Banner Advertiser

Saturday, March 23, 2013

[mukto-mona] জয়ী না হয়ে ঘরে ফিরব না ॥ ইমরান সরকার




রবিবার, ২৪ মার্চ ২০১৩, ১০ চৈত্র ১৪১৯
জয়ী না হয়ে ঘরে ফিরব না ॥ ইমরান সরকার
একান্ত সাক্ষাতকার
মোরসালিন মিজান ॥ গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলন হিসেবে উল্লেখ করে এর মূল ব্যক্তিত্ব একাত্তরের চেতনায় উজ্জীবিত তরুণ প্রজন্মের নেতা ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনবদ্য প্ল্যাটফর্ম গড়ে দিয়েছে শাহবাগ। এখানে গত ৫ ফেব্রুয়ারি যে লড়াই শুরু হয়েছিল সেটি এখন ১৬ কোটি মানুষের। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির ছাড়া এ আন্দোলনের কোন প্রতিপক্ষ নেই। তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ চায়। এটি এখন পরিষ্কার। এ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ঘরে ফেরার কোন সুযোগ নেই। সারাদেশের প্রতিটি প্রান্তে এই আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়া হবে। হ্যাঁ, বাধা এসেছে। আসবে। প্রতিপক্ষ আমাদের জন্য ফুল বিছিয়ে রাখবে না। তাতে কী? জনগণের শক্তি কাজে লাগিয়ে সকল অপশক্তির মোকাবেলা করা হবে। জয়ী হয়ে তবেই ঘরে ফিরব আমরা। সম্প্রতি জনকণ্ঠকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন তিনি। দীর্ঘ আলোচনায় নতুন ইতিহাস গড়া আন্দোলনের বর্তমান, ভবিষ্যত গন্তব্য, নানা আলোচনা, জামায়াত-শিবির ও তথাকথিত ফতোয়াবাজদের সমালোচনার জবাবসহ জানা-অজানা বহু বিষয় ওঠে আসে।
আন্দোলনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপে আছি আমরা। প্রথম ধাপে সবকিছু ছিল শাহবাগকেন্দ্রিক। দ্বিতীয় ধাপে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। কারণ দলনিরপেক্ষ হলেও এটি একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। এই আন্দোলনের সঙ্গে সকল শ্রেণীপেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যে সারাদেশের গ্রামগঞ্জে পাড়ামহল্লায় আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়ার কাজ হচ্ছে এখন। ইতোমধ্যে শাহবাগ ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করেছি আমরা। বিভাগীয় কর্মসূচীগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামের সমাবেশটি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে আমরা এখান থেকেই আবার শুরু করব। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই শুরু করব। সে প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। স্কাইপি ও ফোনের মাধ্যমে আমি সেসব স্থানে বক্তৃতা করছি। তাঁদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছি। আর শাহবাগের আন্দোলনটি আমাদের চেতনার আন্দোলন। এ জন্য সাংস্কৃতিক বিপ্লবটা জরুরী। সাংস্কৃতিক রেনেসাঁর দিকে যেতে চাই আমরা। তাই সারাদেশের সাংস্কৃতিক সংগঠন ও কর্মীদের এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। জাতীয়ভিত্তিক সংগঠনগুলো নয় শুধু, একেবারে তৃণমূল সংগঠনগুলোকেও আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে। 
অসামান্য অর্জন ॥ অনেক দিন হয়ে গেছে আন্দোলনের। এখন পর্যন্ত অর্জন কেমন বলে মনে করেন? জানতে চাইলে যথেষ্ট উৎফুল্ল মনে হয় ডা. ইমরানকে। বলেন, এই আন্দোলনের অনেক অর্জন রয়েছে। সবচেয়ে বড় যে অর্জনটি আমি দেখি সেটি হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যকার ঐক্য। বিগত দিনগুলোতে আমাদের মধ্যে নানা দ্বিধাবিভক্তি ছিল। মতপার্থক্য ছিল। সেসব কাটিয়ে একটি ঐক্যের জায়গায় আসতে পেরেছি আমরা। শাহবাগ এই ঐক্যের জায়গাটি তৈরি করে দিয়েছে। সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, ছাত্র