সংখ্যালঘুরা এখন আদি ও আসল 'কেষ্টা' চিনতে পেরেছেন তো?
এম. জি হো সে ন |
সাম্প্রতিককালে বিশেষ করে ৫ জানুয়ারির প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও উত্তেজনাহীন অভিনব নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও উপসনালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলেও এই পর্যন্ত প্রশাসন কোনো অপরাধীকে ধরতে বা শনাক্ত করতে পেরেছে তেমনটি আমাদের জানা নেই। তবে অপকর্মের হোতা যাদের জনতা হাতেনাতে ধরতে পেরেছে তাদের পরিচয় একটাই—তারা সরকারের 'সোনার ছেলে'। নির্বাচনোত্তর অতীতেও এমনি ধরনের দু'চারটা অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটে থাকলেও এবারের ঘটনাবলি নানা কারণে ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। একটি কাগুজে নির্বাচনের পর এহেন নাশকতাও কথিত নির্বাচনের মতোই যে একটি সাজানো নাটক তা এখন ওপেন সিক্রেট। সরকার ও সরকারের ধামাধরা কিছু মিডিয়া আগে থেকে তৈরি করে রাখা বিবৃতি ও প্রতিবেদন প্রকাশ করে আগের মতো এবারও যুগপত্ দেশবাসী ও বিশ্ববিবেককে বিভ্রান্ত করতে চাইল যে এটা জামায়াত-শিবিরের কাজ। কিন্তু তাদের অপকৌশল বুমেরাং হয়ে তাদের মুখের ওপরই পতিত হলো যেন।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদকে অকুতোভয় সত্য প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি প্রসঙ্গে অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী যথার্থই বলেছেন, 'জামায়াত-শিবির সংখ্যালঘু নিযার্তন করছে এটা একটা স্লোগান হয়ে গেছে।' অ্যাড. রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, 'সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা আওয়ামী লীগই বেশি করছে।' ব্যারিস্টার জ্যোতিময় বড়ুয়ার মূল্যায়ন—'সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাসহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলো সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ।' গত কয়েক বছর ধরে সংঘটিত ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ করলে সব ক্ষেত্রেই কিছু অভিন্ন বা বাস্তবতা পাওয়া যায় যা প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে বিশেষভাবে সহায়ক। যেমন—
১. প্রতিটি ঘটনার পরপরই কোনো ধরনের তথ্যানুসন্ধান ছাড়াই জামায়াত-শিবিরের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে, এতে প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে আর নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে জামায়াত-শিবিরকেই।
২. সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ কোনো সন্ত্রাসী ঘটনারই এ পর্যন্ত নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি, লোকদেখানো কিছু হয়ে থাকলেও তা প্রকাশই হয়নি, শাস্তি প্রদান তো দূরের কথা। অথচ ক্ষমতার দণ্ড জামায়াত-শিবিরের হাতে ছিল না কখনোই।
৩. এ পর্যন্ত দুষ্কর্মের সঙ্গে জড়িত যাদের হাতেনাতে ধরা গেছে তাদের কারও সঙ্গেই জামায়াত-শিবিরের দূরতম সম্পর্কও খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং কথিত 'ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক' গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার প্রমাণই পাওয়া গেছে সব ক্ষেত্রে। অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা খোদ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কেই দাবার ঘুঁটির মতো ব্যবহার করেছে এই কাজে।
