Banner Advertiser

Tuesday, September 10, 2013

[mukto-mona] মাইনাস ফর্মুলা যেভাবে ব্যর্থ করে দিলেন খালেদা জিয়া



মাইনাস ফর্মুলা যেভাবে ব্যর্থ করে দিলেন খালেদা জিয়া

সৈয়দ আবদাল আহমদ
এক/এগারোর জরুরি সরকারের সময় সর্বত্র আলোচনার একটি বিষয় ছিল 'মাইনাস টু ফর্মুলা'। রাজনীতি থেকে দুই নেত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেয়ার জন্য এ ফর্মুলার কথা বলা হতো। সংবাদপত্রের লেখালেখি, টেলিভিশন টক শো, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম এবং আড্ডার টেবিলে 'মাইনাস টু ফর্মুলা'র বিষয়টি ছিল সরব। জরুরি সরকারের মূল হোতা জেনারেল মইন এ সময় ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে মূল বক্তা হিসেবে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ প্রবন্ধে তিনি পরিবারতন্ত্র এবং উত্তরাধিকার রাজনীতির বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য দেন। এ বক্তব্যে তিনি মাইনাস ফর্মুলার গুরুত্বই তুলে ধরেন। তবে শুরুতে ১/১১'র হোতারা 'মাইনাস টু ফর্মুলা'র কথাটি বললেও তাদের মূল পরিকল্পনা ছিল 'মাইনাস ওয়ান' ফর্মুলা বাস্তবায়ন করা। অর্থাত্ বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করা, শেখ হাসিনাকে নয়। শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের একটি অলিখিত আঁতাত ছিল। নির্বাচন বানচাল করে জরুরি অবস্থা জারির পর ক্ষমতাসীন জরুরি সরকার সম্পর্কে তত্ক্ষণাত শেখ হাসিনা যে প্রতিক্রিয়া জানান সেটা ওই আঁতাতেরই ফল ছিল। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, 'জরুরি সরকার আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল।' তিনি সেনা সমর্থিত জরুরি সরকারের বৈধতা দেয়ারও ঘোষণা দেন।
সেনা সমর্থিত জরুরি সরকারের সঙ্গে শেখ হাসিনার যে অলিখিত আঁতাত ছিল এবং তারা যে মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা বাস্তবায়ন অর্থাত্ খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন সেটি তখনই ছিল একটি ওপেন-সিক্রেট বিষয়। তবে কয়েকদিন আগে ১/১১'র প্রত্যক্ষদর্শী একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তার সাক্ষাত্কার থেকে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত এবং সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য জানা গেছে। ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে নিউইয়র্কের ঠিকানা পত্রিকায় উইং কমান্ডার সালাউদ্দিন চৌধুরী এই সাক্ষাত্কার দেন। এতে ১/১১'র অজানা অনেক কথা, বিশেষ করে খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার বিষয়টি সুন্দরভাবে তিনি তুলে ধরেছেন। উইং কমান্ডার সালাউদ্দিন ১/১১ সংঘটিত হওয়ার সময় তত্কালীন বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আজমের এপিএস ছিলেন। তিনি এয়ার চিফের সঙ্গে থাকার কারণে ওই সময়ের অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী।