সংগঠন, রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমসহ সকল শ্রেণীপেশার মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। একাত্তরের পর এমন ঐক্য আর দেখা যায়নি। তারপর মহান মুক্তিযুদ্ধ যে গণমানুষের, এটি অনেকেই ভুলতে বসেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের গান, কবিতা, স্লোগানসহ যে সম্পদগুলো আমাদের, সেগুলো নিয়েও দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিয়েছিল। অনেকে ভাবতেন, এগুলো মুখে নিলে অমুক দলের হয়ে যাবেন। তমুক দলের হয়ে যাবেন। এমন হাজারটা ভুল থেকে সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে এসেছে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ এখন ১৬ কোটি মানুষের। মুক্তিযুদ্ধের সকল গান কবিতা বাণী স্লোগান আবারও সকলের হয়েছে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হচ্ছে, এ আন্দোলন পূর্ববর্তী প্রজন্মের সঙ্গে ভবিষ্যত প্রজন্মের দূরত্ব কমিয়ে এনেছে। দুই প্রজন্মের মধ্যে একটা গ্যাপ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। পুরনোরা জানতেন না, ভবিষ্যত প্রজন্ম কী আদর্শ নিয়ে আসছে আসলে। এখন সেটি স্পষ্ট। তরুণ প্রজন্ম জানিয়ে দিয়েছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ চায়। অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয় তাঁদের। এসবের বাইরে একটি খুব দৃশ্যমান অর্জন আছে। আন্দোলনের ফলে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপীলের সুযোগ হয়েছে। কাদের মোল্লার বেলায় এর প্রয়োগও দেখেছি আমরা। তাহলে সব মিলিয়ে খুব সন্তুষ্ট আপনি? এমন প্রশ্নে কিছুটা যেন ছন্দপতন ঘটে। থামতে হয় ইমরানকে। কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে বলেন, না। আমাদের আরও অনেক পথ চলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে অনেক কাজ বাকি। তাই এখনই সন্তুষ্ট হওয়ার কোন সুযোগ নেই। 
সরকার পক্ষ প্রতিপক্ষ ॥ সমালোচকরা বলার চেষ্টা করছেন, এ আন্দোলন সরকারের মদদে। আসলে কি তাই? জানতে চাইলে বিষয়টি চমৎকার ব্যাখ্যা করেন তরুণ সংগঠক। বলেন, আমরা শুরুটা করেছিলাম সরকারের বিরুদ্ধেই। আমাদের সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি ছিল। সরকারই সেসব দাবি পূরণ করতে পারে। কিন্তু যেহেতু করছিল না সেহেতু আন্দোলনের দরকার হয়েছে। এই আন্দোলনে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকলকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। সে আহ্বানে বহু মানুষ সাড়া দিয়েছেন। সরকারও একাত্মতা ঘোষণা করেছে আন্দোলনের সঙ্গে। এর ফলে আমাদের মিত্রদের দলেও সরকারকে পেয়েছি আমরা। অনেকে এ বিষয়টি গুলিয়ে ফেলেন। বলেন, আন্দোলনে সরকার মদদ দিচ্ছে। আসলে ব্যাপারটি একদম তা নয়। 
আস্তিক নাস্তিক ফতোয়ার খপ্পর ॥ যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালনাকারী ব্লগারদের নাস্তিক বলা হচ্ছে। যাচ্ছেতাই ধরনের প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী? জানতে চাইলে ইমরান যে বক্তব্যটি দেন সেটি এ রকম- আমি নিজে বলছি, আমি আস্তিক। এর পর আর কোন কথা থাকে না। আপনি জোর করে কাউকে নাস্তিক বানাতে পারেন না। আর মনে রাখতে হবে, অপপ্রচারটি চালাচ্ছে জামায়াত-শিবির। জামায়াত-শিবির কারা? যারা একাত্তরে ইসলামের নামে মানুষ খুন, ধর্ষণ, লুট করেছে। সেই তাদের কথায় কেউ আস্তিক-নাস্তিক হয়ে যায় না। তাছাড়া গণজাগরণ মঞ্চ সম্পর্কে সকলেই জানেন। এখানে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে। ধর্ম নিয়ে এখানে কিছু কখনও বলা হয় না। আমরা সব ধর্মের প্রতি সম্মান দেখিয়ে অভ্যস্ত। কোন ধর্মের