হেফাজত, মাহমুদুর রহমান ও ১৮ দলীয় জোটের ইউটার্ন
28 May 2013, Tuesday
লিখতে বসেছি ২৫ মে, শনিবার। রবিবার ২৬ মে বিরোধী দল আবার হরতালের ঘোষণা দেয়ায় আমার স্কুলপড়ুয়া ছেলে ঋদ্ধি (১৪) প্রায় আর্তনাদ করে উঠেছিল। ওদের বার্ষিক পরীক্ষা আসছে জুন মাসে। সিলেবাসের বহু পড়া হরতালের কারণে বন্ধ থাকায় স্কুলে আলোচিত হতে পারেনি। বহু সাপ্তাহিক পরীক্ষা একই কারণে বাতিল করতে হয়েছে। পরীক্ষার প্রস্তুতি বলতে যা বুঝায় তা একদমই হয়নি। কারণ ঐ হরতাল।
শুধু আমার ছেলে নয়, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন আছে কয়েক লাখ ছেলেমেয়ে, সহিংস হরতালের কারণে যাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে। এছাড়া সহিংস হরতালের কারণে বাংলাদেশের দ্রুত ধাবমান টগবগে অর্থনীতি লাট খেয়ে গেছে। বিশ্বমন্দা বাংলাদেশের বার্ষিক উন্নয়নের গতি তেমন ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি, যতটা করেছে সহিংস এই হরতাল। এ নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে আমি আর কিছু যোগ করতে চাই না। তবে চোখের সামনে দেশের সর্বনাশ দেখে বড় দুঃখ হয়। বড় কষ্ট হয়।
মাঝে সংলাপের প্রশ্নে সরকার ও বিরোধীদলÑ উভয় পক্ষের একটা ইতিবাচক ও নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্য করা গিয়েছিল। আশা করা গিয়েছিল নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে এবার বুঝি কিছু একটা মীমাংসা হতে যাচ্ছে।
কিন্তু ঘটনা যে এমন ইউটার্ন নেবে তা দেশবাসীর কল্পনায়ও বোধকরি স্থান পায়নি। সংলাপ হয়-হয় অবস্থা। প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলকে সংলাপে ডাকলেন। জানালেন সংসদ কিংবা সংসদের বাইরে নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে মহাজোট সরকার প্রস্তুত।
হঠাৎ ইউটার্ন নিল বিরোধী দল। কঠোর ভাষায় বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া স্বেচ্ছা পদত্যাগের জন্য সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করলেন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খালেদার ভাষায় ব্যর্থ ও জালিম সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। তা নইলে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে ১৮ দল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপে বসার জবাবে বিরোধী নেতা খালেদা জিয়ার সরকার পতনের হঠাৎ এই আল্টিমেটাম দেয়ার রহস্য কি তা অচিরে বুঝা গেল। রহস্যের নাম হেফাজতে ইসলাম। চট্টগ্রামকেন্দ্রিক সংগঠনটি নিজেদের অ-রাজনৈতিক অহিংস ধর্মীয় সংগঠনের দাবিদার। এই দাবি যে কতটা অসত্য এবং ধর্মের নামে ভ-ামি তা প্রমাণ করেছে তারা নিজেরাই। সরকার পতনের তুরুপের তাস হিসেবে তারা ১৮ দলের হয়ে কাজ করেছে। তারা ঢাকা এসে ৪ মে ঢাকার তিনদিক অবরোধ করেছিল। ঐ দিনই সন্ধ্যার দিকে ঢাকায় এসে অবস্থান নেয় শাপলা চত্বরে।