৪. প্রতিটি ঘটনার পরপরই পুলিশ কখনও ওপরের নির্দেশ, কখনও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জামায়াত-শিবির ধরার অভিযানে নেমে গেছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রকৃত আসামিদের সঙ্গে নিয়েই।
৫. সব ক্ষেত্রেই একটা সাধারণ সত্য এই যে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোনো দুষ্কৃতকারীকে হাতেনাতে ধরতে পারেনি, কিন্তু প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই মামলা ঠুকে দিতে দেখা গেছে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে।
৬. লক্ষণীয় বিষয় হলো, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ভিন্ন ধর্মের মানুষ হত্যাই থাকে মুখ্য উদ্দেশ্য যা ভারতসহ পৃথিবীর অন্যান্য দাঙ্গাবিক্ষুব্ধ এলাকায় দেখা গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এর ব্যতিক্রম। এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এ পর্যন্ত কোনো সংখ্যালঘু বা দুষ্কৃতকারী খুন হওয়া এমনকি গুরুতর জখম হওয়ারও নজির নেই। এই অদ্ভুত সাম্প্রদায়িক শক্তি সম্পদহানি ঘটালেও রক্তপাত ঘটানোর মতো বর্বর নয়। বিষয়টি কিঞ্চিত্ স্বস্তিদায়ক হলেও এতে ভিন্ন উদ্দেশ্যের বা নাটকীয়তার আলামত অবশ্যই লক্ষণীয়।
অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী হাজার কথার এক কথাই বলেছেন—'জামায়াত-শিবির সংখ্যালঘু নির্যাতন করছে এটা একটা স্লোগান হয়ে গেছে।' আমাদের এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ ও মিডিয়া কর্মী 'যা কিছু হারায় গিন্নী বলেন কেষ্টা বেটাই চোর'—এমন মানসিকতায় আক্রান্ত। সংকীর্ণতার চার দেয়ালে বন্দি এই মহাজনরা সব অঘটনেই কেবল জামায়াত-শিবির দেখেন। সে কবে বাগেরহাটের অ্যাডভোকেট বড়াল খুন হলেন দলীয় লোকদের হাতে, কিন্তু তাত্ক্ষণিকভাবে প্রচার করা হলো জামায়াতের নাম। জামায়াত যেন এখন নব্য 'কেষ্টা' বা গল্পের 'হৈমন্তী'! ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হামলা হলো, অলঙ্কার চুরি হলো প্রতিমার, কোনো প্রমাণ বা তদন্ত ছাড়াই দায়ী করা হলো 'কেষ্টা'কেই। রামুর বৌদ্ধ পল্লী, লাকসামের হিন্দু পাড়ায় হামলার জন্যও কেষ্টাকেই দোষী সাব্যস্ত করে মামলার জন্য সংখ্যালঘুদের কতভাবেই না প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হলো। ক্ষতিগ্রস্তরা মিথ্যে অভিযোগ দিতে রাজি না হলে কী হবে, পুলিশ নিজেই কেষ্টা খোঁজে লেগে গেল। অভিযোগের তীর সরকারের দিকে, আর পুলিশ খোঁজে জামায়াত-শিবির। কী এক বিচিত্র তামাশা!
আমাদের বর্তমান অসাম্প্রদায়িক সরকারের আমলে সবচেয়ে আলোচিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড বোধ করি বিশ্বজিত্ হত্যা। ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব প্রেস ব্রিফিং দিলেন—'এটা শিবিরের কাজ'। মিডিয়ার কল্যাণে প্রকৃত সত্য প্রকাশ না পেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির নেতাকর্মীদের কপালে কি না দুর্গতি নেমে আসত? রিমান্ডে শাকিল-শাওনদের মতো তাদের নিশ্চয় জামাই আদর করা হতো না, আর ফাঁসির রায়টাও শাকিল-শাওনের পরিবরর্তে তাদের ওপরই বর্তাত এবং ধরে নেয়া যায় যে তড়িঘড়ি তা কার্যকরও করা হতো, মিলত না তাদের জন্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমাসুন্দর অনুকম্পাও।
