Looks like my posting taking some strangeful rest on the way to be posted. Nakib any difficulties in the smooth system?
From: shahadathussaini@hotmail.com
To: bangladeshiamericans@googlegroups.com; khabor@yahoogroups.com; alochona@yahoogroups.com; chottala@yahoogroups.com; mukto-mona@yahoogroups.com
Subject: সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালায় বিশ্বাসবিহীন রাষ্ট্র গড়াই কি জাতীয় কবির স্বপ্ন ছিল?
Date: Wed, 29 May 2013 15:23:36 -0400
From: shahadathussaini@hotmail.com
To: bangladeshiamericans@googlegroups.com; khabor@yahoogroups.com; alochona@yahoogroups.com; chottala@yahoogroups.com; mukto-mona@yahoogroups.com
Subject: সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালায় বিশ্বাসবিহীন রাষ্ট্র গড়াই কি জাতীয় কবির স্বপ্ন ছিল?
Date: Wed, 29 May 2013 15:23:36 -0400
সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালায় বিশ্বাসবিহীন রাষ্ট্র গড়াই কি জাতীয় কবির স্বপ্ন ছিল?
মোহাম্মদ আবদুল গফুর : আমাদের দেশের এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবী সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ধর্ম, বিশেষ করে ইসলাম সম্পর্কে কি ধারণা পোষণ করেন তা যেমন স্পষ্ট নয়, তেমনি তাদের কথা ও বাস্তব আচরণে এত বেশি স্ববিরোধিতা লক্ষ্য করা যায় যে, তাদের সম্বন্ধে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়ে পারে না।
গত ২৫ মে সারা দেশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৪তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়ে গেল। জাতীয় কবির জন্মবাষির্কী উপলক্ষে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কবির স্বপ্ন পূরণে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানালেন। তিনি তার ভাষণে অসাম্প্রদায়িক, আধুনিক, গণতান্ত্রিক এবং সবার সমঅধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে শোষণ-বঞ্চনাহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। প্রথমেই প্রশ্ন জাগে তিনি যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানালেন, তবে কি তাঁর মতে বাংলাদেশ এখন একটা 'সাম্প্রদায়িক' দেশে পরিণত রয়েছে, তাই তাকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশরূপে গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে? এবং সেই লক্ষ্যই কি তিনি বাংলাদেশের সংবিধান হতে সর্ব শক্তিমান আল্লাহর প্রতি গভীর আস্থা ও বিশ্বাস' বাদ দিয়েছেন?
তিনি যেহেতু জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কবির স্বপ্ন পূরণে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবার প্রতি একযোগে কাজে এগিয়ে যেতে আহ্বান জানিয়েছেন, তাই এ ক্ষেত্রে কবির স্বপ্ন কি ছিল সে প্রসঙ্গও চলে আসে, স্বাভাবিকভাবেই। তবে সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে এ সত্য জানিয়ে দেয়া প্রয়োজন যে, বাংলাদেশ অতীতেও কখনও সাম্প্রদায়িক দেশ ছিল না, এখনও নেই। বাংলাদেশ অতীতেও ছিল উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির দৃষ্টান্তস্থল, ভবিষ্যতেও তা তেমনি থাকবে। কারণ বাংলাদেশের জনগণ শান্তি ও সাম্যভ্রাতৃত্বের আদর্শ ইসলামে গভীরভাবে বিশ্বাসী। বাংলাদেশের জনগণ ইসলামের শান্তি ও