৫ মে ১৮ দলের টাকা খাওয়া তথাকথিত ধর্মীয় সংগঠনটি নিজেদের স্বরূপ প্রকাশ করে। রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তারা ধ্বংসের চরম তা-ব শুরু করে। পুড়িয়ে দেয় বায়তুল মোকাররমের কয়েক শ' দরিদ্র হকারের দোকানপাট। পুড়িয়ে দেয় ১৬০টি পবিত্র কোরানসহ কয়েক হাজার ধর্মগ্রন্থ। হেফাজতে ইসলাম নামধারীরা আগুন দেয়া ভবন ও হকারদের দোকানে বেদম লুটপাটও চালিয়েছে। ৬ মে কথা ছিল হেফাজতীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সচিবালয় এবং আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারী ভবনে আক্রমণ চালাবে। রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি করবে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য। অচল করে দেবে দেশের প্রাণকেন্দ্র রাজধানী ঢাকাকে যাতে সরকারের পতন দ্রুত অনিবার্য হয়ে দেখা দেয়।
সরকার পতনে ১৮ দলীয় জোটের তুরুপের তাস ছিল চট্টগ্রাম থেকে খালেদা জিয়া এবং জামায়াত-শিবিরের 'মেহমান' হয়ে ঢাকায় আসা এই হেফাজতে ইসলাম। ওদের মতলব অবশ্য সরকারের সময়োচিত ব্যবস্থা নেয়ার কারণে কামিয়াব হতে পারেনি। ৬ মে রাতের মধ্যপ্রহরে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সফল অভিযানের মুখে বাধ্য হয়ে হেফাজতীদের ঢাকা ত্যাগ করতে হয়। মনে প্রশ্ন জাগে বিনা কারণে বিনা উস্কানিতে রাজধানী ঢাকায় ধ্বংসের তা-ব চালানোর নাম কি ইমানি দায়িত্ব? জনগণ দ্বারা নির্বাচিত একটি সরকারকে ক্ষমতা-ত্যাগে বাধ্য করার অপচেষ্টার নাম কি ইসলামের হেফাজত করা? হেফাজত নামধারী কমিনাদের হাত থেকে মতিঝিলের ছোট বড় গাছগুলোও রক্ষা পায়নি। আর পবিত্র গ্রন্থ কোরান শরিফও পুড়ে ছাই হয়েছে হেফাজতীদের দেয়া আগুনে। মহান আল্লাহ জানেন এরা আসলে মুসলমান নাকি মুসলমান নামধারী নরপশু!
এই সংগঠনটির প্রধান আল্লামা শাহ শফীকে অনেকে ওলি আল্লাহ তুল্য শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করেন। তিনি আসলে কি তা মানুষের প্রতিপালক ও সর্বশক্তিমান আল্লাহই জানেন। তবে তার জ্ঞাতার্থে শুধু এটুকু জানাই প্রয়াত হাফেজী হুজুরও তো একবার দেশ ও মানুষের খেদমত করার উদ্দেশ্যে রাজনীতিতে অবতীর্ন হয়েছিলেন। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কই, তাঁর অনুসৃত রাজনীতিতে তো ধ্বংসাত্মক কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি। দেশজুড়ে তাঁরও ছিল বিশাল সংগঠন। কই, কখনও তো তিনি অন্য দলের ভাড়াটে গু-া হিসাবে কাজ করতে তাঁর অনুসারীদের কখনও প্রশ্রয় দেননি। হুজুর আল্লামা শফী মাফ করবেন যদি বলি দুই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির নেতৃত্বে কত পার্থক্য! কত ফারাক।
