কেউ ভোলে কেউ ভোলে না
নির্দলীয় সরকারের দাবিতে '৯৪-৯৬ সালজুড়ে আওয়ামী লীগের আন্দোলন-ভায়োলেন্স
* দাবি আদায়ে ১৭১টি হরতাল পালন
* ট্রেন-বাস-তেলবাহী জাহাজে আগুন
* প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে বোমা হামলা
* থানা আক্রমণ, কর্মচারীদের উলঙ্গ করা
সরদার আবদুর রহমান : একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৯৯৪-'৯৬ সাল জুড়ে ব্যাপক আন্দোলন পরিচালিত হয়। এসময় আন্দোলনের সঙ্গে সহিংসতা আর আন্দোলনকারী আওয়ামী লীগ ছিল একাকার, পরস্পরের পরিপূরক। শুধু হরতাল, ঘেরাও, অবরোধই নয়- ট্রেন-বাস-তেলবাহী জাহাজ জ্বালিয়ে দেয়া, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে বোমা হামলা ও আগুন দেয়া, থানা আক্রমণ, সরকারি কর্মচারীদের উলঙ্গ করা, গার্মেন্ট তরুণীদের লাঞ্ছিত করা প্রভৃতি অসংখ্য সহিংস ঘটনা সংঘটিত হয় সেই আন্দোলনকালে। সে সময় বিরোধীদল সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জাতীয় পর্যায়ে ৪১টিসহ মোট ১৭১টি হরতাল করে। সে সময়ের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল নি¤œরূপ :
৭ এপ্রিল, ১৯৯৪ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকায় সচিবালয় ঘেরাও করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল। এসময় সংঘর্ষে নিহত হয় ৩ জন। ১০ এপ্রিল দেশব্যাপী হরতাল, ২০ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ঢাকা অবরোধ এবং ৯ নবেম্বর সচিবালয় ঘেরাও করলে ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটে। ২৮ ডিসেম্বর বিরোধী দলীয় ১৪৭ জন সদস্য সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৯৫ সালে এই আন্দোলনে নতুন মাত্রা দেয়া হয়। ২-৩-৪ জানুয়ারি ঢাকায় হরতাল ও ২৩ জানুয়ারি টিভি ভবন ঘেরাও করা হয় এবং অবরোধকালে আদমজীতে একজন নিহত হয়। ২৪ জানুয়ারি হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিনিয়োগ সম্মেলন থেকে ফেরার পথে ফার্মগেটের কাছে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলা করে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়া হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি শ্রমিকদের ৯৬ ঘণ্টার হরতালে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়। ১২ মার্চ ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালন করা হয়। ২৬ মার্চ ঢাকা অবরোধে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ৯ এপ্রিল সকাল-সন্ধ্যা দু'দিনের হরতাল পালিত হয়। ২৭ আগস্ট আ'লীগ নির্বাচন কমিশন অফিস ঘেরাও করলে সংঘর্ষে একজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়। ২৯ আগস্ট দিনাজপুরে থানা ঘেরাও করা হলে প্রশাসন কারফিউ জারি করে। ২ সেপ্টেম্বর ৩২ ঘণ্টার লাগাতার হরতাল দেয়া হয়। এদিন হরতালের শেষের দিকে ঢাকার মিরপুরে সংঘর্ষে এক রিকশাচালক নিহত হয়। এর প্রতিবাদে পরদিন ঢাকায় অর্ধদিবস হরতাল ডাকা হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, সংসদ বাতিল ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ৭২ ঘণ্টার হরতাল শুরু হয়। এই হরতালকালে ঢাকায় অফিসগামী লোকদের বাধা দেয়া হয়। এসময় একটি প্রাইভেট অফিসের একজন কর্মচারীকে জামা-প্যান্ট খুলে নিয়ে দিগম্বর করে আলম নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী। ২-৩ সেপ্টেম্বর দেশজুড়ে হরতাল পালিত হয়। ৭ অক্টোবর পাঁচ বিভাগীয় শহরে ৩২ ঘণ্টার হরতাল পালন করা হয়। ১৬ থেকে ২০ অক্টোবর ৯৬ ঘণ্টাব্যাপী হরতাল ডাকা হয়। ৬ নবেম্বর সকাল-সন্ধ্যা সড়ক-রেল-নৌপথ অবরোধ করা হয়। ২৪ নবেম্বর জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া হয়। