http://www.dailynayadiganta.com/details/13210
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন
প্রহসন হওয়ার ঝুঁকিতে ট্রাইব্যুনাল
বিচার পক্ষপাতদুষ্ট; রাজনৈতিক কারণে টার্গেট অভিযুক্তরা
মেহেদী হাসান
লন্ডনের বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত ট্রাইব্যুনাল প্রহসনে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মন্তব্য করে বলা হয়েছে, 'ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত যা হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে সেখানে পক্ষপাতদুষ্ট বিচার চলছে। বিচারের জন্য যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অতীতের অপরাধ নয় বরং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণেই বিচারের নামে এসব ব্যক্তিকে টার্গেট করা হয়েছে ।'
গতকাল ২৬ নভেম্বর সংখ্যায় ইকোনমিস্টে প্রকাশিত 'ট্রাইড অ্যান্ড ফাউন্ড ওয়ান্টিং' শীর্ষক প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে এশিয়ার কম্বোডিয়া ও শ্রীলঙ্কার যুদ্ধাপরাধ বিচারের চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে বলা হয়েছে 'গত ২০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে প্রথম অভিযুক্ত হিসেবে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মাওলানা সাঈদী বাংলাদেশের একটি প্রভাবশালী ইসলামি দল জামায়াতে ইসলামীর নেতা। মাওলানা সাঈদীর সাথে আরো ছয়জন প্রসিদ্ধ নেতার নাম একই অভিযোগে যুক্ত হতে যাচ্ছে।'
ইকনোমিস্টের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, 'যাদের এ বিচার করা হচ্ছে তাদের অতীতের অপরাধ নয় বরং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণেই তাদের টার্গেটে পরিণত করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সাথে জোটভুক্ত একটি দল। অভিযুক্তদের বেশ কয়েকজন অতীতে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।'
আগামী নির্বাচন আসার আগেই তাদের অপরাধী প্রমাণ করে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে কি না- প্রশ্ন উত্থাপন করে প্রতিবেদনে বলা হয়, 'এটি করা হলে বিরোধী দল দুর্বল হবে। বিচারকে যদি পক্ষপাতদুষ্ট করা হয় তাহলে তা ইতিহাসে আরো গভীর ক্ষত সৃষ্টি করবে। সমস্যার কোনো সমাধান দেবে না।'
প্রতিবেদনে বলা হয়, 'বহিঃশক্তি বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এ বিচার নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছে। তারা এ আদালতের বিষয়ে অতীতে কথা বলেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আইনজীবী ও সাক্ষীদের নানা ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীদের মামলা মোকাবেলা বিষয়ে প্রস'তির জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হচ্ছে না। বিচারপতিদের পক্ষপাত বিষয়ে চ্যালেঞ্জ জানানোর বিষয়ে আইনজীবীদের বাধা দেয়া হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানকে সরে দাঁড়ানোর জন্য আবেদন জানানো হয়েছে অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে। কারণ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ১৯৯৪ সালে যুদ্ধাপরাধসংক্রান্ত একটি প্রতীকী বিচারে তদন্তকাজের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিদেশী আইনজীবীদের অংশ নিতে বাধা দেয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে একজন ব্রিটিশ আইনজীবী মন্তব্য করেছেন এই বলে যে, এ বিচারে স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার চিহ্নমাত্র নেই।'
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, 'এ ট্রাইব্যুনাল প্রশংসা পেতে পারত। এটি (১৯৭১ সালের অপরাধ) ইতিহাসের একটি জঘন্যতম অধ্যায় এবং এ বিচার সবাইকে এক করতে সহায়তা করতে পারত। কিন' এর পরিবর্তে ট্রাইব্যুনাল প্রহসনে পরিণত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এখানকার বিচার পক্ষপাতদুষ্ট মনে হচ্ছে। এটিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একটি প্রতিহিংসা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অভিযুক্তপক্ষের একজন আইনজীবী। আসল যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি কোনো সেনাকর্মকর্তাদের এই বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না। মুক্তিবাহিনীর যারা বিহারি ও অভিবাসীদের ওপর নির্মম বর্বরতা চালিয়েছিল সে অপরাধেও কাউকে বিচারের সম্মুখীন করা হচ্ছে না।'
__._,_.___