সংখ্যালঘু নির্যাতন
দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে
ড. আনিসুজ্জামান, সুলতানা কামাল, ডা. সারওয়ার আলী, জিয়াউদ্দিন তারেক আলী, আবেদ খান, কাবেরী গায়েন, জিনাত আরা হক, আ আ ফয়জুল কবির
৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ চালানো হয়। 'বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও'-এর পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল দিনাজপুরের কর্ণাই, প্রীতমপাড়া ও তেলিপাড়া এবং ঠাকুরগাঁওয়ের গড়েয়া ও আকচা গ্রাম ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি পরিদর্শন করে। আমাদের সরেজমিন পরিদর্শন এবং নাগরিক মতবিনিময় ও প্রশাসনের সঙ্গে আলাপের ভিত্তিতে এই সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করছি
এক. সার্কিট হাউসে মতবিনিময় সভা
সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিট, ১৭ জানুয়ারি ২০১৪
আমরা দিনাজপুরে পৌঁছে প্রথমেই নাগরিক মতবিনিময় সভায় মিলিত হই সার্কিট হাউসে, ঘটনাগুলো সম্পর্কে নাগরিক অভিমত পাওয়ার জন্য। মতবিনিময় সভায় কথা বলেন দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি চিত্ত ঘোষ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের নেতা মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, চিত্রশিল্পী রাজিউদ্দিন চৌধুরী, সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মী শহীদুল ইসলাম, দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম নবী, হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলরাম রায়, মেহেরুল ইসলাম, স্বাচিপের নেতা আহাদ আলী ও সাংসদ ইকবালুর রহিম।
তাঁদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন শত শত মানুষ কর্ণাই গ্রামের পাঁচটি পাড়া—তাঁতীপাড়া, ঋষিপাড়া, প্রীতমপাড়া, তেলিপাড়া ও মুগরীপাড়ায় আক্রমণ করে। বেলা তিনটার দিকে তারা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বাড়ি ভাঙা এবং বাজারের দোকানপাট ভাঙচুর ও লুট করতে শুরু করে। এই আক্রমণ ছিল পরিকল্পিত। কারণ, ৫ তারিখের আগেই এসব এলাকায় গিয়ে ভোট দিতে গেলে খুন করার হুমকি দিয়ে আসা হয় এবং নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে বিভিন্ন কেন্দ্রে একযোগে আক্রমণ চলে। এই আক্রমণের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে ফোনে খবর দেওয়া হয়, কিন্তু প্রশাসনের কাছ থেকে উপযুক্ত সাড়া পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যার দিকে যখন এসব এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও সেনাবাহিনী পৌঁছায়, ততক্ষণে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে আর নির্যাতন থেকে নারীরাও রেহাই পাননি। পুরুষেরা পালিয়ে গেছেন। কর্ণাই গ্রামে মোট ১৫৩টি পরিবারে কিছু না কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একটি বাড়ি ও ১৫টি দোকান পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়েছে। আগুন লাগানোর খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে দমকল বাহিনীকে ফোন করা হলেও সাহায্য পাওয়া যায়নি, অথচ সদর থেকে কর্ণাইয়ে পৌঁছাতে ২০ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়। কাজ করেনি মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং টিম, বিজিবি-পুলিশ-সেনাবাহিনী। মুগরীপাড়া ও তেলিপাড়ায় আক্রমণের তিন ঘণ্টা পর বিজিবির সদস্যরা পৌঁছালেও গাড়ি থেকে নামেননি। কর্ণাই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আর্থসামাজিক নাজুক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে সন্দেহ ব্যক্ত করা হয় যে আক্রান্ত সন্তোষ কুমার রায় যে মামলা করেছেন, আদৌ সে মামলা তিনি চালাতে পারবেন কি না। নির্বাচনের দিন বেছে বেছে হিন্দুদের দোকানে আগুন দেওয়া হয়েছে। হাতে ভোটের কালির দাগ দেখে দেখে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্বাচনী এজেন্টরা নির্যাতিত হয়েছেন, কারও বাড়ি পুড়েছে।