প্রকৃত তথ্য জানা না থাকার কারণে 'কেষ্টা' সন্দেহে সুরঞ্জিত বাবু তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, 'পরাগ অপহরণের ঘটনায় আমরা সংখ্যালঘুরা আতঙ্কে আছি।' কিন্তু বিশ্বজিত্ হত্যার দৃশ্য দেখার পর তার আতঙ্ক কেটে গেল ষোল আনাই, তাই কোনো মন্তব্য করলেন না। সম্ভবত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সাফল্য ও নির্ভরযোগ্যতা লক্ষ্য করেই সুরঞ্জিত বাবু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়েছেন, আমরা তার দাবিকে স্বাগত জানাই। তবে সেই ট্রাইব্যুনাল ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বা যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মতো অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হবে কিনা তা নিশ্চিত করবে কে যখন ভুক্তভোগীদের সন্দেহের তীরটা তাক করা আছে খোদ সরকারের দিকেই। বাবরি মসজিদ ভাঙার উত্তেজক পরিস্থিতিতে মতিউর রহমান নিজামীর একটি বক্তব্য এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। বাায়তুল মোকাররামের উত্তর গেটে এক জনসভায় তিনি বলেছিলেন, 'ভারতের ১৫ কোটি মুসলমানকেও যদি হত্যা করা হয়, ভেঙে ফেলা হয় সব মসজিদ তবু এখানে কোনো হিন্দুর প্রতি একটি ঢিল ছোড়া বা কোনো মন্দিরের একটি ইট ভাঙার অধিকারও দেয়নি ইসলাম কোনো মুসলমানকে।' তার বক্তব্য ভারতের কোনো কোনো পত্রিকা ফলাও করে প্রচারও করেছিল। এরপরও কোনো বিবেকবান মানুষ কি বিজেপি, শিবসেনা বা হিন্দু মহাসভার মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে জামায়াতের তুলনা করতে পারেন।
বছর কয়েক আগের কথা। আমাদের অফিসে ইন্টার করতে এসেছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক মেয়ে। শেষ কর্ম দিবসের বিকাল বেলা আমার টেবিলের সামনে এসে বসল সে। দেখাদেখি সহকর্মীদেরও কয়েকজন এসে বসলেন। তিন মাস একসঙ্গে কাজ করার পর বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা। মেয়েটি তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে আমাকে উদ্দেশ করে বললো, 'উনার মতো আমার যদি একজন পিতা থাকত তাহলে কোনো দুত্খ বা টেনশনই থাকত না।' ঘটনার আকস্মিকতায় আমি ডানে-বামে মুখ লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করি। 'একি বললেন আপনি'—কোনো একজনের প্রশ্ন। জবাবে মেয়েটি আগের কথাটারই পুনরাবৃত্তি করল। ঘটনাটি বলার উদ্দেশ্য আশা করি পরিষ্কার। কোরআন পাকের বাণী—'বিশ্ব মানবসত্তার উত্স একই।' আল্লাহ বলেন, 'তোমরা অমুসলিমদের দেব-দেবীকে গালি দিও না। তাহলে অজ্ঞতাবশত তারাও তোমাদের আল্লাহকে গালি দেবে।' একজন মুসলমান ভূলেও কখনও অন্যদের দেব-দেবী বা ধর্ম প্রচারকদের গালি দেয় না, দিতে পারে না। বরং তাদের নামটাও মুখে নেয় অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে, যদিও বিনিময়ে দেড় হাজার বছর ধরেই তাদের নবী (সা.) কে গালি দেয়া হচ্ছে, কুত্সা রটনা করা হচ্ছে বিরতিহীনভাবে। এখন এমন কোনো পাগলও বিশ্বাস করবে যে, কথিত মৌলবাদীরা কোরআনের বিধান লঙ্ঘন করে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করছে, ভাঙছে-পুড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিমা, ঘর-দোর ও মন্দির? অথচ কোরআন পাকে যুদ্ধাবস্থায়ও প্রতিপক্ষের বাড়িঘর, ফসল, বৃক্ষ ও বেসামরিক জনগণের জান-মাল হেফাজতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, বিরত থাকতে বলা হয়েছে অন্যায় রক্তপাত ও বাড়াবাড়ি থেকে। বলা হয়েছে, 'যে অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে হত্যা করল সে যেন পুরো মানবতাকেই হত্যা করল। পক্ষান্তরে যে একজন মানুষের জীবন রক্ষা করল সে যেন রক্ষা করল পুরো মানবতাকে।' অনুসারীদের প্রতি ইসলামের নির্দেশ 'ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। এই তিক্ততার ফলে অনেক জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে।' 'তোমার জন্য তোমার ধর্ম, আমার ধর্ম আমার।'