সাম্যভ্রাতৃত্বের আদর্শ ইসলামে বিশ্বাসী বলেই এদেশে কখনো সাম্প্রদায়িক বৈষম্য স্থান পায় না। এি সেদিন প্রতিবেশী তথাকথিত সেক্যুলার রাষ্ট্র ভারতের গুজরাটে যখন নৃশংস মুসলিম গণহত্যা চলে তখনও মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশে সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করে। সংবাদপত্র পাঠকদের স্মরণ থাকার কথা, গুজরাটে নির্মম মুসলিম গণহত্যা চলাকালে মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশে তার প্রতিক্রিয়ায় হিন্দুবিরোধী সহিংসতার আশঙ্কা করে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে দেখতে বাংলাদেশে আসেন এবং এদেশে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেখে অবাক হয়ে যান।
সুতরাং সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির আদর্শ বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান যে একেবারেই অবান্তর, তা বলাই বাহুল্য। তবে ইসলামী আদর্শ এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালায় বিশ্বাসকে যদি কেউ সাম্প্রদায়িকতার নিদর্শন বলে ধারণা করে থাকেন, তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিরাশ করে বলতেই হয় তথাকথিত অসাম্প্রদায়িকতার নামে এদেশের জনগণ কখনোই ইসলামী আদর্শ এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালায় বিশ্বাস এক মুহূর্তের জন্যও ত্যাগ করতে রাজি নয়। কারণ বাংলাদেশের জনগণ গভীরভাবে ইসলামী আদর্শ ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালায় তাদের গভীর বিশ্বাস আছে বলেই তারা বিশ্বাস করে, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সব মানুষেরই ¯্রষ্টা ও পালনকর্তা আল্লাহ।
এবার আশা যাক জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের নিজের বিশ্বাস তাঁর স্বপ্ন ও আশা-আকাক্সক্ষা সম্পর্কে। আমরা তাকে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবি বলে জানি। কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বহু বহু বছর আগে সেই ১৯২৯ সালেই একবার কলকাতার এলবার্ট হলে তাকে সেখানের আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র সেন, সুভাষচন্দ্র বসু, এম ওয়াজেদ আলী প্রমুখ তদানীন্তন হিন্দু-মুসলিম নেতৃস্থানীয় মনীষীবৃন্দের মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সংবর্ধনা দিয়ে তাকে জাতীয় কবি আখ্যায় ভূষিত করা হয়। যে বছর কলকাতায় তাঁকে এই জাতীয় সংবর্ধনা দেয়া হয় সেই ১৯২৯ সালেই তিনি ছুটে গিয়েছিলেন চট্টগ্রামের মুসলিম এডুকেশন সোসাইটির প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সে অনুষ্ঠানে ভাষণ দান প্রসঙ্গে নজরুল তাঁর জীবনের বহুদিনের একটি স্বপ্নের কথা প্রকাশ করেন এভাবে:
আপনাদের শিক্ষা সমিতিতে এসেছি আমি আর একটি উদ্দেশ্য নিয়ে সে হচ্ছে আপনাদের সমিতির মারফৎ বাঙলার সমগ্র মুসলিম সমাজের বিশেষ করে ধনী ও শিক্ষিত সম্প্রদায়ের কাছে আমি যে মহান স্বপ্ন দিবা-রাত্রি ধরে দেখেছি তাই বলে যাওয়া...
'আমি বলি রবীন্দ্রনাথের মতো আমাদেরও কালচারের সভ্যতার জ্ঞানের সেন্টার বা কেন্দ্রভূমির ভিত্তি স্থাপনের মহৎ ভার আপনারা গ্রহণ করুন, আমাদের মতো শত শত তরুণ খাদেম তাদের সকল শক্তি আশা-আকাক্সক্ষা, জীবন অঞ্জলির মতো করে আপনাদের সে উদ্যোগের পায়ে অর্ঘ্য দেবে।'
প্রশ্ন আসে নজরুলের এ স্বপ্ন কাদের জাগিয়ে তোলার স্বপ্ন?
