Banner Advertiser

Sunday, July 6, 2014

[mukto-mona] খোলা চোখে : এখন দরকার একটি গণতান্ত্রিক মোর্চা



খোলা চোখে

এখন দরকার একটি গণতান্ত্রিক মোর্চা

হাসান ফেরদৌস | আপডেট: ০১:০৭, জুলাই ০৭, ২০১৪ প্রিন্ট সংস্করণ
   

অলংকরণ: তুলিশামসুর রাহমান একসময় ঠাট্টা করে লিখেছিলেন, অদ্ভুত উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ। উটের পিঠে নয়, আজকের বাংলাদেশ চলেছে গাধার পিঠে, তাও সম্ভবত উলটো পথে। গত ৪৫ বছরে অনেক রাজনৈতিক চড়াই–উতরাই পেরিয়ে তাকে যেতে হয়েছে, কিন্তু এমন অদ্ভুত স্থবিরতার মুখে তাকে পড়তে হয়নি কখনো। ক্ষমতার কেন্দ্রে যাঁরা, তাঁদের রাজনৈতিক বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ। অন্যদিকে ক্ষমতার বাইরে যাঁরা বিরোধী রাজনীতিক, তাঁদের না আছে রাজনৈতিক কর্মসূচি, না আছে কোনো রণকৌশল। দেশের বাইরে বসে এক অপগণ্ড বালক যখন যা খুশি বলে বেড়াচ্ছে, আর তাকেই বেদবাক্য ভেবে দেশের ভেতরে দলের নেতা-কর্মীরা বগল বাজাচ্ছেন। ভালো কোনো প্রহসন লিখিয়ের হাতে পড়লে এই দুই অবস্থা নিয়ে নিঃসন্দেহে চমৎকার একটি ফার্স (প্রহসন) লেখা হতো!


দেশের এই রাজনৈতিক স্থবিরতার কারণে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা অনন্তকাল স্থায়ী হবে, এ কথা ভাবার কোনো কারণ নেই। বস্তুত, মূলধারার রাজনীতির ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে অতি-বাম বা অতি-ডান রাজনৈতিক তৎপরতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এই দুই ধারার রাজনীতির প্রধান লক্ষণ হলো সহিংসতা। বাংলাদেশ তার ইতিহাসের গোড়া থেকেই অতি-দক্ষিণপন্থী সহিংস ধর্মীয় রাজনীতির শিকার। জামায়াত-হুজি-হেফাজত–জাতীয় দলগুলো, যারা ধর্মের জামা পরে ক্ষমতার সহিংস রাজনীতি করতে অভ্যস্ত, এই মুহূর্তে সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে তাদের যতই কোণঠাসা ভাবি না কেন, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় তাদের ক্ষমতা এখনো বিপুল। কোনো কোনো মূলধারাভুক্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমর্থনের ফলে এসব ধর্মীয় দলের একধরনের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ করুন বিদেশি অর্থ ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা পুলিশের অপেক্ষমাণ নখদন্ত।

অন্যদিকে, রাজনৈতিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠলেও মাওবাদী-নকশালবাদী অতি-বাম কখনোই পুরোপুরি মাঠ ছেড়ে যায়নি। আগে যেমন এখনো তেমনি মূলধারার রাজনীতির ব্যর্থতা তাদের পুনর্বাসনে মদদ জোগাবে। ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে মাওপন্থীদের উত্থান থেকে স্পষ্ট, এই আন্দোলনের প্রতি নাগরিক সমর্থনও সম্পূর্ণ বিলীন হয়নি। বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থবিরতা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে অতি-বামের মধ্যমঞ্চে পুনঃপ্রবেশ অনিবার্য।

