ঠাকুরগাঁওয়ে হিন্দু এলাকায় লুটতরাজ : 'তুই ভোট দিতে গেলে কেন তোদেক বাঁচাবে কে?'
আখতার হোসেন রাজা, ঠাকুরগাঁও
তুই ভোট দিতে গেলে কেন? তোদেক বাঁচাবে কে? (নির্যাতিত ব্যক্তির নাম দেয়া হলো না, নিরাপত্তার কারণে) একথা বলার পরই শুরু হয় প্রথমে ধাক্কা-ধাক্কি, চড়-থাপ্পর। ঘটনাস্থলে দুর্বৃত্তরা দল বেঁধে ওই হিন্দু লোকটির ওপর ঝাঁপিয়ে পরে সঙ্গে সঙ্গে তাদের বাড়িঘরে চলে লুটপাট ভাঙচুর এবং নির্যাতন। গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন বিকেল ৫টা থেকে রাতঅবদি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের গোপালপুরসহ আশপাশের হিন্দু অধ্যুসিত গ্রামগুলোতে। এই অমানবিক নির্যাতনের নেতৃত্ব দেন ওই ইউনিয়নের এক মেম্বার আবদুল খালেকসহ আরও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। পুলিশের একজন কর্মকর্তা ওই এলাকার লোমহর্ষক কাহিনীর বর্ণনা সংবাদকে জানান, গড়েয়া ইউনিয়নের শত শত মানুষ সন্ত্রাসী লুটপাটকারী একত্রিত হয়ে সমস্ত এলাকায় হিন্দুদের দোকানপাট ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও বেপোরোয়া লুটতরাজ করে সারারাত ধরে।
বাড়ির নারী-পুরুষ, শিশুরা বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করে পার্শ্ববর্তী ইসকন মন্দিরে। ওই রাতে যখন শত শত সাম্প্রদায়িকতাবাদী মানুষ জড় হয়ে আক্রমণ করতে যায় একটি হিন্দু বস্তিতে জীবন রক্ষার্থে ওই বস্তির মানুষ সন্ত্রাসীদের পথরোধ করতে বাধ্য হয়। তাদের কাছে যা অস্ত্রশস্ত্র ছিল তা দিয়ে প্রতিরোধে জীবন-মরণকে চ্যালেঞ্জ করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাইকেল মেকার হানিফ নিহত হয়। এই নিয়ে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। নির্বাচনবিরোধীরা মরিয়া হয়ে সাম্প্রদায়িকতার আওয়াজ তুলে মানুষকে আরও উত্তেজিত করে তুলে। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভোটের আগের দিন ওই এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা ও বহু সামাজিক সাংগঠনিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী বলে দাবি করেন। তিনি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নেতা। বস্তিগুলোতে বৈঠক করেন এবং আকার ইঙ্গিতে নির্দেশ দেন 'তোমরা প্রয়োজনে ২/৪ জনকে খুন করলে আমরা দেখব' এ ধরনের নেতিবাচক নির্দেশ পাওয়ায় হিন্দু সাম্প্রদায়ের অনেকে দ্বিমত পোষণ করে এবং প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তারা এ ধরনের নির্দেশকে সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেবে এবং তাদের এলাকায় শান্তিতে থাকা সম্ভবপর হবে না। ওই নেতা ঘটনার পর গাঢাকা দেয়। পরে পরিস্থিতি পুলিশের আয়ত্তে আসলে তিনি কয়েকজন লোক নিয়ে এলাকায় যান। এলাকাবাসী তার সঙ্গে কথা বলাসহ সামনে আসেনি। কারণ স্থানীয় লোকজন ছোট ছোট চাষি, দোকানদার এবং শান্তি প্রিয় মানুষ। তাছাড়া গড়েয়া পলাশবাড়ী এলাকাটি জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি। জামায়াত-শিবিরের প্রভাবে বিএনপি নেতারা হিন্দু সম্প্রদায়কে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক মনে করে। এই ভোটব্যাংক নিশ্চিহ্ন করার জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠে। এই সুযোগে মতলববাজরা হিন্দুদের উচ্ছেদ করলে তারা হয়তো প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে। আর এই সুযোগে হিন্দুদের জমিজমা, বিষয়-সম্পত্তি তারা অনায়াসে দখল করে ভোগ করবে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, প্রায় বছর খানেক আগে গড়েয়া অঞ্চলে জামায়াতের নেতৃত্বে একটি ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম করা হয়। এতে পুলিশের গুলিতে ৫ জন নিহত হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই হত্যাকা-ের বিচারও হয়নি। ফলে জামায়াত-শিবির, বিএনপি উছিলা খুঁজতে থাকে প্রতিশোধের জন্য। এই হত্যাকা- নিয়ে ক্ষমতাসীনরা রাজনৈতিক ও আইনগত ব্যাপারে মনযোগ দেয়নি ও আমলেও নেয়নি। ফলে ৫ জানুয়ারি ওঁৎ পেতে থাকা প্রতিক্রিয়াশীল সংগঠনগুলো ভোটবিরোধী আন্দোলনের সুযোগে প্রতিশোধের জিঘাংসায় মেতে উঠে।