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে একটি গোষ্ঠী ত্বকী হত্যার মতোই এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করতে চাচ্ছে। বিগত সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচনী ফলাফল দেখেই তারা কথিত ভোট ব্যাংকের ব্যাপারে সংশয়ে পড়ে গিয়েছিল। ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনে ভোটের স্বল্পতা তাদের সংশয় বিশ্বাসে উন্নীত হয়ে গেছে। গড়পড়তা ৪-৫ ভাগ ভোট কাস্ট হওয়ার ঘটনায় শাসক গোষ্ঠী নিশ্চিত হয়ে গেল যে, কথিত ভোট ব্যাংকে ফাটল ধরে গেছে অনেক আগেই। সুতরাং ক্ষোভ গিয়ে পড়ল সংখ্যালঘুদের ওপর। ওদের সাইজ করতে হবে, আর দায় চাপানো হবে জামায়াত-শিবিরের ওপর। এক ঢিলে দুই পাখি শিকার হলো বেশ!
সংখ্যালঘু নির্যাতনই নয়, এই নব্য চেষ্টার বিরুদ্ধে সংখ্যাগুরু নির্যাতন আর রগ কাটার অভিযোগও এন্তার! পিলখানা ট্র্যাজেডির জন্যও দায়ী করা হয়েছিল কেষ্টাকেই। সাগর-রুনি, ত্বকী, ব্লগার রাজিবসহ বলতে গেলে সব খুন-খারাবির দায় নিতে হয়েছে এই কেষ্টাকেই। এরও আগে রমনা বটমূলে উদীচীর মঞ্চে, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ অফিসে, দেশজুড়ে জেএমবির বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ, মেননসহ সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্যও কেষ্টাকেই অভিযুক্ত করা হয়েছিল। সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাস জ্বালিয়ে দেয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে কেষ্টার ওপরই। শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ সাহেব ওখানে গিয়ে কেঁদেছিলেন, প্রতিজ্ঞা করেছিলেন অপরাধীদের শাস্তি বিধানে। কিন্তু সন্ত্রাসী পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তার চোখের পানি নিমিষেই শুকিয়ে গেল। বাদ গেল শুধু ১৫ আগষ্টের দুঃখজনক ঘটনাটি, যাতে কেষ্টার নাম ওঠেনি। অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী ঠিকই বলেছেন, গোয়েবলসীয় প্রচারণার জোরে 'জামায়াত-শিবির' এটি এখন সাধারণ 'স্লোগানে পরিণত হয়ে গেছে'। এত দিনে ভুক্তভোগীদের সম্বিত ফিরল যেন। এই প্রথম দাবি করা হলো বিচার বিভাগীয় তদন্তের। আর কেষ্টাদের দাবি তদন্ত হোক জাতিসংঘের উদ্যোগে। সম্ভবত তারা এখন আস্থাহারাই নয় শুধু, বিব্রত এক জীব ঘর পোড়া গরুর মতোই। আমরা বলি, সত্য উদঘাটন হোক, শান্তি আসুক সবার জীবনে। কিন্তু ভুক্তভোগী সংখ্যালঘুরা কি আশা করেন যে তদন্তটা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বা যুদ্ধাপরাধ বিচারের মতোই অবাধ নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হোক? জনগণের ভোটাধিকারের মতোই সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকারও প্রতিষ্ঠিত হবে—এই তদন্তে সংখ্যালঘুরাও তাও আশা করতে পারেন কি? তবে আমাদের সংখ্যাগুরুদের জন্য বোধ করি বিচার চাওয়ার অধিকারটুকুও আর অবশিষ্ট নেই যেন।