ঘটনাটি কেবল ৫ জানুয়ারিতেই সীমাবদ্ধ নয়, গত দুই বছরে চিরিরবন্দর, বলাইবাজার, বীরগঞ্জ ও ভূষিরনগরে হিন্দুদের ওপর দফায় দফায় আক্রমণ ও হিন্দুপাড়া পুড়িয়ে দেওয়ার কিংবা রানীগঞ্জে ধানের পুঞ্জিতে আগুন দেওয়ার ঘটনাগুলোতে কোনো বিচার হয়নি, কখনোই মূল আসামি ধরা পড়েনি। কর্ণাই বাজারে ভোটের আগেই হুমকি দিয়ে আসা হয়েছে। শাসানো হয়েছে, 'হিন্দু, মালাউনরা ভারতে যাও। এখানে থাকতে পারবে না।' মূলত 'মালদাহ' থেকে আসা মানুষকে এই আক্রমণের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। ৬ জানুয়ারি সকালে সাংসদ সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে এক ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হন। নারীদের আর্তনাদ এবং বস্তার মধ্যে সবকিছু ভরে ভারতের দিকে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নিতে দেখেন। তিনি দলের পক্ষ থেকে চিড়া-মুড়ি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। সন্ত্রাসীদের তালিকা দেওয়া ছিল পুলিশ প্রশাসনকে, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে আগাম ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
দুই. প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক
সার্কিট হাউস, রাত নয়টা, ১৭ জানুয়ারি ২০১৪
দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ শামীম আল রাজী ও পুলিশ সুপার রুহুল আমিনের মতে, ৫ তারিখের নির্বাচন ভন্ডুল করার ঘোষণা ছিল এক পক্ষের। ১১টি উপজেলায় নির্বচন হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশের মাত্র একজন বা সর্বোচ্চ দুজন করে সদস্য মোতায়েন ছিলেন। বিজিবি ও সেনাবাহিনী রাস্তায় টহল দিয়েছে। আগের রাতেই তারকাঁটা দেওয়া ছিল রাস্তায়। তাতে গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। ২০, ৩০, ৪০, ৫০, ৬০ কেন্দ্র থেকে একযোগে আক্রমণের খবর আসতে শুরু করে। তবে দিবাগত রাত একটার পরে আর কোনো আক্রমণ ছিল না। ৫ জানুয়ারি সকাল ১০টা পর্যন্ত ভালো ভোট হয়েছে। এরপর বীরগঞ্জের কাহারোল থেকে প্রথম আক্রমণের খবর আসতে শুরু করে। সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে যায় বিকেল চারটায়। পরদিন ইকবালুর রহিমসহ তাঁরা উপদ্রুত এলাকায় যান। গিয়ে তাঁরা পুড়ে যাওয়া চার-পাঁচটি ঘর, ভাঙচুর হওয়া বাড়ি, দোকান এবং পুড়ে যাওয়া ভটভটি দেখতে পান। তাঁদের মতে, গণমাধ্যমে অতিরঞ্জিত প্রতিবেদন হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাহায্য পাচ্ছেন, যদিও আতঙ্ক রয়ে গেছে। কারা এই আক্রমণকারী জানতে চাইলে দুজনই জানান, 'আউটসাইডারস', 'সেটেলারস', 'মালদাইয়া'রা আক্রমণকারী। পার্বতীপুর ও বীরগঞ্জে 'দুইটা বডি পড়েছে' বলেও জানান তাঁরা। পাঁচবিবিতেও মারা গেছেন দুজন। এ পর্যন্ত কর্ণাইয়ের ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে মূল অপরাধীরা যে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে, সে বিষয়টিও স্বীকার করেন তাঁরা। আর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলতাফ হোসেন জানান, মোট ১২৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৪টি ছিল গুরুত্বপূর্ণ, বাকিগুলো ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তাই তাঁদের সতর্কতা ছিল চিরিরবন্দর ও রানীগঞ্জের দিকে; কর্ণাইয়ের দিকে মনোযোগ কম ছিল।
তিন. কর্ণাই, প্রীতমপাড়া, তেলিপাড়া
১৮ জানুয়ারি ২০১৪
