খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করলে নৈরাজ্য বন্ধ হবে:যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে ড. সিদ্দিকুর রহমান
নিউইর্য়ক, ৭ মে ২০১৩ ( বিডিএনএন২৪) :- বাংলাদেশে হেফাজত ইসলামের নৈরাজ্য-তান্ডব এবং সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ গত ৬ মে রাতে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে একটি রেষ্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে হেফাজত ইসলামের কর্মীরা পবিত্র কোরআন পুড়ানোর ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। এই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি ড. আব্দুস সোবহান গোলাপসহ আরো নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিএনপি'র চেয়ারপার্সন ও বিরোধী দলীয় নেত্রী হেফাজত ইসলাম এবং জামাত-শিবিরকে দিয়ে দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির পায়তারা করছে। দেশে হেফাজত যে নৈরাজ্য-তান্ডব এবং সন্ত্রাস করেছে, এর নেপথ্যে মদদ দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া সরকারের উচিত খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের কথা বেরিয়ে আসবে।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। এ কারণে তারা জামাত-শিবির-হেফাজতের ওপর ভর করেছে। তারা দেশে রক্তপাত ঘটিয়ে, সাধারণ মানুষের জানমালকে বিপন্ন করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। তারা যেকোন উপায়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু আওয়ামী লীগের একজন সৈনিক বেঁচে থাকা পর্যন্ত বিএনপির এই ষড়যন্ত্র সফল হবে না। তিনি হেফাজত ইসলামের কর্মী দ্বারা পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, হেফাজত ইসলাম ইসলামের দুশমন। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর প্রতি কেউ কূটক্তি করলে এর জন্য বাংলাদেশের সাধারণ মানুষই যথেষ্ট। তারাই এর প্রতিবাদ করতে পারে। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। হেফাজত ইসলাম আসলে ধর্মের লেবাসে একটি রাজনৈতিক দলের নীল নকশা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে। হেফাজত ইসলাম কোন রাজনৈতিক দল নয়। রাজনৈতিক পক্ষপাত দুষ্ট একটি বাহিনী।
তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করে না। তিনি কারো চাপে মাথা নত করেন না। তিনি একটি উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, বিশ্বব্যাংক ঋণ দেয়ার শর্ত হিসাবে কৃষিতে ভূর্তকী না দেয়ার কথা বলেছিল। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের এই শর্ত মানেন নি। কৃষকদের ভূর্তকী দেয়ায় দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসর্ম্পূণতা অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের দেশের জনগণ, কৃষকদের কথা সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেন। ড. সিদ্দিকুর রহমান আরো বলেন, শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে আমাদের এক্যবদ্ধভাবে বিএনপি-জামাত-হেফাজতকে মোকাবেলা করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তিকে সতর্ক থাকতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সরকারি ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ বলেন, সরকার হেফাজত ইসলামীর প্রধান আল্লামা শফীকে নিরাপদে সরিয়ে দিয়েছে। নইলে অনেক ভয়বহ ঘটনা ঘটতে পারতো। সরকার বুদ্ধমত্তার পরিচয় দিয়ে আল্লামা শফীকে নিরাপদে তার নিজ এলাকায় পৌঁছে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, হেফাজত ইসলামের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ আছে। হেফাজতের কর্মমা-ের সঙ্গে জামাতের কোন সম্পর্ক নেই। তার এই বক্তব্য ছিল সংবাদ সম্মেলনে পঠিত বক্তব্যের সঙ্গে বিপরীত।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামের নামে ডাকা ঢাকা অবরোধের কর্মসূচীর আসল রুপ ও অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে প্রচার ও প্রকাশ করলেও তারা মুলতঃ বিএনপি জামাতের নীল নক্সার নতুন আত্মপ্রকাশ। হেফাজতে ইসলাম নামক সংগঠনের জন্ম ইসলাম রক্ষার নামে-হেফাজত নামধারী জামাত বিএনপি- জাতীয় পতাকায় অগ্নি সংযোগ,শহীদ মিনার ভাঙ্গা, সংখ্যালঘু হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টানদের বাড়ী ঘর,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে আগুন ও লুটপাট পবিত্র কাবা শরিফের গিলাপ নিয়ে মক্কা শরিফের ইমামদের এক ছবি ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধিদের রক্ষার নামে মিথ্যাচার,দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে বলে মাইকে ঘোষনা দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে রাজপথে নিয়ে আসা,আমার দেশ, ইনকিলাব,নয়া দিগন্ত, সংগ্রাম, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামী টিভির মাধ্যমে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) সম্পর্কে কটুক্তি করে