বিরোধিতা নেই এখানে। আমরা বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। মদীনা সনদে মহানবী (স) নিজেও সব ধর্মের মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন। তবে এটাও বলা দরকার, গোলাম আযম-নিজামীরা ইসলামের শত্রু। এরা যুদ্ধাপরাধী। এদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করলে কেউ ইসলামবিদ্বেষী হয়ে যায় না। কিন্তু জামায়াতীরা ছাড়াও কেউ কেউ নাস্তিক প্রচারণায় নেমেছেন। তাদের উদ্দেশে কী বলবেন? জাবাবে ইমরান বলেন, যাঁরা বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা মূলত জামায়াত-শিবির। নানা নামে-পরিচয়ে আসছে শুধু। এর বাইরে কেউ কেউ আছেন যাঁরা বিভ্রান্ত হওয়ার জন্যই যেন অপেক্ষা করে থাকেন। সে যাই হোক, যদি কেউ আমাদের সম্পর্কে কোন অভিযোগ করেন সেই অভিযোগের জবাব দিতে প্রস্তুত আছি আমরা। সে লক্ষ্যে যে কোন আলোচনাকে স্বাগত জানাই। 
১৪৪ ধারা এবং ॥ চট্টগ্রামে সমাবেশ আহ্বান করলেও বাধাগ্রস্ত হয়েছেন আপনারা। বিরোধীদের আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেটিও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এসব ঘটনায় হতাশার জায়গা সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলনকারীদের দুর্বল ভাবছে প্রতিপক্ষ। এর জবাবে কী বলবেন? উত্তরে ইমরান বলেন, আমরা অহিংস আন্দোলনে বিশ্বাসী। আমাদের সৎ সাহস আছে। তাই আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। একে দুর্বলতা ভাবার কোন কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত থেকে কেন সরে এসেছিলেন? সরকার চায়নি বলে? এমন প্রশ্নে ইমরান বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি সমাবেশটি করার। আমাদের কর্মীরা তা জানেন। কিন্তু পুলিশের বাধার মুখে ফেনী থেকে ফিরে আসতে হয়েছে আমাদের। এখান থেকে শিক্ষা নিয়েছি আমরা। ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই আরও সজাগ থাকব। 
বাকি দাবি, দাবিতে সীমাবদ্ধ ॥ জামায়াত নিষিদ্ধসহ আপনারা যেসব দাবি তুলেছিলেন সেগুলোর অধিকাংশই আমলে নেয়নি সরকার। এর পরও কি কেবল দাবির জায়গায় থাকবেন? জানতে চাইলে ইমরান বলেন, আমাদের দাবি শুধু সরকারের কাছে নয়। জনগণের কাছেও। সরকার পূরণ না করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দাবি আদায় করা হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এগোচ্ছি আমরা। 
আক্রমণে বিএনপি এবং নষ্ট ছেলে ॥ দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও এখন আক্রমণাত্মক। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত বক্তব্য দিচ্ছেন দলের নেতারা। এ ব্যাপারে গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থান কী? জানতে চাইলে মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, আন্দোলনের শুরুতেই আমরা আমাদের প্রতিপক্ষ ঠিক করে দিয়েছি। যুদ্ধাপরাধীদের দল, তাদের রাজনীতি, সংগঠন, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, তাদের গণমাধ্যমসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান আমাদের প্রতিপক্ষ। এগুলো আমরা বর্জন করার আহ্বান জানিয়েছি। এর বাইরে আমাদের কোন প্রতিপক্ষ নেই। তবে জামায়াত-শিবির বিএনপিকে ভুল বোঝাচ্ছে। তারা বলতে চাইছে, এটি দলীয় আন্দোলন। আসলে তা নয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির আন্দোলন এটি। আমরা জানি, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। প্রচুর মুক্তিযোদ্ধা আছেন এই দলে। এ দল তাই আমাদের প্রতিপক্ষ নয়। বরং আমরা তাঁদের আহ্বান জানিয়েছি, আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার জন্য। বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বর্জন করতে পারলে শাহবাগে গণমানুষের আন্দোলনে এসে সংহতি জানানোর অধিকার পেয়ে যাবে। যতদ্রুত সম্ভব তাঁরা কাজটি করবেন আমাদের এটি শুধু আহ্বান নয়, দাবি। দলগতভাবে না পারলে নেতাকর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে আমাদের সমর্থন জানাতে পারেন। পাশে এসে দাঁড়াতে পারেন। আমরা তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।