কবি যখন গেয়ে ওঠেন-
দিকে দিকে পুন জ্বলিয়া উঠেছে
দীন-ই ইসলামী লাল মশাল
ওরে বে-খবর তুইও ওঠ জেগে
তুইও তোর প্রাণ প্রদীপ জ্বাল॥
তখন কি কারও বুঝতে বাকি থাকে যে, বিশ্বের দিকে দিকে আবার ইসলামের মশাল জ্বলে উঠুক, এটাই কবির অন্তরের কামনা।
যখন কবি বলেন :
বাজিছে দামামা বাঁধরে আমামা
শির উঁচু করি মুসলমান।
দাওয়াত এসেছে নয়া জামানার
ভাঙা কিল্লায় ওড়ে নিশান॥
মুখেতে কলমা হাতে তলোয়ারে
বুকে ইসলামী জোশ দুর্বার
হৃদয়ে লইয়া এশক্ আল্লার।
চল আগে চল বাজে বিষান।
ভয় নাই তোর গলায় তাবিজ
বাঁধা যে রে তোর পাক কোরান॥
তখন বুঝতে বাকি থাকে না কবি কাদের অতীত গৌরবগাথা তুলে তাদের জাগিয়ে তুলতে কলমযুদ্ধে ব্রতী হয়েছেন।
আজ দুনিয়ার মুসলমানরা প্রিয় নবীর দেখানো পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ায়ই যে তাদের জীবনে জিল্লতি নেমে এসেছে, এ সম্বন্ধে কবি সজাগ। তাই কবি বলেন:
তোমার বাণীরে করিনি গ্রহণ ক্ষমা করো হজরত।
ভুলিয়া গিয়াছি আদর্শ তোমার দেখানো পথ।
ক্ষমা করো হজরত॥
বিলাস বিভব দলিয়াছ পায়ে ধূলি-সম তুমি প্রভু।
আমরা হইব বাদশাহ-নওয়াব তুমি চাহ নাই কভু।
এই ধরণীর ধন সম্ভার
সকলের এতে সম-অধিকার
তুমি বলেছিলে ধরণীতে সবে সমান পুত্রবৎ॥
প্রিয় নবীর দেখানো ইসলামী আদর্শে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমে মুসলমানদের নবজাগরণই যে ছিল কবির সারা জীবনের স্বপ্ন, তার প্রমাণ রয়েছে কবির লেখা অসংখ্য কবিতা ও গানে। এ সত্য এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায়ই নেই। অথচ আমাদের দেশের এক শ্রেণীর নেতা ও বুদ্ধিজীবী তথাকথিত অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার নামে বাংলাদেশকে ইসলামহীন রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যার প্রমাণ তারা ইতোমধ্যেই রেখেছেন সংবিধান থেকে 'সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালায় গভীর আস্থা ও বিশ্বাস' ধারা তুলে দিয়ে। তাদের এ অপচেষ্টা যে জনগণ কখনো মেনে নেবে না, তা তারা নিজেরাও বোঝেন। তাই সংবিধান থেকে 'সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালায় গভীর আস্থা ও বিশ্বাস' তুলে দিলেও জনগণের কাছে যাওয়ার প্রয়োজনে তাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন গোষ্ঠীর ও প্রচারপত্রের একেবারে উপরিভাগে 'আল্লাহ সর্বশক্তিমান' শব্দ দুটি মুদ্রিত করতে কখনো ভোলেন না। প্রশ্ন হচ্ছে তাদের এই স্ববিরোধিতা 'আমাদের দেখতে হবে? কো বহিঃশক্তির মন যোগাতে দেশের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষের সাথে তারা চাতুর্থপুর্ণ পথ বেছে নিয়েছেন?
একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পেছনে সাতচল্লিশের পার্টিশনের এবং উনিশশ' চল্লিশের দ্বিজাতি তত্ত্বভিত্তিক লাহোর প্রস্তাবের যে ঐতিহাসিক ঋণ রয়েছে তা কি কোনোভাবে অস্বীকার করা যাবে? ঐ সত্য যেমন অস্বীকার করা যাবে না তেমনি অস্বীকার করা যাবে না এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গতিধারা সম্পর্কে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অসাধারণ সচেতনতার সত্যটি। উনিশশ' চল্লিশের লাহোর প্রস্তাবের মধ্যেই যে আজকের বাংলাদেশ নামে স্বাধীন মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রটির বীজ নিহিত ছিল তা বুঝতে পেরে কবি ঐ প্রস্তাব পাসের পর পরই ছুটে গিয়েছিলেন সেদিনের মুসলিম জাগরণের অঘোষিত মুখপত্র দৈনিক আজাদ অফিসে, অনাগত ওই রাষ্ট্রের নাগরিকদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে 'মুকুলের মাহফিল' নামের কিশোর পাতা খোলার প্রস্তাব নিয়ে। সুতরাং কবি যে কখনো তথাকথিত অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রভৃতি বিভ্রান্তিকর কোনো ধারণায় নয়, বরং সারা জীবন ইসলামের সাম্য-ভ্রাতৃত্বের মহান আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন এ সত্য ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা যত দ্রুত বন্ধ হয় ততই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল।
গত ২৫ মে সারা দেশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৪তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়ে গেল। জাতীয় কবির জন্মবাষির্কী উপলক্ষে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কবির স্বপ্ন পূরণে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানালেন। তিনি তার ভাষণে অসাম্প্রদায়িক, আধুনিক, গণতান্ত্রিক এবং সবার সমঅধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে শোষণ-বঞ্চনাহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। প্রথমেই প্রশ্ন জাগে তিনি যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানালেন, তবে কি তাঁর মতে বাংলাদেশ এখন একটা 'সাম্প্রদায়িক' দেশে পরিণত রয়েছে, তাই তাকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশরূপে গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে? এবং সেই লক্ষ্যই কি তিনি বাংলাদেশের সংবিধান হতে সর্ব শক্তিমান আল্লাহর প্রতি গভীর আস্থা ও বিশ্বাস' বাদ দিয়েছেন?
তিনি যেহেতু জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কবির স্বপ্ন পূরণে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবার প্রতি একযোগে কাজে এগিয়ে যেতে আহ্বান জানিয়েছেন, তাই এ ক্ষেত্রে কবির স্বপ্ন কি ছিল সে প্রসঙ্গও চলে আসে, স্বাভাবিকভাবেই। তবে সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে এ সত্য জানিয়ে দেয়া প্রয়োজন যে, বাংলাদেশ অতীতেও কখনও সাম্প্রদায়িক দেশ ছিল না, এখনও নেই। বাংলাদেশ অতীতেও ছিল উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির দৃষ্টান্তস্থল, ভবিষ্যতেও তা তেমনি থাকবে। কারণ বাংলাদেশের জনগণ শান্তি ও সাম্যভ্রাতৃত্বের আদর্শ ইসলামে গভীরভাবে বিশ্বাসী। বাংলাদেশের জনগণ ইসলামের শান্তি ও সাম্যভ্রাতৃত্বের আদর্শ ইসলামে বিশ্বাসী বলেই এদেশে কখনো সাম্প্রদায়িক বৈষম্য স্থান পায় না। এি সেদিন প্রতিবেশী তথাকথিত সেক্যুলার রাষ্ট্র ভারতের গুজরাটে যখন নৃশংস মুসলিম গণহত্যা চলে তখনও মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশে সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করে। সংবাদপত্র পাঠকদের স্মরণ থাকার কথা, গুজরাটে নির্মম মুসলিম গণহত্যা চলাকালে মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশে তার প্রতিক্রিয়ায় হিন্দুবিরোধী সহিংসতার আশঙ্কা করে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে দেখতে বাংলাদেশে আসেন এবং এদেশে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেখে অবাক হয়ে যান।