সাক্ষাত্কারে উইং কমান্ডার সালাউদ্দিন বলেন, 'বিগত বিএনপি সরকারের কিছু ভুলভ্রান্তি হয়তো ছিল। সেই ভুলভ্রান্তির সুযোগ নিয়ে তত্কালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন তার উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন চরিতার্থ করার চেষ্টা করেন। তখন বিমান বাহিনী প্রধানের এপিএস হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় কাছে থেকে অনেক কিছু ফিসফাস শুনতাম। সন্দেহ হতো, যেহেতু সেনাপ্রধানের উচ্চাভিলাষী একটা স্বপ্ন ছিল, যেটা তার কলিগদের মধ্যে অনেকেই জানতেন। সেনাবাহিনী যদি কোনো অভ্যুত্থান ঘটাতে যায় বা কিছু করতে যায়, তাহলে তার মূল সাপোর্ট আসতে হবে নবম পদাতিক ডিভিশন থেকে, সেটা সাভারে অবস্থিত। সাভারের জিওসি ছিলেন তত্কালীন মেজর জেনারেল মাসুদউদ্দিন চৌধুরী। তিনি খালেদা জিয়ার নিকটাত্মীয়। তার দিকে তাকিয়ে আমার সন্দেহগুলো আমলে নিতাম না। কিন্তু তিনিই মইনের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন।'
উইং কমান্ডার (অব.) সালাউদ্দিন বলেন, '২০০৭ সালের ৮ জানুয়ারি বিমান বাহিনী প্রধানের বাসভবনের স্টাডি রুমের টেবিলে জেনারেল পারভেজ মোশাররফের লেখা 'ইন দ্য লাইন অব ফায়ার' বইটি দেখে আমি এয়ার চিফকে জিজ্ঞেস করি—স্যার, বইটি পড়েছেন? কেমন লেখা? উনি বললেন, কিছুটা পড়েছি। আর্মি চিফ জেনারেল মইন পাঠিয়েছেন এবং অনুরোধ করেছেন পড়ার জন্য। বাইরে নানান গুজব শোনা যাচ্ছে; তাহলে কি উনি জেনারেল পারভেজ হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন স্যার? আমার প্রশ্ন ছিল। তিনি প্রতিউত্তরে বললেন, 'এমন স্বপ্ন দেখা তার জন্য (জেনারেল মইন) মারাত্মক ভুল হবে। কারণ এটা বাংলাদেশ। তাছাড়া এমন পরিকল্পনা থাকলেও সেটা আমার সামনে কখনও প্রকাশ করবেন না। এছাড়া নবম ডিভিশনের জিওসি জেনারেল মাসুদউদ্দিনের সাপোর্ট তিনি পাবেন না। তবে এসব চিন্তা করা বা আলোচনা করা ঠিক নয়।' তবু আমার ভেতর একটা শঙ্কা উঁকিঝুঁকি মারতো প্রায়ই। আমার মাথা থেকে এই দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছি বার বার মেজর জেনারেল মাসুদউদ্দিন চৌধুরীর কথা স্মরণ করে। কেননা, তার প্রতি অবিচল আস্থা ছিল বিএনপি সরকারের। কিন্তু মইনের সঙ্গে তিনি যে হাত মেলালেন তা জানা ছিল না। ঘটনাটি যখন ঘটল, তখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, এটা আমাদের আন্দোলনের ফসল। আমি নিশ্চিত হলাম ১/১১'র পেছনে আওয়ামী লীগের সমর্থন রয়েছে। আমার চোখে দেখা ১/১১ ঘটার পরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে বলা হলো তিনি যেন কিছুদিন দেশের বাইরে থাকেন। সেনাপ্রধান জেনারেল মইনের কর্মকাণ্ডে পরিষ্কার বোঝা গেল, পাকিস্তানের সেনাশাসক পারভেজ মোশাররফের মতো তিনি দেশের শাসনভার গ্রহণ করতে চাচ্ছেন। পারভেজ মোশাররফ কিন্তু সেই দেশের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে প্রথমে আটক ও পরে বিদেশে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়ে দেশের শাসনভার গ্রহণ করেছিলেন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা সেনা সমর্থিত সরকারের কথামত দেশ ছাড়লেন। তখন কথা তোলা হলো খালেদা জিয়াকেও দেশ ছাড়তে হবে। বেগম জিয়া কোনোভাবেই বিদেশ যেতে চাইলেন না। তিনি দেশত্যাগে রাজি হননি। সেনাপ্রধানের সঙ্গে সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা যারা সহযোগী হিসেবে ছিলেন তাদের দু'একজন বলেছেন, খালেদা জিয়ার মধ্যে একটা আপসহীনতা কাজ করে, তাই ওনাকে কি দেশত্যাগে বাধ্য করানো সম্ভব হবে? ওখানে যারা ছিলেন—জেনারেল আমিন, ব্রিগেডিয়ার বারীসহ অনেকেই বলেছিলেন, বিএনপি এখন বিগত দিনের কর্মকাণ্ডের জন্য মনোবলের দিক থেকে দুর্বল। সুতরাং খালেদা জিয়াকে দেশত্যাগ করানো অসম্ভব কিছু নয়। তাকে দেশত্যাগে অবশ্যই বাধ্য করা