চট্টগ্রামকেন্দ্রিক সংগঠনটির প্রকৃত অভিভাবক কে, এ নিয়ে খানিকটা ধাঁধার সৃষ্টি হয়েছে। আল্লামা শাহ আহমাদ শফী এই সংগঠনের কর্ণধার বটে। অন্তত কাগজে-কলমে তো বটেই। তবে বেশ কয়েক মাস যাবত সংগঠনটি কার্যত অধুনা-নিষিদ্ধ 'আমার দেশ' পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের অর্থ ও নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছিল। এর বহু প্রমাণ সরকারের কোন কোন গোয়েন্দার কাছে আছে। জানা যায়, মাহমুদুর রহমান আইনী মামলায় কারাবন্দী হওয়ার আগে প্রায় প্রায়ই চট্টগ্রাম, হাটহাজারীর হেফাজত অফিসে যেতেন। টাকা দিতেন হেফাজতের শীর্ষ চৌদ্দ নেতাদের। টাকার অঙ্কটা নিহায়ত ফেল না নয়। মাহমুদুর রহমান, জানা যায়, হেফাজতের প্রথম ঢাকা মহাসমাবেশের আগেই হেফাজতকে ৪ কোটি থেকে ৬ কোটি টাকা দিয়েছেন। হেফাজতের সঙ্গে খালেদা জিয়া, জামায়াত তথা ১৮ দলের রাখি বন্ধন ঘটিয়েছেন এই মাহমুদুর রহমানই। আমার দেশ পত্রিকার অফিসে মাহমুদুর রহমানের মধ্যস্থতায় সরকার পতনের ষড়যন্ত্র হয়েছে হেফাজত, জামায়াত ও বিএনপিতে মিলে। এই সব মিটিংয়েও জামায়াত ও বিএনপির তরফ থেকে টাকা দেয়া হতো হেফাজতীদের। আরও কোটি কোটি টাকা ও মন্ত্রিত্বের লোভ দেখানো হতো হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের। কথা একটাই। ঢাকা এসে শাপলা চত্বরে থানা গেড়ে রাজধানীজুড়ে ধ্বংসের ভয়াবহ তা-ব চালাতে হবে। এমন ধ্বংসাত্মক তা-ব যাতে মুক্তিযুদ্ধ পক্ষের মহাজোট সরকার জান বাঁচাতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
মাহমুুদুর রহমান রচিত স্ক্রিপ অনুযায়ী সব কিছু চলছিল। তবে হেফাজতীরা যে ইসলামের কোন ধার ধারে না সেটা দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠার পর সরকার তাদের বিরুদ্ধে সময়োচিত পদক্ষেপ নেয়। সে কথা আগেই উল্লেখ করেছি।
নিবন্ধটি শেষ করতে যাওয়ার আগে মাহমুদুর রহমানের গুণপনার খানিকটা উল্লেখ করার লোভ সংবরণ করতে পারছি না। যিনি কর্মজীবন শুরু করেন ব্যবসায়ী হিসেবে। দেশের জনৈক শীর্ষ মেলামাইন শিল্পপতির মেয়েকে বিয়ে করে নিজ ব্যবসা গুটিয়ে শ্বশুরের ব্যবসা পরিচালনা করতে শুরু করেন। কোন কারণে মতদ্বৈধতা দেখা দিলে শ্বশুরকে নাকি 'শালা' সম্বোধন করতেন মাহমুদুর রহমান। শেষ পর্যন্ত অস্থির স্বভাব এবং জেদ-গোয়ার্তুমির কারণে মেলামাইন ব্যবস্থাপনা থেকে বহিষ্কৃত হন। নানা ঘাটের পানি খেয়ে শেষে তারেক রহমানের নেকনজরে পড়েন। প্রথমে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা। জ্বালানি উপদেষ্টা হিসেবে তার কৃতিত্ব কতখানি তা বলতে পারব না। তবে প্রমাণ মেলে দেশে যাতে এক কিলো বিদ্যুতও উৎপন্ন না হয় সেজন্য অহোরাত্র খাটা-খাটনি করেছেন জোট সরকারের এই উপদেষ্টা। রতনে রতন চেনে। এরপর দেশে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ যাতে স্বয়ং উপদেষ্টা ও আমলাতন্ত্রের কায়দা-কানুনের কাছে পরাস্ত হয় সেজন্য তাকে বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্তি দেয়া হয়। উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে ব্যর্থ কিংবা প্রায় ব্যর্থ রাষ্ট্রের স্তরে টেনে নামানো।