সুতরাং সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির আদর্শ বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান যে একেবারেই অবান্তর, তা বলাই বাহুল্য। তবে ইসলামী আদর্শ এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালায় বিশ্বাসকে যদি কেউ সাম্প্রদায়িকতার নিদর্শন বলে ধারণা করে থাকেন, তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিরাশ করে বলতেই হয় তথাকথিত অসাম্প্রদায়িকতার নামে এদেশের জনগণ কখনোই ইসলামী আদর্শ এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালায় বিশ্বাস এক মুহূর্তের জন্যও ত্যাগ করতে রাজি নয়। কারণ বাংলাদেশের জনগণ গভীরভাবে ইসলামী আদর্শ ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালায় তাদের গভীর বিশ্বাস আছে বলেই তারা বিশ্বাস করে, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সব মানুষেরই ¯্রষ্টা ও পালনকর্তা আল্লাহ।
এবার আশা যাক জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের নিজের বিশ্বাস তাঁর স্বপ্ন ও আশা-আকাক্সক্ষা সম্পর্কে। আমরা তাকে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবি বলে জানি। কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বহু বহু বছর আগে সেই ১৯২৯ সালেই একবার কলকাতার এলবার্ট হলে তাকে সেখানের আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র সেন, সুভাষচন্দ্র বসু, এম ওয়াজেদ আলী প্রমুখ তদানীন্তন হিন্দু-মুসলিম নেতৃস্থানীয় মনীষীবৃন্দের মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সংবর্ধনা দিয়ে তাকে জাতীয় কবি আখ্যায় ভূষিত করা হয়। যে বছর কলকাতায় তাঁকে এই জাতীয় সংবর্ধনা দেয়া হয় সেই ১৯২৯ সালেই তিনি ছুটে গিয়েছিলেন চট্টগ্রামের মুসলিম এডুকেশন সোসাইটির প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সে অনুষ্ঠানে ভাষণ দান প্রসঙ্গে নজরুল তাঁর জীবনের বহুদিনের একটি স্বপ্নের কথা প্রকাশ করেন এভাবে:
আপনাদের শিক্ষা সমিতিতে এসেছি আমি আর একটি উদ্দেশ্য নিয়ে সে হচ্ছে আপনাদের সমিতির মারফৎ বাঙলার সমগ্র মুসলিম সমাজের বিশেষ করে ধনী ও শিক্ষিত সম্প্রদায়ের কাছে আমি যে মহান স্বপ্ন দিবা-রাত্রি ধরে দেখেছি তাই বলে যাওয়া...
'আমি বলি রবীন্দ্রনাথের মতো আমাদেরও কালচারের সভ্যতার জ্ঞানের সেন্টার বা কেন্দ্রভূমির ভিত্তি স্থাপনের মহৎ ভার আপনারা গ্রহণ করুন, আমাদের মতো শত শত তরুণ খাদেম তাদের সকল শক্তি আশা-আকাক্সক্ষা, জীবন অঞ্জলির মতো করে আপনাদের সে উদ্যোগের পায়ে অর্ঘ্য দেবে।'
প্রশ্ন আসে নজরুলের এ স্বপ্ন কাদের জাগিয়ে তোলার স্বপ্ন?
কবি যখন গেয়ে ওঠেন-
দিকে দিকে পুন জ্বলিয়া উঠেছে
দীন-ই ইসলামী লাল মশাল
ওরে বে-খবর তুইও ওঠ জেগে
তুইও তোর প্রাণ প্রদীপ জ্বাল॥
তখন কি কারও বুঝতে বাকি থাকে যে, বিশ্বের দিকে দিকে আবার ইসলামের মশাল জ্বলে উঠুক, এটাই কবির অন্তরের কামনা।
যখন কবি বলেন :
বাজিছে দামামা বাঁধরে আমামা
শির উঁচু করি মুসলমান।
দাওয়াত এসেছে নয়া জামানার
ভাঙা কিল্লায় ওড়ে নিশান॥
মুখেতে কলমা হাতে তলোয়ারে
বুকে ইসলামী জোশ দুর্বার