হবে। আলটিমেটলি হয়নি। এভাবে রাজি করাতে না পেরে তারা তারেক রহমানকে গ্রেফতার করে নির্যাতনের কৌশল নেয়। যেন ছেলের ওপর অত্যাচারের কথা জেনে বেগম জিয়া মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। একই সঙ্গে বেগম জিয়াকে নানা ধরনের ভয়ভীতিও প্রদর্শন করা হয়। এরপরও বেগম জিয়া তার সিদ্ধান্তে ছিলেন অটল। প্রবল চাপে মাঝে-মধ্যে নিমরাজি ছিলেন, আবার মনের দিক থেকে তিনি মোটেও রাজি ছিলেন না। সোজা কথা তিনি দেশত্যাগ করবেন না। বার বারই তিনি বলতেন, বিদেশে আমার কোনো ঘরবাড়ি নেই, ঠিকানা নেই, বাংলাদেশই আমার ঠিকানা। খালেদা জিয়ার এই দৃঢ় মনোভাব উচ্চাভিলাষী সেনাপ্রধানের সমর্থনকারীদের জন্য বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।'
উইং কমান্ডার সালাউদ্দিনের প্রত্যক্ষদর্শীর ওই বর্ণনা থেকেই জানা যায়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে সেদিন কীভাবে ১/১১ সংঘটিত করা হয় এবং খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতে অপচেষ্টা চালানো হয়।
জরুরি সরকারের হোতাদের প্রচণ্ড চাপ দৃঢ়তার সঙ্গে উপেক্ষা করে বিদেশে নির্বাসনে পাঠানোর তাদের উদ্যোগ সেদিন ব্যর্থ করে দেন খালেদা জিয়া। তবে এজন্য তাকে অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। জরুরি সরকার তাকে ৬ মাস গৃহবন্দি করে রাখে। জ্যেষ্ঠ ছেলে তারেক রহমানকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়। তারেক রহমানের মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায়। দীর্ঘ চিকিত্সায় এখনও তিনি স্বাভাবিক হতে পারেননি। খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি রেখেই ক্ষান্ত হয়নি ১/১১'র সরকার; ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে তাকে ও তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে গ্রেফতার করে। বেগম জিয়াকে রাখা হয় শেরে বাংলা নগরের একটি বিশেষ সাবজেলে।
এরশাদ শাসনামলেও খালেদা জিয়াকে সাতবার সাময়িক গৃহবন্দি করা হয়েছিল। তবে এক্ষেত্রে ১/১১'র জরুরি সরকারের অভিজ্ঞতা ছিল ন্যক্কারজনক। তাকে ৬ মাস গৃহবন্দি ও এক বছর নির্জন কারাগারে কাটাতে হয়। কারাগারে তিনি রোগ-যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন। দুই ছেলেকে নির্যাতনের খবরে বিচলিত হয়েছেন। মায়ের মৃত্যুর সময় তার পাশেও থাকতে পারেননি।
যে কোনো রাজনীতিবিদের জন্য কারাজীবন স্বাভাবিক ঘটনা হলেও বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য সেটা স্বাভাবিক ছিল না। খালেদা জিয়াকে তারা যেমন রাজনীতি থেকে চিরদিনের জন্য সরাতে চেয়েছিল, তেমনি বিএনপিকে দ্বিখণ্ডিত করে জনপ্রিয় এ দলকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টায় নেমেছিল। তবে এমন দুর্দিনেও মাথা গরম করেননি খালেদা জিয়া। প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা দিয়ে তিনি পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছেন।