এই বেসামাল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি বিকল্প ব্যাপকভিত্তিক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল স্রোতোধারা নির্মাণ অতি জরুরি। প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক এই পূর্বশর্ত যুক্ত করার কারণ, এই মোর্চায় বিদেশি অর্থে মদদপুষ্ট ও পুঁজিবাদী এজেন্ডার অনুসারী দল-গ্রুপ স্বাগত নয়, সে কথা আগেভাগেই নিশ্চিত করা। গার্মেন্টসসহ সব শ্রমিক ইউনিয়ন, পরিবেশবাদী, নারী অধিকার আন্দোলন, আদিবাসীসহ সব সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, এমনকি দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক শক্তিসমূহও এই মোর্চার অন্তর্গত হতে পারে। ছাত্রদেরও এই মোর্চায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব, শাহবাগ আন্দোলন থেকে প্রমাণিত হয়েছে ছাত্রদের বৃহদংশই দলীয় আনুগত্যের বাইরে। বাংলাদেশে, যেখানে সুশীল সমাজভিত্তিক আন্দোলন খুবই দুর্বল, তাদেরও এই মোর্চায় স্থান দিতে হবে। এসব গ্রুপ বা দল স্বতন্ত্রভাবে পরিপূর্ণ আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। কিন্তু পাঁচ হাত এক হলে অবস্থা বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গঠন ও কর্মপদ্ধতিগত ভিন্নতা সত্ত্বেও এসব দল-গ্রুপ-গোষ্ঠীর ভেতর মৌলিক ঐক্য রয়েছে, তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে নাগরিক অধিকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা ক্ষমতার অংশীদার নয়, তারা মালিকের স্বার্থ রক্ষা করে না, বিদে​শি এজেন্ডার অনুসারী নয়। ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুতে কাজ করলেও তাদের যা একত্র করতে পারে তা হলো, একদিকে প্রগতিশীল আশু কর্মসূচি, অন্যদিকে গণতান্ত্রিক রণকৌশল। স্বল্পমেয়াদি কৌশল হিসেবে এই মোর্চা যদি ইস্যুভিত্তিক রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে এগোতে চেষ্টা করে, তার সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক বেশি।

বাংলাদেশের রাজনীতির সব এজেন্ডাই নির্ধারণ করে দেশের দুই প্রধান দল, তাও নীতিগত অবস্থান থেকে নয়—তাদের পারস্পরিক বিরো​ধিতার ভিত্তিতে। অথচ অধিকাংশ মৌল রাজনৈতিক ইস্যুর কোনো আওয়ামী বা বিএনপি চরিত্র নেই। আইনের শাসন ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, শ্রমিক-কর্মচারীর ন্যায্য পাওনা, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, দুর্নীতি, পরিবেশদূষণ ইত্যাদি প্রশ্নের কোনোটাই দলীয় নামাবলির ধার ধারে না। অতএব আওয়ামী-বিএনপি কাজিয়ার বাইরে এই ইস্যুগুলো জনসমক্ষে উপস্থিত করতে সক্ষম হলে প্রস্তাবিত গণতান্ত্রিক মোর্চ দ্রুত নাগরিক বৈধতা অর্জনে সক্ষম হবে।শুধু সমস্যা উত্থাপন নয়, তার সমাধানও এই মোর্চার পক্ষে সাধারণ সম্মতির ভিত্তিতে নির্ণয় সম্ভব।

পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই দুই বা তিনটি বড় দল জাতীয় রাজনীতিতে যেমন, স্থানীয় পর্যায়েও অপরিসীম ক্ষমতাধর মুখ্যত তাদের অর্থ ও পেশি বলের কারণেই। যতক্ষণ না এই অশুভ চক্রের অবসান ঘটছে, রাজনীতি তাদের কবজা মুক্ত হবে না। বলাই বাহুল্য, কাজটা সহজ নয়, কিন্তু সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিক্ষা পাই যে জাতীয় ইস্যুভিত্তিক পরিবর্তন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়াও অর্জন সম্ভব। ভারতের আম আদমি পার্টির (আপ) উত্থান তার প্রমাণ। মুখ্যত সুশাসনের পক্ষে ও দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান নিয়ে এই দল নিজেদের জন্য জাতীয় স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে। 'আপ' যদি একা চলার বদলে সমমনা রাজনৈতিক-সামাজিক-নাগরিক অধিকারবাদী প্রতিষ্ঠানসমূহকে এক করতে সক্ষম হতো, তার শুভ ফল ভোগ করত সবাই। তারপরেও বলি, রাজনৈতিক অঙ্কের হিসাব 'আপ'-এর সাফল্য সীমিত হলেও তারা দুর্নীতিকে একটি নির্বাচনী জাতীয় ইস্যু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ভারতের জাতীয় নির্বাচনে কংগ্রেসের পরাজয়ের প্রধান কারণই ছিল দুর্নীতি দমনে তাদের ব্যর্থতা।