কর্ণাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যখন পৌঁছাই, তখন সকাল ১০টা। এই বিদ্যালয় ছিল ভোটকেন্দ্র। ঠিক এই স্কুলঘরের পাশেই ছিল একটি 'ভাতের দোকান' এবং লাগোয়া দু-একটি ছোট দোকান। ভোটের দিন সকালে হাজার হাজার মানুষ এসে ভোট দেওয়ার অপরাধে 'ভাতের দোকান'সহ সেসব দোকান পুড়িয়ে, গুঁড়িয়ে আক্ষরিক অর্থেই মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। আমাদের সামনে তখন বিপন্ন নারী-পুরুষের ভিড়। সবাই জানতে চাইছেন, তাঁরা কীভাবে বাঁচবেন? এই ভাতের দোকানের পাশেই একটি বাড়ি, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নির্বাচনের দিন। সেনাসদস্যরা এসেছেন সাড়ে চারটার দিকে, কিন্তু গ্রামের ভেতর ঢোকেননি। তার আগে বিজিবির গাড়ি এসেও ঢোকেনি গ্রামে। ৭০ বছরের বৃদ্ধা সুমী রায়ের কানের এক রত্তি দুল কেড়ে নেওয়ার জন্য ছিঁড়ে ফেলেছে তাঁর কানের লতি। ইট দিয়ে তাঁর কোমরে আঘাত করা হয়েছে। তিনি চৌকির নিচে লুকিয়ে ছিলেন। ইকবালুর রহিমের পোলিং এজেন্ট প্রতিমা রায় পালিয়ে ছিলেন, কিন্তু হামলাকারীরা তাঁকে বাড়িতে গিয়ে খুঁজেছে। তাঁর ভয়, 'আমি তো এখন চিহ্নিত হয়ে গেলাম। আমি কীভাবে বাঁচব?' হাহাকার করছিলেন অন্যরাও, তাঁরা ত্রাণ চান না, চান নিরাপত্তা।
প্রীতমপাড়ায় পৌঁছে দেখা গেল, শত শত নারী-পুরুষ জড়ো হয়েছে, নারীই বেশি। বৃদ্ধা কাইচুবালা রায় কাঁদছিলেন, 'কেমনে বাইচপ্যু?' রাজগোপাল রায়ের মাথায় ব্যান্ডেজ, মাথায় বাড়ি দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। 'পুলিশ চলি যাবার পরে হামরার কী হবে?', 'আইত হইলে ভয় করে,' 'হামাক তো ঘেরাও করি ধরি ফেলাইছে,' 'হামরা কেমন করি বাইচপো'—এসব বিলাপের ভেতর থেকেই আমরা কয়েকজন এগোতে থাকি তেলিপাড়ার দিকে।
কর্ণাই বাজার থেকেই হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র পিছু নিয়েছিলেন তেলিপাড়ায় নারী নির্যাতনের যে ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে একান্তে কথা বলার জন্য। কর্ণাই, তেলিপাড়ায় বিদ্যুৎ নেই। আলতা রায়ের বাড়িতে গিয়ে এক আর্তনাদের মধ্যে পড়তে হলো। হাহাকার করে কাঁদছিলেন আলতা রায়, পাশে দাঁড়ানো কিশোরী মেয়ে জয়ন্তী রায়। নির্বাচনের দিন জয়ন্তী রায়কে ২২ কিলোমিটার দূরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আলতা রায় জানান, 'নিন্দার জন্য' অনেক কথা বলা যায় না। কেঁদেছেন অঝোরে আরও অনেকে।
চার. ঠাকুরগাঁওয়ের গড়েয়া ও আকচা গ্রাম
গড়েয়া গোপালপুর দেউনিয়া বাজারে ঢুকতেই নির্যাতিত ব্যক্তিরা দেখালেন অতি কষ্টে তোলা টিনের দোকানপাট কীভাবে লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়েছে। কেউ বর্ণনা দিলেন, কীভাবে শিমুলডাঙ্গার লোকজন দলে দলে এসে লুটপাট চালায়। বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত চলে লুটপাট। সেনাবাহিনীর গাড়ি এসে সরে যায়। তার পরই আক্রমণকারীরা ফের আসে। কয়েকজনকে বেধড়ক মারতে শুরু করে। তাদের ধানের বস্তাও লুট করে নিয়ে যায়। কেউ কেউ অভিযোগ করলেন, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবদুল খালেক 'হিন্দু শালাক জবা করিম' হুংকার দিয়ে আক্রমণ চালান। 'হিন্দুর বাড়িঘর জ্বালাও-পোড়াও' হুংকার দিয়ে আক্রমণকারীরা হামলা চালালে দুই পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। আক্রমণকারীদের পক্ষের একজন মারা গেলে তাকে কবর দেওয়ার পরে ফের আক্রমণ চলে। এবার পুরুষেরা পালিয়ে যান আর নারীদের নিয়ে যাওয়া হয় ইসকন মন্দিরে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের আকচা গ্রামে ১৬ হাজার ভোটারের মধ্যে ১৪ হাজারই হিন্দু। এখানে ভোট দেওয়ার অপরাধে ভোটারদের বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। দোকান লুট করা হয়েছে, দোকানের মালপত্র জড়ো করে আগুন দেওয়া হয়েছে। মোট ২৩টি দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে, যার মধ্যে হিন্দুদের ১২টি ও মুসলমানদের ১১টি দোকান।
পাঁচ. কেন এমন ঘটল? রাষ্ট্র কি তবে প্রস্তুত ছিল না?
