We should be optimistic for presence of human being like Rita and Mahfuz Khan.
Please read it. ( Source from twitter )
Regards,
Asoke Bosse
সাম্প্রদায়িকতা, নাকি শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা?
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ১১/০১/২০১৪ - ৪:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:
· ধর্ম
· রাজনীতি
মাহফুজ খান
ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে খুব ছোটবেলা, প্রাইমারী স্কুলে। ৫/৬ বছর বয়সেই শিখে যাই কোন পিঁপড়া হিন্দুদেরকে কাটে আর কোনটা মুসলমানদের। এরপর থেকে কালো পিঁপড়া মারতাম না কিন্তু লাল পিঁপড়া দেখলেই প্রবল বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়তাম, কারণ ওটা কামড়ায় আর ওটা হিন্দু পিঁপড়া।
আমি তখন তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি। আমাদের বাড়িতে একজন স্বর্ণকার আসতেন, আমরা উনাকে অমল বাবু নামে জানতাম। অমল বাবুকে কখনও অন্য ধর্মের মানুষ মনে হতো না। উনি আমাদের বাড়িতে চা, পানি, নাস্তা সবি গ্রহণ করতেন। একবার এক বিশেষ কারণে আমি, আমার মা আর দাদির সাথে উনাদের বাড়িতে যাই। আমাদেরকে চা বিস্কুট দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। সবাই বিস্কুট খেলেও আমার দাদি চা মুখেও তুললেন না। ফেরার পথে জিজ্ঞাসা করতেই উনি জবাব দিলেন যে তার ঘেন্না লাগছিল হিন্দু বাড়ির চা খেতে। আমারা মাকেও দেখলাম তাতে সায় দিতে, যদিও চক্ষুলজ্জার কারণে উনি সেই চা পান করেছিলেন।
আমাদের গ্রামে প্রতি বছর বৈশাখ মাস জুড়ে মেলা হয়। বাড়ির পাশেই সেই মেলায় যাওয়ার রাস্তা আর রাস্তার পাশেই আমাদের মসজিদ। আমি তখন ষষ্ঠ/সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি। মসজিদখানা নতুন, নিয়মিত সেখানে নামাজ পড়ি। তখন মসজিদের কাজের জন্য বৈশাখী মেলার সময় রাস্তার পাশে বসে সাহায্য উঠানো হতো। ছুটির দিনগুলোতে আমিও মাইকে বসে মসজিদের কাজের জন্য সাহায্য চাইতাম। মাঝে মাঝেই দেখেছি কিছু হিন্দু মানুষ মেলায় যাওয়ার বা ফেরার পথে দুই-চার টাকা ফেলে যেত সাহায্য হিসেবে। আমাদের ইমাম সাহেব সেই টাকাগুলোকে টেবিলের উপর তুলতে দিতেন না। সেটা আমরা আলাদা করে রাখতাম, আর দিন শেষে সেই টাকা দিয়ে বাদাম কিনে খেতাম। বিধর্মীদের টাকা নাকি আল্লার ঘরের কাজে লাগানো উচিৎ না!