ভারতের মতো বাংলাদেশেও একটি প্রধান সমস্যা সুশাসনের অভাব। প্রধান দলগুলোর সরাসরি বিরুদ্ধাচরণ না করেও সুশাসনের পক্ষে জনমত গঠনে নীতিগত অবস্থান গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের প্রস্তাবিত গণতান্ত্রিক মোর্চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই ভূমিকার লক্ষ্য হবে প্রধান দলগুলোর প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠা নয়, তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পরিবর্তন অর্জন। আমেরিকায় গত ১০ বছরে 'টি-পার্টি' নামে যে নতুন দক্ষিণপন্থী আন্দোলন আবির্ভূত হয়েছে, তা মূলধারাভুক্ত রিপাবলিকান পার্টির ভেতর থেকেই উৎসারিত। রিপাবলিকান বা ডেমোক্রেটিক পার্টি—আমেরিকার দুই প্রধান দল—তাদের কোনোটিই ঠিক 'মনোলিথিক' বা একধারাবাহী নয়। নানা মত ও পথ সেখানে কাজ করে। যারা চলতি রিপাবলিকান নেতৃত্বে আস্থাহীন, যারা বিশ্বাস করে এই দল তার মৌল আদর্শ থেকে সরে এসেছে, তারা টি-পার্টির ঝান্ডার তলে জড়ো হয়েছে। ওপরের নানা মহল থেকে টাকা ছড়ানো হয়েছে। সে কথায় কোনো ভুল নেই, কিন্তু এ কথাও অস্বীকার করা যাবে না, শ্বেত আমেরিকার একটি অংশের কাছে এই আন্দোলন জনপ্রিয় হয়েছে। ফলে শুধু অর্থ নয়, তৃণমূল পর্যায় থেকে জনসমর্থনও তারা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। আমরা নীতিগতভাবে ভিন্নমত পোষণ করতে পারি, কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই যে টি-পার্টির কারণে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এজেন্ডায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। যে গণতান্ত্রিক মোর্চার প্রস্তাব এখানে করা হয়েছে, 'ইলেকটোরাল' রাজনীতিতে অংশ না নিয়েও তার পক্ষে দেশের রাজনৈতিক সংলাপে প্রভাব রাখা যে সম্ভব, তার আরও দুটি উদাহরণ নেওয়া যাক। একটি আমেরিকার, অন্যটি বাংলাদেশের। ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে আমেরিকাজুড়ে অব্যাহত মন্দাবস্থার প্রতিক্রিয়ায় 'অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট' আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র, যুবক, শ্রমিক, শিক্ষক, পরিবেশবাদী, নারী ইত্যাদি নানা মত ও পথের মানুষ এই আন্দোলনে যুক্ত হয়। এই আন্দোলনের ভেতর দিয়েই এই দেশে ধনী-দরিদ্রের অব্যাহত বৈষম্যের বিষয়টি নির্বাচনী রাজনীতির কেন্দ্রীয় বিষয়ে পরিণত হয়। অনেকেই মানেন, শেষ পর্যন্ত যে বারাক ওবামা রেকর্ড পরিমাণ ভোট পেয়ে জেতেন, তার একটা বড় কারণ ছিল অকুপাই আন্দোলন।

অন্যদিকে বাংলাদেশে গত বছর সম্পূর্ণ আকস্মিকভাবে শাহবাগ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। মুখ্যত অরাজনৈতিক ও সরাসরি দলভুক্ত নয় এমন তরুণ ও যুবকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই আন্দোলন ঘাতক-দালালদের বিচারের দাবিটি দেশের প্রধান জাতীয় দাবিতে পরিণত করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সে আন্দোলন থেকে আসল ফায়দা পায় তা ঠিক, কিন্তু এই দাবি অস্বীকার করা দেশের মূলধারাভুক্ত কোনো দলের পক্ষে এখন আর সম্ভব নয়। এই কৃতিত্ব শাহবাগ আন্দোলনকে দিতেই হবে।

পরিবর্তন চাইলেই পরিবর্তন আসে না। সে জন্য দরকার লড়াই। আর সে লড়াই সংঘটিত করতে চাই রাজনৈতিক তত্ত্ব ও রাজনৈতিক দল। আসন্ন অথবা দূরাগত কোনো সময়ে বাংলাদেশে তেমন দল রাজনৈতিক নেতৃত্ব অবশ্যই প্রকাশিত হবে। কিন্তু আমরা কি সেই অনাগত ও অনিশ্চিত সময়ের অপেক্ষায় থাকব, না গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল কর্মসূচির ভিত্তিতে একত্র হওয়ার চেষ্টা করব?

নিউইয়র্ক

হাসান ফেরদৌস: প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক৷

http://www.prothom-alo.com/opinion/article/260422/%E0%A6%8F%E0%A6%96%E0%A6%A8_%E0%A6%A6%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0_%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%9F%E0%A6%BF_%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95_%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BE




__._,_.___

Posted by: "Jamal G. Khan" <M.JamalGhaus@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___