পরিশেষে সংখ্যালঘু নেতা ও দায়িত্বশীলদের প্রতি নির্ভয় সত্য বলার জন্য ধন্যবাদ। পৃথক নির্বাচনের দাবি এই প্রথম তাদের মুখ থেকেও শোনলাম, যে দাবি কথিত 'সাম্প্রদায়িক শক্তির' মুখ থেকে শোনা গিয়েছিল পাকিস্তান আমলেই। এই মৌলিক দাবির ওপর অবিচল থাকুন, দেখবেন মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে রাখা বীভত্স রূপটা বেরিয়ে আসবে অচিরেই।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদকে অকুতোভয় সত্য প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি প্রসঙ্গে অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী যথার্থই বলেছেন, 'জামায়াত-শিবির সংখ্যালঘু নিযার্তন করছে এটা একটা স্লোগান হয়ে গেছে।' অ্যাড. রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, 'সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা আওয়ামী লীগই বেশি করছে।' ব্যারিস্টার জ্যোতিময় বড়ুয়ার মূল্যায়ন—'সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাসহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলো সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ।' গত কয়েক বছর ধরে সংঘটিত ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ করলে সব ক্ষেত্রেই কিছু অভিন্ন বা বাস্তবতা পাওয়া যায় যা প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে বিশেষভাবে সহায়ক। যেমন—
১. প্রতিটি ঘটনার পরপরই কোনো ধরনের তথ্যানুসন্ধান ছাড়াই জামায়াত-শিবিরের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে, এতে প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে আর নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে জামায়াত-শিবিরকেই।
২. সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ কোনো সন্ত্রাসী ঘটনারই এ পর্যন্ত নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি, লোকদেখানো কিছু হয়ে থাকলেও তা প্রকাশই হয়নি, শাস্তি প্রদান তো দূরের কথা। অথচ ক্ষমতার দণ্ড জামায়াত-শিবিরের হাতে ছিল না কখনোই।
৩. এ পর্যন্ত দুষ্কর্মের সঙ্গে জড়িত যাদের হাতেনাতে ধরা গেছে তাদের কারও সঙ্গেই জামায়াত-শিবিরের দূরতম সম্পর্কও খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং কথিত 'ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক' গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার প্রমাণই পাওয়া গেছে সব ক্ষেত্রে। অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা খোদ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কেই দাবার ঘুঁটির মতো ব্যবহার করেছে এই কাজে।
৪. প্রতিটি ঘটনার পরপরই পুলিশ কখনও ওপরের নির্দেশ, কখনও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জামায়াত-শিবির ধরার অভিযানে নেমে গেছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রকৃত আসামিদের সঙ্গে নিয়েই।
৫. সব ক্ষেত্রেই একটা সাধারণ সত্য এই যে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোনো দুষ্কৃতকারীকে হাতেনাতে ধরতে পারেনি, কিন্তু প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই মামলা ঠুকে দিতে দেখা গেছে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে।
৬. লক্ষণীয় বিষয় হলো, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ভিন্ন ধর্মের মানুষ হত্যাই থাকে মুখ্য উদ্দেশ্য যা ভারতসহ পৃথিবীর অন্যান্য দাঙ্গাবিক্ষুব্ধ এলাকায় দেখা গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এর ব্যতিক্রম। এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এ পর্যন্ত কোনো সংখ্যালঘু বা দুষ্কৃতকারী খুন হওয়া এমনকি গুরুতর জখম হওয়ারও নজির নেই। এই অদ্ভুত সাম্প্রদায়িক শক্তি সম্পদহানি ঘটালেও রক্তপাত ঘটানোর মতো বর্বর নয়। বিষয়টি কিঞ্চিত্ স্বস্তিদায়ক হলেও এতে ভিন্ন উদ্দেশ্যের বা নাটকীয়তার আলামত অবশ্যই লক্ষণীয়।
অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী হাজার কথার এক কথাই বলেছেন—'জামায়াত-শিবির সংখ্যালঘু নির্যাতন করছে এটা একটা স্লোগান হয়ে গেছে।' আমাদের এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ ও মিডিয়া কর্মী 'যা কিছু হারায় গিন্নী বলেন কেষ্টা বেটাই চোর'—এমন মানসিকতায় আক্রান্ত। সংকীর্ণতার চার দেয়ালে বন্দি এই মহাজনরা সব অঘটনেই কেবল জামায়াত-শিবির দেখেন। সে কবে বাগেরহাটের অ্যাডভোকেট বড়াল খুন হলেন দলীয় লোকদের হাতে, কিন্তু তাত্ক্ষণিকভাবে প্রচার করা হলো জামায়াতের নাম। জামায়াত যেন এখন নব্য 'কেষ্টা' বা গল্পের 'হৈমন্তী'! ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হামলা হলো, অলঙ্কার চুরি হলো প্রতিমার, কোনো প্রমাণ বা তদন্ত ছাড়াই দায়ী করা হলো 'কেষ্টা'কেই। রামুর বৌদ্ধ পল্লী, লাকসামের হিন্দু পাড়ায় হামলার জন্যও কেষ্টাকেই দোষী সাব্যস্ত করে মামলার জন্য সংখ্যালঘুদের কতভাবেই না প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হলো। ক্ষতিগ্রস্তরা মিথ্যে অভিযোগ দিতে রাজি না হলে কী হবে, পুলিশ নিজেই কেষ্টা খোঁজে লেগে গেল। অভিযোগের তীর সরকারের দিকে, আর পুলিশ খোঁজে জামায়াত-শিবির। কী এক বিচিত্র তামাশা!
আমাদের বর্তমান অসাম্প্রদায়িক সরকারের আমলে সবচেয়ে আলোচিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড বোধ করি বিশ্বজিত্ হত্যা। ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব প্রেস ব্রিফিং দিলেন—'এটা শিবিরের কাজ'। মিডিয়ার কল্যাণে প্রকৃত সত্য প্রকাশ না পেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির নেতাকর্মীদের কপালে কি না দুর্গতি নেমে আসত? রিমান্ডে শাকিল-শাওনদের মতো তাদের নিশ্চয় জামাই আদর করা হতো না, আর ফাঁসির রায়টাও শাকিল-শাওনের পরিবরর্তে তাদের ওপরই বর্তাত এবং ধরে নেয়া যায় যে তড়িঘড়ি তা কার্যকরও করা হতো, মিলত না তাদের জন্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমাসুন্দর অনুকম্পাও।
প্রকৃত তথ্য জানা না থাকার কারণে 'কেষ্টা' সন্দেহে সুরঞ্জিত বাবু তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, 'পরাগ অপহরণের ঘটনায় আমরা সংখ্যালঘুরা আতঙ্কে আছি।' কিন্তু বিশ্বজিত্ হত্যার দৃশ্য দেখার পর তার আতঙ্ক কেটে গেল ষোল আনাই, তাই কোনো মন্তব্য করলেন না। সম্ভবত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সাফল্য ও নির্ভরযোগ্যতা লক্ষ্য করেই সুরঞ্জিত বাবু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়েছেন, আমরা তার দাবিকে স্বাগত জানাই। তবে সেই ট্রাইব্যুনাল ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বা যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মতো অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হবে কিনা তা নিশ্চিত করবে কে যখন ভুক্তভোগীদের সন্দেহের তীরটা তাক করা আছে খোদ সরকারের দিকেই। বাবরি মসজিদ ভাঙার উত্তেজক পরিস্থিতিতে মতিউর রহমান নিজামীর একটি বক্তব্য এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। বাায়তুল মোকাররামের উত্তর গেটে এক জনসভায় তিনি বলেছিলেন, 'ভারতের ১৫ কোটি মুসলমানকেও যদি হত্যা করা হয়, ভেঙে ফেলা হয় সব মসজিদ তবু এখানে কোনো হিন্দুর প্রতি একটি ঢিল ছোড়া বা কোনো মন্দিরের একটি ইট ভাঙার অধিকারও দেয়নি ইসলাম কোনো মুসলমানকে।' তার বক্তব্য ভারতের কোনো কোনো পত্রিকা ফলাও করে প্রচারও করেছিল। এরপরও কোনো বিবেকবান মানুষ কি বিজেপি, শিবসেনা বা হিন্দু মহাসভার মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে জামায়াতের তুলনা করতে পারেন।