মাহমুদুর রহমান এই কাজে কতটা সফল হয়েছিলেন তা বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের কাগজপত্রেই রেকর্ড করা আছে। বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে মাহমুদুর রহমান একটা দুঃসাহসিক কাজে উদ্যোগী হয়েছিলেন। সেটা হলো তাইওয়ানকে ঢাকায় তিনি অফিস খোলার ব্যবস্থা করেছিলেন। নীতি এবং ন্যায়ের পরোয়া না করে নিজ অথরিটিতেই তাইওয়ানিজদের বাংলাদেশের ভিসা দিতে শুরু করেছিলেন। শ্বশুরকে শালা বলা লোকটি যে ছিটগ্রস্ত, প্রায়োন্মাদ, তা তাইওয়ানিজদের ঢাকা অফিস খোলার ব্যবস্থা করায় এবং ভিসা দেয়ার ঘটনা থেকেই বেশ ভালভাবে হৃদয়াঙ্গম করা চলে। এক চীন নীতিকে প্রকারান্তরে অস্বীকার করায় চীন ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ভেঙ্গে যেতে বসেছিল। জোট সরকার বহু চেষ্টা-তদ্বির করে সেটা ঠেকায়। জোট সরকার বিনিয়োগ বোর্ড থেকে এই অস্থির এবং প্রায়োন্মাদ লোকটাকেও প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। এর পরও মাহমুদুর রহমানের ইবলিশী কর্মকা-ের মধ্যে রয়েছে উত্তরা ষড়যন্ত্র।
সর্বশেষ ইবলিশ প্রবেশ করেছে একটি ধর্মীয় সংগঠন নামে অভিহিত, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভ-ুল করা এবং সরকার পতনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ভ-দের অন্দর মহলে।
তবে হেফাজত তার ভাবমূর্তি হারিয়েছে। এদের সন্ত্রাসী কাজকর্ম গেছে ওদের বিরুদ্ধেই। তারা হেফাজতে বিএনপি-জামায়াত কিংবা হেফাজতে পাকিস্তান নামে অভিহিত হতে পারে, কিন্তু হেফাজতে ইসলাম কোনক্রমে নয়। মাহমুদুর রহমান+বিএনপি+ জামায়াত=পাকিস্তান দাঁড়ায়। কোন অলি আল্লাহর পরিচালিত সংগঠন এটা হতে পারে না। দেশের ধর্মপ্রাণ লোকেরা সেটা বেশ ভালভাবেই উপলব্ধি করেছেন।
শুধু আমার ছেলে নয়, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন আছে কয়েক লাখ ছেলেমেয়ে, সহিংস হরতালের কারণে যাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে। এছাড়া সহিংস হরতালের কারণে বাংলাদেশের দ্রুত ধাবমান টগবগে অর্থনীতি লাট খেয়ে গেছে। বিশ্বমন্দা বাংলাদেশের বার্ষিক উন্নয়নের গতি তেমন ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি, যতটা করেছে সহিংস এই হরতাল। এ নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে আমি আর কিছু যোগ করতে চাই না। তবে চোখের সামনে দেশের সর্বনাশ দেখে বড় দুঃখ হয়। বড় কষ্ট হয়।
মাঝে সংলাপের প্রশ্নে সরকার ও বিরোধীদলÑ উভয় পক্ষের একটা ইতিবাচক ও নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্য করা গিয়েছিল। আশা করা গিয়েছিল নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে এবার বুঝি কিছু একটা মীমাংসা হতে যাচ্ছে।
কিন্তু ঘটনা যে এমন ইউটার্ন নেবে তা দেশবাসীর কল্পনায়ও বোধকরি স্থান পায়নি। সংলাপ হয়-হয় অবস্থা। প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলকে সংলাপে ডাকলেন। জানালেন সংসদ কিংবা সংসদের বাইরে নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে মহাজোট সরকার প্রস্তুত।