গড়েয়ার আগুন, সদর উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে একের পর এক ঘরবাড়িতে আগুন, অত্যাচার বেড়ে যায়। শত শত মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। রাতের বেলায় অনেকে বাড়িতে থাকতে ভরসা পাচ্ছে না। যদিও পুলিশি তৎপরতা ও টহল জোরদার করা হয়েছে। এতে তারা নিরাপদ মনে করছেন না। নির্বাচনউত্তর সহিংসতার ঘটনায় ৭৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে গড়েয়া গোপালপুরের ঘটনার মূল নায়ক খালেক মেম্বারকে এখনও ধরতে পারেনি। তার সাথীদেরও পুলিশ পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন।
৫ জানুয়ারির মর্মান্তিক ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত গড়েয়া এলাকায় ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার মানবতাবাদী ব্যক্তি ও সংগঠনগুলো সরেজমিন ঘুরে গেছেন সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতার হাতও প্রসার করেছেন। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের ভাঙ্গা মন জোড়া লাগছে না। গত ১৬ জানুয়ারি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান খাঁনের নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনাস্থলে গেলে তার সঙ্গে ঠাকুরগাঁও আওয়ামী লীগের সেই সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিটিকে দেখে তাদের মন আবার ভেঙ্গে যায়। তার উপস্থিতি স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অন্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলো ভয়ে উৎকণ্ঠায় নিরাশ হয়ে পড়ে।
তাদের কথা হলো- এ ধরনের ব্যক্তিরা এই অঞ্চলে আসলে তাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উন্নতি হবে না বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অবণতিই হবে। তারা মনে করেন ওই ধরনের চিহ্নিত লোকজনকে যে কোন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনগুলোতে ঠাঁই দেয়া নৈতিকতাবিরোধী।
- See more at: http://www.thedailysangbad.com/index.php?ref=MjBfMDFfMTlfMTRfMV8xM18xXzE1MzI4MQ==#sthash.uh1VBbMC.dpufবাড়ির নারী-পুরুষ, শিশুরা বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করে পার্শ্ববর্তী ইসকন মন্দিরে। ওই রাতে যখন শত শত সাম্প্রদায়িকতাবাদী মানুষ জড় হয়ে আক্রমণ করতে যায় একটি হিন্দু বস্তিতে জীবন রক্ষার্থে ওই বস্তির মানুষ সন্ত্রাসীদের পথরোধ করতে বাধ্য হয়। তাদের কাছে যা অস্ত্রশস্ত্র ছিল তা দিয়ে প্রতিরোধে জীবন-মরণকে চ্যালেঞ্জ করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাইকেল মেকার হানিফ নিহত হয়। এই নিয়ে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। নির্বাচনবিরোধীরা মরিয়া হয়ে সাম্প্রদায়িকতার আওয়াজ তুলে মানুষকে আরও উত্তেজিত করে তুলে। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভোটের আগের দিন ওই এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা ও বহু সামাজিক সাংগঠনিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী বলে দাবি করেন। তিনি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নেতা। বস্তিগুলোতে বৈঠক করেন এবং আকার ইঙ্গিতে নির্দেশ দেন 'তোমরা প্রয়োজনে ২/৪ জনকে খুন করলে আমরা দেখব' এ ধরনের নেতিবাচক নির্দেশ পাওয়ায় হিন্দু সাম্প্রদায়ের অনেকে দ্বিমত পোষণ করে এবং প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তারা এ ধরনের নির্দেশকে সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেবে এবং তাদের এলাকায় শান্তিতে থাকা সম্ভবপর হবে না। ওই নেতা ঘটনার পর গাঢাকা দেয়। পরে পরিস্থিতি পুলিশের আয়ত্তে আসলে তিনি কয়েকজন লোক নিয়ে এলাকায় যান। এলাকাবাসী তার সঙ্গে কথা বলাসহ সামনে আসেনি। কারণ স্থানীয় লোকজন ছোট ছোট চাষি, দোকানদার এবং শান্তি প্রিয় মানুষ। তাছাড়া গড়েয়া পলাশবাড়ী এলাকাটি জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি। জামায়াত-শিবিরের প্রভাবে