোলামেলা ও স্বাধীনভাবে বক্তব্য রাখছেন, মন্তব্য করছেন, লেখালেখি করছেন, শেখ মুজিবের পক্ষে ও ১৫ আগস্টের ঘটনার বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রাখছেন, ১৫ আগস্টের ঘটনা না ঘটলে এ সুযোগ সৃষ্টি হতো কি-না তা নিশ্চিতভাবে কারও পক্ষেই (এমনকি আজ যারা মুজিবপ্রেমের সুপার স্টারের ভূমিকায় অভিনয় করছেন) বলা সম্ভব নয়।
ওই সময় সরকার তথা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সদস্যদের আরও একটি অসন্তোষের কথা শোনা গিয়েছিল। শেখ মুজিব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য ১৯৭৩ সালে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর ওই অভিযানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই বেশি লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের তরফ থেকে অভিযোগ আসায় শেখ মুজিব সেনাবাহিনীর ওই অভিযান বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কুমিল্লায় ওই অভিযানের দায়িত্বে ছিলেন ১৫ আগস্টের অন্যতম প্রধান আলোচিত সেনা অফিসার মেজর ডালিম। কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতাদের তরফ থেকে নির্যাতনের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছিল মেজর ডালিমের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার জের হিসেবে পরে ঢাকায় কোনো এক বিয়ে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের ত্রাণমন্ত্রী গাজী গোলাম মোস্তফার ছেলে মেজর ডালিমের স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করে বলে শোনা যায় এবং বিষয়টি শেখ মুজিবকেও অবহিত করা হয়; কিন্তু শেখ মুজিব এ ব্যাপারে কোনো গুরুত্ব দেননি। এসব ঘটনা নিয়ে সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তার মধ্যে ক্ষোভ ছিল। তাছাড়া রক্ষীবাহিনীকে শক্তিশালী ও সুসজ্জিত করতে গিয়ে সশস্ত্র বাহিনীকে দুর্বল ও গুরুত্বহীন করে তোলা হয়েছিল, ১৫ আগস্টের ঘটনার পর বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী আজ একটি সম্মানজনক ও সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে সংগঠিত তথা গড়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে, যার সুনাম এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর আওয়ামীপন্থী তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক বুদ্ধিজীবীদের কুপরামর্শে দেশের সব কল-কারখানাকে জাতীয়করণ করে বাংলাদেশের শিল্প বিকাশের সম্ভাবনাকে অংকুরেই ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল।
কিছু বিপথগামী সেনাসদস্যের খুনের ঘটনাই যদি হতো তবে ১৫ আগস্টের পরপরই শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের (সামরিক বা বেসামরিক আদালতে) বিচার হতো এবং রাজপথে লাখ লাখ কথিত মুজিবপ্রেমীকে প্রতিবাদ মিছিল বের করতে দেখা যেত। প্রতিবাদ মিছিল তো দূরের কথা, আজ যারা মুজিবপ্রেমিক সেজে জোর গলায় কথা বলছেন, তাদের কাউকে তখন ঢাকা বা দেশের অন্য কোথাও শেখ মুজিব স্মরণে একটি গায়েবানা জানাজার আয়োজন করতেও দেখা যায়নি। বরং তাদের অধিকাংশই তখন ১৫ আগস্টের ঘটনার নায়কদের সঙ্গে স্বেচ্ছায় হাত মিলিয়েছিল। বরং জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডকে কিছু বিপথগামী সেনাসদস্য কর্তৃক হত্যা বা খুনের ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়, কারণ জিয়া হত্যার পর হত্যাকারীদের সঙ্গে জিয়ার অনুসারীরা হাত মেলাননি, পুরো সশস্ত্র বাহিনী এতে জড়িত ছিল না; বরং হত্যার পরপরই সামরিক আদালতে জড়িতদের ফাঁসি দেয়া হয়েছিল এবং জিয়াউর রহমানের জানাজায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাখ লাখ লোক অংশগ্রহণ করেছিল।
ইতিহাস সাক্ষী দেয়, যুগে যুগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে যখনই সামরিক তথা সশস্ত্র বিপ্লব বা বিদ্রোহের ঘটনার মধ্য দিয়ে শাসন ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটেছে, সেখানে হত্যা বা খুনের ঘটনাই বেশি ঘটেছে, ১৫ আগস্টের সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনাতেও অসংখ্য খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় শেখ মুজিব, তার পরিবারের সদস্য ও তার ঘনিষ্ঠদের যেভাবে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তা অবশ্যই মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। এজন্য একান্ত আপনজনদের হত্যার বিচার চাওয়া বা বিচার করা মুজিবকন্যা স্বজনহারা শেখ হাসিনার স্বাভাবিক দাবি ও অধিকার; কিন্তু কথিত মুজিবপ্রেমী ও রাজনৈতিক সুবিধাবাদী স্বার্থান্বেষীরা ১৫ আগস্ট ও তত্পরবর্তী সময়ে তাদের ভূমিকা ও অবস্থানের কথা ভুলে গিয়ে আজ যেভাবে মুজিবপ্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, মুজিব হত্যার বিচার তথা বিচারের রায় কার্যকর করার ব্যাপারে বড় গলায় গলাবাজি করছে, তাতে কি সত্যিই জাতির কথিত দায়মুক্তি হয়ে যাবে? ১৫ আগস্টের এক্স-রে রিপোর্ট পর্যালোচনা করলে ঘটনার উভয় দিকই জনগণ তথা জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে আসে, প্রকৃত সত্যকে যেমন শুধু একপেশে মূল্যায়ন বা ছদ্মাবরণ দ্বারা চিরদিনের জন্য ঢেকে রাখা যায় না, তেমনি ১৫ আগস্টের ঘটনাকে শুধু খুনের ঘটনা হিসেবে লেবেল লাগিয়ে হত্যাকারী কয়েকজন সেনা অফিসারের বিচারের মধ্য দিয়েই এর নেপথ্য ইতিহাস, তত্কালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটকে অস্বীকার করা বা মুছে ফেলা যাবে না। সর্বোপরি আওয়ামী লীগের যে বিরাট একটি অংশ সে সময় শেখ মুজিবের হত্যাকারী সেনা অফিসারদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল, তাদের পুরো মদত দিয়েছিল এবং হত্যার পর আওয়ামীপন্থী কথিত সুশীল সমাজের বর্ণচোরা বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশার লোকজন যারা সরাসরি ও পরোক্ষভাবে ওই ঘটনাকে সমর্থন দিয়েছিল এবং তত্কালীন সেনা অধিনায়কসহ সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা যারা শেখ মুজিবকে রক্ষা করতে তথা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বা অবহেলা করেছেন, তাদের মধ্যে যারা জীবিত আছেন তাদেরও অবশ্যই বিচার করতে হবে। যারা জীবিত নেই তাদেরও মরণোত্তর বিচার করতে হবে, তাহলেই ১৫ আগস্টের ঘটনার ন্যায়সঙ্গত ও পূর্ণাঙ্গ বিচার হবে। তা না হলে এমন দ্বৈত চরিত্রের সুবিধাবাদী গোষ্ঠী সবসময়ই মীরজাফরী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে উত্সাহিত হবে।

রিয়াদ, সৌদি আরব থেকে


__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___