জরুরি সরকার তাকে যখন সেনানিবাসের বাসভবনে গৃহবন্দি করে রাখে, তখন বাইরে থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এ পরিস্থিতিতেও তিনি ধৈর্যহারা হননি। দেশের মানুষ মাঝে-মধ্যেই শুনতে পান খালেদা জিয়া বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে টেলিকনফারেন্স করে তার বক্তব্য দিচ্ছেন। সেই বক্তব্যই ছিল দলের নেতাকর্মীদের জন্য সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা। জরুরি সরকারের গোয়েন্দাদের সব ধরনের নজরদারি ফাঁকি দিয়ে মোবাইল ফোনের সহযোগিতায় তিনি এই টেলিকনফারেন্স করেছেন। তার সুহৃদরা এ সময় তাকে এ সহযোগিতা করেছেন। দলের তত্কালীন মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সংস্কারপন্থী নেতারা শত চেষ্টা করেও দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করতে পারেননি। গৃহবন্দি থাকার সময় খালেদা জিয়া দৈনিক আমার দেশ-কে কৌশলে একটি লিখিত সাক্ষাত্কার দেন। পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান ও অ্যাডভোকেট শিমুল বিশ্বাস এ সাক্ষাত্কার খালেদা জিয়ার কাছ থেকে সংগ্রহ করতে সহযোগিতা করেন। গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তিন দিনে এ সাক্ষাত্কার নেয়া হয়। সংস্কারপন্থীদের ষড়যন্ত্র বানচাল করে দেয়ার জন্য সেই টেলিকনফারেন্সের পাশাপাশি এ সাক্ষাত্কারও ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তেমনি তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য একবার যখন সব আয়োজন প্রায় সম্পন্ন, তখন ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত তার বাসায় যান। রাষ্ট্রদূতকে তিনি জানান, স্বেচ্ছায় তিনি সৌদি আরবে যাচ্ছেন না। এ মুহূর্তে সৌদি আরব যাওয়ার তার কোনো ইচ্ছা নেই। এরপর সৌদি দূতাবাস থেকে তার জন্য আর ভিসা ইস্যু করা হয়নি। আরেকবার যখন একই চাপ এলো, মিডিয়ার কর্মীরা বিমান বন্দরে দৌড়ালেন খালেদা জিয়ার বিদেশে নির্বাসন কাভার করার জন্য, তখন বিএনপির সাহসী নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহ সাংবাদিকদের ডেকে ঘোষণা করলেন— খালেদা জিয়া বিদেশে যাবেন না। তাকে জোর করে বিদেশে পাঠানো যাবে না। ফলে ওই যাত্রায়ও চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে যায়।
এরপর ১/১১'র হোতারা অনেকটা ব্যর্থ ও হতাশ হয়ে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে। সঙ্গে সঙ্গে খালেদা জিয়া দলের সংস্কারপন্থী মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের জন্য দল ও পদ থেকে বহিষ্কার করেন। বিএনপির নতুন মহাসচিব নিয়োগ করা হয় পরীক্ষিত নেতা খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে। ওইদিন কারাগারে দাঁড়িয়ে তিনি আবেগময় ভাষণ দেন এবং বাংলাদেশই তার একমাত্র ঠিকানা বলে ঐতিহাসিক উক্তিটি করেন। ফলে ষড়যন্ত্রকারীরা আরেকটি চপেটাঘাত খায় কিন্তু তারা দমেনি। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের জোর করে বাসা থেকে এনে স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইফুর রহমানের বাসভবনের বৈঠকে হাজির করা হয় বিএনপিকে হাইজ্যাক করার জন্য। এ সময় খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বারডেম হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। এ খবর পেয়েই তিনি আত্মগোপন করেন। তাকে নিতে না পেরে বিএনপি হাইজ্যাক করার ষড়যন্ত্রও ব্যর্থ হয়। তেমনি নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে বিএনপি হাইজ্যাকের চেষ্টাও মামলা করে ব্যর্থ করে দেন খালেদা জিয়া।