হঠাৎ ইউটার্ন নিল বিরোধী দল। কঠোর ভাষায় বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া স্বেচ্ছা পদত্যাগের জন্য সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করলেন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খালেদার ভাষায় ব্যর্থ ও জালিম সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। তা নইলে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে ১৮ দল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপে বসার জবাবে বিরোধী নেতা খালেদা জিয়ার সরকার পতনের হঠাৎ এই আল্টিমেটাম দেয়ার রহস্য কি তা অচিরে বুঝা গেল। রহস্যের নাম হেফাজতে ইসলাম। চট্টগ্রামকেন্দ্রিক সংগঠনটি নিজেদের অ-রাজনৈতিক অহিংস ধর্মীয় সংগঠনের দাবিদার। এই দাবি যে কতটা অসত্য এবং ধর্মের নামে ভ-ামি তা প্রমাণ করেছে তারা নিজেরাই। সরকার পতনের তুরুপের তাস হিসেবে তারা ১৮ দলের হয়ে কাজ করেছে। তারা ঢাকা এসে ৪ মে ঢাকার তিনদিক অবরোধ করেছিল। ঐ দিনই সন্ধ্যার দিকে ঢাকায় এসে অবস্থান নেয় শাপলা চত্বরে।
৫ মে ১৮ দলের টাকা খাওয়া তথাকথিত ধর্মীয় সংগঠনটি নিজেদের স্বরূপ প্রকাশ করে। রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তারা ধ্বংসের চরম তা-ব শুরু করে। পুড়িয়ে দেয় বায়তুল মোকাররমের কয়েক শ' দরিদ্র হকারের দোকানপাট। পুড়িয়ে দেয় ১৬০টি পবিত্র কোরানসহ কয়েক হাজার ধর্মগ্রন্থ। হেফাজতে ইসলাম নামধারীরা আগুন দেয়া ভবন ও হকারদের দোকানে বেদম লুটপাটও চালিয়েছে। ৬ মে কথা ছিল হেফাজতীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সচিবালয় এবং আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারী ভবনে আক্রমণ চালাবে। রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি করবে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য। অচল করে দেবে দেশের প্রাণকেন্দ্র রাজধানী ঢাকাকে যাতে সরকারের পতন দ্রুত অনিবার্য হয়ে দেখা দেয়।
সরকার পতনে ১৮ দলীয় জোটের তুরুপের তাস ছিল চট্টগ্রাম থেকে খালেদা জিয়া এবং জামায়াত-শিবিরের 'মেহমান' হয়ে ঢাকায় আসা এই হেফাজতে ইসলাম। ওদের মতলব অবশ্য সরকারের সময়োচিত ব্যবস্থা নেয়ার কারণে কামিয়াব হতে পারেনি। ৬ মে রাতের মধ্যপ্রহরে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সফল অভিযানের মুখে বাধ্য হয়ে হেফাজতীদের ঢাকা ত্যাগ করতে হয়। মনে প্রশ্ন জাগে বিনা কারণে বিনা উস্কানিতে রাজধানী ঢাকায় ধ্বংসের তা-ব চালানোর নাম কি ইমানি দায়িত্ব? জনগণ দ্বারা নির্বাচিত একটি সরকারকে ক্ষমতা-ত্যাগে বাধ্য করার অপচেষ্টার নাম কি ইসলামের হেফাজত করা? হেফাজত নামধারী কমিনাদের হাত থেকে মতিঝিলের ছোট বড় গাছগুলোও রক্ষা পায়নি। আর পবিত্র গ্রন্থ কোরান শরিফও পুড়ে ছাই হয়েছে হেফাজতীদের দেয়া আগুনে। মহান আল্লাহ জানেন এরা আসলে মুসলমান নাকি মুসলমান নামধারী নরপশু!