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ডিসেম্বর মাসজুড়ে রাজধানীতে আ'লীগ কর্মীরা তা-ব চালায়। ৪ ডিসেম্বর মীরপুরে একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে ১১ জন যাত্রী পুড়ে কয়লা হয়ে যায়। ৮ ডিসেম্বর তারা বাস-কার-পিকআপসহ বহু গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। ৯-১২ পর্যন্ত আবারো লাগাতার ৭২ ঘণ্টার হরতালের ডাক দেয়া হয়। হরতাল চলাকালে রাজধানীর গার্মেন্টস-এর অনেক মহিলা শ্রমিকের ওড়না কেড়ে নেয়ার দৃশ্য দেখা যায়। বিভিন্ন স্থানে তারা তরুণীদের লাঞ্ছিত করে বলেও সংবাদপত্রে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সংবাদপত্রের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, হরতাল চলাকালে কতিপয় তরুণের প্রধান শিকার ছিলেন পথচারী মহিলা। কয়েক স্থানে এদের হাতে মহিলারা প্রহৃত ও লাঞ্ছিত হন। মীরপুরে সকাল ৯টায় তরুণীরা গার্মেন্টে যাওয়ার সময় ৩ মহিলা শ্রমিকের ওড়না খুলে নেয়। কর্মস্থলে যাবার অপরাধে ওড়না খুলে নেবার পর তাদের জামা-কাপড়ও খুলে নেবার চেষ্ট করা হয়। কোন কোন স্থানে গার্মেন্ট'র এসব মহিলা কর্মীদের ধাক্কা মেরেও ফেলে দেয়া হয়।
১৯৯৬ সালে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। ফেব্রুয়ারির ২৯ দিনের মধ্যে ২৩ দিনই রাজধানী অচল থাকে। ১৩ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি জালিয়ে দেয়া হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনকালে ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটে। পরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, শুধুমাত্র ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের দিন হরতাল ও গণকারফিউ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত এবং আহত হয় আরো ছয় শতাধিক মানুষ। ২৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় দৈনিক দিনকাল অফিস বোমা মেরে ও ভাংচুর করে ব্যাপক ক্ষতি করা হয়। নির্বাচন বাতিল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ২৫-২৮ ফেব্রুয়ারি লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচি দেয়া হয়। ৯ মার্চ থেকে লাগাতার অসহযোগ দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত চলে। ১৭ মার্চ চট্টগ্রামে তেলবাহী জাহাজে বোমা নিক্ষেপ করে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। সে সময় আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। তা না হলে পুরো বন্দর ভস্মীভূত হয়ে যেতো।
১৯৯৪-৯৬ সময়কালে ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকারের কাছ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিভিন্ন দাবিতে বিরোধীদল আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচিতে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের পাশাপাশি একটি লাগাতার ৯৬ ঘণ্টা, ২টি ৭২ ঘণ্টা এবং ৫টি ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকা হয়। '৯৬ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আয়োজিত এক জনসভায় বলেছিলেন, 'প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভেবেছেন রোজার মাসে হরতাল হবে না। ইচ্ছেমতো ভোট চুরি করে একদলীয় নির্বাচন করিয়ে নেবেন। কিন্তু তিনি জানেন না রোজার মাসেও যুদ্ধ হয়েছিল।' ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যেখানেই নির্বাচনী সফরে গিয়েছিলেন সে জেলাতেই হরতাল ডাকা হয়েছিল। এসব কর্মসূচিতে ব্যাপক ভাংচুর, বোমাবাজি, ককটেল নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ এবং গোলাগুলীর ঘটনা ঘটে এবং সংহিংসতায় নিহত হয় অর্ধশতাধিক মানুষ, আহত হয় সহ¯্রাধিক। এর ব্যাপ্তি ছিল সর্বনি¤œ ১২ ঘণ্টা থেকে এক নাগাড়ে ৯৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিস্তৃত। '৯৬-এর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের হরতাল ও ২২ দিনের লাগাতার অবরোধে সারা দেশ শুধু অচলই হয়নি, ৩৭ জন লোক এ জন্য প্রাণও দেয়। ১৯৯৪ সাল থেকে কেয়ারটেকার আন্দোলনে নিহত হয় মোট ৮২ জন লোক এবং আহত হয় ৮ সহ¯্রাধিক। ১৯৯৬ সালের ২৭ মার্চ সংসদে তত্ত্বাধায়ক সরকার বিল পাস হয় এবং ২৯ মার্চ প্রেসিডেন্ট এই বিলে স্বাক্ষর করেন। ৩০ মার্চ সংসদ ভেঙে দেয়া হয় বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেন এবং বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমান কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। বিরোধীদলগুলো তাদের অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হয়।
