খালেদার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গণজাগরণ মঞ্চ
'নষ্ট ছেলেরাই মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত অর্জন পুনরুদ্ধারে মাঠে নেমেছে'
প্রতি শুক্রবার শাহবাগে সমাবেশ
বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার
তারা ছড়িয়েছে সামপ্রদায়িক আগুন, আমরা ছড়াবো শান্তির বারতা। তারা পুড়েছে মানুষের ঘর, আমরা পূরণ করব মানুষের স্বপ্ন। তারা সৃষ্টি করেছে ভীতি-বিচ্ছিন্নতা, আমরা সৃষ্টি করেছি সমপ্রীতির বন্ধন।
গতকাল শনিবার দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমপ্রীতি সমাবেশে জামায়াত-শিবিরকে লক্ষ্য করে এমন বক্তব্যই দিয়েছেন তরুণ-ছাত্র-শিক্ষকরা। একইসাথে বিরোধী দলীয় নেত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মঞ্চের পক্ষে বলা হয়, "নষ্ট ছেলেরাই দেশকে স্বাধীন করার জন্য অস্ত্র ধরেছিল, এখন তারা মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত অর্জন পুনরুদ্ধারের জন্য মাঠে নেমেছে। সিদ্ধান্ত আপনার, আপনি নাস্তিকদের পাশে না খুনি-ধর্ষক জামায়াত-শিবিরের পাশে দাঁড়াবেন।"
দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত সামপ্রদায়িক হামলা-সহিংসতার প্রতিবাদে এ সমপ্রীতি সমাবেশের ডাক দেয় গণজাগরণ মঞ্চ। মঞ্চের মূল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে। দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে এ সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশের সভাপতি ও গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, গতকাল (শুক্রবার) বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া গণজাগরণ মঞ্চ সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা জনগণের প্রত্যাশার বিপরীত। তিনি জনআকাঙ্খাকে অপমানিত করেছেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী জনগণের প্রত্যাশা রক্ষা করেননি।
গণজাগরণ মঞ্চের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী প্রতি শুক্রবার শাহবাগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন ইমরান। আগামী ২২ মার্চ শুক্রবার শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের সমাবেশ সফল করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। গত শুক্রবার মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চকে 'আওয়ামী লীগ ঘরানার এবং নাস্তিক চত্বর' বলে অভিহিত করেন। আন্দোলনরত তরুণদের ইঙ্গিত করে বলেন, 'শাহবাগের তরুণরা আইন-আদালত-বিচার মানে না। এই নষ্ট ও নাস্তিক তরুণদের নিয়ে সরকার নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে নানা অপকর্ম করছে।'
খালেদা জিয়ার বক্তব্যে প্রতিক্রিয়ায় গতকাল সমাবেশে ইমরান এইচ সরকার বলেন, আপনার ভাষায় এই নাস্তিক আর নষ্ট ছেলেরাই দেশকে স্বাধীন করার জন্য অস্ত্র ধরেছিল, এখন তারা মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত অর্জন পুনরুদ্ধারের জন্য মাঠে নেমেছে। সিদ্ধান্ত আপনার, আপনি নাস্তিকদের পাশে না খুনি-ধর্ষক জামায়াত-শিবিরের পাশে দাঁড়াবেন। সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এবং অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সংগ্রাম-আন্দোলন চলবেই।
ইমরান বলেন, আমরা সব সময় বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়ে বক্তব্য রেখেছি। তিনি যখন মুন্সীগঞ্জে মন্দির পরিদর্শনে যান, তখন আমরা ভেবেছিলাম তিনি জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে তার যে রাজনৈতিক বন্ধন আছে, তা ছিন্ন করার ঘোষণা দেবেন। কিন্তু তিনি তা না করে উল্টো জনআন্দোলনের বিপক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। এটি জনগণের প্রত্যাশিত ছিল না।
ব্লগার এন্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহবায়ক ডা. ইমরান বলেন, "আমরা কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নই। ছয়টি স্পষ্ট দাবির বাইরে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। যদি খুনি-ধর্ষকদের বিচার চাওয়া নাস্তিকতা ও নষ্ট তারুণ্য হয়- তাহলে আমরা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও সেই বিচারের দাবি করে যাব।
তিনি বলেন, গত ৩৯ দিনের আন্দোলনে আমাদের যেমন সফলতা রয়েছে তেমনি অনেক অপপ্রচারও সহ্য করতে হয়েছে আমাদের। খুনি যুদ্ধাপরাধীদের মদদপুষ্ট গণমাধ্যম ও তাদের অর্থপুষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অপপ্রচারের ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