এই সংগঠনটির প্রধান আল্লামা শাহ শফীকে অনেকে ওলি আল্লাহ তুল্য শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করেন। তিনি আসলে কি তা মানুষের প্রতিপালক ও সর্বশক্তিমান আল্লাহই জানেন। তবে তার জ্ঞাতার্থে শুধু এটুকু জানাই প্রয়াত হাফেজী হুজুরও তো একবার দেশ ও মানুষের খেদমত করার উদ্দেশ্যে রাজনীতিতে অবতীর্ন হয়েছিলেন। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কই, তাঁর অনুসৃত রাজনীতিতে তো ধ্বংসাত্মক কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি। দেশজুড়ে তাঁরও ছিল বিশাল সংগঠন। কই, কখনও তো তিনি অন্য দলের ভাড়াটে গু-া হিসাবে কাজ করতে তাঁর অনুসারীদের কখনও প্রশ্রয় দেননি। হুজুর আল্লামা শফী মাফ করবেন যদি বলি দুই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির নেতৃত্বে কত পার্থক্য! কত ফারাক।
চট্টগ্রামকেন্দ্রিক সংগঠনটির প্রকৃত অভিভাবক কে, এ নিয়ে খানিকটা ধাঁধার সৃষ্টি হয়েছে। আল্লামা শাহ আহমাদ শফী এই সংগঠনের কর্ণধার বটে। অন্তত কাগজে-কলমে তো বটেই। তবে বেশ কয়েক মাস যাবত সংগঠনটি কার্যত অধুনা-নিষিদ্ধ 'আমার দেশ' পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের অর্থ ও নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছিল। এর বহু প্রমাণ সরকারের কোন কোন গোয়েন্দার কাছে আছে। জানা যায়, মাহমুদুর রহমান আইনী মামলায় কারাবন্দী হওয়ার আগে প্রায় প্রায়ই চট্টগ্রাম, হাটহাজারীর হেফাজত অফিসে যেতেন। টাকা দিতেন হেফাজতের শীর্ষ চৌদ্দ নেতাদের। টাকার অঙ্কটা নিহায়ত ফেল না নয়। মাহমুদুর রহমান, জানা যায়, হেফাজতের প্রথম ঢাকা মহাসমাবেশের আগেই হেফাজতকে ৪ কোটি থেকে ৬ কোটি টাকা দিয়েছেন। হেফাজতের সঙ্গে খালেদা জিয়া, জামায়াত তথা ১৮ দলের রাখি বন্ধন ঘটিয়েছেন এই মাহমুদুর রহমানই। আমার দেশ পত্রিকার অফিসে মাহমুদুর রহমানের মধ্যস্থতায় সরকার পতনের ষড়যন্ত্র হয়েছে হেফাজত, জামায়াত ও বিএনপিতে মিলে। এই সব মিটিংয়েও জামায়াত ও বিএনপির তরফ থেকে টাকা দেয়া হতো হেফাজতীদের। আরও কোটি কোটি টাকা ও মন্ত্রিত্বের লোভ দেখানো হতো হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের। কথা একটাই। ঢাকা এসে শাপলা চত্বরে থানা গেড়ে রাজধানীজুড়ে ধ্বংসের ভয়াবহ তা-ব চালাতে হবে। এমন ধ্বংসাত্মক তা-ব যাতে মুক্তিযুদ্ধ পক্ষের মহাজোট সরকার জান বাঁচাতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
মাহমুুদুর রহমান রচিত স্ক্রিপ অনুযায়ী সব কিছু চলছিল। তবে হেফাজতীরা যে ইসলামের কোন ধার ধারে না সেটা দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠার পর সরকার তাদের বিরুদ্ধে সময়োচিত পদক্ষেপ নেয়। সে কথা আগেই উল্লেখ করেছি।