ততদিনে হিন্দুরা যে মালাউন সেটা জেনে গেছি। খেলার মাঠে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে আমার মুসলমান বন্ধুটি হিন্দু বন্ধুটিকে বলেছিল- মালাউনের বাচ্চা তুই চুপ থাক। কিন্তু মালাউন শব্দের অর্থ কি, সেটা আজো বোধগম্য নয়। যাইহোক মালাউন ছাড়াও যে হিন্দুদের আরও নাম আছে সেটা জেনেছিলাম বছর খানেক পর, অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময়। আমি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় চট্টগ্রাম আমার বড় চাচার কাছে থাকতাম। আমাদের পাশের বাসায় এক হিন্দু পরিবার ছিল, সবাই দেখতাম আড়ালে তাদের ডান্ডি বলতো। কেন বলত, ডান্ডি নামের উৎস কি আজো জানিনা, জানার আর আগ্রহও নেই।
তখন কলেজে পড়ি, গ্রাম থেকে দুরে জেলা সদরে কলেজ হোস্টেলে থাকি। মাঝে মাঝে যখন ছুটি ছাটায় বাড়িতে যেতাম তখন বন্ধুরা মিলে অনেক মজা করতাম। সবচেয়ে মজার ছিল রাতের বেলা সবাই মিলে ডাব চুরি করে খাওয়া। কার গাছের ডাব খাওয়া যায়, এমন প্রস্তাবে সবার প্রথমেই আসত ঠাকুর বাড়ির নাম। কেন আসত সেটা তখন ঠিকমত না বুঝলেও এখন বুঝি। কারণ সেখানে ডাব খেতে গিয়ে ধরা খেলেও খুব একটা সমস্যা হবে না। হিন্দু মানুষ, বড়জোর দুই চারটা বকা-ঝকা দিয়ে ছেড়ে দিবে। ডাব যে শুধু হিন্দু বাড়ির খেয়েছি এমন নয়, বরং হিন্দু মুসলিম উভয়ের গাছের ডাবই সমান সুস্বাদু ছিল। কিন্তু অবাক হতাম, যখন দেখতাম কোনও মুসলমান বাড়ির ডাব চুরির সময় আমার বন্ধু জগদীশ কোনও না কোনও অজুহাতে সটকে পড়ত। কেন পড়ত সেটা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় একবার আমার এক হিন্দু বন্ধুর সাথে নীলক্ষেত খেতে গিয়েছিলাম। আমি গরুর তেহারি অর্ডার করলাম আর বন্ধুটি ইলিশ মাছ ভাত। আমার খাওয়া শেষ, হাত না ধুয়ে ওর খাওয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি। হঠাৎ ইলিশ মাছের লোভ সামলাতে না পেরে, কোনও রকম চিন্তা ভাবনা ছাড়াই ওর পাতে হাত দিয়ে এক টুকরো মাছ ভেঙ্গে নিয়ে নিজের মুখে তুলে দিই। সাথে সাথে আমার বন্ধুটি আমাকে হতভম্ব করে দিয়ে খাওয়া বন্ধ করে হাত ধুয়ে ফেলে। ওর মুখে বিরক্তিটা স্পষ্ট। ততক্ষণে আমি আমার ভুল বুঝতে পেরে বিব্রতভাবে দুঃখ প্রকাশ করে বন্ধুটির কাছে ক্ষমা চাইলাম। সে বোধহয় আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলটা বুঝতে পেরেছিল, যাইহোক এটা নিয়ে আমরা আর কখনও কথা বলিনি।
হতে পারে, উপরের প্রতিটি ঘটনাই শুধু মাত্র আমার জীবনে ঘটে যাওয়া বিচ্ছিন্ন ঘটনা। অথবা আমরা সবাই শৈশব, কৈশোরে এমন ঘটনার মধ্য দিয়েই বড় হয়েছি। যাই হোক, উপরের প্রতিটি ঘটনাই আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে যে হিন্দুরা আলাদা মানুষ, ওরা দুর্বল, ওরা তুচ্ছ। আমি ঠিক জানিনা, তবে অনুমান করতে পারি যে একজন হিন্দু শিশুও আমাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব নিয়েই বেড়ে উঠে। এই যে মানুষে মানুষে ধর্মীয় সংস্কৃতি ভিত্তিক ভেদাভেদ সেটা প্রাগৈতিহাসিক। আজ যখন কথায় কথায় হিন্দুদের, বৌদ্ধদের নির্যাতন করা হয় তখন আমরা এটাকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে আমাদের সেই প্রাগৈতিহাসিক সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তিকে আড়াল করতে চাই। ফেসবুকের এক মিথ্যা, তুচ্ছ ঘটনার উপর ভিত্তি করে রামুতে যখন আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামাত সব মুসলমান মিলেমিশে একাকার হয়ে হাজার বছরের পুরনো বৌদ্ধ মন্দির পুড়ায়, তখনও আমরা বলি ওরা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার শিকার নয়, বরং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ঠিক কবে, আরও কত শতাব্দী পেরুলে, আরও কত শিক্ষিত হলে আমরা কোনও সমস্যার শুধু ডালপালা না ছিঁড়ে বরং গোঁড়াটাকে চিহ্নিত করে সেটা কেটে দিতে পারব। আমার মতে, রাজনীতি এখানে শুধুমাত্র প্রভাবক হিসেবে কাজ করে, কিন্তু প্রতিটি ঘটনার গোড়াতেই থাকে সেই প্রাগৈতিহাসিক ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা। ঠিক যেমন আলোর স্পর্শে কিছু কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া আপনি আপনি ঘটে।
__._,_.___