* ট্রেন-বাস-তেলবাহী জাহাজে আগুন
* প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে বোমা হামলা
* থানা আক্রমণ, কর্মচারীদের উলঙ্গ করা
সরদার আবদুর রহমান : একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৯৯৪-'৯৬ সাল জুড়ে ব্যাপক আন্দোলন পরিচালিত হয়। এসময় আন্দোলনের সঙ্গে সহিংসতা আর আন্দোলনকারী আওয়ামী লীগ ছিল একাকার, পরস্পরের পরিপূরক। শুধু হরতাল, ঘেরাও, অবরোধই নয়- ট্রেন-বাস-তেলবাহী জাহাজ জ্বালিয়ে দেয়া, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে বোমা হামলা ও আগুন দেয়া, থানা আক্রমণ, সরকারি কর্মচারীদের উলঙ্গ করা, গার্মেন্ট তরুণীদের লাঞ্ছিত করা প্রভৃতি অসংখ্য সহিংস ঘটনা সংঘটিত হয় সেই আন্দোলনকালে। সে সময় বিরোধীদল সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জাতীয় পর্যায়ে ৪১টিসহ মোট ১৭১টি হরতাল করে। সে সময়ের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল নি¤œরূপ :
৭ এপ্রিল, ১৯৯৪ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকায় সচিবালয় ঘেরাও করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল। এসময় সংঘর্ষে নিহত হয় ৩ জন। ১০ এপ্রিল দেশব্যাপী হরতাল, ২০ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ঢাকা অবরোধ এবং ৯ নবেম্বর সচিবালয় ঘেরাও করলে ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটে। ২৮ ডিসেম্বর বিরোধী দলীয় ১৪৭ জন সদস্য সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৯৫ সালে এই আন্দোলনে নতুন মাত্রা দেয়া হয়। ২-৩-৪ জানুয়ারি ঢাকায় হরতাল ও ২৩ জানুয়ারি টিভি ভবন ঘেরাও করা হয় এবং অবরোধকালে আদমজীতে একজন নিহত হয়। ২৪ জানুয়ারি হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিনিয়োগ সম্মেলন থেকে ফেরার পথে ফার্মগেটের কাছে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলা করে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়া হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি শ্রমিকদের ৯৬ ঘণ্টার হরতালে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়। ১২ মার্চ ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালন করা হয়। ২৬ মার্চ ঢাকা অবরোধে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ৯ এপ্রিল সকাল-সন্ধ্যা দু'দিনের হরতাল পালিত হয়। ২৭ আগস্ট আ'লীগ নির্বাচন কমিশন অফিস ঘেরাও করলে সংঘর্ষে একজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়। ২৯ আগস্ট দিনাজপুরে থানা ঘেরাও করা হলে প্রশাসন কারফিউ জারি করে। ২ সেপ্টেম্বর ৩২ ঘণ্টার লাগাতার হরতাল দেয়া হয়। এদিন হরতালের শেষের দিকে ঢাকার মিরপুরে সংঘর্ষে এক রিকশাচালক নিহত হয়। এর প্রতিবাদে পরদিন ঢাকায় অর্ধদিবস হরতাল ডাকা হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, সংসদ বাতিল ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ৭২ ঘণ্টার হরতাল শুরু হয়। এই হরতালকালে ঢাকায় অফিসগামী লোকদের বাধা দেয়া হয়। এসময় একটি প্রাইভেট অফিসের একজন কর্মচারীকে জামা-প্যান্ট খুলে নিয়ে দিগম্বর করে আলম নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী। ২-৩ সেপ্টেম্বর দেশজুড়ে হরতাল পালিত হয়। ৭ অক্টোবর পাঁচ বিভাগীয় শহরে ৩২ ঘণ্টার হরতাল পালন করা হয়। ১৬ থেকে ২০ অক্টোবর ৯৬ ঘণ্টাব্যাপী হরতাল ডাকা হয়। ৬ নবেম্বর সকাল-সন্ধ্যা সড়ক-রেল-নৌপথ অবরোধ করা হয়। ২৪ নবেম্বর জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া হয়। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ডিসেম্বর মাসজুড়ে রাজধানীতে আ'লীগ কর্মীরা তা-ব চালায়। ৪ ডিসেম্বর মীরপুরে একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে ১১ জন যাত্রী পুড়ে কয়লা হয়ে যায়। ৮ ডিসেম্বর তারা বাস-কার-পিকআপসহ বহু গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। ৯-১২ পর্যন্ত আবারো লাগাতার ৭২ ঘণ্টার হরতালের ডাক দেয়া হয়। হরতাল চলাকালে রাজধানীর গার্মেন্টস-এর অনেক মহিলা শ্রমিকের ওড়না কেড়ে নেয়ার দৃশ্য দেখা যায়। বিভিন্ন স্থানে তারা তরুণীদের লাঞ্ছিত করে বলেও সংবাদপত্রে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সংবাদপত্রের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, হরতাল চলাকালে কতিপয় তরুণের প্রধান শিকার ছিলেন পথচারী মহিলা। কয়েক স্থানে এদের হাতে মহিলারা প্রহৃত ও লাঞ্ছিত হন। মীরপুরে সকাল ৯টায় তরুণীরা গার্মেন্টে যাওয়ার সময় ৩ মহিলা শ্রমিকের ওড়না খুলে নেয়। কর্মস্থলে যাবার অপরাধে ওড়না খুলে নেবার পর তাদের জামা-কাপড়ও খুলে নেবার চেষ্ট করা হয়। কোন কোন স্থানে গার্মেন্ট'র এসব মহিলা কর্মীদের ধাক্কা মেরেও ফেলে দেয়া হয়।
১৯৯৬ সালে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। ফেব্রুয়ারির ২৯ দিনের মধ্যে ২৩ দিনই রাজধানী অচল থাকে। ১৩ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি জালিয়ে দেয়া হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনকালে ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটে। পরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, শুধুমাত্র ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের দিন হরতাল ও গণকারফিউ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত এবং আহত হয় আরো ছয় শতাধিক মানুষ। ২৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় দৈনিক দিনকাল অফিস বোমা মেরে ও ভাংচুর করে ব্যাপক ক্ষতি করা হয়। নির্বাচন বাতিল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ২৫-২৮ ফেব্রুয়ারি লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচি দেয়া হয়। ৯ মার্চ থেকে লাগাতার অসহযোগ দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত চলে। ১৭ মার্চ চট্টগ্রামে তেলবাহী জাহাজে বোমা নিক্ষেপ করে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। সে সময় আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। তা না হলে পুরো বন্দর ভস্মীভূত হয়ে যেতো।
১৯৯৪-৯৬ সময়কালে ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকারের কাছ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিভিন্ন দাবিতে বিরোধীদল আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচিতে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের পাশাপাশি একটি লাগাতার ৯৬ ঘণ্টা, ২টি ৭২ ঘণ্টা এবং ৫টি ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকা হয়। '৯৬ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আয়োজিত এক জনসভায় বলেছিলেন, 'প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভেবেছেন রোজার মাসে হরতাল হবে না। ইচ্ছেমতো ভোট চুরি করে একদলীয় নির্বাচন করিয়ে নেবেন। কিন্তু তিনি জানেন না রোজার মাসেও যুদ্ধ হয়েছিল।' ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যেখানেই নির্বাচনী সফরে গিয়েছিলেন সে জেলাতেই হরতাল ডাকা হয়েছিল। এসব কর্মসূচিতে ব্যাপক ভাংচুর, বোমাবাজি, ককটেল নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ এবং গোলাগুলীর ঘটনা ঘটে এবং সংহিংসতায় নিহত হয় অর্ধশতাধিক মানুষ, আহত হয় সহ¯্রাধিক। এর ব্যাপ্তি ছিল সর্বনি¤œ ১২ ঘণ্টা থেকে এক নাগাড়ে ৯৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিস্তৃত। '৯৬-এর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের হরতাল ও ২২ দিনের লাগাতার অবরোধে সারা দেশ শুধু অচলই হয়নি, ৩৭ জন লোক এ জন্য প্রাণও দেয়। ১৯৯৪ সাল থেকে কেয়ারটেকার আন্দোলনে নিহত হয় মোট ৮২ জন লোক এবং আহত হয় ৮ সহ¯্রাধিক। ১৯৯৬ সালের ২৭ মার্চ সংসদে তত্ত্বাধায়ক সরকার বিল পাস হয় এবং ২৯ মার্চ প্রেসিডেন্ট এই বিলে স্বাক্ষর করেন। ৩০ মার্চ সংসদ ভেঙে দেয়া হয় বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেন এবং বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমান কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। বিরোধীদলগুলো তাদের অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হয়।
__._,_.___