কিন্তু সেটি হওয়ার কোন লক্ষণ তো দেখা যাচ্ছে না। বরং আক্রমণ বাড়ছে। খোদ খালেদা জিয়া বলেছেন, আন্দোলনকারীরা নষ্ট ছেলে। তাঁর এমন সমালোচনাকে কিভাবে নিচ্ছেন? প্রশ্নটি শেষ হতে না হতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন ইমরান। কিছুটা হতাশ মনে হয় তাঁকে। বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) জাতীয় নেতা। বয়োজ্যেষ্ঠ। আপনারা জানেন, আমরা বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান দেখিয়ে কথা বলেছি। তাঁর প্রতিও শ্রদ্ধা আছে। তবে তাঁর এমন বক্তব্যের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাদের খুব কিছু করার নেই। আমরা শুধু আশা করব, আশা করতে পারি, যে বক্তব্য তরুণ প্রজন্মকে হতাশ করে সে বক্তব্য তিনি দেবেন না। একটু সংযত হয়ে তরুণদের উদ্দেশ করে কথা বলবেন। 
আন্দোলনের স্থান, স্থানচ্যুতি ॥ নানামুখী সমালোচনার জবাব দিতে এখন প্রচুর সময় দিতে হচ্ছে আন্দোলনকারীদের। এটি করতে গিয়ে মূল আন্দোলন থেকে তাঁরা প্রায়ই সরে যাচ্ছেন। এমন মূল্যায়ন সম্পর্কে কী বলবেন? জবাবে ডা. ইমরান বলেন, আপনার কথা ঠিক। আসলে আমাদের প্রতিপক্ষ খুব দুর্বল নয়। তারা তাদের গণমাধ্যম ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তাই প্রচারণা চালাচ্ছে। এসব বিভ্রান্তি দূর করতে কথা বলতেই হচ্ছে। সময় দিতে হচ্ছে। তবে আমরা আমাদের মূল দাবির ব্যাপারে সচেতন। জবাবটি দিচ্ছি বটে। সে জায়গাটিতেই থেকে যাচ্ছি না। ঠিকই বের হয়ে আসছি। একটি জায়গায় আমাদের তারা আটকে রাখতে পারছে না। আমরা সচেতনভাবেই নিজেদের দাবির কথা বলছি। 
ছাত্র সংগঠন একঘেয়ে মঞ্চ এবং ॥ আন্দোলনের দৃশ্যমান অংশটি সমাবেশ। কিন্তু প্রতিটি সমাবেশের একই চেহারা। একঘেয়ে বক্তৃতা করছেন গাদা গাদা ছাত্রনেতা। অভিযোগ আছে, মঞ্চের দখল নিতে মরিয়া থাকেন তাঁরা। এটি করতে গিয়ে আন্দোলনের প্রাণ ব্লগার ও অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করতেও তাঁরা দ্বিধা করেন না। কতটা সত্যি? এমন প্রশ্নে ইমরান বলেন, আসলে প্রগতিশীল সকল ছাত্র সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করছি আমরা। সমাবেশগুলোতে সেসব সংগঠনের নেতারা বক্তৃতা করেন। এটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। হ্যাঁ, অনেক সময় একঘেয়ে লাগতে পারে। তবে এ কারণে তাঁদের অবদানকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। সামনে আরও ভাল কিভাবে করা যায়, সে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি আমরা। ব্যতিক্রমী কিছু কর্মসূচী দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। আর ব্লগারদের সঙ্গে ছাত্র নেতাদের আচরণ প্রসঙ্গে বলব, এক সঙ্গে কাজ করতে গেলে কখনও কখনও ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। আমরা পরক্ষণেই তা দূর করে ফেলি। তবে আপনি যেমনটি বলছেন তেমন কিছু ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। 