বছর কয়েক আগের কথা। আমাদের অফিসে ইন্টার করতে এসেছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক মেয়ে। শেষ কর্ম দিবসের বিকাল বেলা আমার টেবিলের সামনে এসে বসল সে। দেখাদেখি সহকর্মীদেরও কয়েকজন এসে বসলেন। তিন মাস একসঙ্গে কাজ করার পর বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা। মেয়েটি তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে আমাকে উদ্দেশ করে বললো, 'উনার মতো আমার যদি একজন পিতা থাকত তাহলে কোনো দুত্খ বা টেনশনই থাকত না।' ঘটনার আকস্মিকতায় আমি ডানে-বামে মুখ লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করি। 'একি বললেন আপনি'—কোনো একজনের প্রশ্ন। জবাবে মেয়েটি আগের কথাটারই পুনরাবৃত্তি করল। ঘটনাটি বলার উদ্দেশ্য আশা করি পরিষ্কার। কোরআন পাকের বাণী—'বিশ্ব মানবসত্তার উত্স একই।' আল্লাহ বলেন, 'তোমরা অমুসলিমদের দেব-দেবীকে গালি দিও না। তাহলে অজ্ঞতাবশত তারাও তোমাদের আল্লাহকে গালি দেবে।' একজন মুসলমান ভূলেও কখনও অন্যদের দেব-দেবী বা ধর্ম প্রচারকদের গালি দেয় না, দিতে পারে না। বরং তাদের নামটাও মুখে নেয় অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে, যদিও বিনিময়ে দেড় হাজার বছর ধরেই তাদের নবী (সা.) কে গালি দেয়া হচ্ছে, কুত্সা রটনা করা হচ্ছে বিরতিহীনভাবে। এখন এমন কোনো পাগলও বিশ্বাস করবে যে, কথিত মৌলবাদীরা কোরআনের বিধান লঙ্ঘন করে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করছে, ভাঙছে-পুড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিমা, ঘর-দোর ও মন্দির? অথচ কোরআন পাকে যুদ্ধাবস্থায়ও প্রতিপক্ষের বাড়িঘর, ফসল, বৃক্ষ ও বেসামরিক জনগণের জান-মাল হেফাজতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, বিরত থাকতে বলা হয়েছে অন্যায় রক্তপাত ও বাড়াবাড়ি থেকে। বলা হয়েছে, 'যে অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে হত্যা করল সে যেন পুরো মানবতাকেই হত্যা করল। পক্ষান্তরে যে একজন মানুষের জীবন রক্ষা করল সে যেন রক্ষা করল পুরো মানবতাকে।' অনুসারীদের প্রতি ইসলামের নির্দেশ 'ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। এই তিক্ততার ফলে অনেক জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে।' 'তোমার জন্য তোমার ধর্ম, আমার ধর্ম আমার।'
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে একটি গোষ্ঠী ত্বকী হত্যার মতোই এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করতে চাচ্ছে। বিগত সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচনী ফলাফল দেখেই তারা কথিত ভোট ব্যাংকের ব্যাপারে সংশয়ে পড়ে গিয়েছিল। ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনে ভোটের স্বল্পতা তাদের সংশয় বিশ্বাসে উন্নীত হয়ে গেছে। গড়পড়তা ৪-৫ ভাগ ভোট কাস্ট হওয়ার ঘটনায় শাসক গোষ্ঠী নিশ্চিত হয়ে গেল যে, কথিত ভোট ব্যাংকে ফাটল ধরে গেছে অনেক আগেই। সুতরাং ক্ষোভ গিয়ে পড়ল সংখ্যালঘুদের ওপর। ওদের সাইজ করতে হবে, আর দায় চাপানো হবে জামায়াত-শিবিরের ওপর। এক ঢিলে দুই পাখি শিকার হলো বেশ!