বিএনপি নেতারা হিন্দু সম্প্রদায়কে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক মনে করে। এই ভোটব্যাংক নিশ্চিহ্ন করার জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠে। এই সুযোগে মতলববাজরা হিন্দুদের উচ্ছেদ করলে তারা হয়তো প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে। আর এই সুযোগে হিন্দুদের জমিজমা, বিষয়-সম্পত্তি তারা অনায়াসে দখল করে ভোগ করবে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, প্রায় বছর খানেক আগে গড়েয়া অঞ্চলে জামায়াতের নেতৃত্বে একটি ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম করা হয়। এতে পুলিশের গুলিতে ৫ জন নিহত হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই হত্যাকা-ের বিচারও হয়নি। ফলে জামায়াত-শিবির, বিএনপি উছিলা খুঁজতে থাকে প্রতিশোধের জন্য। এই হত্যাকা- নিয়ে ক্ষমতাসীনরা রাজনৈতিক ও আইনগত ব্যাপারে মনযোগ দেয়নি ও আমলেও নেয়নি। ফলে ৫ জানুয়ারি ওঁৎ পেতে থাকা প্রতিক্রিয়াশীল সংগঠনগুলো ভোটবিরোধী আন্দোলনের সুযোগে প্রতিশোধের জিঘাংসায় মেতে উঠে।
গড়েয়ার আগুন, সদর উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে একের পর এক ঘরবাড়িতে আগুন, অত্যাচার বেড়ে যায়। শত শত মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। রাতের বেলায় অনেকে বাড়িতে থাকতে ভরসা পাচ্ছে না। যদিও পুলিশি তৎপরতা ও টহল জোরদার করা হয়েছে। এতে তারা নিরাপদ মনে করছেন না। নির্বাচনউত্তর সহিংসতার ঘটনায় ৭৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে গড়েয়া গোপালপুরের ঘটনার মূল নায়ক খালেক মেম্বারকে এখনও ধরতে পারেনি। তার সাথীদেরও পুলিশ পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন।
৫ জানুয়ারির মর্মান্তিক ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত গড়েয়া এলাকায় ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার মানবতাবাদী ব্যক্তি ও সংগঠনগুলো সরেজমিন ঘুরে গেছেন সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতার হাতও প্রসার করেছেন। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের ভাঙ্গা মন জোড়া লাগছে না। গত ১৬ জানুয়ারি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান খাঁনের নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনাস্থলে গেলে তার সঙ্গে ঠাকুরগাঁও আওয়ামী লীগের সেই সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিটিকে দেখে তাদের মন আবার ভেঙ্গে যায়। তার উপস্থিতি স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অন্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলো ভয়ে উৎকণ্ঠায় নিরাশ হয়ে পড়ে।
তাদের কথা হলো- এ ধরনের ব্যক্তিরা এই অঞ্চলে আসলে তাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উন্নতি হবে না বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অবণতিই হবে। তারা মনে করেন ওই ধরনের চিহ্নিত লোকজনকে যে কোন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনগুলোতে ঠাঁই দেয়া নৈতিকতাবিরোধী।
http://www.thedailysangbad.com/index.php?ref=MjBfMDFfMTlfMTRfMV8xM18xXzE1MzI4MQ==
Related:
ঠাকুরগাঁওর পথে গণজাগরণ মঞ্চ : জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে : হিন্দুদের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের - See more at: http://www.thedailysangbad.com/index.php?ref=MjBfMDFfMTlfMTRfMV8xM18xXzE1MzI4MQ==#sthash.uh1VBbMC.dpuf
দিনাজপুরে বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও : সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়তে হবে - See more at: http://www.thedailysangbad.com/index.php?ref=MjBfMDFfMTlfMTRfMV8xM18xXzE1MzI4MQ==#sthash.uh1VBbMC.dpuf
'BNP, Jamaat' behind Maloparha attack on Hindus
Hindus are attacked after every election whether they vote or not, a community veteran has lamented.
File Photo
RELATED VIDEO:
__._,_.___