লেখা এক ব্লগারের পোষ্টিং হুবহু প্রথম পাতায় ও মুল খবরে প্রকাশ করে ধর্মপ্রান মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করে দেশে এক নৈরাজ্যকর ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় বিগত ৬ই এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ,৩রা মে বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার মহাসমাবেশে সরকারের প্রতি ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম ও ১৮ দলীয় নেতা কর্মীদের ঢাকায় থেকে হেফাজতের ডাকা ৫ই মে ঢাকা অবরোধে যোগদানের প্রতিশ্রুতি নেয়া, প্রকাশ্যে খালেদা-এরশাদ-জামাতের সমর্থন প্রদান ও খাদ্য,পানীয় ও অর্থের যোগান দেয়া। সর্বশেষ ৫ই মে শান্তিপুর্ন ঢাকা অবরোধ কর্মসূচীতে কাফনের কাপড় পড়ে তিন শত স্যুইসাইড স্কোয়াড, ব্লুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরিহিত সাত শত স্বেচ্ছা সেবক মাথায় তালেবানী ব্যান্ড,হাতে চাপাতি, রামদা,চেইন,লোহার রড, বাঁশ ও কাঠের বড় বড় লাঠি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা নিয়ে অবরোধ পরবর্তী অবস্থান ধর্মঘটের কর্মসূচী দিয়ে হেফাজতের আমির আল্লামা শফিকে রাষ্ট্রপ্রতি ও মহাসচিব বাবুনগরীকে প্রধানমন্ত্রী করে সরকার গঠন করার পরিকল্পনা করে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রদানের নিমিত্তে সমাবেশ করার অনুমতি দিলেও হেফাজতে ইসলাম তাদের মুল নেতা খালেদা জিয়ার ব্লুপ্রিন্ট বাস্তবায়নে লক্ষ্যে উক্ত সমাবেশকে সহিংসারূপে আবির্ভূত হলে সরকারের বাহিনী তাদেরকে বিতাড়িত করতে উদ্যোগী হলে তারা জ্বালাও পোড়াও, গাড়ী-অফিস,দোকানপাট, মসজিদ, ষ্টেডিয়াম, ব্যাংক,বীমায়, আক্রমন করে অগ্নি সংযোগ লুটপাট এবং পুলিশ,বিজিবি,র্যাব,ও নিরীহ জনগনের উপর অমানসিক নির্যাতন করে হত্যা ও পবিত্র কোরান হাদিস জায়নামাজ তজবীহতে আগুন দিয়ে ধ্বংশযজ্ঞ শুরু করলে রাজধানী ঢাকা শহর এক ভুতুরে নগরীতে পরিণত হয়। সংবাদ সম্মেলনে ৩টি দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে,
০১. একাত্তরের মহান মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে অর্জিত অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশে হেফাজতের ১৩ দফা বাস্তবায়নের কোন সংযোগ নাই। চলমান যুদ্ধপরাধী ও মানতাবিরোধীদের রক্ষায় বিএনপি-জামাতের নতুন সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণাসহ অবিলম্বে জামাত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষনা করে অধ্যাদেশ জারী ও সাথে সাথে সন্ত্রাস দমন আইনে তাদের সকল নেতাদের আটক ও বিচার দাবি করছি।
০২. বিএনপি-জামাত-শিবির ও হেফাজতের মুল আমীর খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র উন্মোচন করে দ্রুত উন্নয়নশীল ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য দাবী জানাচ্ছি।
০৩. ৩০ লক্ষ প্রাণ ও দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো রক্তে ভেজা বাংলাদেশকে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি রাজাকার আলবদর,আল সামস্ ও নব্য দেশ বিরোধী শক্তি বিএনপি-জামাত-হেফাজত ও সন্ত্রাসী তৈরীর কারখানা কওমী মাদ্রাসা এতিমখানা ও মসজিদ ভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষশক্তিকে ডাক দিয়ে একযোগে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রক্ষা করার এখনই সময়। এ জন্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সকল দ্বিধা দন্ধ ও ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তিকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিতে হবে। এ যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে যে কোন মুল্যে বিজয়ী হতে হবে এবং স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিকে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে।
প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ডাঃ মাসুদুল হাসান, সহ-সভাপতিবৃন্দের মধ্যে মাহবুবুর রহমান, আবুল কাসেম, সামসুদ্দিন আজাদ, নাজমূল ইসলাম, লুৎফুল কবীর, যুগ্ম সম্পাদক আইরিন পারভিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ, আব্দুল হাসিব মামুন, মহিউদ্দিন দেওয়ান, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হাজী মনির, প্রবাসী কল্যান সম্পাদক সোলেমান আলী, উপ-প্রচার সম্পাদক তৈয়বুর রহমান টনী, কার্যকরী কমিটির সদস্য মিসেস শাহানারা রহমান, শরীফ কামরুল আলম, জসীমউদ্দিন খান মিঠু, এমএ আলম বিপ্লব, টিটু রহমান, কাজী আজিজুল হক খোকন, নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল, সিটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুর রহমান চৌধুরী, শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সিরাজউদ্দিন সোহাগ, ছাত্রলীগ সভাপতি জেড.এ জয়, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নুরুজ্জামান সরদার, এম এ হামিদ, জালাল উদ্দিন জলীল, টি. মোল্লা, কাজী মনির হোসেন, হিরু ভূইয়া, মোর্শেদা কাকন প্রমুখ।
__._,_.___