দুটি কারণ খুব পরিষ্কারভাবে বের হয়ে এসেছে আলোচনায়। প্রথমত, ভোট দেওয়ার জন্য; দ্বিতীয়ত, জমিজমার দখল। আর এ কাজে আক্রমণকারীরা (মূলত জামায়াত) ব্যবহার করেছে 'মালদাই' বা মালদা থেকে আগত ব্যক্তিদের।
দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কথা বলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঠানোর মতো যথেষ্ট পুলিশ ছিল না। পুলিশের মাত্র একজন বা দুজন সদস্য দিয়ে যে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কেন্দ্র সামাল দেওয়া সম্ভব নয়, সেটি প্রশাসন সরাসরি স্বীকার করেছে। সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলেও আমরা যে স্থানগুলো পরিদর্শন করেছি, সেসব স্থানে সেনাবাহিনী সরাসরি নিয়োজিত হয়নি। সে বিষয়ে সবাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। এমনকি ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুলিশের যেসব সদস্য পাঠানো হয়েছে, তাঁরাই বরং ভয়ে থেকেছেন। তাই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর তালিকা থাকা সত্ত্বেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি; বিশেষ করে ভোটের দিনে আক্রান্ত অনেক কেন্দ্র থেকে একই সঙ্গে আরও পুলিশ ফোর্স পাঠানোর অনুরোধ থাকলেও জেলা প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয় যে রাষ্ট্র তার নাগরিককে ভোটকেন্দ্রে যেতে বলেও কেন তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনি? রাষ্ট্র কি তবে প্রস্তুত ছিল না এবারের এই ঝুঁকিপূর্ণ নির্বাচন করার জন্য? আশঙ্কা তো ছিলই, সেই সঙ্গে সন্ত্রাসীদের তালিকা দেওয়া সত্ত্বেও তাদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার ব্যাপারটি সত্য হলে এর দায় তাহলে কে নেবে? বরং অভিযোগ উঠেছে গ্রেপ্তার-বাণিজ্যের।
ছয়. উত্তরণের উপায়
দিনাজপুরে আক্রমণের শিকার মূলত রাজবংশী হিন্দু জনগোষ্ঠী। এই জনগোষ্ঠী নির্বিবাদী ও দরিদ্র। বাড়িঘর ভাঙচুর করে, দোকান লুটপাট ও ভেঙে ফেলার মাধ্যমে তাদের বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বনটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। ক্ষয়ক্ষতির যথাযথ তালিকা প্রস্তুত করে, ক্ষতিপূরণ দিয়ে হয়তো এই বস্তুগত ক্ষতি পোষানো সম্ভব; কিন্তু অপূরণীয় ক্ষতি যা হয়েছে তা হলো, তাদের আস্থার জায়গা নষ্ট হয়ে গেছে। তারা ভুগছে নিরাপত্তাহীনতায়। এই আস্থার সংকট প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা ফিরবে না। অনেকেই দেশ ছাড়ার ব্যাপারে ভাবছেন। তাঁরা বারবার বলেছেন, 'ইলিপ চাই না, নিরাপত্তা চাই।' 'চাই ন্যায়বিচার ও স্থায়ী সমাধান।'
আমাদের সুপারিশ:
১. অবিলম্বে আক্রান্ত জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. অবিলম্বে দোষী ব্যক্তিদের যথাযথভাবে চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির বিধান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অজ্ঞাতনামা শত শত ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নয়, বরং সুনির্দিষ্টভাবে অপরাধীদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৩. দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এসব অপরাধীর বিচার নিষ্পত্তি করতে হবে।
৪. যুদ্ধাপরাধী ও সন্ত্রাসী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে এবং তাদের কর্মকাণ্ডের অর্থনৈতিক ভিত্তি ভেঙে ফেলতে হবে।
৫. নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনকে জবাবদিহি করতে হবে।
৬. পুলিশি প্রহরায় জীবন নয়, জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার জন্য নির্যাতিত ব্যক্তিদের মধ্যে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে, সেটি পূরণের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি সেটেলারদের বিষয়টি মীমাংসা করতে হবে।
৭. স্থানীয় জনগণের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক বোধ তৈরির জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে; বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের প্রশিক্ষিত করতে হবে।
আমরা মনে করি, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর এই আক্রমণ মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাংলাদেশের সংকট। বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত, ঈষৎ সংক্ষেপিত
লেখকেরা 'বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও' সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2014/01/11/37182#sthash.KqoEzDn0.dpuf
http://www.bd-pratidin.com/2014/01/11/37182
সংখ্যালঘু নির্যাতন মামলা শিগগির দ্রুত বিচার আদালতে: আইনমন্ত্রী
2 days ago - ঢাকা: আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের মামলাগুলো শিগগির দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তরিত করা হবে। তিনি বলেছেন, সারাদেশে.সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে - ইমরান এইচ সরকার ...
ভোট দেয়ার অপরাধে সংখ্যালঘু নির্যাতন: প্রধানমন্ত্রী | Newsnext ...
- newsnextbd.com/.../বাণিজ্য-মেলা-শুরু-শনিব...
দিনাজপুরে কর্ণাইতে সংখ্যালঘু নির্যাতন মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ৭৫ ...
সংখ্যালঘু নির্যাতন - মুক্তমনা
- mukto-mona.com/bangla_blog/?...সংখ্যালঘু-নি...
__._,_.___