সংখ্যালঘু নির্যাতনই নয়, এই নব্য চেষ্টার বিরুদ্ধে সংখ্যাগুরু নির্যাতন আর রগ কাটার অভিযোগও এন্তার! পিলখানা ট্র্যাজেডির জন্যও দায়ী করা হয়েছিল কেষ্টাকেই। সাগর-রুনি, ত্বকী, ব্লগার রাজিবসহ বলতে গেলে সব খুন-খারাবির দায় নিতে হয়েছে এই কেষ্টাকেই। এরও আগে রমনা বটমূলে উদীচীর মঞ্চে, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ অফিসে, দেশজুড়ে জেএমবির বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ, মেননসহ সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্যও কেষ্টাকেই অভিযুক্ত করা হয়েছিল। সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাস জ্বালিয়ে দেয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে কেষ্টার ওপরই। শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ সাহেব ওখানে গিয়ে কেঁদেছিলেন, প্রতিজ্ঞা করেছিলেন অপরাধীদের শাস্তি বিধানে। কিন্তু সন্ত্রাসী পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তার চোখের পানি নিমিষেই শুকিয়ে গেল। বাদ গেল শুধু ১৫ আগষ্টের দুঃখজনক ঘটনাটি, যাতে কেষ্টার নাম ওঠেনি। অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী ঠিকই বলেছেন, গোয়েবলসীয় প্রচারণার জোরে 'জামায়াত-শিবির' এটি এখন সাধারণ 'স্লোগানে পরিণত হয়ে গেছে'। এত দিনে ভুক্তভোগীদের সম্বিত ফিরল যেন। এই প্রথম দাবি করা হলো বিচার বিভাগীয় তদন্তের। আর কেষ্টাদের দাবি তদন্ত হোক জাতিসংঘের উদ্যোগে। সম্ভবত তারা এখন আস্থাহারাই নয় শুধু, বিব্রত এক জীব ঘর পোড়া গরুর মতোই। আমরা বলি, সত্য উদঘাটন হোক, শান্তি আসুক সবার জীবনে। কিন্তু ভুক্তভোগী সংখ্যালঘুরা কি আশা করেন যে তদন্তটা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বা যুদ্ধাপরাধ বিচারের মতোই অবাধ নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হোক? জনগণের ভোটাধিকারের মতোই সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকারও প্রতিষ্ঠিত হবে—এই তদন্তে সংখ্যালঘুরাও তাও আশা করতে পারেন কি? তবে আমাদের সংখ্যাগুরুদের জন্য বোধ করি বিচার চাওয়ার অধিকারটুকুও আর অবশিষ্ট নেই যেন।
পরিশেষে সংখ্যালঘু নেতা ও দায়িত্বশীলদের প্রতি নির্ভয় সত্য বলার জন্য ধন্যবাদ। পৃথক নির্বাচনের দাবি এই প্রথম তাদের মুখ থেকেও শোনলাম, যে দাবি কথিত 'সাম্প্রদায়িক শক্তির' মুখ থেকে শোনা গিয়েছিল পাকিস্তান আমলেই। এই মৌলিক দাবির ওপর অবিচল থাকুন, দেখবেন মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে রাখা বীভত্স রূপটা বেরিয়ে আসবে অচিরেই।
__._,_.___