স্টাফ রিপোর্টার ॥ অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার প্রস্তাব বাস্তবায়ন সহজ নয় বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। তাঁরা বলেছেন, এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে গেলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংবিধান সংশোধন করা হলে নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তবে দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে দুই দলকে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়েছেন তাঁরা। এদিকে বিকল্পধারা সভাপতি বি চৌধুরী বিরোধী দলের নেতার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, সরকারের উচিত নির্বাচনের স্বার্থে প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেব গ্রহণ করা। ব্যারিস্টার রফিকুল হক এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বিরোধী দলীয় নেত্রী বলেছেন ভাল। কিন্তু এটা বাস্তবায়ন সহজ নয়। এজন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। নির্বাচন পেছানো হতে পারে। আমি মনে করি দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে সংলাপ কঠিন হবে। তবে দেশের স্বার্থে দুই দলকে আলোচনায় বসে সমস্যার সমাধান করা উচিত বলে আমি মনে করি। অপরদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে এবং তা হবে শুধুমাত্র একটি নির্বাচনের জন্য। কোন দল এককভাবে আতœসমর্পণ করে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের অবসান ঘটাবে এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেই। তবু আমি চাই রাজনৈতিক সঙ্কটের অবসান হোক। এজন্য আলোচনার বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তিনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, বিরোধীদলীয় নেতার প্রস্তাব ইতিবাচক। তবে কী করবে সেটি দুই নেত্রীকে আলোচনা করেই ঠিক করতে হবে। তাদের এক টেবিলে বসতে হবে। নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের জন্য কী করতে হবে, তার জন্য আলাদা আলাদা নয় বরং এক সঙ্গে সমঝোতায় এসে কথা বলতে হবে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, যে কোন প্রস্তাবই গ্রহণযোগ্য হতে পারে। যদি সেটি আলোচনা করে ঠিক করে নেয়া যায়। তিনি বলেন, এখন নির্ভর করছে, প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাব কিভাবে গ্রহণ করছেন। তবে বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রস্তাব দেয়াটাও ইতিবাচক। সব দলের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যে কোন প্রস্তাব ভাল হবে, যদি সেখানে উভয়পক্ষ একমত হয়। দু'দলকেই বিবেচনা করে পদ্ধতি ঠিক করতে হবে। সোমবার বিকেলে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব তুলে ধরেন। এতে তিনি বলেন, '১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মোট ২০ জন উপদেষ্টার মধ্যে উভয়দলের সম্মতিতে ১০ জন উপদেষ্টা নিয়োগ করা যেতে পারে।' এ ছাড়া সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সম্মানিত এক নাগরিককে প্রধান উপদেষ্টা করার কথাও বলেন তিনি। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, কালক্ষেপণ না করে এখনই রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে বসা উচিত। মিনিট সেকেন্ড বিলম্ব না করে সব দলের ফর্মুলা নিয়ে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। বি. চৌধুরীর সমর্থন ॥ বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিরোধীদলীয় নেতার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রুপরেখার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে এই প্রস্তাব ইতিবাচক হিসেবে সরকারের গ্রহণ করা উচিত। প্রস্তাবের জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন জানিয়ে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, বিরোধী দলীয় নেতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে রূপরেখা দিয়েছেন তা ভারসাম্যপূর্ণ এবং অত্যন্ত নিরপেক্ষ। আমি এই রূপরেখার সঙ্গে একমত পোষণ করে এর প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। আমি আশা করি, দেশের এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে এই প্রস্তাব ইতিবাচক হিসেবে সরকারের গ্রহণ করা উচিত। সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া তাদের অতীতের কিছু কিছু রাজনৈতিক পদক্ষেপের ভুল-ভ্রান্তি সম্পর্কে যে বক্তব্য রেখেছেন এবং সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ভবিষ্যতে দেশ শাসনের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলেছেন এতে তাঁর রাজনৈতিক উদারতা এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা প্রকাশ পেয়েছে। এটা জাতির জন্য মঙ্গলজনক। আমরা তাঁর যাত্রার শুভ কামনা করি। বি, চৌধুরী আরও বলেন, বিরোধী দলের নেতার নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা সঠিক। কিন্তু এটা চিরস্থায়ী হতে পারে না। কারণ মানুষ মরণশীল। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সদস্যরা চিরদিন বেঁচে থাকবেন না। তাই আসন্ন নির্বাচনই শুধু এই রূপরেখার অধীনে হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভবিষ্যতের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিকল্পধারা কয়েকদিনের মধ্যেই একটি চিরস্থায়ী রূপরেখা প্রকাশ করবে।