মান-অভিমান অনৈক্য ॥ কোন কোন সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে, আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যে মান-অভিমান চলছে। অনৈক্য আছে। ইমরান এইচ সরকার বেশি ব্যস্ত ছাত্র নেতাদের নিয়ে। তাঁর অনুগতদের নিয়ে। প্রথম দিককার অনেক কর্মীকে অবহেলার চোখে দেখছেন তিনি। এ সম্পর্কে কী বলবেন? জবাবে শাহবাগ আন্দোলনের নেতা বলেন, এমন খবর আমার চোখে পড়েছে। এগুলো একদমই ভিত্তিহীন। আমার ধারণা, কেউ কেউ জামায়াত-শিবিরের পারপাস সার্ভ করছে। বাস্তবে আমাদের মধ্যকার সম্পর্কটি বিশ্বাসের। ভালবাসার। 
সাংগঠনিক কাঠামো বিতর্ক ॥ কারও কারও মতে, এ পর্যায়ে এসে আন্দোলনের একটি সাংগঠনিক কাঠামো দেয়া খুব দরকার। কিছু ভাবছেন কি? উত্তরে ইমরান বলেন, সাংগঠনিক ভিত্তি দেয়ার ব্যাপারে কিছু আমরা ভাবছি না। কারণ বহু গণআন্দোলনের ইতিহাস ঘেঁটে আমরা দেখেছি, যখনই সাংগঠনিক ভিত্তি দেয়ার দিকে পা বাড়িয়েছে তখনই আন্দোলন নষ্ট হয়েছে। আমরা আমাদের আন্দোলন বাঁচিয়ে রাখার পক্ষে। 
সিদ্ধান্ত, সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা ॥ এ আন্দোলনের খুব গুরুত্বপূর্ণ দিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। কী প্রক্রিয়ায় আসে এসব সিদ্ধান্ত? জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুবই গণতান্ত্রিক উপায়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। তাঁরা সবাই আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কেউ কারও ওপর জোর খাটাতে যান না। ব্লগারদের কথা শোনা হয়। সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, ঢাকার বাইরের গণজাগরণ মঞ্চ, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো থেকেও পরামর্শ আসে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা করি। তার পর সিদ্ধান্ত হয়। এ নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ নেই।
বহুকালের আন্দোলন তাঁদের কথা ॥ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে বহুকাল। অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্ব এ আন্দোলন এগিয়ে নিতে কাজ করেছেন। এখনও করছেন। কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চ তাঁদের ব্যাপারে কমই আগ্রহ দেখান বলে মনে হয়েছে বিভিন্ন সময়। এ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী? জানতে চাইলে ইমরান বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের পরপরই শুরু হয়ে যায়। '৯২ সালে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। সেই ধারাবাহিকতায় আজকের আমরা। তাই কারও প্রতি অনাগ্রহ দেখানোর প্রশ্নই ওঠে না। এখনও যাঁরা আসেননি, আসতে চান, তাঁদের প্রতি আহ্বানÑ আসুন। আমরা আপনাদেরই সন্তান। 
লোকসমাগম বনাম চেতনা ॥ শাহবাগে লোকসমাগম একটা বড় বিবেচ্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে সেখানে লোকসমাগম কম। এটিকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? জানতে চাইলে ইমরান বলেন, খুব সহজ ব্যাখ্যা। এখন নিয়মিত কর্মসূচী থাকছে না। তাই শাহবাগে লোক সমাগম কমেছে। এটি স্বাভাবিক। এর আগে যেখানে সমাবেশ করেছি সেখানেই হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষ হয়েছে। নারী দিবসের আয়োজনেও শাহবাগ কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। আর কয়েক দিন আগে তো বুঝিয়ে-শুনিয়ে লোকজনকে বাসায় পাঠাতে হয়েছে। শাহবাগ থেকে সরতে চান না তাঁরা। তাই রায়ের আগের রাতটি শাহবাগে কাটানোর কর্মসূচী এখনও বহাল আছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা, শাহবাগ একটি চেতনা। এই চেতনা সদা জাগরূক আছে। 
নিরাপত্তা ভাবনা ॥ শাহবাগে ইতোমধ্যে ককটেল ফাটানো হয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়টি তাই ভাবনার বিষয় হয়ে উঠেছে। এ প্রসঙ্গে ইমরান বলেন, এর আগেও প্রগতিশীল সংগঠনের ওপর জঙ্গী হামলা হয়েছে। জেল জুলুম হয়েছে। কিন্তু দাবিয়ে রাখা যায়নি। আমাদেরও দাবিয়ে রাখতে পারবে না। 
