মাননীয় ভূমি মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী মহোদয়।
বিষয়ঃ-অর্পিত সম্পত্তির 'খ' তালীকার ভূমি নামজারী/মিউটেসন প্রসঙ্গে।
জনাব, আসসালামু আলাইকুম। আপনাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ূ কামনা করছি। প্রথমেই আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাদের সততা ও সদুদ্দেশ্যের জন্য। আপনারা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন ভূমি ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিনের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করে বা কমিয়ে এদেশের মানুষকে চরম হয়রানীর হাত থেকে রক্ষা করতে। কিন্তু আপনারা যতই চেষ্টা করেননা কেন, Dull headed, barren headed কিন্তু অসীম ক্ষমতার অধিকারী, ভয়ানক দুর্নীতিবাজ আমলা তথা এসি, এডিসি, ডিসি, কমিশনার, সহকারী সচিব থেকে সচিবরা আপনাদের এই উদ্দেশ্য সফল হতে দেবেনা।
১।'মিউটেসন' বা নামজারীঃ- যত Dull headed, barren headed-ই হোকনা কেন 'মিউটেসন' কি ইহা কি একজন এসি ল্যান্ড বুঝেনা বা জানেনা? অবশ্যই জানে, বুঝে। 'মিউটেসন' বা নামজারী মানে কাউকে কোন জমি দিয়ে দেওয়া নহে।এর ফলে ('মিউটেসন' বা নামজারী) কেউ জমির মালীক হয়ে যায়না। 'মিউটেসন' বা নামজারী হচ্ছে বৈধ মালীকানা দলিলের সাহায্যে ভূমির সর্বশেষ বৈধ মালীকের মালীকানা হালনাগাদকরন, যাতে সরকারী ভূমি কর আদায়ে সুবিধা হয়, ভূমি ব্যবস্থাপনা সহজ হয়। অর্থাৎ 'মিউটেসন' বা নামজারী শুধু ভূমির মালীকের সুবিধার্থেই নহে, এসি ল্যান্ড সরকারের স্বার্থেই স্বউদ্যোগে 'মিউটেসন' বা নামজারী করবে বা করিয়ে দেবে। কোন কারনে যদি ভূলভাবে 'মিউটেসন' বা নামজারী হয় তাতে অন্ততঃ সরকার বা এসি ল্যান্ডের কোন ক্ষতি নাই। কেননা 'মিউটেসন' বা নামজারী একজন এসি ল্যান্ড, তাহাকে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, কোন কারন না দর্শিয়ে যেকোন মুহেুর্তে বাতিল করতে পারে। আর 'মিউটেসন' বা নামজারীকরন বৈধ সাফকবলা দলিল, বৈধ ওয়ারিশান সার্টিফিকেট, বৈধ লীজ দলিল এগুলোর যেকোন একটি দ্বারাই সম্ভব। তাই 'মিউটেসন' বা নামজারীকরন এতই সহজ যে, সংশ্লিষ্ট অধঃস্তন কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং একজন এসি ল্যান্ডের জন্য ইহা কোন বিষয়ই নহে। তারপরও ঢাকা শহরে অতি সাধারন একটি 'মিউটেসন' বা নামজারী করতে ন্যুনতম ২০-৫০হাজার টাকা ঘুষ লাগে। প্রশাসনিক/রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহারকারীসহ ১০০% মিউটেসনকারী একথা স্বীকার করবেন।
২।অর্পিত সম্পত্তিঃ-অর্পিত সম্পত্তি হচ্ছে ০৬/৯/১৯৬৫থেকে ১৬/০২/১৯৬৯ইং সময়ে যেসকল হিন্দু ভারতে ছিলেন বা এদেশে তাদের সম্পদ ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে গিয়েছিলেন, তাদের সম্পদই শত্রু বা অর্পিত সম্পত্তি।কিন্তু ০৬/৯/১৯৬৫ইংএর বহু পূর্বে থেকেই যে ভূমি রেজিস্টার্ড দলিলের মাধ্যমে বাঙ্গালী/বাংলাদেশী মুসলমানের নামে এবং অদ্যাবধি তাদের নামে, দখলে, তাদের ভূমি অর্পিত সম্পত্তি হবে কেন? ইহা হয়েছে দুর্নীতিবাজ সার্ভেয়ার, তহশিলদার, কানুনগোর দুর্নীতির কারনে। বর্তমান সরকার অর্পিত সম্পত্তির 'খ' তালীকা বাতিল করার পরও আপনারা বহু আদেশ জারী করেছেন। সর্বশেষ ২২/৫/২০১৪তারিখে জারীকৃত -২৪২নং পরিপত্রের ক-ঙ পর্যন্ত প্রত্যেকটি শর্ত পূরণ করা সত্বেও অর্পিত সম্পত্তির 'খ' তালীকাভুক্ত ভূমি 'মিউটেসন' বা নামজারী করতে এখনও কমপক্ষে ১-২লাখ টাকা লাগে। যারা দিবেনা তাদেরটা 'মিউটেসন' বা নামজারী হবেনা বা হচ্ছেনা।
ঢাকা শহরে বছরে ৫০হাজার থেকে ১লাখ পর্যন্ত 'মিউটেসন' বা নামজারী হয়। যদি গড়ে ৫০হাজারটিও ধরা হয় এবং গড়ে প্রতিটিতে ৫০হাজার টাকা ধরা হয় তাহলে শুধু 'মিউটেসন' বা নামজারী বাবদ বছরে ন্যুনতম ২৫০কোটি টাকা ঘুষ ঢাকা শহরেই লেনদেন হয়। এলাকাভেদে, জমির মূল্যভেদে বা মালীকের কোন দুর্বলতা বা মালীকানা দলিলের বা ওয়ারিশানদের মধ্যে কোন বিরোধ থাকলে ঘুষের পরিমান উপরে উল্লেখিত পরিমাণের অনেক বেশী।
ঘুষের এই টাকা বটম টু টপ(তহশিলদার, সার্ভেয়ার, কানুনগো, এসি, এডিসি, ডিসি, কমিশনার, সহকারী সচিব থেকে সচিব) পর্যন্ত যায়।ফলে তারা কেহই আপনাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা সমর্থন করবেনা বা সফল হতে দেবেনা। নাহলে এডিসি, ডিসির কাছে এসি ল্যান্ড অফিস-তহশিল অফিসের বিরুদ্ধে সুনির্দিস্ট অভিযোগ করলেও তারা তা আমলে নেয়না কেন? যেটুকু নেয় তা লোক দেখানো।
যেহেতু 'মিউটেসন' বা নামজারী দ্বারা কেউ জমির মালীক হয়ে যায়না, ভূল হলে বা কেউ জালিয়াতি করতে চাইলেও যেহেতু কোন কোর্ট/হাইকোর্ট ছাড়াই তা ('মিউটেসন' বা নামজারী) অতি সহজে বাতিল করা যায়, তাই বিশেষ কোন কোন ক্ষেত্র বা ব্যতিক্রম ব্যতীত সংক্ষিপ্ত সময়ে মিউটেসন করিয়ে দেওয়াই জনগনের হয়রানী লাঘবের এবং এই ক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধের একমাত্র উপায়।
__._,_.___