নির্জন কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় আরেকটি সাহসী পদক্ষেপ ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে সাতশ' সাংবাদিকের বিবৃতি। সাতশ' সাংবাদিকের এই বিবৃতিতে প্রথম স্বাক্ষরটি করেছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম আতাউস সামাদ। এ স্বাক্ষর অভিযান চালানোর জন্য সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এ লেখককে পুরো একদিন তাদের কচুক্ষেতের দফতরে আটকে রেখে প্রচণ্ড মানসিক নির্যাতন চালায়। জরুরি সরকারের সময় বাংলাদেশের নামকরা সাতশ' সাংবাদিক বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন, সেটা তখন ছিল একটি আলোচিত বিষয়। কারণ জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এ ধরনের উদ্যোগ তখন এটাই ছিল প্রথম। দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় এটা ফলাও প্রচার হয়। জরুরি সরকারের জন্য এই বিবৃতি ছিল আরেকটি চপেটাঘাত।
গ্রেফতারের প্রায় নয় মাস পর শেরেবাংলা নগরে স্থাপিত বিশেষ আদালতে হাজির করা হলে খালেদা জিয়া জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেন। সেদিন তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন, 'পরগাছা দালাল দিয়ে দেশ চলে না। চাইলেই যে কাউকে মাইনাস করা যায় না।' আদালতে দাঁড়িয়ে তিনি সংলাপে যাওয়ার জন্য পরিবেশ তৈরিরও আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'পরিবেশ তৈরি হলে বিষয়টি ভেবে দেখব।' জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের ব্যাপারে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করে তিনি জানিয়ে দেন যে, জরুরি অবস্থার মধ্যে নির্বাচন হয় না। শেষ পর্যন্ত সরকার জরুরি অবস্থা তুলতে বাধ্য হয়। তাকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হলে তাও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি দায়ের করা সব মামলাকে উদ্দেশ্যমূলক ও মিথ্যা দাবি করে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে আইনজীবীদের নির্দেশ দেন। অবশেষে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে তিনি জামিন পান এবং ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর কারামুক্ত হন। ব্যর্থ হয় সব ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা। সেদিন একদিকে যেমন তিনি মাইনাস ফর্মুলা রুখে দেন, তেমনি জরুরি অবস্থা ও ১/১১'র দুষ্টচক্রের অবসান ঘটান।
২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণের একটি জায়গায় খালেদা জিয়া সেই কঠিন সময়ের কথা নিজেই বলেছেন এভাবে — 'মানুষ হিসেবে আমি ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে ছিলাম না। ব্যর্থতার গ্লানিও আমাকে অনেক সময় স্পর্শ করেছে। কিন্তু যে সীমাহীন কুত্সা ও অপপ্রচারের শিকার আমাকে হতে হচ্ছে, সেটা কি আমার প্রাপ্য? আপনারা দেখেছেন, অপপ্রচারের পথ ধরেই আমাকে আপনাদের কাছ থেকে মাইনাস করার, বিদেশে নির্বাসনে পাঠানোর অপচেষ্টা হয়েছে। এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে আমাকে বিনা অপরাধে ছয় মাস গৃহবন্দি ও এক বছর নির্জন কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। আমি আমার মায়ের মৃত্যুর সময়ও তার পাশে থাকতে পারিনি। গুরুতর অসুস্থ সন্তানদেরও দেখতে দেয়া হয়নি। তারপরও যতদিন বাঁচি আপনাদের মাঝেই থাকব। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশই আমার একমাত্র এবং শেষ ঠিকানা।'

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট


__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___