অর্থের সংস্থান, ভালবাসার কথা ॥ আন্দোলন পরিচালনার জন্য অর্থেরও প্রয়োজন হয়। সেটি আসছে কোত্থেকে? জানতে চাইলে খুব আগ্রহ নিয়ে উত্তর দেন ইমরান। বলেন, আমাদের অত টাকা পয়সার দরকার কখনও হয়নি আসলে। প্রথম দিন কিছু টাকা সংগ্রহ করা হয়েছিল। সাধারণ মানুষ ২০, ৫০ টাকা করে দিয়েছিলেন। এভাবে কয়েক দিন চলেছে। এর পরের কথা তো বলাই বাহুল্য। সাধারণ মানুষ জোর করে টাকা দিয়ে গেছে। এক পর্যায়ে গণমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে আমাদের বলতে হয়েছে, টাকা লাগবে না। টাকা গ্রহণ করা হবে না। এর বাইরে অজস্র মানুষ আমাদের জন্য ঘর থেকে খাবার নিয়ে এসেছেন। পানি নিয়ে এসেছেন। পিঠা করে পাঠিয়েছেন দূর গ্রামের মা কিংবা বোনটি। কথাগুলো বলার সময় চোখ ছলছল করে ওঠে তরুণ সংগঠকের। এ পর্যায়ে নতুন তথ্য দেন তিনি। বলেন, জানেন, অনেকে পোশাকও নিয়ে এসেছেন। জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এর পর আর কোন কথা হয়, বলুন? 
মতবিনিময় ॥ সাম্প্রতি বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময়ের কর্মসূচী গ্রহণ করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। কোন্ চিন্তা থেকে? জানতে চাইলে ইমরান বলেন, অনেক দিন ধরে আন্দোলন করছি। এ পর্যায়ে আন্দোলনকে আরও ছড়িয়ে দিতে সকলের পরামর্শ চাই আমরা। সে চিন্তা থেকেই মতবিনিময়ের কর্মসূচী। ইতোমধ্যে গণমাধ্যমের প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এমন মতবিনিময় চলতে থাকবে। তার মানে, এই পর্যায়ে এসে অনকে কিছুই নতুন করে ভাবছেন। কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আন্দোলনের স্বার্থে। একে আরও সুন্দর করতে, গণমানুষের অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে নতুন নতুন কর্মসূচী হাতে নেয়া হচ্ছে। 
গন্তব্য বহু দূর ॥ আন্দোলনের গন্তব্য নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন। এ প্রসঙ্গে ইমরান বলেন, আমরা শুরুর দিনই বলে দিয়েছি, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় ও কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত চলবে। সারাদেশের প্রতিটি কোণে এই আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়া হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার প্রশ্নে কোন আপোস চলবে না।
সম্ভব অসম্ভব ॥ সরকার ইতোমধ্যে ১৪৪ ধারা পর্যন্ত দিয়েছে। আগামী নির্বাচনের পর বিরুদ্ধ সরকারও আসতে পারে। এ অবস্থায় আন্দোলন চালানো কতটা আসলে সম্ভব হবে? এ প্রশ্নও করা হয় ডা. ইমরানকে। উত্তরে তিনি বলেন, সম্ভব অসম্ভব নিয়ে ভাবি না। এমনটি ভাবলে শাহবাগ হতো না। পরিস্থিতি যাই হোক, আমাদের আন্দোলন চলবে। এই আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার কোন সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, জনগণের শক্তির ওপর আমরা আস্থাশীল। তাদের নিয়েই আন্দোলন হবে। জয়ী না হয়ে আমরা ঘরে ফিরব না। কিন্তু সব ব্যাপারেই খুব ইতিবাচক মনে হচ্ছে আপনাকে। এত বড় আন্দোলন। ব্যর্থতা নেই কোন? এমন প্রশ্নে কিছুটা সময় নেন উত্তরদাতা। বলেন, খুব কঠিন প্রশ্ন। এ পর্যায়ে 'শাগরেদ' মারুফ রসুলের সাহায্য নেয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি। এরপর বলেন, সারাদেশে গণজাগরণ হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর সব ক'টির সঙ্গে আমরা ভাল যোগাযোগ রক্ষা করতে পারিনি। ভবিষ্যতে এমন খুঁটিনাটি ত্রুটি দূর করে আন্দোলনকে বেগবান করা হবে বলেও জানান জাগরণের এই নায়ক।





__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___