হেফাজতে ইসলামের নেতারা মঞ্চের আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার বিষয়টি উল্লেখ করে ইমরান বলেন, আমরা আহ্বান জানিয়েছি, আন্দোলন সম্পর্কে যে সব বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বা আন্দোলন নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় আসুন। কিন্তু কেউ আলোচনায় আসেননি, কারণ তারা যা বলছেন সেটা হচ্ছে মিথ্যাচার।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির যে দাবি তা সমাজে ন্যায়বিচারের যে কাঙ্খিত আকাঙ্খা তা বাস্তবায়নের জন্য। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধীরা যেভাবে গণহত্যা-ধর্ষণের মতো অপরাধ সংঘটিত করেছিল সেভাবে এখনো জামায়াত-শিবির একই ধরনের হত্যা-ভাংচুরের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে মানবতাবিরোধী অপরাধের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য গণহত্যায় জড়িত সবার বিচার করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের কার্যকলাপে কোনো পরিবর্তন আসেনি। একাত্তর সালে এরা মরণ ছোবল হেনেছিল, এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু করতেই সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে।
খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, "বিরোধীদলীয় নেত্রী নব্য ফতোয়াবাজ। তিনি শাহবাগের আন্দোলনকারীদের নাস্তিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। আপনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখুন- আপনি, না শাহবাগের তরুণ প্রজন্ম, কে নাস্তিক।"
সমাবেশে সব ধর্মের মানুষের সমপ্রীতি রক্ষা করার দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সৈয়দ ইমদাদ উদ্দীন, মহাপ্রকাশ মঠের অধ্যক্ষ কান্তিবন্ধু ব্রহ্মাচারী, মুক্তিযোদ্ধা বিশপ মাইকেল এ শাহ্ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি ও বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক বিমান চন্দ্র বড়ুয়া।
গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক মারুফ রসূলের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ড. আমজাদ আলী, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন, আইন বিভাগের শিক্ষক ড. শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ, ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি পিনাক রায় পিন্টু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাশেদ শাহরিয়ার, জাসদ ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এহসানুল হাবিব।
রাজধানীতে ঢাকা কলেজে, তিতুমীর কলেজে, ইডেন কলেজেসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমপ্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সকল যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাসিসহ ছয় দফা দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চ গতকাল ৪০ দিন পার করেছে।
http://ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDNfMTZfMTNfMF8wXzNfMjY2NDA= আশুলিয়ায় গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশে খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বক্তারা
তরুণদের অপমান করবেন না
গোলাম মর্তুজা ও অরূপ রায়, আশুলিয়া থেকে | তারিখ: ১৬-০৩-২০১৩
আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে গতকাল গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশে অংশ নেওয়া বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার হাজারো মানুষ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার শপথ নেন
ছবি: প্রথম আলো
আশুলিয়ায় গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ
ইত্তেফাক রিপোর্ট
শাহবাগের তরুণদের নিয়ে খালেদার 'বিষোদ্গার'
http://prothom-alo.com/detail/date/2013-03-15/news/336788
কিবরিয়া
২০১৩.০৩.১৫ ১৯:৫৪ খালেদা জিয়া বলেছিল - আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেলে , মসজিদে মসজিদে উলুধ্বনি হবে, তাহলে মেডাম আপনি হিন্দুদের মন্দিরে গিয়ে কি বেবস্তা করেছেন ।
জি,এম ফ্রেজার
২০১৩.০৩.১৫ ১৯:০৬ খালেদা জিয়ার মন্দির পরিদর্শনের সময় এটির ফটকে সম্মিলিত সংখ্যালঘুদের ব্যানারে লেখা ছিল, জামায়াত-শিবির ও বিএনপির হাত থেকে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করো। Sripad
২০১৩.০৩.১৫ ১৯:১৯ গরু মেরে জুতা দান। মন্দির ভেঙ্গে মন্দির দান। অনেক হয়েছে আর না।