নিবন্ধটি শেষ করতে যাওয়ার আগে মাহমুদুর রহমানের গুণপনার খানিকটা উল্লেখ করার লোভ সংবরণ করতে পারছি না। যিনি কর্মজীবন শুরু করেন ব্যবসায়ী হিসেবে। দেশের জনৈক শীর্ষ মেলামাইন শিল্পপতির মেয়েকে বিয়ে করে নিজ ব্যবসা গুটিয়ে শ্বশুরের ব্যবসা পরিচালনা করতে শুরু করেন। কোন কারণে মতদ্বৈধতা দেখা দিলে শ্বশুরকে নাকি 'শালা' সম্বোধন করতেন মাহমুদুর রহমান। শেষ পর্যন্ত অস্থির স্বভাব এবং জেদ-গোয়ার্তুমির কারণে মেলামাইন ব্যবস্থাপনা থেকে বহিষ্কৃত হন। নানা ঘাটের পানি খেয়ে শেষে তারেক রহমানের নেকনজরে পড়েন। প্রথমে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা। জ্বালানি উপদেষ্টা হিসেবে তার কৃতিত্ব কতখানি তা বলতে পারব না। তবে প্রমাণ মেলে দেশে যাতে এক কিলো বিদ্যুতও উৎপন্ন না হয় সেজন্য অহোরাত্র খাটা-খাটনি করেছেন জোট সরকারের এই উপদেষ্টা। রতনে রতন চেনে। এরপর দেশে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ যাতে স্বয়ং উপদেষ্টা ও আমলাতন্ত্রের কায়দা-কানুনের কাছে পরাস্ত হয় সেজন্য তাকে বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্তি দেয়া হয়। উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে ব্যর্থ কিংবা প্রায় ব্যর্থ রাষ্ট্রের স্তরে টেনে নামানো।
মাহমুদুর রহমান এই কাজে কতটা সফল হয়েছিলেন তা বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের কাগজপত্রেই রেকর্ড করা আছে। বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে মাহমুদুর রহমান একটা দুঃসাহসিক কাজে উদ্যোগী হয়েছিলেন। সেটা হলো তাইওয়ানকে ঢাকায় তিনি অফিস খোলার ব্যবস্থা করেছিলেন। নীতি এবং ন্যায়ের পরোয়া না করে নিজ অথরিটিতেই তাইওয়ানিজদের বাংলাদেশের ভিসা দিতে শুরু করেছিলেন। শ্বশুরকে শালা বলা লোকটি যে ছিটগ্রস্ত, প্রায়োন্মাদ, তা তাইওয়ানিজদের ঢাকা অফিস খোলার ব্যবস্থা করায় এবং ভিসা দেয়ার ঘটনা থেকেই বেশ ভালভাবে হৃদয়াঙ্গম করা চলে। এক চীন নীতিকে প্রকারান্তরে অস্বীকার করায় চীন ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ভেঙ্গে যেতে বসেছিল। জোট সরকার বহু চেষ্টা-তদ্বির করে সেটা ঠেকায়। জোট সরকার বিনিয়োগ বোর্ড থেকে এই অস্থির এবং প্রায়োন্মাদ লোকটাকেও প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। এর পরও মাহমুদুর রহমানের ইবলিশী কর্মকা-ের মধ্যে রয়েছে উত্তরা ষড়যন্ত্র।
সর্বশেষ ইবলিশ প্রবেশ করেছে একটি ধর্মীয় সংগঠন নামে অভিহিত, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভ-ুল করা এবং সরকার পতনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ভ-দের অন্দর মহলে।
তবে হেফাজত তার ভাবমূর্তি হারিয়েছে। এদের সন্ত্রাসী কাজকর্ম গেছে ওদের বিরুদ্ধেই। তারা হেফাজতে বিএনপি-জামায়াত কিংবা হেফাজতে পাকিস্তান নামে অভিহিত হতে পারে, কিন্তু হেফাজতে ইসলাম কোনক্রমে নয়। মাহমুদুর রহমান+বিএনপি+ জামায়াত=পাকিস্তান দাঁড়ায়। কোন অলি আল্লাহর পরিচালিত সংগঠন এটা হতে পারে না। দেশের ধর্মপ্রাণ লোকেরা সেটা বেশ ভালভাবেই উপলব্ধি করেছেন।
উৎসঃ জনকন্ঠ
__._,_.___