হৃদয়ে লইয়া এশক্ আল্লার।
চল আগে চল বাজে বিষান।
ভয় নাই তোর গলায় তাবিজ
বাঁধা যে রে তোর পাক কোরান॥
তখন বুঝতে বাকি থাকে না কবি কাদের অতীত গৌরবগাথা তুলে তাদের জাগিয়ে তুলতে কলমযুদ্ধে ব্রতী হয়েছেন।
আজ দুনিয়ার মুসলমানরা প্রিয় নবীর দেখানো পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ায়ই যে তাদের জীবনে জিল্লতি নেমে এসেছে, এ সম্বন্ধে কবি সজাগ। তাই কবি বলেন:
তোমার বাণীরে করিনি গ্রহণ ক্ষমা করো হজরত।
ভুলিয়া গিয়াছি আদর্শ তোমার দেখানো পথ।
ক্ষমা করো হজরত॥
বিলাস বিভব দলিয়াছ পায়ে ধূলি-সম তুমি প্রভু।
আমরা হইব বাদশাহ-নওয়াব তুমি চাহ নাই কভু।
এই ধরণীর ধন সম্ভার
সকলের এতে সম-অধিকার
তুমি বলেছিলে ধরণীতে সবে সমান পুত্রবৎ॥
প্রিয় নবীর দেখানো ইসলামী আদর্শে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমে মুসলমানদের নবজাগরণই যে ছিল কবির সারা জীবনের স্বপ্ন, তার প্রমাণ রয়েছে কবির লেখা অসংখ্য কবিতা ও গানে। এ সত্য এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায়ই নেই। অথচ আমাদের দেশের এক শ্রেণীর নেতা ও বুদ্ধিজীবী তথাকথিত অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার নামে বাংলাদেশকে ইসলামহীন রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যার প্রমাণ তারা ইতোমধ্যেই রেখেছেন সংবিধান থেকে 'সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালায় গভীর আস্থা ও বিশ্বাস' ধারা তুলে দিয়ে। তাদের এ অপচেষ্টা যে জনগণ কখনো মেনে নেবে না, তা তারা নিজেরাও বোঝেন। তাই সংবিধান থেকে 'সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালায় গভীর আস্থা ও বিশ্বাস' তুলে দিলেও জনগণের কাছে যাওয়ার প্রয়োজনে তাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন গোষ্ঠীর ও প্রচারপত্রের একেবারে উপরিভাগে 'আল্লাহ সর্বশক্তিমান' শব্দ দুটি মুদ্রিত করতে কখনো ভোলেন না। প্রশ্ন হচ্ছে তাদের এই স্ববিরোধিতা 'আমাদের দেখতে হবে? কো বহিঃশক্তির মন যোগাতে দেশের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষের সাথে তারা চাতুর্থপুর্ণ পথ বেছে নিয়েছেন?
একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পেছনে সাতচল্লিশের পার্টিশনের এবং উনিশশ' চল্লিশের দ্বিজাতি তত্ত্বভিত্তিক লাহোর প্রস্তাবের যে ঐতিহাসিক ঋণ রয়েছে তা কি কোনোভাবে অস্বীকার করা যাবে? ঐ সত্য যেমন অস্বীকার করা যাবে না তেমনি অস্বীকার করা যাবে না এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গতিধারা সম্পর্কে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অসাধারণ সচেতনতার সত্যটি। উনিশশ' চল্লিশের লাহোর প্রস্তাবের মধ্যেই যে আজকের বাংলাদেশ নামে স্বাধীন মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রটির বীজ নিহিত ছিল তা বুঝতে পেরে কবি ঐ প্রস্তাব পাসের পর পরই ছুটে গিয়েছিলেন সেদিনের মুসলিম জাগরণের অঘোষিত মুখপত্র দৈনিক আজাদ অফিসে, অনাগত ওই রাষ্ট্রের নাগরিকদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে 'মুকুলের মাহফিল' নামের কিশোর পাতা খোলার প্রস্তাব নিয়ে। সুতরাং কবি যে কখনো তথাকথিত অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রভৃতি বিভ্রান্তিকর কোনো ধারণায় নয়, বরং সারা জীবন ইসলামের সাম্য-ভ্রাতৃত্বের মহান আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন এ সত্য ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা যত দ্রুত বন্ধ হয় ততই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল।
__._,_.___