একতরফা ভোটের ইতিহাসই বিএনপির অনুপ্রেরণা!
নেতা-কর্মীরা মাঠে নেই। টানা চলা অবরোধ কর্মসূচি অন্তত শহরাঞ্চলে হলেও ধীরে ধীরে কার্যকারিতা হারাচ্ছে। এই অবস্থায় নতুন কোনো কর্মসূচি ছাড়া কর্মী-সমর্থকদের আন্দোলনে যুক্ত করা কঠিন বলে মনে করছেন বিএনপির একাধিক নেতা।
এই অবস্থায় জ্যেষ্ঠ নেতারা তাঁদের নিজ নিজ এলাকার বা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে বারবার ১৯৮৬, ৮৮ ও ৯৬-এর নির্বাচনের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। অতীত ইতিহাস ঘেঁটে বিএনপির নেতারা বলছেন, একতরফা নির্বাচনে বিজয়ী কোনো দলই বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি।
রাজনৈতিক দল হিসেবে এবারই এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে বলে মনে করছেন বিএনপির তিনজন নীতিনির্ধারক। তবে তাঁরা মনে করেন, আগের প্রতিকূল সময়গুলোতে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় ছিল। এবার রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায়। তাই বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা দরকার। তবে সে ধরনের কোনো কর্মসূচি দলটি নিতে পারেনি বলেও তাঁরা স্বীকার করেন।
দলের সূত্রগুলোর মতে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। বিদেশি চাপের কারণে তাদের সরে দাঁড়াতে হবে। এর সঙ্গে মিলিয়ে ওই তিন নীতিনির্ধারক বললেন, এখন নিজেদের শক্তি বাড়াতে হবে। অন্যের শক্তিকে সহায়ক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
ঢিলেঢালা অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিএনপির নেতারা বলেছেন, এখন আন্দোলনে কোনো বিরতি দেওয়া যাবে না। বিরতি দিলে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আবার আন্দোলনমুখী করা কঠিন হবে। মাঠের রাজনীতিতে শক্তিহীন হয়ে পড়লে দেশে-বিদেশে সরকারের ওপর যে চাপ এখনো অব্যাহত আছে, তা অনেকখানি কেটে যাবে। এই নেতাদের যুক্তি হচ্ছে, ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বৈধতা পাবে না। এখন পর্যন্ত কোনো বন্ধুপ্রতিম দেশ এই নির্বাচন ও বিজয়ীদের স্বাগত জানায়নি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, দেশি-বিদেশিদের চাওয়া অগ্রাহ্য করে সরকার যা করেছে, তাতে সবাই ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পেছনে সংগত কারণ যুক্ত হয়েছে। তবে আন্দোলনের ধরন কী হবে, তা নিয়ে দল ও জোটে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যতক্ষণ নতুন কর্মসূচি না আসছে, ততক্ষণ অবরোধ কর্মসূচি চলবে।
দেখা গেছে, এর আগের তিনটি একতরফা নির্বাচনে গঠিত সংসদ বেশি দিন টেকেনি। '৮৮ সালের নির্বাচনের সংসদ সর্বোচ্চ দুই বছর সাত মাস টিকেছিল। ১৯৯৬ সালে বিএনপি যে একতরফা নির্বাচন করেছিল, সেই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। এবারের সংসদের স্থায়িত্বও বেশি দিন হবে না বলে মনে করে বিএনপি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, এখন পর্যন্ত দেশে কোনো নির্বাচন ঠেকানো যায়নি। তবে ১৯৮৬ বা ৮৮-এর তুলনায় বিএনপি এবার যে ধরনের 'প্রতিরোধ' গড়ে তুলতে পেরেছে, তা একেবারে হতাশ হওয়ার মতো নয়।
বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন করায় তাদের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ আরও বেড়েছে। এটি কাজে লাগিয়ে আন্দোলন জোরদার করার চিন্তা আছে দলের ভেতরে। সরকারের কঠোর অবস্থানের মুখে এখন দলের যে অবস্থা, তাতে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব কি না, জানতে চাইলে দলটির একজন নীতিনির্ধারক বলেন, ১৯৮৮ সালের একতরফা নির্বাচনের সময় সরকারের দমনের মুখে বিএনপি এর চেয়ে খারাপ অবস্থানে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জনসমর্থন বেড়েছে। এবারও তাই হবে বলে তাঁর ধারণা।
http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/120037/একতরফা_ভোটের_ইতিহাসই_বিএনপির_অনুপ্রেরণা
__._,_.___